আপনার প্রিয় গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছেন। ভালোই চালাচ্ছেন, কিন্তু হঠ্যাৎ হাইওয়েতে হঠাৎ গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলে করণীয় কি? ভালোই বিপদে পড়েছেন। যেহেতু নিজেও অতোটা ভালো ইঞ্জিনের কাজ জানেন না এবং আশেপাশেও কোন মেকানিক্যাল গ্যারেজ নেই। সেহেতু, এখন ভয়াবহ বিপদ আপনার। তবে এমন বিপদে পড়তে না চাইলে চলুন পড়ে ফেলি আজকের আলোচনা। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই এমন মাঝপথে গাড়ি বন্ধ না হওয়ায় করণীয় এবং মাঝপথে গাড়ি বন্ধ হলে কী কী করণীয় আপনার তার বিস্তারিত জানতে পারবেন সহজ ও সাবলীল আলোচনার মধ্য দিয়ে খুব সহজেই।
গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার আগে করণীয়
- টেস্ট ড্রাইভঃ গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার আগে গাড়ির ইঞ্চিন, লাইটিং সিস্টেম, ব্যাটারির পানি ও কানেকশান, স্টিয়ারিং ইত্যাদি সঠিকভাবে কাজ করছে কি না, নাট-বোল্টগুলো টাইট আছে কি না তা দেখে নিতে হবে। গাড়ি একটু চালিয়ে ব্রেক ও ক্লাসের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে নিতে হবে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে মোটরযানটি ত্রুটিমুক্ত আছে কি না তা দেখে নেয়া খুবই জরুরি, যাকে বলা হয় টেস্ট ড্রাইভ।
- মবিল বা ইঞ্জিন অয়েল চেক করাঃ রাস্তায় বের হওয়ার আগে অবশ্যই ইঞ্জিন অয়েল চেক করে নিতে হবে। যদি দেখা যায় আজকে যে পরিমাণ ভ্রমণ করা হবে তারচেয়ে মবিল এর সক্ষমতা অনেক কম তবে মবিল বা ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করে নিতে হবে।
- ব্যাটারির পানি ও কানেকশনঃ ব্যাটারিতে পর্যাপ্ত পানি এবং কানেকশনগুলো যথাযথভাবে সংযুক্ত আছে কিনা তা ভালো করে চেক করে নিতে হবে।
- টুলবক্সঃ মনে করে অবশ্যই টুলবক্সের সকল টুল যথাযথ আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে গাড়ি নিয়ে বের হতে হবে।
- অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রঃ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদ আছে কিনা তা চেক করে নেয়া এবং এর চাবিগুলো ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা।
- চাকাঃ চাকার প্রেসার ও কন্ডিশন, হাওয়া, নাট, এলাইমেন্ট, রোটেশন, স্পেয়ার চাকা ইত্যাদি পরীক্ষা করে নেয়া।
- সর্বোপরিঃ অবশ্যই অবশ্যই গাড়ির জ্বালানী যথেষ্ট মজুদ আছে কিনা এবং গাড়ির সকল কাগজপত্র সাথে আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই তবে রাস্তায় নামা।
ব্যাস, উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলে আশা করা যায় গাড়ির তেমন কোন সমস্যা হবে না। তবুও যদি কোন কারণ বশত গাড়ি রাস্তায় বন্ধ হয়ে যায় তবে কী হবে আপনার করণীয় চলুন বিস্তারিত জেনে নেই নিচের আলোচনায়।
- গাড়ি রাস্তায় বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং আর স্টার্ট না নেওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে ব্যাটারিতে পর্যাপ্ত চার্জ না থাকা। অনেক সময় গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ রেখে দীর্ঘক্ষণ রুম লাইট জ্বালিয়ে রাখলে অথবা এসি চালিয়ে রাখলে অথবা সিডি কিংবা ডিভিডি প্লেয়ার চালিয়ে রাখলে ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে যদি মাঝপথে গাড়ি স্টার্ট না হয় তবে রাস্তায় চলাচলকারী অন্য একটি গাড়ির ড্রাইভারকে অনুরোধ করে ঐ গাড়ির ব্যাটারি থেকে ক্যাবল দিয়ে জাম্পিং করে গাড়ি স্টার্ট করে নিতে পারবেন।
