গত এক শতক ধরে হলিউডের বিভিন্ন সিনেমায় দুর্দান্ত সব গাড়ির আধিপত্য দেখা মিলেছে। গাড়িকে ঘিরে, গাড়ির রেস নিয়ে প্রতি বছর নিয়মিত সিনেমা বানানো হচ্ছে। আবার কোন কোন সিনেমায় ব্যবহার করা হচ্ছে বিখ্যাত ব্র্যান্ডের বিভিন্ন সুপারকার। ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াসের কথা এই যুগে কে না জানে? মোটর রেসিংকে কেন্দ্র করে এই সিনেমা ফ্র্যঞ্চাইজ কোটি ভক্তের মন জয় করে নিয়েছে। ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াসের কল্যাণে তারকাখ্যাতি পাওয়া পল ওয়াকার নিজেও মৃত্যুবরণ করেছিলেন রোড আক্সিডেন্টে। তারপর থেকে এই সিনেমার প্রতি মানুষের আবেগও বেড়েছে। আর সাইকো বা অ্যাকশন থ্রিলার যেটাই বলেন না কেন, ম্যাড ম্যাক্সের কথা সেখানে না বললেই নয়। অস্কার পাওয়া এই সিনেমাটির কেন্দ্রেও রয়েছে গাড়ি। এমন কিছু বিখ্যাত সিনেমার কথাই আজ তুলে ধরবো, যেগুলোর গল্পের সাথে গাড়ি কিংবা রেসিং জড়িত।
১. গন ইন সিক্সটি সেকেন্ডস
ডমিনিক সেনার বানানো সিনেমা গন ইন সিক্সটি সেকেন্ডস মূলত গাড়ি চুরি নিয়ে একটি কাহিনীকে কেন্দ্র করে বানানো হয়েছে। এটি আসলে একই নামের অন্য একটি সিনেমার রিমেক করা সিনেমা। আর এতে অভিনয় করেছেন বিখ্যাত নিকোলাস কেজ ও এঞ্জেলিনা জোলি। একজন গাড়ি চোরকে তার ভাইয়ের জীবন বাঁচানোর জন্য এক রাতের মধ্যে ১৫ টি গাড়ি চুরির নির্দেশ দেয়া হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার সবচাইতে নামকরা গাড়ি চোর এই মিশনের জন্য তার পুরনো গ্যাং কে আবারো গড়ে তোলেন। অপরদিকে আরেকটি গাড়ি চোরের গ্যাং একই মিশনে নামে। শেষ পর্যন্ত কারা এই মিশনে সফল হয়েছিল জানতে হলে, এই সিনেমাটি দেখতে পারেন। সিনেমায় গাড়ির ব্যবহার স্টান্ট এবং অ্যাকশন দেখে দর্শক হিসেবে সময়টা খারাপ কাটবে না।
২. অ্যাপেক্সঃ স্টরি অফ আ হাইপার কার
যাদের অ্যাকশন ভাল লাগেনা তবে গাড়ি নিয়ে চমৎকার ডকুমেন্টারি ফিল্ম দেখতে আগ্রহ তাদের জন্য অ্যাপেক্সঃস্টোরি অফ আ হাইপার কার সিনেমাটি। বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন ক্লাসিক স্পোর্টস কারের উন্নতির পেছনে কী কী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এইসব প্রযুক্তি মানুষের জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলছে এইসব দিক নিয়েই বিস্তারিত দেখানো হয়েছে এই ডকুমেন্টারি সিনেমাতে। পোরশে, ল্যাম্বরগিনি, ফেরারি। বিএমডাব্লিউর মতো বিখ্যাত গাড়ির ব্র্যান্ডগুলো, শুধু গাড়ির জন্য কী কী উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং প্রয়োগ করছে, তাও দেখানো হয়েছে। চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফির মাধ্যমে হাইপারকার এবং সুপারকারের মধ্যে তফাৎটাও বেশ ভাল ভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে এই ডকু ফিল্মে।
৩. ড্রাইভ
