মানুষ এক জায়গায় থাকতে থাকতে ক্লান্তি বোধ করে, একঘেয়েমি চলে আসায় বিষণ্ণতা বোধ করে। তখনই মানুষের মন একটু মুক্তি খোজে, খোঁজে একটা খোলা আকাশ বা মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেবার জায়গা। ভ্রমণ যে শুধু ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করে তা নয়। ভ্রমণ শেখার ও জানারও একটা মাধ্যম। আর ভ্রমণ সবচাইতে উপভোগ্য হয় শীতকালে। যাদের গাড়ি আছে তারা চাইলেই, দৈনন্দিন জীবনের বলয় থেকে বের হয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। আসছে শীতেও হয়ত অনেকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করেছেন। যদি গাড়ি নিয়ে দূরবর্তী কোথাও যাবার প্ল্যান করেন, তাহলে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারজনিত কিছু ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে শীতকালে। কারণ শীতের ভ্রমনে গাড়ির পার্টসের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে খুব বেশী। ভ্রমণ যাতে নির্বিঘ্ন এবং নিরাপদ হয় সেভাবে প্ল্যান করতে হবে । ভ্রমণের সময় পরিবারের সদস্যেদের সাথে সাথে গাড়িও থাকবে নিরাপদে সেভাবে প্ল্যান করতে হবে । তাহলে আসুন জেনে নেই শীতের ভ্রমণ ও কিছু টিপস। এছাড়াও গাড়ি নিয়ে জরুরী কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় যা আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখলে ভাল।
গাড়ির পরিষ্কার:
শীতের ভ্রমনে অবশ্যই আপনার গাড়িটিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। আর পরিষ্কারক দ্রব্য যেমন- ব্রাশ, ছোট বালতি, হোস পাইপ ইত্যাদি গাড়িতে সঙ্গে নিয়ে নেওয়া যায়। গাড়ি যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয় তাহলে আপনার ভ্রমণও হবে আনন্দদায়ক।
কাগজপত্র:
দুরের ভ্রমনে/ শীতের ভ্রমণ যেখানে অবশ্যই সবার আগে যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে সেটি হল গাড়ির বৈধ কাগজপত্র সাথে আছে কিনা। যা নিয়মিত হালনাগাদ করা না থাকলে অবশ্যই করিয়ে নেওয়া ভাল। এছাড়া সাথে রাখবেন ভোটার আইডি কার্ড/ ফটোকপি অথবা ভিজিটিং কার্ড ।
তেল ও পর্যাপ্ত পেট্রোল:
গাড়ির তেল বা পেট্রোল চেক না করে দূরে ভ্রমনে যাওয়া কখনোই উচিৎ না। আর ভ্রমণে বের হবার আগে, আপনার ভ্রমণ পথে কোথায় কোথায় পেট্রল পাম্প/ সি এন জি ষ্টেশন আছে তাও একবার মোবাইলে ম্যাপ থেকে দেখে নেবেন। তবে বের হবার আগে যতটুকু পরিমান সম্ভব গাড়ির তেল, পেট্রোল ভর্তি করে নেওয়া উচিৎ।
গাড়ির পার্টস রিচেক:
দূরবর্তী ভ্রমণ অথাবা শীতের ভ্রমন তার আগে অবশ্যই ভাল কোন সার্ভিস সেন্টার থেকে একবার গাড়ির সব পার্টস চেক করিয়ে নিন। কোন পার্টসের যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে; পার্টস ঠিক করিয়ে, একবার গাড়ি চালিয়ে পরীক্ষা করে নিবেন আপনার গাড়ির সব যন্ত্রাংশ সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশের কারণে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
গাড়ির কভার, স্পেয়ার টায়ার:
গাড়ির সাথে অবশ্যই গাড়ির কভার, এক্সট্রা চাকা, টুল বক্স ইত্যাদি রাখা উচিৎ। এতে করে যেকোন সময়ে গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেলে চাকা ঠিক করে নিতে পারবেন। এর পাশাপাশি রাস্তায় টুকটাক সমস্যা নিজেই সেরে নিতে পারেন।
ব্যাটারি:
শীতকালে ইলেকট্রিক্যাল রেজিস্টেন্স এবং ইঞ্জিন অয়েল ঘন হয়ে যায়। ফলে কাজ করার জন্য গাড়ির ব্যাটারিকে আরো বেশি শক্তি ব্যয় করা দরকার হয়। অনেক সময় ব্যাটারির টার্মিনালে মরিচা পড়ে। তাই শীতকালে গাড়ির ব্যাটারি ডাউন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শীতের ভ্রমণ যেন ব্যাটারি ডাউন হয়ে ভ্রমণে যাতে বিঘ্ন না ঘটে তাই গাড়িতে এক্সট্রা ব্যাটারি অবশ্যই সঙ্গে রাখা ভাল।
হেড লাইট আর ফগ লাইট চেক:
গাড়ি নিয়ে শীতকালে বেড়াতে গেলে সন্ধ্যা নামার আগেই চারপাশে কুয়াশায় ঢেকে যায়। যার কারনে পথের সামনের দিকে লক্ষ্য রাখা অনেক সময় কষ্টকর হয়ে পড়ে । তখন ফগ লাইট খুব দরকার হয় তাই এগুলো আগেই রিচেক করে রাখতে হবে।
