টেসলা কার নামটা পরিচিত পরিচিত লাগছে! লাগারই কথা। নামটি শুনলেই মনে মনে আপনি নিশ্চয়ই ভাববেন টেসলার বৈদ্যুতিক গাড়ি আর ইলন মাস্কের কথা। আরো একটু গভীরভাবে ভাবলেই আপনি বিস্মিত হয়ে বলবেন আরে তাই তো! টেসলা তো আমাদের নিকোলাস টেসলা! বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, প্রকৌশলী কী নয় সে! তার রহস্যময় নানা উদ্ভাবন নিয়ে এখনো কল্পনা কল্পনার শেষ নেই। হ্যাঁ, আপনি ঠিক দিকেই এগোচ্ছেন! টেসলা নামের বিশ্ববিখ্যাত বৈদ্যুতিক গাড়ির নাম আসলে তাঁর নাম থেকেই নেয়া হয়েছে, যা গাড়ির জগতে নিয়ে এসেছে এক নতুন শুরু! এক নতুন বিপ্লব! এখন অনেক মোটরশিল্প পর্যবেক্ষকই বলছেন যে, সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যখন বৈদ্যুতিক গাড়ি পুরো গাড়ির বাজার দখল করে নিবে! তবে বৈদ্যুতিক গাড়ির এ বিশ্ব জয়ের শুরুটা এতটা সহজ ছিল না, এখন যত সহজে এ কথা বলা হচ্ছে। মোটরগাড়ি শিল্পে সর্বশেষ বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে বলা হয়ে থাকে ১৯১৩ সালে হেনরি ফোর্ডের প্রথম গাড়ি তৈরির প্রোডাকশন লাইন শুরুর মাধ্যমে। বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে এ বিপ্লবের শুরুটা হয়েছে টেসলা ইনকর্পোরেশনের হাত ধরে।
শুরুর কথা
বৈদ্যুতিক গাড়ির নতুন শুরুটা টেসলার হাত ধরে হলেও Electric Vehicle (EV) এর ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরোনো। পিছনে তাকালে খুঁজে পাওয়া যায় যে, ১৮২৮ সালে Ányos Jedlik নামে একজন হাঙ্গেরিয়ান পদার্থবিদ ও যাজক, প্রথম একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করেন তার নিজেরই তৈরি একটি বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে। তবে অনেকে বলে থাকেন, একেবারে প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরি করেছিলেন স্কটিশ আবিষ্কারক রবার্ট এ্যান্ডারসন – ১৮৩০এর দশকে। এরপর আরো বেশ কিছু মানুষের নিজের তৈরি EV ব্যবহার করার কথা শোনা গেলেও, Mass Production এর কথা তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায় না।
তবে এখন থেকে ২০ বছর আগে জেনারেল মোটর্স একটি ইলেকট্রিক গাড়ি বানিয়েছিল যার নাম ইভিওয়ান (EV1)। ১০০ কোটি ডলার খরচ করে তৈরি করা সেই ‘কুখ্যাত’ গাড়িটি বানানো হয়েছিল হাজারখানেক। কিন্তু জিএম নিজেরাই মনে করেছিল – এ জিনিস চলবে না, এবং তারা হাতেগোণা কয়েকটি বাদে সেই প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ির সবগুলোই ধ্বংস করে ফেলেছিল। ইভিওয়ানের রেঞ্জ ছিল ভয়াবহ রকমের খারাপ – ঘন্টায় ৫০ মাইলের বেশি দ্রুতগতিতে তা চলতে পারতো না।
EV1 এর গাড়ির টেস্ট-ড্রাইভ অর্থাৎ পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়েছিলেন কোয়েন্টিন উইলসন। মাত্র ৫০ মাইল গতিতে চললেও কোয়েন্টিন উইলসন এর মন জয় করেছিল এ গাড়ি। তিনি স্মৃতিচারণা করেন “আমার মনে আছে, আমি ভেবেছিলাম এটাই হচ্ছে ভবিষ্যতের গাড়ি।” কোয়েন্টিন উইলসনের ভাবনা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তার সর্বশেষ বৈদ্যুতিক গাড়িটি হচ্ছে একটি টেসলা মডেল থ্রি!
