স্পিরিট অফ এস্টেসি হচ্ছে Rolls Royce গাড়ির দৃষ্টিনন্দনীয় একটি মাস্কট। এটির আদল এমন ভাবে গড়া যা হচ্ছে একজন মহিলা সামনে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে তার বাহুকে পেছনের দিকে উপরে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য একটি বিষয় স্পিরিট অফ এস্টেসি কে Elenor সিলভার লেডি,ফ্লায়িং লেডি ও বলা হয়। অটো মোবাইল ইন্ড্রাস্টির জন্য স্পিরিট অফ এস্টেসি হচ্ছে অত্যাধিক দৃষ্টিনন্দনীয়, আলোচিত এবং ঐতিহ্যপূর্ণ মাস্কট। এটি হচ্ছে গতির,ছুঁটে চলা,এবং জাঁকজমকের প্রতীক।এই অর্থেই ব্যাখা করে থাকে Ecstasy কে। Rolls Royce এলিটদের প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে, গুনগত দিক থেকেও এটি অনন্য। সর্বোপরি বর্তমানে BMW এর মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল গাড়ি এটি।
স্পিরিট অফ এস্টেসি ইতিহাস
এবার আমরা আসি একটু ইতিহাসের দিকে। পেছনে ফিরে তাকালে আমরা দেখি Royce Ltd ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলো হেনরি রয়েস। সে তার অভিজাত গাড়িকে চার্লস রোলসকে কে দেখিয়েছিলো। ১৯০৬ সালে তারা আইনগত যৌথ পার্টনারশিপ এর আওতায় আসে। হেনরি রয়েস অটোমোবাইলের মেকানিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স দিক গুলো ম্যানেজ করতো আর রোলস আর্থিক দিক এবং ব্যবসা সংক্রান্ত সব দিক সামলাতো। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ১৯১০ সালে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান রোলস। তার আকাশে চড়ার কীর্তিকলাপ স্পিরিট অফ এস্টেসি এর ডানা গুলো দেয়ার ক্ষেত্রে খুব সম্ভবত প্রভাব ফেলেছিলো।
প্রথমদিকের রোলস রয়েসের এর কোনো মাস্কট ছিলো না। শুরুর দিকে তারা তার সাধারন প্রতীকই বহন করে। বোরন জন তার ভাস্কর বন্ধু চার্লস রবিনসন কে নির্দেশনা দিলেন যে একটি প্রস্তরমূর্তি করতে হবে। রবিনসন তখন লন্ডনের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। Sykes এটির মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন Eleanor Velasco Thornton কে। প্রস্তরমূর্তিটির ভাব ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন চার্লস। বলা যায় এটি গোপন ভালোবাসার একটি প্রতীক যা The Whisper নামে পরিচিত।
যখন অন্যান্য গাড়ী তাদের মাস্কট ব্যবহার শুরু করেছে তখনই রোলস রয়েস তাদের মাস্কট নিয়ে ভাবতে শুরু করলো। রোলস রয়েস এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এর মত ছিলো এরকম যে এমন একটি মাস্কট হবে যা রোলস রয়েস এর ঐতিহ্য বহন করবে, এবং এর গতি,দুরন্ত ছুঁটে চলা, বেশি শব্দ না হওয়া, শক্তির দিক সব কিছুর প্রতীকী অর্থ থাকবে মাস্কটে। Sykes এর সাথে যুক্ত করলেন নারীবাদীতা। Sykes এই মাস্কটের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯০৯ সালের প্রস্তরমূর্তি Whisper এর কিছুটা পরিবর্তিত ভার্সনই আজকের স্পিরিট অফ এস্টেসি। ১৯১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রোলস রয়েসের এর Spirit of Ecstasy প্রদর্শন করা হয়, যা দেখতে Whisper এর মতো। এই মিলের কারণ হচ্ছে উভয়ই মিস থনন্টন এর আদলে গড়া। গত কয়েক বছর ধরে Spirit