ট্রাফিক আইন:
গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই আইন মেনে গাড়ি চালাবেন । কখনোই ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে বা নির্দিষ্ট লেন ব্যতীত অন্য লেন দিয়ে গাড়ি চালানো উচিৎ না।
শীতকালীন ভ্রমণে যা যা অবশ্যই সঙ্গে নেওয়া উচিৎ
প্রয়োজনীয় অর্থ:
টাকা পয়সা নিতে হয়ত কেউই ভোলেন না। কিন্তু দূরবর্তী ভ্রমনের আগে খরচের একটা খসরা হিসেব করে নিবেন। সাথে এক্সট্রা কিছু টাকা নিয়ে নিবেন যাতে বিপদে পড়লে কাজে লাগে। কতটুকু তেল খরচ হবে, সে হিসেবও এর মধ্যে রাখবেন।
কাপড়/শীতের কাপড়:
শীতের ভ্রমণ যদি গ্রামের দিকে হয় তাহলে খেয়াল রাখতে হবে যে গ্রামে সাধারণত ঠাণ্ডা বেশী থাকে। সন্ধ্যায় আর রাতের দিকে ঠাণ্ডা বেশী পড়ে যায়। তাই সাথে শিশু বা বৃদ্ধ থাকলে অবশ্যই তাদের শীতের কাপড় সঙ্গে নিয়ে নেওয়া উচিৎ। মুজা, টুপি, মাস্ক, ইত্যাদি সহ ঘুমানো আর ঘোরাফেরার জন্যও আলাদা কাপড়চোপড় সঙ্গে নিয়ে নেওয়া ভাল ।
খাবার শুকনা/তরল:
গ্রামে পাওয়া যায়না এমন কিছু খাবার যা শিশুরা খায় সেগুলো সঙ্গে কিনে নেওয়া ভাল। শুকনা খাবারের সঙ্গে তরল খাবারও কিনে নেওয়া উচিৎ। সবথেকে ভাল হয় বাসা থেকে রান্না করে হটপটে নিয়ে গেলে।
মশা ও পোকামাকড় থেকে সাবধান:
শীতের ভ্রমণে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে মশার উপদ্রব থেকে যেন সুরক্ষিত থাকে পরিবার।সাধারণত শীতকালে মাশা বেশী থাকে তাই মশার স্প্রে , ওষুধ ,মশার ব্যাট অথবা মশারির ব্যবস্থা সঙ্গে রাখতে হবে। এছাড়াও অন্যান্য পোকামাকড়ের ওষুধ, ওডোমস সঙ্গে রাখা ভাল।
ফার্স্ট এইড বক্স:
যেকোনো জায়গায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বিশেষ করে শীতের ভ্রমনে গাড়িতে অবশ্যই একটি ফার্স্ট এইড বক্স গাড়িতে রাখা উচিৎ। যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া যায়। সাথে বমির ওষুধ এবং স্যালাইনও রাখতে পারেন।
ওষুধপত্র:
শীতের ভ্রমন যখন বয়োজ্যৈষ্ঠ মানুষ সঙ্গে থাকে তখন তাদের ওষুধপত্র সাথে নিয়ে নিবেন। হাপানি রোগী বা ঠাণ্ডার সমস্যা আছে এমন মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, নেবুলাইজার মেশিন, প্রেসার মাপার মেশিন ইত্যাদি মনে করে নিয়ে নিবেন।
অন্যান্য:
মোবাইল ফোনের চার্জার , ক্যামেরা বা ল্যাপটপের চার্জার , মোবাইলের পোর্ট ইত্যাদি সাথে নিয়ে নিতে ভুলবেন না। টর্চ লাইট, ছাতা, রাবারের জুতা, টাওয়েল, নেক পিলো, এক্সট্রা ব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে নিবেন সাথে।
শীতের ভ্রমণ / দূরের ভ্রমণে কিছু স্মার্ট টিপস:
- একটানা রাস্তায় গাড়ি না চালিয়ে মাঝে মাঝে ব্রেক দিয়ে গাড়ি চালানো উচিৎ।
- খুব ভোঁরে বাসা থেকে বের হয়ে গেলে আর রাস্তায় যানজটে পরতে হয়না তাই ভোঁরেই বের হওয়া ভাল।
- পেট্রোল বা জ্বালানি আগের দিন নিয়ে নেওয়া উচিৎ।
- ভ্রমণের আগের দিন যিনি গাড়ি ড্রাইভ করবেন তার পর্যাপ্ত বিশ্রাম করে নেওয়া উচিৎ তাহলে গাড়ি চালানোর সময় ঘুম ঘুম ভাব আসবেনা।
নিরাপত্তা:
শীতের ভ্রমণ অথবা গাড়ি নিয়ে স্বপরিবারে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করার আগে অবশ্যই নিরাপত্তার ব্যপারটি মাথায় রাখতে হবে। পরিবারের নিরাপত্তায় সবার সাথে ফোন এবং ফোনে রিচার্জ করে নিলে ভাল হয়। দূরে ভ্রমনে যেয়ে একা না ঘুরে দলবলে ঘোরা ভাল। ঘন জঙ্গল অথবা গভীর পুকুরে না যাওয়াই ভাল।
আর বাসা খালি না রেখে বাসার দায়ীত্বে কাউকে রেখে যাওয়া যায়। ঘুরতে গিয়ে গাড়ি কোথায় পার্ক করে হয়ত অনেকেই প্রকৃতির আরো কাছাকাছি যেতে পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে গাড়ির নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হয়। এমন অবস্থায় টেনশন করে যেন আপনার ভ্রমণে বিঘ্ন না ঘটে, তাই আপনার প্রিয় গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ‘প্রহরী’ ভেহিকেল ট্র্যাকিং সার্ভিসকে দিতে পারেন এবং নিশ্চিন্তে ঘুরতে পারেন যেখানে খুশী সেখানে।