- ইগনিশন সুইচ এ সমস্যা থাকার কারণে অনেক সময় গাড়ি স্টার্ট নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি বাম হাতে শিফট লিভার ধরে P থেকে N এবং N থেকে P তে নাড়াতে থাকুন আর ডান হাতে গাড়ি স্টার্ট দিতে থাকুন, আশা করি কাজ হয়ে যেতে পারে. ইনশাআল্লাহ।
- গাড়ির স্টার্টার মটর অকেজো হওয়াটাও অনেক সময় গাড়ি স্টার্ট না হওয়ার কারণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে গাড়ির স্টার্টার মটর জ্যাম অথবা কানেকশন লোজ হয়ে যেতে পারে। তো কানেকশানগুলো নেড়েচেড়ে লুজ থাকলে টাইট করে স্টার্ট করার চেষ্টা করুন।
- অনেক সময় ৬০-৮০ হাজার কিলোমিটার চলার পর গাড়ির স্টার্টার মটর জ্যাম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি অন্য গাড়ির সহায়তায়ও গাড়ি স্টার্ট করতে পারেন। কিংবা হাতে একটি রেঞ্জ অথবা লোহার দন্ড নিয়ে স্টার্টার মটরের যে অংশটি ইন্জিনের বডির সাথে লাগানো থাকে তাতে আস্তে আস্তে একজনকে আঘাত করতে বলুন আর আপনি ইন্জিন স্টার্ট দিতে থাকুন কাজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক।
- পুশ স্টার্ট গাড়ি হলে রিমোট কি এর ব্যাটারি ডেমেজ হয়ে গেলে অনেক সময় গাড়ি স্টার্ট নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি রিমোট কি মনিটরের একেবারে কাছে রেখে পুশ করে দেখতে পারেন গাড়ি স্টার্ট হয় কি না। তাতে যদি কাজ না হয় তবে রিমোট কি পুশ বাটনে লাগিয়ে আস্তে করে পুশ করুন গাড়ি স্টার্ট হয়ে যেতে পারে। পরে সময় মত রিমোট কি এর ব্যাটারি চেঞ্জ করে নিবেন।
- ইঞ্জিন অভার হিট হয়ে গেলে গাড়ি বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং স্টার্ট নাও হতে পারে কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝবেন যে ইন্জিন অভার হিট হয়ে গেছে? আপনি ইঞ্জিন মিটারে দেখুন মিটারের কাটা কোথায় আছে? মিটারের কাটা যদি C এবং Fএর মাঝামাঝি থেকে উপরে উঠে যায় তাহলে বুঝে নিবেন ইঞ্জিন অভার হিট হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে ইঞ্জিন ঠান্ডা হলে পুনরায় স্টার্ট দেওয়ার চেষ্ট করুন। আশা করি এবার ইঞ্জিন স্টার্ট হয়ে যাবে।
- গাড়ি স্টার্ট না হওয়ার আরও অনেক কারণ থাকতে পারে যেমন Exhaust pipe এ ময়লা আবর্জনা লেগে বন্ধ হয়ে যাওয়া অথবা কেউ যদি ইচ্চে করে বন্ধ করে রাখে। তো সেক্ষেত্রে আপনাকে Exhaust pipe পাইপ পরিষ্কার করতে হবে এবং গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার আগেই এই বিষয়টি খেয়াল করে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখলেই আশা করি, মাঝপথে গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলেও ভীতির কোন কারণ থাকবে না। তবুও যদি গাড়ি স্টার্ট না হয় তবে অন্য গাড়ির সাহায্য নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ গ্যারেজে গাড়ি নিয়ে চলে চলে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।