সংগ্রামের মধ্য দিয়েই শুরুটা হয়েছিল টেসলার
২০০৩ সালের ১ জুলাই, মার্টিন এবারহার্ড এবং মার্ক টার্পেনিং নামক দুই স্বপ্নবাজ প্রকোশলীর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে আমেরিকান কোম্পানি টেসলা মোটর্স। দুজনের স্বপ্নই ছিল ডিজেল, পেট্রোল চালিত গাড়ির চেয়েও আধুনিক ও উন্নত বৈদ্যুতিক সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে আসা। টেসলা মোটর্স প্রতিষ্ঠার পর এবারহার্ড কোম্পানির সিইও এবং টার্পেনিং সিএফও হিসেবে কাজ শুরু করেন।
জেনারেল মোটর্স ২০০৩ সালে তাদের সকল EV1 বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করার পর মার্টিন এবারহার্ড এবং মার্ক টার্পেনিং টেসলা কোম্পানিটি শুরু করার কথা ভাবেন এবং ব্যাটারি-চালিত গাড়ির প্রাচীন সমস্যা – উচ্চ কর্মক্ষমতা এবং কম মাইলেজের মধ্যের ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক উল্টে দেওয়াকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন।
টেসলার শুরুর দিকে নিজেদের পকেটের পয়সা দিয়েই কোম্পানি চালাচ্ছিলেন মার্টিন এবারহার্ড এবং মার্ক টার্পেনিং। কিন্তু গাড়ি উৎপাদনে যেতে হলে যে বিশাল অঙ্কের অর্থ দরকার, তা তাদের পক্ষে যোগান দেয়া সম্ভব ছিল না। তাই তারা নিজেদের কোম্পানির জন্য নতুন বিনিয়োগকারী খুঁজতে শুরু করেন। আর ঠিক এখানেই আবির্ভাব ঘটে ইলন মাস্কের। ইলন মাস্ক তখন পেপালে থাকা তার নিজের ১৬৫ মিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রি করে সদ্য বিলিয়নিয়ার হয়ে বসেছেন। একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি তখন এই অর্থ নতুন কোথাও বিনিয়োগের কথা ভাবছিলেন। এসময় টেসলার দূরদর্শী লক্ষ্য তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তিনি টেসলায় বিনিয়োগে আগ্রহী হন। প্রাথমিকভাবে মাস্ক ৬.৫ মিলিয়ন ডলার অর্থ বিনিয়োগ করেন টেসলাতে। এই বিনিয়োগের পর মাস্ক টেসলার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং হাল ধরেন কোম্পানির।
২০০৫ সালে ব্রিটিশ স্পোর্টস কার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লোটাসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় টেসলা। এ চুক্তি অনুসারে টেসলার প্রথম গাড়ি রোডস্টার তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি সহায়তা দেয় লোটাস। এই চুক্তির ঠিক এক বছর পর ২০০৬ সালে টেসলাতে বিনিয়োগ করেন টেক জায়ান্ট গুগলের দুই প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন এবং ল্যারি পেইজ।
