তাবৎ দুনিয়া ঘুরে বেড়াতে কার না ইচ্ছে জাগে! কত কিছু যে রয়েছে পৃথিবীতে, যা আমাদের রোমাঞ্চিত করে,খানিকটা ভাবায়,কিংবা আরো বেশি আগ্রহী করে তোলে। সৃষ্টির শুরু থেকেই যা ব্যতিক্রম সে সব জিনিসকেই কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আরো নতুন কিছু। প্রস্তুত, সংরক্ষণ আর কৌতূহল বলা যায় এই পৃথিবীকে টিকিয়ে রেখে আরো এগিয়ে নিয়ে যায়। ভাবছেন কেন বলছি এসব কথা,আজকে আপনাদেরকে এরকম কিছু দিকই তুলে ধরবো। যা আপনাকে আরো কৌতূহলী ও রোমাঞ্চকর করে তুলবে। হ্যাঁ পোর্শে জাদুঘর এমনই এক বিস্ময়!
জাদুঘরেতো আমরা কমবেশি সবাই গিয়েছি,ওখানে সাধারণত কিছু প্রদর্শনীই দেখে থাকি আমরা। আচ্ছা জাদুঘর যদি এমন হয় যেখান থেকে আপনি কিছু কিনে আনতে পারেন, রেস্টুরেন্ট এর ব্যবস্থা থাকে তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা!
পোর্শে এই নামটি শুনেন নি এখনো পর্যন্ত কম মানুষই আছে। জার্মানের অন্যতম পরিচিত একটি অটোমোবাইল উৎপাদন কারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে হাই পারফরম্যান্স এর স্পোর্টসকার, Suvs Sedan এর ক্ষেত্রে এটি প্রসিদ্ধ। এই অটোমেটিভ ইন্ড্রাস্টি ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো যার উদ্যোক্তা ছিলেন ফার্দিনান্দ পোর্শে । সময়ের সাথে সাথে এটি তার অবস্থান করে নিয়েছে।তারই অংশ হিসেবে ১৯৭৬ সালে পোর্শে জাদুঘর গড়ে উঠেছে যার অবস্থান জার্মানীর স্টুটগার্টে।
গাড়ির জাদুঘর বলে কথা! কৌতূহল তো নিশ্চয় হচ্ছে কেমন কিংবা কি রয়েছে এতে। অন্যান্য জাদুঘরের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন এটি। এই জাদুঘরটি মঙ্গল থেকে রবিবার পর্যন্ত সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশের শেষ সময়সীমা ৫টা বেজে ৩০ মিনিট।
জাদুঘরে প্রবেশ করে আপনি রোমাঞ্চিত হবেন। ৫৬৬০ স্কয়ার মিটারেএ এই জাদুঘরে গাড়ি গুলো সারি বদ্ধ ভাবে সাঁজানো। অনেক জায়গায় হয়তো আপনি সারিবদ্ধ গাড়ি দেখতে পারেন, তবে এখানকার স্টাইলিং অনেক বেশি আকৃষ্ট করবে। আসলে আপনার খুঁজে পেতে কিছুটা দ্বিধা হবে যে কোন গাড়িটি আপনি পছন্দ করছেন, কেননা এই দৃষ্টির চেয়ে আপনার দৃষ্টি থাকবে অন্যদিকে।এখানে দেখতে পাবেন 997 CSR, 996 carrera Gen 1 CSR, 356 America Roadster এবং আরো অনেক মডেল এর গাড়ি।
বলা যায় এই জাদুঘরটি পোর্শে এর অতীত এবং বর্তমানকে উপস্থাপন করছে। বর্তমানে তাদের কি রয়েছে এই দিকটিও খুব ভালো বোঝা যাবে এখানে গেলে!