of Ecstasy ব্রিটিশ ফার্ম louis leheune Ltd ও উৎপাদন করে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে হেনরি রয়েস মাস্কটকে খুব একটা পছন্দ করতেন না। এটি খুব সম্ভবত তৈরি হতো না, যদি সে সময় তিনি অসুস্থ না থাকতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন এটি ড্রাইভারের দৃষ্টিকে ব্যহত করে রাস্তা থেকে এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িতেও এটিকে ব্যবহার করতেন না। আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য যে যার আদলে এই মাস্কট গড়া সেই মিস এলেনর ৪ বছরই পরেই মারা যান। তিনি ১৯১৫ সালের ৩০শে ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
সময়ের সাথে সাথে আসলে সব কিছুরই পরিবর্তন হয়। তেমনি এই মাস্কট ও তার রুপ বদলেছে সময়ের সাথে। স্পিরিট অফ এস্টেসি তৈরি হওয়ার সময় অর্থাৎ ১৯১১ সালে এটি ছিলো সিলভার প্লাটেড এর কিন্তু পরে চুরি থেকে রক্ষা পেতে এবং অন্যান্য কারণে এটি ক্রোমিয়ামে পরিবর্তিত হয়। এমনকি মাস্কটকে আরো সুসজ্জিত করতেও বেশ কয়েকবার পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১৯৩৪ সালে ও একবার এটি পরিবর্তিত হয় যাতে ড্রাইভার সামনের কিছু দেখাতে সমস্যা না হয়। বর্তমানের যে ভার্সনটি আছে তা নন্দনীয় স্টিনলেস স্টিলের তৈরি। এই স্টিনলেস স্টিলের মাস্কট এখন ক্রেতাদের জন্য বাজারজাত ও হয়। এমনকি রোলস রয়েস এর সব ধরণের পার্টস ক্রেতাদের জন্য বর্তমানে বাজারজাতকরণ হয়। মাস্কটের সাথে ২৪ ক্যারেটের সোনা ও মিশানো থাকেনা অনেক সময়। এমনকি অনেক সময় ডাইমন্ডের আবরণ ও থাকে।
আসলে সবকিছুই কোনো না কোনো অর্থ দাড় করায়। আবার সময়ের সাথে অর্থও পাল্টায়। প্রতীকের অর্থ আসলে থাকে মানুষের মনে। তেমনি Spirit of Ecstasy তৈরিতে যে সব উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে তারও পরিবর্তন হয়েছে, সেই সাথে মাস্কটের অর্থের ও পরিবর্তন হয়েছে কিছুটা। মাস্কটের বিলাসবহুল প্রতীকী, গতি,এবং সৌন্দর্য্যের অর্থ এখন ও রয়েছে। তথাপি এটি কঠোর পরিশ্রম এবং হার না মানা পরিপূর্নতার প্রতীক, যা এটিকে অন্যন্য গাড়ির তুলনায় ব্যতিক্রমী করে তুলেছে।
এবার আসি এটার তৈরির পদ্ধতি নিয়ে। সবকিছু তৈরিতেই কোনো নিয়ম বা পদ্ধতির অনুসরণ করা হয়। এই মাস্কটের ক্ষেত্রে ৫ হাজার বছর আগের পুরোনো পদ্ধতি Wax Process ব্যবহার করা হয়েছে। এই পদ্ধতি আফ্রিকান এলাকায় বহুল ব্যবহৃত এবং পরিচিত। ব্রোঞ্জ যুগের প্রলেপন পদ্ধতিতে গলিত ধাতুর প্রলেপ দেয়া হয় মাস্কটে যা তৈরি হয় Wax Model এর মাধ্যমে। উল্লেখ্য একটি বিষয় হচ্ছে একটি স্পিরিট অফ এস্টেসি তৈরিতে এক সপ্তাহ কর্মদিবস সময় নেয়।
কোনো কিছুকে বিকৃতি থেকে বাঁচাতে সব সময়ই সতর্ক থাকতে হয়,না হয় সময়ের সাথে সাথে তার আসল রুপ ধরে রাখা কঠিন। আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে স্পিরিট অফ এস্টেসি এর ডিজাইন হচ্ছে। আর এই ডিজাইনার kris Sukhu বলেছেন যে তাদের লক্ষ্যে পরিপূর্ন সব দিক থেকে। ডিজাইনার অনেক ডিজিটাল চিত্র সংগ্রহ করছেন এলেনর এর, যার মাধ্যমে তিনি সংযোগ ঘটিয়ে মাস্কটকে দিচ্ছেন অবিকৃত রুপ, যা হারিয়ে যাচ্ছিলো সময়ের সাথে সাথে।