আমাদের জীবনযাত্রার সাথে গাড়ি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। প্রতিদিনের যাতায়াতের জন্য অনেকবার এর ব্যবহার করতে হয়। সেক্ষেত্রে নানাভাবে হরেক কারণে গাড়ি নোংরা হয়ে যেতে পারে। আর তাইতো তা নিয়মিত ভাবে যত্ন সহকারে পরিষ্কার করা উচিত। সপ্তাহে অন্তত একদিন ভালভাবে গাড়িটি ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে শুধুমাত্র গাড়ির উপরের অংশ পরিষ্কার করলেই হবে না, বরং এর সাথে সাথে গাড়ির ভিতরের দিকটাও পরিষ্কার করতে হবে। গাড়ির সুরক্ষার জন্য নিয়মিত ভাবে এর ভিতরের অংশগুলো পরিষ্কার করা প্রয়োজন। আর সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে, গাড়িতে চড়তেও আরামবোধ হবে। কিন্তু গাড়ির ইন্টেরিয়র পরিষ্কার করা নিয়ে চিন্তিত বোধ করেন? এই কাজটা করতে গিয়ে খানিকটা ঝামেলা পোহাতে হয়? সেক্ষেত্রে গাড়ির ভিতরের অংশগুলো পরিষ্কার করার উপর সহজ সাতটি সমাধান পড়ে নিন আজকের ব্লগ থেকে।
অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলা
গাড়ির ইন্টেরিয়রের পরিষ্কারের সময় প্রথমেই ভিতরে থাকা বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিস কাজ শেষে সরিয়ে ফেলতে চেষ্টা করুন। যেমন ধরুন- বাচ্চাদের খেলনা, বই, পুরনো পেপার-ম্যাগাজিন ইত্যাদি। এছাড়াও রিসাইকেল করা যায় এমন দ্রব্যাদি (পানির বোতল, কাগজ, কার্ডবোৰ্ড) ইত্যাদি সরিয়ে ফেলুন। সব ধরণের ময়লা এবং অদরকারি জিনিস ডাস্টবিন কিংবা ময়লা রাখার ব্যাগে ফেলতে হবে। আর এই কাজের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য হাতে গ্লাভস পরে নেয়া উচিত।
সেন্ট্রাল কনসোল পরিষ্কার করা
মনোযোগ দিয়ে ভালভাবে সেন্ট্রাল কনসোল পরিষ্কার করতে হবে। ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কোন হাউসহোল্ড ক্লিনার বা গ্লাস ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে কম ময়লাপূর্ণ এলাকা থেকে বেশি ময়লাময় জায়গা আগে পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করার সময় ভালো কোন কাপড় ইউজ করতে হবে, যাতে গাড়িতে ময়লা লেগে না যায়। ড্যাশবোর্ডের বাটনগুলো খেয়াল করে পরিষ্কার করতে হবে। একটা ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে, তারপর শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। মূলত এক্ষেত্রে স্ক্রু ড্রাইভারও ব্যবহার করা যায়। স্ক্রু-ড্রাইভারের মাথায় একটা কাপড় জড়িয়ে বাটনগুলো পরিষ্কার করতে পারেন। একটি পুরাতন সফট টুথব্রাশ দিয়ে গাড়ির বিভিন্ন কঠিন স্পট পরিষ্কার করাটা সহজ হবে। সার্কুলার মোশনে ব্রাশ করে আস্তে আস্তে ময়লাগুলো তুলে ফেলতে পারেন।
জানালার ভিতরের দিকটা পরিষ্কার করা
ড্রাইভিং করার সময় দেখার সুবিধার জন্য জানালার ভিতরটা পরিষ্কার রাখা আবশ্যক। সেক্ষেত্রে একটি নরম তোয়ালের সাথে উইন্ডো ক্লিনার ইউজ করে জানালা পরিষ্কার করতে পারেন। প্রথমে তোয়ালেতে কিছু উইন্ডো ক্লিনার স্প্রে করে, তারপর জানালা পরিষ্কার করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সতর্ক হয়ে অ্যামোনিয়া যুক্ত উইন্ডো ক্লিনার পরিহার করতে হবে। কারণ গ্লাস ক্লিনারে অ্যামোনিয়া থাকলে, এটা আপনার গাড়ির প্লাস্টিক শুকিয়ে ফেলতে পারে। এবং যার ফলাফল স্বরূপ এটা জানালা ড্যামেজ করে দিতে পারে! তোয়ালে দিয়ে জানালা সাবধানে পরিষ্কার করবেন। এক্ষেত্রে এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়ার সময় তোয়ালের পাশ চেঞ্জ করবেন। এবং জানালার কর্নারগুলোতে বিশেষ ভাবে নজর দিবেন এবং আস্তে আস্তে তা পরিষ্কার করবেন।
উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ভ্যাকুয়াম করতে হবে