এবার আসি এর স্থাপত্যের দিকটাতে। এই স্থাপত্যটি দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হবে।এই জাদুঘরটি যতটা না ভেতরের আঙ্গিকে তার চেয়ে বেশি পরিচিত স্থাপত্যের অংশটিতে। স্থাপত্য কৌশল এই জাদুঘরটির সৌন্দর্যের মাত্রা দর্শনার্থীদের কাছে বাড়িয়ে তুলেছে বহুল। যে কোনো এঙ্গেল থেকে এটি দেখলে মনে হবে যেন বাতাসে আটকে আছে। আপনার কল্পনাকেও মিথ্যা করে দিতে পারে এমনই এক স্থাপত্য এটি। এই ভবনটির ডিজাইন করেছেন Delugan Meissl। আর এই প্রজেক্ট এর ডিজাইনটি তার হাতে রাখতে বেশ পরিশ্রমই করতে হয়েছে কেননা আরো ১৭০ জন ডিজাইনার এর এসাইনমেন্ট করেছিলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত Delugan Meissl এর ডিজাইনটি গৃহীত হয়।
আগেই বলেছি এটি অতীতকে খুব ভালো ভাবেই উপস্থাপন করেছে। জাদুঘরতো অতীতকেই উপস্থাপন করবে এটাই স্বাভাবিক, তবে এর আর্কাইভ অনেক বেশি শক্তিশালী। এক সাড়িতে অনেক অনেক পোর্শে সারিবদ্ধ। শুধু মাত্র এই হাউজের গাড়ি গুলো দেখেই যাতে কেউ ভুল না করে যে আর গাড়ি নেই! মিউজিয়ামে আরো অনেক গাড়ি দেখতে পারবেন চোখে। Porsche মিউজিয়ামের ওয়েব মাইটের মতে এই আর্কাইভ দুই কিলোমিটার ডকুমেন্ট, 2.5 মিলিয়ন ফটো এবং স্লাইড, ৪ হাজার বই, এবং ১৭০০ ঘন্টার ভিডিও।
এই জাদুঘরটি শুধু প্রদর্শনের জন্যই যে এরকম নয়,এখানে রয়েছে অসাধারণ এবং কোয়ালিটিফুল ওয়ার্কশপ,যা শুধু মাত্র পোর্শে কার এর জন্য নির্ধারিত। দর্শনার্থীরা দেখতে পারবেন কি ভাবে গাড়ি মেরামত করা হয় এবং বিখ্যাত রেস কার গুলো শো-রুমে যাওয়ার আগে কী তার প্রস্তুতী করা হয়। কোনো ভাবেই এই ওয়ার্কশপটিকে অপর্যাপ্ত বলা যাবে না, কেননা এখানে তিনজন মেকানিক, একজন ক্র্যাফটস ম্যান, লেদার ওয়ার্কার তাদের কাজের প্রতি দায়িত্বশীল। শুধু কি ওয়ার্কশপ! এ মিউজিয়ামটিতে দেখা যাবে কি করে গাড়ির কাজ করছে। হয়তো একমাত্র পোর্শে জাদুঘরই একমাত্র সুযোগ করে দিয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য, যা পৃথিবীর আর কোনো জাদুঘরে নেই। দর্শনার্থীরা দেখে এটির কার্যপ্রনালী, সর্বোপরী এখানে এসে যে কেউ নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবে,যা কিনা আগে কখনো হয় নি। কি করে এই অটোমেটিভ কার কার্যক্রম করে তা দেখতে পারাটা বলা যায় ইতিহাসের অংশ হওয়া।
আচ্ছা কোনো মিউজিয়ামে কি কিছু কেনার সুযোগ পেয়েছেন! ভাবতেও হয়তো পারেন নি! কিন্তু এই মিউজিয়ামে আপনার জন্য থাকছে সে সুযোগ।আপনি যদি পোর্শেকে প্যাশন হিসেবে নিয়ে থাকেন আপনি হতাশ হবেন না। আপনি কিছু সুভ্যানীর আইটেম খুঁজবেন আর আপনার জন্য রয়েছে এরকম কিছু অফুরন্ত আইটেম। মডেল কার, রেয়ার কালেকশন আইটেম,বই এবং আরো অনেক কিছু। জাদুঘর থেকে কিছু বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটি একটি উত্তম সুযোগ,যা আপনি অন্য কোনো জাদুঘরে পাবেন না।
এখানে গেলে আপনার জন্য শিক্ষামূলক কিছু অংশ ও থাকছে। আপনার সময়কে করে তুলবে অনেক উপভোগ্য। কেননা পৃথিবী ব্যাপী এটি আকর্ষণ, শিক্ষার এবং রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার একটি জায়গা। এখানকার প্রদর্শনী গুলোও পৃথিবী খ্যাত। প্রতি দুই কিংবা তিনমাস পর এটির থিমস পরিবর্তিত করা হয়! এখানকার থিমস গুলো প্রযোজন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়! সময় অনুপাতে যা সামনে যাওয়ার দরকার সেই পদক্ষেপটিই নিয়ে থাকে তারা।
সবচেয়ে আকরষণীয় বিষয় হচ্ছে আপনি এখানে নিজের মতো করে সময় কাটাতে পারবেন। ধরেন আপনি ক্লান্ত হয়ে গেলেন আর তার জন্য থাকছে রেস্ট হাউজ। আপনার জন্য থাকছে খাবারের ব্যবস্থা ও। অর্থাৎ রেস্টুরেন্ট। এ ছাড়াও সামাজিক প্রোগ্রাম ও আয়োজন করতে পারেন। আর সেই সাথে আপনার সময়কে উপভোগ্য করতে রয়েছে কফির ব্যবস্থা।
এবার চিন্তা করুন একটু,পৃথিবীর আর কয়টা জাদুঘরে এরকম ব্যবস্থা রয়েছে! একবার যদি আপনি ভিজিট করেন তাহলে নিশ্চয়তা দেয়া যায় যে আপনি খুব সহজে ফিরে আসতে চাইবেন না।