প্রহরী

পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

গাড়িতে শর্ট সার্কিট হচ্ছে নাতো? নিজেই পরখ করে দেখুন!

সংক্ষেপে বলতে গেলে, শর্ট সার্কিট হচ্ছে একটি বৈদ্যুতিক সার্কিটে তার ওয়্যারিং জনিত সমস্যা। যাআর কারণে বিদ্যুৎ সঠিক গন্তব্যে না পৌঁছে সার্কিটগুলোর মধ্যে চলে যায়। অনেকে ওপেন সার্কিটের সাথে একে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু দুটি একেবারে ভিন্ন বিষয়। ওপেন সার্কিটের ফলে বৈদ্যুতিক সিস্টেমে কোন ধরণের বিদ্যুৎ প্রবাহ হয় না। কিন্তু সার্কিট শর্ট হয়ে গেলে বিদ্যুৎ  প্রবাহ হয় কিন্তু ভুল দিকে। যদিও শর্ট সার্কিট এবং ওপেন সার্কিটের উপসর্গ প্রায় একই, কিন্তু কোনটা শর্ট সার্কিট আর কোনটা ওপেন সার্কিট তা নিরূপণ করার পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন। বিভিন্ন কারণে শর্ট সার্কিট হতে পারে। শর্ট সার্কিট খুঁজে বের করা এবং মেরামত করা খুব কিছুটা দুরূহ কাজ বটে। তাই শর্ট সার্কিট খুঁজে বের করার আগে আপনাকে বুঝতে হবে গাড়িতে কীভাবে বৈদ্যুতিক সার্কিট কাজ করে।

গাড়ির বৈদ্যুতিক সার্কিটের কর্মপদ্ধতি

গাড়ির বৈদ্যুতিক সার্কিট থেকে বিভিন্ন উপায়ে গাড়ির বৈদ্যুতিক সিস্টেমে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে। এবং শর্ট সার্কিটের কারণে এই বিদ্যুৎ প্রবাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে। গাড়ির বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। সেন্সর এবং একচুয়েটর। লাইট সেন্সর, সুইচ, অক্সিজেন সেন্সর এরকম বেশ কিছু সেন্সর গাড়িতে থাকে। আবার মোটর, লাইট ইত্যাদি একচুয়েটরও থাকে গাড়িতে।

একটি সাধারণ সেন্সর সার্কিট, যেমন ইঞ্জিন কুল্যান্ট টেম্পারেচার। ইঞ্জিন কন্ট্রোল মডিউলের (ইসিএম) সাথে ইঞ্জিন কুল্যান্ট টেম্পারেচার সেন্সরের (ইসিটি) মধ্যে তার দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহণের মাধ্যমে এই সেন্সর কাজ করে থাকে। ইসিএম সাধারণত গ্লাভস বক্সের পেছনের দিকে অবস্থিত, অন্যদিকে ইসিটি থাকে ইঞ্জিনে, যা তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে রেজিস্টেন্স তৈরি করে থাকে। যখন ইসিটি সেন্সর ঠান্ডা থাকে, তখন এর রেজিস্টেন্স থাকে সর্বোচ্চ। ফলে ইসিএম এ ভোল্টেজের পরিমান কম থাকে। যখনি ইঞ্জিন গরম হতে থাকে, ইসিটি সেন্সর সেই অনুপাতে রেজিস্টেন্স কমতে থাকে। ফলে ইসিএম এ অধিক পরিমান ভোল্টেজ প্রবাহিত হয়।

একটি সাধারণ একচুয়েটর সার্কিট, যেমন হেডলাইটের কথাই ধরা যাক। গাড়ির ব্যাটারি থেকে হেডলাইটে তারের মাধ্যমে ফিউজ, সুইচ এবং তরঙ্গের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবাহত হয়ে থাকে। হেডলাইটের সুইচে সবসময় বিদ্যুৎ থাকে। কিন্তু যতক্ষণ না ড্রাইভার সুইচ অন করবে ততক্ষণ হেডলাইটের বাল্বে বিদ্যুৎ পরিবহণ হয় না।