হলিউড সিনেমার একজন স্টান্টম্যানকে নিয়ে এই সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে। যার কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রায়ান গোসলিং। দিনের বেলা স্টান্টম্যান হিসেবে কাজ করলেও রাতে তিনি ড্রাইভারের কাজ করেন। যেন তেন ড্রাইভার না। সন্ত্রাসী ও পাচারকারীদের গেটওয়ে ড্রাইভারের কাজ করে। এই কাজ করতে গিয়েই তিনি একটা ফাঁদে পড়ে যান। এভাবেই এগোতে থাকে সিনেমার গল্প। এই সিনেমাতে রায়ান গোসলিংকে ১৯৭৫ শেভলে গাড়িটি চালাতে দেখা যায়। যারা থ্রিলার পছন্দ করেন, তাদের কাছে এই সিনেমাটি অবশ্যই ভাল লাগবে।
৪. ম্যাড ম্যাক্স
অ্যাকশন সিনেমা যাদের খুব ভাল লাগে তাদের পছন্দের তালিকায় অনায়াসেই জায়গা করে নেয় ম্যাড ম্যাক্স সিরিজের সিনেমা। এই সিরিজের শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। মূলত অনেক অনেক বছর পর যখন মানবসভ্যতা বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যাবে তখনকার সময়ের কথা চিন্তা করেই এই সিনেমাগুলোর গল্প সাজানো হয়েছে। এই সিরিজের প্রথম সিনেমা ম্যাড ম্যাক্স। সর্বশেষ ম্যাড ম্যাক্সঃ ফিউরি রোড মুক্তি পেয়েছিল ২০১৫ সালে। এই সিনেমাগুলোতে গাড়ির ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। জর্জ মিলারের পরিচালনায় ম্যাড ম্যাক্স ফিউরি রোডের ক্ষেত্রে যা একেবারেই সত্য। ফিউরি রোডে একজন নারী তার জন্মভূমির খোজে এপক্যালিপটিক সময়ে এক অত্যাচারী রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। তার সঙ্গী হিসেবে ছিলো ম্যাক্সের চরিত্রে অভিনয় করা টম হার্ডি।
৫. ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস
বর্তমান জেনারেশনে যে কাউকে যদি একটি গাড়ি এবং রেসিং ভিত্তিক কোন সিনেমার নাম বলতে বলা হয় তাহলে সবাই যেই সিনেমাটির কথা বলবে সেটি হলো ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস। বিশ্ব বিখ্যাত এই মুভি ফ্রাঞ্চাইজের সিরিজে মোট ৮ টি সিনেমা ইতোমধ্যে মুক্তি পেয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে এই সিরিজের নবম সিনেমাটিও। যাতে অভিনয় করবেন বিখ্যাত রেসলার জন সিনা। গাড়ি, রেসিং, গাড়ি রেসিং গ্যাং নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে তারা অবশ্যই এই সিনেমাটি দেখতে ভুলবেন না।
৬. লি ম্যানস
ফ্রান্সের লি ম্যানস রেসিং প্রতিযোগিতায়, একজন রেসিং ড্রাইভারের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সিনেমার গল্প। সিনেমাটি ১৯৭০ সালে ফ্রান্সের লে ম্যানস রেসিং এর শেষ ২৪ ঘন্টার কাহিনি নিয়ে বানানো। বিখ্যাত রেসাল মাইকেল ডেলিনিকে আগের বছরের রেসে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনার স্মৃতি কিভাবে তাড়া করে বেড়ায় তাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই সিনেমাতে আরেক ফেরারি ড্রাইভার এরিকের সাথে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতাও তুলে ধরা হয়েছে।
এই মুভিগুলোর প্লট, কাহিনী, সিনেমাটোগ্রাফি, তারকা সবকিছু মিলিয়ে গাড়ি নিয়ে নির্মিত উপরের সারির সিনেমা। অবসর সময়ে বিনোদনের জন্য এই মুভিগুলো দেখে সময় কাটাতে পারেন। তাতে অবসর হয়ে উঠবে উপভোগ্য ।