গাড়ির ভিতরের দিকটা পরিষ্কারের সময় এর সিলিং থেকে শুরু করে ফ্লোর পর্যন্ত ধাপে ধাপে পরিষ্কার করতে হবে। সিটগুলো চেঞ্জ করে রাফ জায়গাগুলো ভালমতো পরিষ্কার করতে হবে। এবং খেয়াল করে লেদার সিটগুলোও পরিষ্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে একটা সফট ব্রাশে উপযোগী কোন ক্লিনার নিয়ে এটা পরিষ্কার করতে হবে। কঠিন দাগগুলো একটা কার্যকর দাগ দূরকারী পদার্থ দিয়ে দূর করার চেষ্টা করতে হবে। যেকোন ধরণের ক্যান্ডি, চুইংগাম কিংবা ড্রিংকস ইত্যাদি পড়ে দাগ লেগে যেতে পারে, তাই এগুলো খাবার সময় সতর্ক থাকা দরকার। আর অসচেতন ভাবে কোন দাগ পড়ে গেলে তা দ্রুত তুলে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।
সিট এবং ফ্লোর-ম্যাটস পরিষ্কার করা
গাড়ির সিট এবং সিটের কভারগুলো ভালভাবে যত্ন সহকারে পরিষ্কার করা উচিত। সিটে কোন প্রকার দাগ লেগে থাকলে তা তুলে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। ভ্যাকুয়াম করার আগে ফ্লোরম্যাটসগুলো ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে, কারণ এতে চিটচিটে ময়লা লেগে থাকতে পারে। যদি গাড়িতে প্লাস্টিক ফ্লোর ম্যাটস থাকে, তবে তা গাড়ির বাইরে নিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। আর যদি কার্পেট ম্যাটস থাকে, তবে তা গাড়ির ভিতর ভ্যাকুয়াম দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে অথবা বাইরে নিয়েও করা যাবে। এরপর গাড়ির ভিতরের দিকটা ঝেড়ে-মুছে যত্ন সহকারে পরিষ্কার করে, ম্যাটস গাড়িতে নিয়ে আসতে হবে ।
সবকিছু জায়গামতো সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা
গাড়ির ভিতরকার সবকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখলে তা যেমন দেখতে দৃষ্টিনন্দন হয়, তেমনি সুরুচির পরিচয়ও বহন করে। কারের ভিতরের সবকিছু পরিষ্কার করা হয়ে যাবার পরে, তা আবার জায়গামতো গুছিয়ে রাখা দরকার। সিটগুলো ঠিকঠাকমতো বসিয়ে গোছগাছ করে নিলে ভাল হয়। আর বাকি যা যা পরিষ্কারের সময় সরানো হয়েছিল তা জায়গা মতো সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে হবে। এছাড়াও খেয়াল করে পরিষ্কার করার সরঞ্জামাদি জায়গামতো রেখে দেওয়া দরকার যাতে পরবর্তীতে গাড়ি পরিষ্কারের সময়ে তা যেন সহজেই পাওয়া যায়।
ভালমানের এয়ার-ফ্রেশনার ইউজ করা
নিয়মিত সঠিক নিয়ম মেনে গাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং যত্নের সহকারে তা ব্যবহার করা উচিত। প্রতিদিন গাড়ির ভিতরের আবদ্ধ গুমোট বাতাস বের করে দিলে খুব ভাল হয়। সেক্ষেত্রে সূর্য উঠার পরপরই গাড়ির দরজা-জানালা সব খুলে, ভিতরের বাতাস বের হয়ে যেতে দিতে হবে। আর গাড়ি ভালভাবে পরিষ্কার করার যথেষ্ট সময় এবং সুযোগ না পাওয়া গেলে, অনেকসময় গাড়ির ভিতরে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। সেসময় তীব্র ঘ্রাণযুক্ত এয়ার ফ্রেশনার হাতের কাছে রাখতে হবে। এবং কিছুক্ষণ পর পর ইউজ করলে দুর্গন্ধ আপাতত দূর হয়ে যাবে।
আপনার কষ্টের উপার্জনে কেনা প্রিয় কারটির যত্ন-আত্তির ভার তো আপনাকেই নিতে হবে। সেক্ষেত্রে খেয়াল করে গাড়ির যতটা যত্ন নিবেন, সেটা তেমনি ভাল সার্ভিসও দেবে। এছাড়াও আপনার প্রিয় গাড়িটি সুরক্ষিত এবং নিরাপদে রাখতে ভিটিএস প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারেন। বাংলাদেশে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ভিটিএস সার্ভিস দিয়ে থাকে, তার মধ্যে থেকে সেরা ভেইকেল ট্র্যাকার সার্ভিসটি গাড়ির জন্য নির্বাচন করুন। গাড়ি নিয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপদ এবং আরামদায়ক হোক আপনার আগামীর পথচলা।