যতদিন এই সার্কিটগুলো ইন্ট্যাক্ট থাকে ততদিন সাধারণত গাড়ির ওয়্যারিং এর সমস্যা হয়না এবং শর্ট-সার্কিটের ঘটনা তেমন একটা ঘটে না। কিন্তু নানা কারণেই গাড়ির বৈদ্যুতিক তারের ওয়্যারিং ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এবং তারপরি ঘটতে পারে শর্ট সার্কিট। শর্ট সার্কিট থেকে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

বিভিন্ন রকম শর্ট সার্কিট

সাধারণত দুই রকম শর্ট সার্কিট হয়ে থাকে। শর্ট-টু-পাওয়ার এবং শর্ট-টু-গ্রাউন্ড শর্ট সার্কিট। এসব শর্ট সার্কিটের কারণে সেন্সর এবং একুয়েটরে বিদ্যুতের সঠিক প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়।

শর্ট-টু-গ্রাউন্ড শর্ট সার্কিট

যখন সার্কিট থেকে বিদ্যুৎ গাড়ির বডিতে চলে যায় তখন তাকে শর্ট-টু-গ্রাউন্ড শর্ট সার্কিট বলা হয়। অনেক সময় তার ছিড়ে বা কেটে গিয়ে গাড়ির বডিতে লেগে থাকতে পারে। এর ফলে শর্ট-টু-গ্রাউন্ড শর্ট সার্কিট সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে ফিউজ জ্বলে যেতে পারে, গাড়ির মোটর বা লাইটের সেন্সর কাজ না করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ শর্ট-টু-গ্রাউন্ড শর্ট সার্কিটের ফলে গাড়ির হেডলাইটের ফিউজ জ্বলে যেতে পারে। এতে করে সার্কিটের ওভারহিটিং কমে যাবে কিন্তু হেডলাইট জ্বলবে না। তখন আবার হেটলাইটের ফিউজ ঠিক করাতে হবে।

শর্ট-টু-পাওয়ার শর্ট সার্কিট

গাড়ির ভেতর বৈদ্যুতিক সার্কিটের অনেক কাছাকাছি অনেক তার এবং বৈদ্যুতিক পার্টস থাকে। এসব তার থেকে বিদ্যুৎ সার্কিটে প্রবাহিত হয়ে শর্ট টু পাওয়ার শর্ট সার্কিট হতে পারে। এমনকি একটি তার থেকে আরেক তারে অপ্র্যজিনিয় বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে শর্ট সার্কিট হতে পারে। যেমন, গাড়িতে কোন পার্টস নতুন করে লাগানোর সময় তার কেটে একটার সাথে আরেকটা লেগে থাকিতে পারে। এতে যদি শর্ট সার্কিট হয় তাহলে দেখা যাবে হর্ন চাপলে লাইট জ্বলে বা লাইটের সুইচ চাপলে হর্ন বাজে!

একটি গাড়িতে হাজারও রকমের বৈদ্যুতিক তার এবং দীর্ঘ তার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই এগুলোর সার্কিট শর্ট হবার সম্ভাবনা থাকে।। শর্ট সার্কিটের কাওনে গাড়ির পার্টস, এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের ক্ষতি করতে পারে। ব্যাটারি ড্রেইন হয়ে যেতে পারে অথবা চলতে চলতে থেমে যেতে পারে গাড়ি ।

শর্ট সার্কিট পরখ করার নিয়ম

শর্ট সার্কিট অনুসন্ধান করার জন্য যথেষ্ট সময় এবং ধৈর্য দরকার। প্রথমেই আপনার একটি ইডব্লিউডি দরকার পড়বে। এর মাধ্যমে কাইট বা মাল্টিমিটার এবং অন্যান্য জন্তারংশের তার ছিঁড়েছে কিনা পরীক্ষা করা যায়। প্রথমে যে সার্কিটঅটি পরীক্ষা করবেন সেটি চিহ্নিত করুন। এই সার্কিটের তারগুলো গাড়ির কোথায় কোথায় গিয়েছে কার সাথে যুক্ত হয়েছে এবং তারগুলোর রঙ চিহ্নিত করুন।