টেসলার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে থাকা ইলন মাস্ক তখন টেসলার মাস্টারপ্ল্যান সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। নানা টানাপোড়েন শেষে অবশেষে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে বিশাল সাফল্য ঝুলিতে পুরে নেয় টেসলা, এ কৃতিত্বের অধিকাংশই অবশ্য মাস্কের প্রাপ্য।
টেসলার এই ওপেন সিক্রেট মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করার পথে নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে নিজেদের কোম্পানিই ছাড়তে বাধ্য হন দুই প্রতিষ্ঠাতা এবারহার্ড এবং মার্ক টার্পেনিং। আর এরপর মাস্ক কোম্পানির CEO হিসেবে নিযুক্ত করেন জেভ ড্ররি নামের এক ব্যক্তিকে।
নানা দ্বন্দ্বে ভরপুর থাকলেও এসময় কিন্তু থেমে থাকেনি টেসলার প্রোজেক্ট প্রথম গাড়ি রোডস্টার তৈরির কাজ। শুরুর দিকে বিলম্ব হলেও পরে এ বিলম্ব কাটিয়ে ২০০৮ সালের মার্চে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় রোডস্টার। অসাধারণ এ স্পোর্টস কারটির মূল্য নির্ধারণ করা হয় তৎকালীন ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার ইউএস ডলারের মধ্যে। বাজারে রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ স্পোর্টস কার ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গ্রাহকদের মধ্যে। যার দরুন ব্যাপক অর্ডার হওয়া এ গাড়িটি ডেলিভারি দিতে গিয়ে নানা সংকটের মুখে পড়তে হয় টেসলাকে। এর পেছনে মূল কারণ ছিল আর্থিক সংকট ও অন্যান্য ব্যর্থতা। আর এ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতেই মাস্ক নিজেই টেসলার CEO পদের দায়িত্ব গ্রহন করেন। মাস্কের নানা দক্ষতায় কোম্পানিতে আসতে থাকে একের পর এক বিনিয়োগ। সাফল্য ধরা দিতে থাকে টেসলা ও মাস্ক উভয়ের ঝুলিতে।
রোডস্টার ছিল টেসলার তৈরি প্রথম স্পোর্টস কার। প্রথম প্রোডাকশনে আসে ২০০৮ সালে। ফার্স্ট জেনারেশন টেসলা বিক্রি হয় প্রায় ২৫০০ ইউনিটের মতো। টেসলার মতো অখ্যাত একটি ব্রান্ডকে ট্রাকে নিয়ে এসে একদম বিপ্লবী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেইয় বলতে গেলে রোডস্টারই!
মডেল এস – ২০১০ এ মডেল এস এর উৎপাদন শুরু করে টেসলা। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে রোডস্টার উৎপাদন বন্ধ করে এবং জুনে কোম্পানির দ্বিতীয় গাড়ি হিসেবে মডেল এস বাজারে নিয়ে আসে। যা বিপুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বেশ ভালো কিছু পুরষ্কার জিতে নেয়।
মডেল এক্স – টেসলা তাদের তৃতীয় গাড়ি হিসেবে ২০১৫ সালে বাজারে নিয়ে আসে মডেল এক্স। বাজারে আনার আগেই এ গাড়িটির প্রি-অর্ডার ছিল ২৫০০০!
মডেল ৩ – টেসলা গাড়ির পাশাপাশি অন্যান্য দিকেও তাদের ব্যবসা বাড়াতে শুরু করে। ২০১৭ সালে । টেসলা মোটর্স’ থেকে নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয় ‘টেসলা ইনকর্পোরেশন।’ একই বছরের জুলাইতে টেসলা বাজারে আনে তাদের চতুর্থ গাড়ি মডেল ৩। আগস্টের মধ্যেই মডেল ৩ এর জন্য ৪,৫৫,০০০ অর্ডার জমা পড়ে।
