প্রহরী

গাড়ির ফিটনেস নবায়ন
পড়তে লাগবে: 3 মিনিট

গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করুন অনলাইনে

আপনার শখের গাড়িটি রাস্তায় চলার জন্য শতভাগ উপযুক্ত কি না, তা ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়ার আগেই নিশ্চিত হয়েছেন তো? শরীরের সুস্থতা নিশ্চিত হতে যেমন স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিকল্প নেই। ঠিক তেমনি, গাড়ির চলাচলের যান্ত্রিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে গাড়ির আনুসাঙ্গিক পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নিয়মিত গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করা অতিশয় জরুরী। গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন কিন্তু শুধুমাত্রই অফিশিয়াল কোন ফর্মালিটি নয়। বরং, আইনানুগভাবে রাস্তায় আপনার গাড়িটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এই ফিটনেস নবায়নের প্রক্রিয়া। কিন্তু এটা খুব কঠিন কিছু? এর উত্তরটিই জানবো আজকের ব্লগটিতে। সাথে আরো থাকবে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন নিয়ে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

গাড়ির ফিটনেস নবায়ন কেন করবেন?

রাস্তায় গাড়ির চাকা ঘোরানোর জন্য বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বাধ্যতামূলক পূর্বশর্ত হচ্ছে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকা। প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা ও অভিজ্ঞ পরিদর্শক দ্বারা পরিদর্শনের পর প্রদান করা এই ফিটনেস সার্টিফিকেট নিশ্চিত করে যে গাড়িটির ব্রেক, লাইট, টায়ারসহ যাবতীয় অংশ রাস্তায় চলার জন্য উপযুক্ত। নির্ধারিত সময়কাল পর পর নিয়ম করে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন করার মাধ্যমে সড়কপথের দূর্ঘটনার ঝুঁকি বেশ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব। এমনকি নিয়মিত গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন করার মাধ্যমে প্রকৃতির উপর যান্ত্রিকতার বিরূপ প্রভাব হ্রাস করাও সম্ভব। সেই সাথে চলতিপথে গাড়ির ফিটনেস নিয়ে আইনী জটিলতা থেকে তো উদ্ধার করবেই এই সার্টিফিকেটটি।

অনলাইনে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন যেভাবে করবেন

বাংলাদেশের আইনানুসারে দুই বছর পর পর গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন করতে হয়। গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন প্রক্রিয়ায় রয়েছে বেশ কিছু ধারাবাহিক ধাপ। চলুন সহজ ভাষায় জেনে নেই সেই ধাপগুলি

১. মেয়াদের তারিখ জেনে রাখা

সময়মতো গাড়ির ফিটনেস চেকাপ ও ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়নের জন্য প্রথমেই জরুরী হচ্ছে গাড়িটির সর্বশেষ নবায়নকৃত সার্টিফিকেটের মেয়াদ কবে শেষ হবে তা স্মরণে রাখা। সাধারণত ফিটনেস সার্টিফিকেটেই এই গুরুত্বপূর্ণ তারিখটি উল্লেখ করা থাকে। আগের সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষের নূন্যতম ১৫ দিন আগে নবায়ন প্রক্রিয়ার জন্য এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।

২. নির্দিষ্ট তারিখে এপয়েন্টমেন্ট নেয়া

উন্নত অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বর্তমানে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়নের জন্য অনলাইনে এপয়েন্টমেন্ট নেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে গিয়ে গাড়ির প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর লগিন করে খুব সহজেই কাংখিত তারিখে এপয়েন্টমেন্ট বুকিং দেয়া যাবে কোন ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই। ওয়েবসাইটটির এড্রেস হলো- https://bsp.brta.gov.bd/

৩. গাড়ি প্রস্তুত করা

ফিটনেস নবায়ন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পূর্বে গাড়িকে সার্বিকভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। এই প্রস্তুতির মাঝে রয়েছে গাড়ির বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, কোথাও ময়লা, আবর্জনা বা দুর্গন্ধ থাকলে তা পরিস্কার করে গাড়িটি পরিদর্শনের উপযোগী করতে হবে।

৪.প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত

ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়নের স্থানে যাওয়ার আগে গাড়ি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র রেডি রাখতে হবে। এসব কাগজের মধ্যে রয়েছে।

