শাফী ইমাম রুমী – শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বড় সন্তান। ইঞ্জিনিয়ার বাবার সন্তান রুমির জন্মের সময়ই বাবার ডাক্তার বন্ধু সদ্যোজাত রুমিকে দেখে বলেছিলেন, ‘এটা ১৯৫১ সাল, ১৯৭১ সালে এ ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে।’ এই ছেলেটিকেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যাবার অনুমতি দেবার সময় মা জাহানারা ইমাম বলেছিলেন, ‘দিলাম তোকে দেশের জন্য কুরবানি করে, যা তুই যুদ্ধে যা।’
১৯৭১ সালে রুমি কিন্তু ভর্তি হয়েও ছিলো ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে, যা এখন বুয়েট। তুখোড় মেধাবী রুমি সেসময় একই সাথে চান্স পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ইলিনয়স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতেও। নির্ঝঞ্ঝাট জীবন ও আলোকিত ক্যারিয়ারের সেই হাতছানি পেয়েও রুমি বেছে নেয় নিজের দেশের স্বাধীনতা। ‘আম্মা, দেশের এ রকম অবস্থায় তুমি যদি আমাকে জোর করে আমেরিকায় পাঠিয়ে দাও, আমি হয়তো যাবো শেষ পর্যন্ত। কিন্তু তাহলে আমার বিবেক চিরকালের মতো অপরাধী করে রাখবে আমাকে। আমেরিকা থেকে হয়তো বড় ডিগ্রি নিয়ে এসে বড় ইঞ্জিনিয়ার হব, কিন্তু বিবেকের ভ্রুকুটির সামনে কোনও দিনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। তুমি কি তাই চাও, আম্মা? – এভাবেই কাতরস্বরে অনুনয় করেন নিজের জন্মদাতা পিতা-মাতার কাছে। তারপর তো রুমি নিজের রক্ত দিয়ে লিখে গেছেন এদেশের ইতিহাস। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য অংশই জানাবো আপনাদের আজ।
মুক্তিযুদ্ধে রুমির যাত্রা
বাবা মায়ের অনুমতি পাবার পর ১৯৭১ সালের ২ মে রুমি সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করেন। বিভিন্ন কারনে সেবার সীমান্ত অতিক্রমে ব্যর্থ হলেও, ১৪ জুন দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সীমান্ত অতিক্রমে সফল হন। পৌঁছান ভারতের মেলাঘরে। সেক্টর ২ এর দায়িত্বে থাকা খালেদ মোশারফ ও রশিদ হায়দারের অধিনে কমান্ডো টাইপ গেরিলা প্রশিক্ষণ শেষে রুমি ঢাকা ফেরত আসেন এবং যোগ দেন ক্র্যাক প্লাটুনে।
ক্র্যাক প্লাটুন ও শাফী ইমাম রুমী
মূলত সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে হামলার উদ্দেশ্যে রুমি প্রথম ক্র্যাক প্লাটুন দলের সাথে ঢাকায় আসে। তারপর একে একে গ্যানিজ পেট্রোল পাম্প, উলন পাওয়ার স্টেশন, যাত্রাবাড়ী পাওয়ার স্টেশন ইত্যাদি যায়গায় গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশ নেয় অকুতোভয় রুমি ও তাঁর মতোই আরবান গেরিলাদের ক্র্যাক প্লাটুন দলটি। অনেকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনের মধ্যে রুমির সরাসরি অংশ নেয়া ধানমন্ডি রোডের অপারশনটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ২৫ আগস্টের সেই অপারশনে অংশ নেন রুমিসহ ক্র্যাক প্লাটুনের আরো ৫ জন গেরিলা। যেখানে গেরিলাদের হাতে নিহত হয় বেশ কয়েকজন পাকিস্তানী সেনা। অপারশন শেষে যদিও পাকিস্তানী সেনাদের একটি জিপ তাঁদের তাড়া করতে থাকে। সেখানেও রুমি দেখায় তাঁর বীরত্ব। স্টেনগানের বাঁট দিয়ে গাড়ির পেছনের কাঁচ ভেঙে ফায়ার করতে থাকে রুমি, যে কারনে পাকিস্তানী সেনাদের গাড়িটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে। বলতে গেলে সেদিন রুমির জন্যই সেদিন প্রানে বেঁচে যান ক্র্যাক প্লাটুনের দলটি।
অবশেষে ২৯ আগস্টের ভয়ানক সকাল!
