মানুষ মরণশীল। কাছের কেউ মারা গেছে। শোকের মধ্যে থেকেও আপনাকে গাড়ি রাস্তায় নিরাপদে চলতে এবং সড়ক পরিবহন আইন মেনে বৈধ মালিকানা নিশ্চিত করতে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া গাড়ির মালিকানা ওয়ারিশদের নামে পরিবর্তন করতে হয়। সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে সর্বোচ্চ ৯০ দিন বা তিন মাসের মধ্যেই মালিকানা পরিবর্তন করতে হবে বলে প্রজ্ঞাপন রয়েছে। এই তিন মাস সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও যদি আপনি মালিকানা পরিবর্তন না করেন তবে আইন অনুসারে তা বৈধতা হারাবে। তাই শোক কাটিয়ে উঠার পাশাপাশি একটু সময় বের করে প্রিয়জনের রেখে যাওয়া স্মৃতির আঁধার গাড়িখানার মালিকানা পরিবর্তন করে নিন। তাহলে যতটা সহজে সম্ভব চলুন আলোচনা করি কীভাবে খুব সহজে পারবেন মৃত ব্যক্তির গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করতে।
১. প্রথমেই আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে, খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন গাড়ির প্রকৃত মালিক যিনি গত হয়েছেন, তিনি জীবিত থাকাবস্থায় কারো নাম গাড়িটির নমিনী হিসেবে উল্লেখ্য করে গেছেন কিনা। যদি নমিনী করে না যান তবে গাড়ির মালিক সকল ওয়ারিশ। আর যদি নমিনী করে দিয়ে যান তবে যাকে নমিনী করে গিয়েছেন, তিনিই শুধুমাত্র গাড়িটির প্রকৃত মালিক এখন। তিনি নমিনী করা ২০০ টাকার স্ট্যাম্পসহ আরও কিছু ডকুমেন্টস নিয়ে বিআরটিএতে গিয়ে গাড়িটি নিজের নামে রেজিস্ট্রিশেন করে নিতে পারবেন।
২. যদি এমন হয় যে, মৃত ব্যক্তি কাউকে নমিনী করে যাননি তবে মৃত ব্যক্তির সকল ওয়ারিশগণের প্রথমেই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন কিংবা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছ থেকে মৃত ব্যক্তির মৃত্যু সনদ বা ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করে নিতে হবে।
৩. তারপর সেই ডেট সার্টিফিকেটের আলোকে উক্ত ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছ থেকে সকল ওয়ারিশগণের আইডি কার্ডে থাকা নাম বরাবর রেখে একখানা ওয়ারিশান সনদ সংগ্রহ করে নিতে হবে।
৪. মৃতের ওয়ারিশগণের উপস্থিতি- যখন মালিকানা পরিবর্তন করতে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএতে যাবেন তার আগে সকল ওয়ারিশগণের সাথে আগে থেকেই যোগাযোগ রেখে একসাথে একই দিনে, একই সময়ে বিআরটিএতে উপস্থিত হবেন।
৫. একের অধিক ওয়ারিশ হলে সকলের টিন সার্টিফিকেট- যদি মৃতের ওয়ারিশ একের অধিক হোন তবে অবশ্যই সকলের টিন সার্টিফিকেট বিআরটিএ অফিসে সকল কাগজপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। (অনেক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রথম ওয়ারিশের প্রয়োজন হয়, তবে পারলে সবার টিন সার্টিফিকেটই সংগ্রহ করে নিলে ঝামেলা পোহানো থেকে বেঁচে যাবেন অনেকাংশে)
৬. মৃতের এনআইডি কার্ড- মৃতের এনআইডি কার্ডও কাগজপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। এবং খেয়াল রাখবেন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন কার্ডে মৃতের এনআইডি কার্ডের নম্বর দেয়া আছে নাকি জন্মসনদের। যদি জন্ম সনদের নম্বর দেয়া থাকে তবে সেটাও সংযুক্ত করে দিতে হবে।