১২ ভোল্টের সার্কিট পরীক্ষা করার জন্য প্রথমে সার্কিটের ফিউজ দিয়ে পরীক্ষা শুরু করা যেতে পারে। সার্কিটের ফিউজ খুলে নিয়ে, টেস্ট লাইট ফিউজ সকেটের দুইপ্রান্তে লাগিয়ে এই পরীক্ষা করা যায়। একই পদ্ধতিতে মাল্টিমিটার ব্যবহার করে বিদ্যুৎ পরিবহণ ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করা যায়। ব্যাটারির পজেটিভ কানেকশন বিমুক্ত করে ফিউজের লোড সাইডে মাল্টিমিটারের পজেটিভ প্রোব যুক্ত করুন। আর নেকেটিভ প্রোবটি ব্যাটারির নেগেটিভ এ যুক্ত করুন। যদি শর্ট সার্কিট থাকে তাহলে মাল্টি মিটার বিপ করবে।

এবার লোড সাইড বা সেন্সরের কানেক্টর বিমুক্ত করুন। এবার যদি লাইট অফ হয়ে যায় বা মাল্টিমিটার বিপ দেয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে বুঝতে হবে লোড সাইডে অভ্যন্তরীণ কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে।

এবার লোড বা সেন্সর আবার যুক্ত করুন। এখন কানেক্টর রাতের মাঝমাঝি কোথাও কোন একটা যন্ত্রাংশ খুলে একই পদ্ধতিতে টেস্ট করে দেখুন। যেমন সুইচ। এবার যদি লাইট নিভে যায় বা মাল্টিমিটার বিপ দেয় তাহলে বুঝতে হবে শর্ট সার্কিট লোদ এবং সুইচের মধ্যবর্তী কোন একজায়গায় তৈরি হয়েছে। এই অংশের তার এবং তারের জোড়া ভালোভাবে খেয়াল করুন।

তারের কোথায় চাপ দিয়ে ধরলে কখনো কখনো শর্ট সার্কিট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমন কোথাও চাপ দিয়ে যদি দেখা যায় শর্ট-সার্কিট নাই তাহলে বুঝতে হবে চেপে ধরা জায়গাটিই শর্ট সার্কিটের উৎপত্তি স্থল।

সুইচ ডিসকানেক্ট করার পরেও যদি বাতি নিভে না যায় বা মাল্টিমিটার বিপ দেয় তাহলে বুঝতে হবে এখনো কোথাও সার্কিট শর্ট হয়ে আছে। এবার তারের অন্য অংশ চেপে ধরে একই পরীক্ষা চালান। যতক্ষণ না বাতি নিভে যাচ্ছে ততক্ষণ এই পরীক্ষাটি চালাতে পারেন।

৫ ভোল্টের বিভিন্ন সার্কিট, যেগুলো ইসিএম এ ইঞ্জিন কন্ট্রোল এবং সেন্সরের কাজ করে থাকে সেগুলোর শর্ট সার্কিট পরীক্ষা করার জন্য ইসিএম এবং ব্যাটারি বিমুক্ত করুন। এবার মাল্টিমিটার ব্যবহার করে বিদ্যুৎ প্রবাহ পরীক্ষা করুন। এবার সার্কিট এবং গাড়ির বডির মাঝামাঝি বা ইঞ্জিনের মাঝমাঝি মাল্টিমিটার প্রোব সেট করুন। এবার ভাগে ভাগে মাল্টিমিটার বসিয়ে, কোন অংশে শর্ট সার্কিট হয়েছে তা খুঁজে বের করুন।

সার্কিট কোথায় শর্ট হয়েছে তা যদি একবার খুঁজে বের করতে পারেন তাহলে এবার এটি মেরামত করার পালা। ব্যাটারি কানেক্ট করার এবং নতুন ফিউজ লাইট লাগানোর আগে টেস্টলাইট বা মাল্টিমিটারের মাধ্যমে পুনরায় সার্কিট পরীক্ষা করে নিন।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top