  • পূরনকৃত ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সইকৃত আবেদনপত্র সমেত ফরম।
  • নির্ধারিত ফি পরিশোধের রসিদ।
  • আগের ফিটনেস সার্টিফিকেটের মূল কপি।
  • হালনাগাদকৃত ট্যাক্স টোকেনের সত্যায়িত ফটোকপি।
  • TIN এর কাগজপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
  • আয়কর প্রদানের প্রমানপত্র।

৫. কেন্দ্রে যাওয়া

নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত কেন্দ্রে গাড়িটিকে নিয়ে যেতে হবে। রাস্তার যানযট বিবেচনা করে নির্দিষ্ট সময় থেকে আগেই যেন পৌছানো যায় সেভাবে রওনা দিতে হবে। কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ পরিদর্শকরা থাকবেন। যারা পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে নির্দিষ্ট নিয়মে গাড়ির বিভিন্ন অংশ ও কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখবেন।

৬. নির্ধারিত ফি পরিশোধ

গাড়ির ফিটনেস সংক্রান্ত সকল পরীক্ষা নিরীক্ষায় যদি গাড়ি পাশ করে তাহলে সার্টিফিকেট নবায়নের জন্য নির্ধারিত ফি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে। গাড়ির মডেল, ধরন ও বয়সের ভিত্তিতে এই ফি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

৭.সার্টিফিকেট সংগ্রহ

পরীক্ষা নিরীক্ষা ও পরিদর্শনের ধাপ সফলভাবে উতরানো ও ফি পরিশোধের পর একটি নতুন সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। যা নিশ্চয়তা দেয় যে আপনার নিত্য ব্যবহার্য প্রিয় গাড়িটি রাস্তায় চলার জন্য পুরোপুরি ফিট। রাস্তায় চলাচলের একটি আইনী সম্মতিপত্রও বলা যায় একে। ফলে সার্টিফিকেটটি সাবধানতার সাথে গাড়িতেই রাখতে হবে।

নিয়মিত গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন কেন জরুরী?

গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করার পেছনে রয়েছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারন।

  • যান্ত্রিক গোলযোগপূর্ণ গাড়ির কারনে দূর্ঘটনা প্রতিরোধের নিশ্চয়তা দেয়।
  • যান্ত্রিক ছোটখাটো সমস্যা আগেই শনাক্ত করে পরবর্তীতে বড় খরচ থেকে বাচাঁতে পারে নিয়মিত ফিটনেস পরীক্ষা।
  • রাস্তায় গাড়ি চলার আইনী অনুমতি পত্র হিসেবে কাজ করে ফিটনেস সার্টিফিকেট। যার সাহায্যে রাস্তায় অপ্রয়োজনীয় জরিমানা এড়ানো যায়।
  • একটি গাড়ির সর্বোচ্চ পর্যায়ের জ্বালানি দক্ষতা ও কর্মক্ষমতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে নিয়মিত ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন প্রক্রিয়া।
  • গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন পরীক্ষার মাধ্যমে গাড়ি থেকে নির্গমনের মাত্রা পরিবেশের গ্রহনযোগ্য সীমার মধ্যে আছে কি না নিশ্চিত হওয়া যায়।
  • গাড়ি বিক্রি করার চিন্তা থাকলে নিয়মিত ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন করার বিকল্প নেই। কারন এই প্রক্রিয়া গাড়ির মান বজায় রাখা নিশ্চিত করে।
  • সবশেষে একটি গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট সেই গাড়ির প্রতি ভরসা তৈরী করে। মনে এই আস্থা থাকে যে একটি সুস্থ গোলযোগহীণ গাড়ি নিয়ে আমি রাস্তায় বের হচ্ছি।

শেষ কথা

রাস্তায় নিজের প্রিয় গাড়িটি নিয়ে বের হতে চাইলে নিয়মিত ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন রাখা একটি আবশ্যিক পূর্বশর্ত। নিরাপদ ও জটিলতা মুক্ত যাত্রার জন্য এটি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আইনী প্রক্রিয়ার চেয়েও অধিক গুরুত্ব বহনকারী আবশ্যক কাজটি শুনতে খটোমটো মনে হলেও ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি কিন্তু খুবই সহজ। তাই শখের গাড়িটির নবায়নকৃত ফিটনেস সার্টিফিকেট সবসময় সাথে রাখুন ও স্মার্ট ড্রাইভিং করুন। আরও পড়ুন গাড়ির ট্যাক্স টোকেন সংগ্রহ ও নবায়ন পদ্ধতি।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top