মডেল ওয়াই – মডেল ওয়াই টেসলার পঞ্চম গাড়ি এবং ২০১৯ সালে উন্মুক্ত করা হয়। এবং ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা শুরু হয় ২০২০ এর মার্চে।
টেসলার আপকামিং মডেল সমূহ
রোডস্টার সেকেন্ড জেনারেশন – টেসলার তথ্য মতে তিন মোটরের এ মডেলটি ০ থেকে ৯৭ কি.মি গতি তুলবে মাত্র ১.৯ সেকেন্ডে। এ গাড়িটির ভিত্তি মূল্য ধরা হয়েছে ২০,০০,০০০ ডলার।
টেসলা সেমি – ২০১৭ সালে টেসলা সেমি’র ঘোষণা দেওয়া হয়, যা একটি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক সেমি ট্রেইলার ট্রাক। এর দুটি ধরণ বাজারে পাওয়া যাবে। যার একটির সর্বোচ্চ সীমা হবে ৩০০ মাইল এবং অন্যটির ৫০০ মাইল। এ ট্রাকটিতে ব্যবহার করা হবে মডেল ৩ তে ব্যবহৃত মোটরের মতো একই ধরণের চারটি মোটর।
সাইবারট্রাক – ২০১৯ এ হাইপ তোলা এক ইভেন্টে প্রথম আনভেইল করা হয় সাইবার ট্রাক। যদিও আনব্রেকেবল গ্লাস পরীক্ষা করে দেখানোর সময় ভেঙে যায় গাড়ির সাইড উইন্ডো। ধারণা করা হয় ২০২৩ এর শুরুর দিকে বাজারে আসতে পারে এটি।
টেসলা কার কেন অন্যান্য গাড়ি থেকে আলাদা
- অটোপাইলটঃ হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন গাড়িতে অটোপাইলট। টেসলার নতুন মডেলের গাড়ি গুলোতে রয়েছে ৮ টি ক্যামেরা, ১২ টি সেন্সর। যা গাড়ির চারপাশের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ প্রদান করে। অটোপাইলট রাস্তাতে কোনো বস্তুর নির্ণয় উপস্থিতি সহ, রাস্তার সাইন পর্যন্ত পড়তে পারে এবং মেনে চলে রাস্তার নিয়ম কানুন। যদিও এটি নিয়ে কিছু বিতর্ক এখনো চলছে, উন্নতির দরজাও নিশ্চয় বন্ধ নেই।
- ইউনিক টাচস্ক্রিনঃ এই টাচস্ক্রিন সচরাচর আপনার দেখা অন্যান্য টাচস্ক্রিন থেকে ভিন্ন। লাইভ ট্রাফিক আপডেইটের পাশাপাশি ভিডিও গেইমস, স্ট্রিমিং সার্ভিস সহ রয়েছে ইস্টার এগ, ওয়েব ব্রাউজ এর মতো আরো অনেক বাড়তি ফিচার। গাড়ির প্রায় সবকিছুই এ স্ক্রিন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- সেন্ট্রি মোডঃ আপনার পার্ক করে রাখা টেসলা কারের ওপর নজর রাখতে পারবেন বিশ্বে যেকোন যায়গা থেকে।
- অ্যাডভান্সড পার্কিং সেন্সরঃ এর মাধ্যমে গাড়ির চালক গাড়ির খুব কাছে থাকে যেকোন বস্তুর উপস্থিতি টের পাবে।
- সুপার চার্জারঃ যেহেতু পথে ঘাটের গ্যাস স্টেশন টেসলা চালকের কোনো কাজেই আসবে না, সে সমস্যা দূর করতে পুরো বিশ্ব জুড়ে টেসলার রয়েছে ৩৫০০০ এর ও বেশি টেসলা সুপার চার্জিং স্টেশন। টেসলার ভাষ্য অনুযায়ী এখানে ১৫ মিনিটের চার্জেই আপনি পাড়ি দিতে পারবেন ২০০ মাইল দূরত্ব!
