আমরা সকলেই জ্যাম কিংবা যানজটের সাথে পরিচিত। যারা ঢাকা কিংবা ঢাকা শহরের আশেপাশে বসবাস করেন এবং প্রতিনিয়ত যাতায়ত করতে হয়। তাদের প্রায় সকলেই ট্রাফিক জ্যামের সাথে অভ্যস্ত। যে মানুষটার কাছে একটা সময় পাঁচ মিনিটের সিগন্যাল বিষাক্ত মনে হতো সেও আজ আধা ঘন্টার রাস্তা পার হতে তিনঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হয়। তারপরও শিওর হতে পারে না নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাতে পারবে কিনা! সে দুঃখের কথা আজ থাকুক, তবে আজ আমরা আলোচনা করবো বিশ্বের দীর্ঘতম ট্রাফিক জ্যাম যা স্থায়ী হয়েছিল একটানা ১২ (বারো) দিন। তো চলুন জেনে নেই টানা ১২ দিনের ট্র্যাফিক জ্যামের প্রকৃত রহস্য কি ছিল?
কী অবাক হচ্ছেন! অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? হওয়ারই কথা। তবুও এটাই সত্যি। এমন অবিশ্বাস্য ঘটনার প্রকৃত ইতিহাসের অদ্যপ্রান্তই জানবো আজ চলুন জেনে নেই বিশ্বের দীর্ঘতম ট্রাফিক জ্যামের প্রকৃত রহস্য-
আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগের কথা। ২০১০ সালের আগষ্ট মাসের। চীন প্রশাসন রাস্তার উন্নয়ন এবং সংস্কারের কাজের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন যে, সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ রাখা হবে দেশের একাধিক মহাসড়ক। সেই বন্ধ থাকা মহাসড়কগুলোর সক্ষমতা ছিল দেশের মোট যানবাহন চলাচলের ৫০ শতাংশ। ফলে ট্রাফিক বিভাগ নিশ্চিত ছিলেন যে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ এক্সপ্রেস ওয়েগুলি বন্ধ হয়ে গেলেও বাকি রাস্তাগুলো মোটামুটি যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হবে। কারণ চিনের অধিকাংশ মহাসড়কগুলোই ছিল ৮-১০ লেন এবং কিছু কিছু মহাসড়ক ছিল আরও বেশি প্রশস্ত। সেই সুবাদে চীনের ট্রাফিক পুলিশ অথোরিটি আগে ঘোষণা দিয়ে মানুষকে একান্ত প্রয়োজন ব্যতিত ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে কিছুটা নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
সেদিন ছিল ১৪ আগস্ট ২০১০ সাল। রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই গোটা দেশজুড়ে যানবাহনের এলোমেলো এপ্রোচ লক্ষ করতে থাকে ট্রাফিক বিভাগ। মানুষ এই সংস্কারের বিষয়টিকে খুব সিরিয়াসলি নেয়নি বলেই ধরে নেয়া হয়। মানুষ আগের মতোই যথারীতি গাড়ি নিয়ে বের হয় এবং ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়।
তখন যানজটে নাকাল হয়েছিল দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজপথগুলিও। তবে ভয়াবহ পরিণতি হয় চিনের ১১০ নম্বর জাতীয় সড়কের। বেশ কয়েকটি লেন একসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়ায় এমনিতেই কমেছিল মহাসড়কের গতিময়তা। সেইসঙ্গে পরিস্থিতি আরও দুরূহ করে তোলে অজস্র মালবাহী ট্রাক। এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে, তার বিন্দুমাত্র আঁচ পায়নি ট্রাফিক কন্ট্রোল বোর্ডও।
প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে স্থায়ী হয়েছিল চীনের বেইজিং শহরের এই যানজট। এতে আটকে থাকা গাড়ির সারির দৈর্ঘ্য ছিল আনুমানিক ১০০ কিলোমিটার। বিশ্বের দীর্ঘ এই যানজটে সারাদিনে কারোর ভাগ্য জুটেছিল ০১ (এক) কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার সুযোগ। কোনো গাড়ি আবার একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল টানা ২-৩ দিন। কেউ কেউ বড়ো মালবাহী গাড়ির নিচেই করেছিলেন থাকা খাওয়া ও ঘুমানোর ব্যবস্থা।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বেইজিং এর এই ১০০ কিলোমিটারের বিশ্বের দীর্ঘতম ট্রাফিক জ্যামে যখন পুরো দেশে অচল অবস্থা বিরাজ করেছিল তখন হকার শ্রেণির ব্যবসা ফুলে ফেপে উঠেছিল। কথায় আছে না, ‘কারোর সর্বনাশ, তো কারোর পৌষ মাস’। এই জ্যামেও হয়েছিল ঠিক তাই। মানুষের অসহায়েত্বের সুযোগ নিয়ে সেসময় খাবার থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম হাঁকা শুরু হয়েছিল আকাশচুম্বী। তৎকালীন শুধুমাত্র প্রায় ১৫ গুণ দামে বিক্রি হয়েছিল পানীয় জলের বোতল। চিন্তা করুন, বাকি পণ্যের অবস্থা কেমন ছিল!
আগস্টের ১৪ তারিখে সৃষ্ট যানজাটটির সমাপ্তির সৃষ্টি হয় টানা ১২ দিন পর ২৬ আগস্ট। চিনের এই ‘মেগা ট্রাফিক জ্যাম’ যা বিশ্বে এপর্যন্ত দীর্ঘতম ট্রাফিক জ্যাম । এই জ্যাম শেষ পরযন্ত কাটলেও, মুক্তি মেলেনি চিনের। হঠাৎ জট কাটার পর আটকে থাকা গাড়ির স্রোতে গতিরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল চিনের ছোটো ছোটো রাস্তাগুলিও। জ্যাম ছোটার পরও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল কয়েক কোটি মানুষকে বেশকিছুদিন যাবৎ। তবে এই ঘটনার পরেও তেমন কোনো শিক্ষা নেয়নি চিন। ২০১৫ সালে পুনরায় একইরকম যানজট তৈরি হয়েছিল চিনের জি-৪ বেজিং-হংকং এক্সপ্রেসওয়েতে। যা স্থায়ী হয়েছিল ১০ দিন পর্যন্ত।
চীনের এই দীর্ঘ ১২ দিনের ট্র্যাফিক জ্যাম অর্থনীতিতে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। কোটি কোটি মানুষের মিলিয়ন বিলিয়ন কর্মঘন্টা নষ্ট হয়েছিল। পুরো শহর জুড়েই মানুষের মাঝে একধরনের মানসিক, শারীরিক এমনকি অর্থনৈতিক অবসাদেরও সৃষ্টি হয়।
চীনের বেইজিং এর এই দীর্ঘ ১২ দিনে ট্রাফিক জ্যাম আজও পৃথিবীর ইতিহাসে দীর্ঘতম ট্রাফিক জ্যামের খেতাব ধরে রেখেছে। যা আজও বিশ্বব্যাপী রেকর্ড হয়ে আছে। যা এক বিরল দৃষ্টান্ত। এক ভয়াবহ ভোগান্তির নাম।
শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।