৭. পূরণকৃত ও স্বাক্ষরিত ‘টিও’ ও ‘টিটিও’ ফরম- এই ফর্মকে বলা হয় (Transfer of ownership)’ (Transfer of ownership by the transferor)’ ফর্ম। অর্থ্যাৎ, মালিকানা পরিবর্তন করছেন, এই মর্মে সকল ডিটেলস সংক্রান্ত ফর্ম। এটি বিআরটিএর নির্ধারিত ওয়েবসাইটের ফর্ম অপশন থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এখানে মূলত ওয়ারিশগণের তথ্য ও গাড়ির তথ্য দেয়া লাগবে।
৮. কোর্ট/স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত ওয়ারিশ সংক্রান্ত সনদ- এটা হচ্ছে আপনি যে ওয়ারিশান সনদ সংগ্রহ করেছেন সেটা। মূল কাগজের সাথে ওয়ারিশান সনদ জমা করে দিবেন।
৯. প্রয়োজনীয় ফি জমা দানের রশিদ- সরকারি ফি যেহেতু কমে বা বাড়ে প্রতিনিয়ত। তাই আপনি সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করে কত টাকা ফি প্রদান করতে হবে তা জেনে ব্যাংক বা বিআরটিএর নির্ধারিত একাউন্টসে জমা দিয়ে দিবেন। আপনাকে যে টোকেন দিবে, সেটাই ব্যাংক ড্রাফট। সেটি কাগজপত্রের সাথে জমা দিতে হবে।
১০. একাধিক ওয়ারিশ থাকলে প্রথম ওয়ারিশের TIN সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি প্রদান করিতে হবে। তবে গাড়িটি ভাড়ায় চালীত নহে এমন কার, জিপ, মাইক্রোবাস হতে হবে।
১১. মূল রেজিস্ট্রেশন সনদ (উভয় কপি)/ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সকল কাগজপত্রের সাথে জমা দিতে হবে।
১২. যদি এমন হয় সকল ওয়ারিশগণ গাড়িটি একজন ওয়ারিশের নামে রেজিস্ট্রেশন করে দিতে চাচ্ছেন তবে ছবিসহ নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে ওয়ারিশসূত্রে মালিকানা প্রাপ্তি সংক্রান্ত ওয়ারিশগণের হলফনামা অর্থাৎ একাধিক ওয়ারিশ থাকলে এবং একজনের নামে মালিকানা প্রদান করা হলে সেক্ষেত্রে অন্যান্য ওয়ারিশগণ কর্তৃক সকলের ছবিসহ নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে আরও একটি হলফনামা প্রদান করিতে হইবে।
১৩. নমুনা স্বাক্ষর ফর্মে নমুনা স্বাক্ষর এবং ইংরেজীতে নাম, পিতার/স্বামীর নাম, পর্ণ ঠিকানা ও ০৩ তিন) কপি স্ট্যাম্প আকারের রঙ্গীন ফটোসহ ফরমের অন্যান্য তথ্য পূরণ করে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ তে জমা দিতে হবে।
এইতো হয়ে গেলো, আপনার মালিকানা পরিবর্তনের প্রথম ধাপের সকল কাজ। কাগজপত্র নির্ধারিত ডেস্কে জমা দেয়ার পর সেখান থেকে আপনাকে একটি স্লিপ প্রদান করা হবে। এবং বলা হবে নির্ধারিত কোন এক তারিখে এসে নতুন মালিকানা রেজিস্ট্রেশন সনদ তুলে নিয়ে যেতে। ব্যাস।
দ্বিতীয় ধাপে, নির্ধারিত তারিখে সেই বিআরটিএ অফিসে আপনার গাড়ি নিয়ে যাবেন। সংশ্লিষ্ট ডেস্কে গিয়ে স্লিপ জমা দিবেন। তারপর আপনাকে নতুন মালিকানা রেজিস্ট্রেশন সনদ প্রদান করা হবে এবং প্রয়োজকল্পে কোন এক বিআরটিএ কর্মকর্তা আপনার সাথে এসে গাড়ি দেখে যাবেন এবং প্রয়োজনীয়তা থাকলে গাড়িতে সিল কিংবা কোন স্টিকার লাগিয়ে দিয়ে যাবেন। এইতো এতোটুকুই। এবার প্রিয় গাড়িটি আপনার। আপনি এখন আপনার প্রিয় গাড়িটির বৈধ মালিক। এখন আপনার পথচলা শুভ হোক। আপনার জন্য শুভ কামনা।
শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।