- চাবিঃ কী ভাবছেন? চাবি সেতো সব গাড়ির মালিকেরই থাকে। কিন্তু না টেসলার বিশেষ ধরণের চাবিতে আপনি পাবেন এমন অনেক ফিচার যা সাধারণ গাড়ির চাবিতে থাকে না।
- অটো প্রেজেন্টিং ডোরঃ চাবি নিয়ে গাড়ির কাছে গেলেই, স্বয়ংক্রিয় ভাবে খুলে যাবে গাড়ির দরজা। এ ফিচার চালু বন্ধ রাখার অপশন অবশ্যই আছে।
- অন্যান্য ফিচারঃ এছাড়া টেসলা বিভিন্ন গাড়িতে রয়েছে আরো নানা রকম ফিচার। যার মধ্যে উল্লখযোগ্য হল – App, Update over the air, Ludicrous plus mode, GPS, Plaid mode, Dog mode, Automatic cabin overheat protection, fart mode, The frunk, Explicit lyrics bar, ইত্যাদি।
সবশেষে আরেকঅটি বিষয় যা না বললেই নয়, পরিবেশ দূষণ কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন সচেতনতায় টেসলার অবদান কিন্তু অগ্রগামী।
বাংলাদেশের মার্কেটে টেসলা কার
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন কোনো বৈদ্যুতিক গাড়ি ছিল না যেহতু রেজিস্ট্রেশনের কোনো উপায় ছিল না। তবে ২০২০ সাল থেকে রেজিস্ট্রেশন চালু হয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ির। কিন্তু যে খবরটি আপনাদের হৃদয়ে আঘাত করবে সেটি হলো বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর সরকার ১০০% হারে ট্যাক্স আরোপ করেছে। বাংলাদেশে ২০২০ এর ৬ ডিসেম্বর Car Import House টেসলা মডেল ৩ এর পার্ফমেন্স ইউনিট আমদানি করে। এটি ছিল মডেল ৩ এর স্পোর্টস ভ্যারিয়ান্ট অর্থাৎ একটি স্পোর্টস সেডান। যার দাম ট্যাক্স আরোপের পর হয়ে দাঁড়ায় দেড়কোটি টাকা! BTRC এর নিয়ম অনুসারে ব্যাটারি ক্যাপাসিটি অনুযায়ী এই গাড়িটিকে ২০০০ সিসির গাড়ি হিসেবে গণ্য করা হয়, যদিও এটি ৫০০০ সি.সি সক্ষমতার গাড়ি।
২০২০ এর হিসেব অনুযায়ী, টেসলা মডেল ৩ পার্ফরম্যান্স অনুযায়ী ৭৫ কিলোওয়াট-আওয়ারের ব্যাটারিটি ফুল-চার্জ করতে খরচ হয় ৩২৫ টাকার বিদ্যুৎ। WLTP রিয়েল-লাইফ টেস্ট অনুযায়ী ফুল চার্জের পর একটানা ৫৬৭ কিমি পথ চলতে পারবে ব্যাটারির চার্জ শেষ হওয়ার আগে। সেক্ষেত্রে ১০০ কি.মি পথ চলতে এতে প্রত্যেক ঘন্টায় ১৮ কিলোওয়াট শক্তি খরচ হবে। তেলের হিসাবে, একই দূরত্ব অতিক্রম করতে যদি বিদ্যুতের পরিবর্তে তেল ব্যবহার করা হয়, তাহলে গাড়িটি ১ লিটার তেলের খরচে গাড়িটি ৫০ কি.মি পথ চলতে পারবে!
বাংলাদেশে সুপারচার্জ স্টেশন যেহেতু নেই। চার্জ দেয়ার একমাত্র জায়গা হবে আপনার বাড়ি। এছাড়া বাংলাদেশের রাস্তাও বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য খুব সুখবর হবে বলে ধারণা করা যায় না।
২০২০ এর পরে টেসলা মডেল এক্স সহ আরো বেশ কিছু গাড়ি বাংলাদেশের রাস্তায় চোখে পড়েছে অনেকের। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিক্রিও শুরু করেছে। তবে তা বর্তমান গাড়ির বাজারের তুলনায় খুবই নগন্য। চাপিয়ে দেয়া বাড়তি ট্যাক্সের বোঝা, চার্জিং স্টেশনের অভাব, পার্টসের অপ্রতুলতা, স্থানীয় আবহাওয়া, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা, যোগাযোগ অবকাঠামো সহ আরো নানান বাধায়, টেসলা গাড়ির জন্য বাংলাদেশ এখনই পুরোপুরি প্রস্তুত কী না, তা ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে সারা বিশ্বের সাথে সাথে বাংলাদেশ সরকারও যেহেতু প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং গাড়ির ভবিষ্যৎ যেহেতু EV এর দিকেই প্রসন্ন, সেহেতু দেশে টেসলা সহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রবেশ ও চলাচলের পথ সুগম করার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নিয়ম-নীতি ঠিক করার এখনই সময়।
শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।