২৫ আগস্টের দুর্ধর্ষ সেই অপারেশনের পর ২৯ আগস্ট রুমি যান তাঁর প্রিয় জননী জাহানারা ইমাম ও পরিবারের অন্যদের সাথে দেখা করতে। সেদিনটা নিজের বাসাতেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন। শুধু রুমি নন, ক্র্যাক প্লাটুনের আরো বেশ কয়েকজন সদস্যই সেদিন নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করছিলেন। কাল হয়েছিলো সম্ভবত এই সিদ্ধান্তটিই।
ক্র্যাক প্লাটুনের পরপর কতগুলি সফল অভিজানের পর পাকিস্তানী বাহিনী তাঁদের ধরতে শুরু করে চিরুনি অভিজান। গোয়েন্দা তৎপরতার সাথে ঘোষণা করা হয় পুরস্কারও। এর ফলও পেয়ে যায় হানাদারেরা খুব দ্রুতই। প্রথমেই ধরা পড়েন ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম দুর্ধর্ষ গেরিলা বদিউল আলম বদি। ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবনে অবস্থান করা বদিকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করে তাঁরই বন্ধু ফরিদ। বদিকে আটক করে নাখালপাড়ার মিলিটারি টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে চালানো হতে থাকে পাশবিক নির্যাতন। একই দিনে বিকালে ইস্কাটনের বাসা থেকে আটক করা হয় ক্র্যাকপ্লাটুনের আরেক গেরিলা আবদুস সামাদকে। অমানবিক নির্যাতন চলতে থাকে তাঁর উপরও। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে সহযোদ্ধাদের নাম ও অবস্থান প্রকাশ করে ফেলেন গেরিলা আবদুস সামাদ। তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে রাত ২ টায় মগবাজারের একটি বাড়িতে চালানো হয় অপারেশন। যেখানে অবস্থা করছিলেন আজাদ, আবদুল হালিম জুয়েল, কাজী কামাল, বাশার, সেকান্দার হায়াত খান, মনোয়ারসহ বেশ কয়েকজন যোদ্ধা। ধরা পড়ার মুহূর্তে দুর্ধর্ষ কাজী কামাল হানাদারদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে গুলি করে পালিয়ে যেতে সফল হলেও, ধরা পড়ে যান আজাদ, জুয়েল, আবুল বাশার, সেকান্দার হায়াত খান ও মনোয়ার।
সেই রাতেই একই সাথে অভিজান চলে যোদ্ধা রুমির পৈত্রিক নিবাস, এলিফেন্ট রোডের ‘কনিকা’ তে। সেখান থেকেই আটক হন রুমি সহ সেই বাড়ির সকল পুরুষ সদস্য, যাদের মধ্যে ছিলেন রুমির বাবা এবং ভাইও। সেরাতে প্রায় ৪৪ টি বাড়িতে অভিজান চলে, আটক করা হয় সুরকার আলতাফ মাহমুদ, আবুল বারাক আলভী, লিনু বিল্লাহ, দিনু বিল্লাহ, নুহে আলম বিল্লাহ, খাইরুল আলম বিল্লাহসহ সেদিন আটক হন স্বাধীনতার স্বপক্ষের আরো অনেককে।
জিজ্ঞাসাবাদের যায়গায় রুমির সাথে তাঁর বাবা আর ভাইকেও আনা হয়। রুমি আগে থেকেই তাঁদের বলে রেখেছিলেন, তাড়া যেন যেকোন কিছু জানার কথা অস্বীকার করে। ২০ বছরের সেই তরুনের ব্যাখ্যা ছিলো যে, পাকবাহিনী তাঁদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন, তাই সব দায় তিনি নিজেই নিতে চান। সব দায়ভার নিজের কাধে নিয়ে রুমি সেদিন তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্দোষ প্রমান করতে হয়তো সক্ষমও হয়েছিলেন। তাইতো রুমি ছাড়া তাঁর পরিবারের বাকি সব সদস্যই পেয়েছিলো মুক্তি ২ দিন পরেই। তবে তারা আর কোনদিনই দেখতে পায়নি তাঁদের আদরের রুমির চেহারা। রুমির বেঁচে থাকা সহযোদ্ধাদের থেকে জানা যায়, ৩০ আগস্টের রুমির দেখা বা খোজ আর পাওয়া যায়নি।
ধরা পরবার আগে রুমিকে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, কত বয়স তোর।পৃথিবীর কিছুই তো দেখলি না, জীবনে কিছুই তো জানলিনা! উত্তরে রুমি বলেছিলেন, ‘বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন একটা কথা আছে না আম্মা হয়তো জীবনের পুরোটা তোমাদের মত জানি না, ভোগও করিনি কিন্তু জীবনের যত রস-মাধুর্য-তিক্ততা সব কিছুর স্বাদ আমি এর মধ্যেই পেয়েছি আম্মা। যদি চলেও যাই কোন আক্ষেপ নিয়ে যাবো না।’ রুমি চলে গিয়েছে সত্যি, রক্তের বিনিময়ে এগিয়ে দিয়ে গিয়েছে দেশের স্বাধীনতা। তবে আক্ষেপটা রেখে গেছে দেশের জন্য। এমন সূর্যসন্তানের যে খুব প্রয়োজন ছিলো এদেশের।
শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।