বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন একই সাথে প্রায়োগিক এবং বিতর্কিত আইনগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশের সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থাকে নিরাপদ ও দূর্ঘটনামুক্ত করতে ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ আইনের আদলে পরিবর্ধন, পরিমার্জন ও সংশোধনীর মাধ্যমে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখ জাতীয় সংসদে “সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮” নামে আইন পাশ করা হয়।আইনটি ঐ বছরেই ২২ অক্টোবর সড়ক-মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলামের স্বাক্ষরে কার্যকর গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এই গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন বিপ্লব সূচিত হয়। দ্রুতই বদলে যায় বাংলাদেশের সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থার কুৎসিত ও ভয়ার্ত সেই রুপ। চলুন আজকের আলোচনায় জেনে নেই, সহজ ভাষায় বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮ সালের অদ্যোপান্ত।
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর প্রেক্ষাপট
২০১৮ সালে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় ০২ (দুই) কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হলে সারাদেশে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন জোড়ালো হয়ে উঠে। ফুলে ফেপে উঠা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে সরকার উক্ত আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তে তাড়াহুড়া করে সংসদে পাশ করা হয় আইনটি। নতুন এ আইন পুরনো ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ এর আদলে করা হলেও এতে সময়োপযোগী অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশে অপরাধের জরিমানা ও সাজার পরিমাণ ছিলো একেবারেই নগণ্য। ২০১৮ সালের নতুন সড়ক আইনে অপরাধের উপর ভিত্তি করে বৃদ্ধি করা হয়েছে জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণ। একইসাথে অপরাধের তদন্ত, বিচার ও আপিল সংক্রান্ত বিধানে ফৌজদারী কার্যবিধির প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে। আইনটির একাদশ অধ্যায়ে অপরাধ, বিচার ও দন্ড, দ্বাদশ অধ্যায়ে পুনর্বিবেচনা ও আপীল সংক্রান্ত নিয়ম কানুন বিস্তারিতভাবে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে আগের চেয়ে এখন নতুন আইনের কার্যকারিতা তুলনামূলক অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বিধিমালা
- এই আইনে ড্রাইভারের লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে ৮ম শ্রেণী পাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেই সাথে ড্রাইভারের সহকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম ৫ম শ্রেণী পাশের শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া পূর্বের আইনের মতো সহকারীর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার বিধানটিও বলবৎ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মোটরযান আইন এর ক্ষেত্রগুলোকেও জোরদার করা হয়েছে।
- এই আইনে সর্বসাধরণের জন্যও লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পেশাদার হলে কমপক্ষে ২১ (একুশ) এবং অপেশাদার ড্রাইভারের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৮ (আঠারো) বছর বয়স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
- নতুন এই আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতিত গাড়ি চালালে ড্রাইভারকে ০৬ মাসের জেল বা ৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ড প্রদান করার বিধান রাখা হয়েছে। যা পূর্বের ১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশে অপরাধের জরিমানা ও সাজার পরিমাণ আইনে ০৩ (তিন) মাসের জেল বা ২৫,০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান ছিল।
- একই সাথে ড্রাইভারের সহকারীর লাইসেন্স অপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ০১ (এক) মাসের জেল অথবা ২৫,০০০/- টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
- সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ জরিমানা হিসেবে বলা হয়েছে গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বললে রয়েছে ০১ (এক) মাসের কারাদন্ডসহ ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা জরিমানা প্রদানের বিধান।
- ড্রাইভিং লাইন্সেসে চালকের জন্য যুক্ত করা হয়েছে ১২ (বারো) পয়েন্টের নিয়ম। প্রতিবার নিয়ম ভাঙ্গার অপরাধে কাটা যাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ পয়েন্ট। সর্বোচ্চ ০৬ (ছয়) পয়েন্ট কাটা গেলে ০১ (এক) বছরের জন্য লাইসেন্স স্থগিত হবে। এভাবে ১২ (বারো) পয়েন্ট কেটে শূন্যের কোটায় আসলে সয়ংক্রিয়ভাবে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবার মতো জটিল বিধানও অন্তর্ভূক্ত হয়েছে এই আইনে।
- বেপোরোয়া গাড়ি চালানো বা পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে মৃত্যু ঘটানোর কারণে বা দূর্ঘটনা ঘটানোর শাস্তিতে ০৩ (তিন) বছর কারাদন্ড, ২৫,০০,০০০/- (পঁচিশ লক্ষ) টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
- এই নতুন আইনে গ্রেফতারের জন্য রয়েছে বিশেষ বিধান। যে সকল অপরাধের সাজা ০৬ মাস এবং জরিমানা ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা বা তার ঊর্ধ্বে সে সকল ক্ষেত্রে পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিনাপরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারবে।
- এই আইনে গণপরিবহণে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়োজ্যোষ্ঠদের জন্য গণপরিবহনে আসন নির্ধারিত করার কথা বলা হয়েছে এবং উক্ত আসনগুলোতে অন্য যাত্রী বসালে বা বসলে শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে।
- এই আইনের ধারা ১০৫ মোতাবেক, মোটরযান চালনাজনিত কোন দূর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোন ব্যক্তি আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে তৎসংক্রান্ত অপরাধ দন্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারার অধীন বিচার্য হবে। তবে বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হলে বা তার প্রাণহানি হলে অনধিক ০৫ বছর কারাদন্ড বা ৫,০০,০০০/- টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে।
- এই আইনের ১১০ ধারায় কিছু কিছু জরুরি ক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট ছাড়াও গ্রেফতার করার বিধান রাখা হয়েছে।
- উক্ত আইনের ১০৮ ধারায় কতিপয় অপরাধের বিচারের জন্য বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলা হয়েছে।
- এই আইনের ১১৭ ধারাতে অপরাধের আমলযোগ্যতা, জামিন যোগ্যতা ও আপোষ যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার বিধান বলবৎ করার কথা বলা হয়েছে।
পাশাপাশি ট্রাফিক আইন এবং ট্র্যাফিক আইনের ধারা ২০১৮ কে সমান ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই আইনের অধীনে। উপরোক্ত আইনগুলোই মূলত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর সবচেয়ে কার্যকর এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রায়োগিক আইনের অংশবিশেষ। তাই সহজে বুঝার স্বার্থে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।