প্রহরী

গাড়ি সার্ভিসিং করার সঠিক সময় কখন
পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

গাড়ি সার্ভিসিং করার সঠিক সময় কখন?

বহুদিন ধরে টাকা জমিয়ে, কিংবা ব্যাংক লোন নিয়ে শখের গাড়িটি কিনলেন। কিন্তু আপনার শখের গাড়িটি কী বিগড়ে যাচ্ছে বারবার? আপনি তো কোন কমতি রাখছেন না গাড়ির পরিচর্যায়! তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হয়তো আপনার যত্নে নয়, বরং আপনার জানার অভাবে। যত্ন আপনি নিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু যে সময়ে গাড়ির যে পরিচর্যা পাওয়ার কথা, সেটাই হয়তো মিলছে না ব্যাটে-বলে। বলছিলাম গাড়ি সার্ভিসিং এর বিষয়ে। নিজের গাড়ি থাকুক কিংবা না থাকুক, সার্ভিসিং শব্দটি অচেনা এমন মানুষ খুজে পাওয়া কঠিনই হবে।

গাড়ি সার্ভিসিং কি?

একটি গাড়ির ইঞ্জিন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের কার্যক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য নির্দিষ্ট একটি সময় পর পর পুরো গাড়িকে ধুয়েমুছে চকচকে করে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনে কোন কিছু মেরামত বা পরিবর্তন করাই সার্ভিসিং।

এই তথ্যটি ছাড়া গাড়ি সার্ভিসিং সম্পর্কে খুটিনাটি আর কী জানি আমরা? এই যে ইঞ্জিনের উপর পুরো গাড়িটি নির্ভর করছে, যেটায় কোন ঝামেলা দেখা দিলে বিপত্তি বাধবে পুরো গাড়িতেই, সেই ইঞ্জিন ঠিক কতদিন ব্যবহারের পর কিংবা কতটুকু চলার পর সার্ভিসিং করা প্রয়োজন, জানি কী আমরা?

কী কী করা হয় গাড়ির সার্ভিসিংয়ে

গাড়ি সার্ভিসিং করাতে গেলে গাড়িতে যে যে কাজগুলো করানো হয় আগে সেগুলো জেনে নেই আরেকটিবারঃ

  • ইঞ্জিনে থাকা পুরনো লুবওয়েল বা মবিল ফেলে দিয়ে নতুন লুবওয়েল দেয়া হয়
  • নতুন লুবওয়েল দেয়ার আগে ইঞ্জিনকে ফ্লাশিং ওয়েল দিয়ে ফ্ল্যাশ করা হয়
  • ইঞ্জিন ও রেডিয়েটরে থাকা পুরনো পানি ড্রেন আউট করে ফেলে দিয়ে, ডিটারজেন্ট ও ফ্লাশিংগান দিয় পরিষ্কার করা হয় 
  • পরিষ্কার ইঞ্জিন ও রেডিয়েটরে পরিষ্কার পানি দেয়া হয় 
  • ভারী গাড়ি হলে গাড়ির বিভিন্ন গ্রিজিং পয়েন্টে গ্রিজগান দিয়ে নতুন গ্রিজ দেয়া হয় 
  • স্পেয়ার চাকাসহ প্রতিটি চাকায় যথেষ্ট হাওয়া আছে কিনা দেখা হয় এবং প্রয়োজনে হাওয়া দেয়া হয় 
  • লুবওয়েল ফিল্টার, ফুয়েল ফিল্টার, কেবিন ফিল্টার ও এয়ার ক্লিনার পরিবর্তন করা হয় 
  • ড্রাইভ বেল্ট, টাইমিং বেল্ট ও রেডিয়েটর প্রেশার ক্যাপ চেক করা ও প্রয়োজনে পরিবর্তন করা হয় 
  • ইঞ্জিন মসৃণভাবে চলছে কিনা, টিউনিং ঠিক আছে কিনা চেক করা হয় 
  • ব্রেক প্যাড ভালোভাবে চেক করা হয় 
  • ব্যাটারি চেক করা হয়

কখন সার্ভিসিং করাবেন আপনার গাড়ি?

ভালো জায়গা থেকে গাড়ি কেনার পর সাধারনত নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত সেই গাড়ির ওয়ারেন্টি থাকে এবং দেয়া হয় ফ্রি সার্ভিসিং সুবিধা। গাড়ি যতদিন সেই ওয়ারেন্টির সময়ের ভেতরে আছে, ততদিন অন্তত সেখানকার সার্ভিস শিডিউল মতো সার্ভিসিং করানো উচিত। এতে গাড়ির মালিকের ওয়ারেন্টি থাকাকালীন সার্ভিসিংয়ের খরচ যেমন কমবে, যত্নে থাকবে শখের গাড়িটিও। ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে গেলেও, কিছু বিষয় জানা থাকলে নিজেই বুঝতে পারবেন ঠিক কখন গাড়িটিকে নিয়ে যেতে হবে সার্ভিসিং করাতে।

কতখানি চলার পর গাড়ি নিবেন সার্ভিসিংয়ে?

গাড়ি নির্মাতা বড় বড় কোম্পানিগুলো বা গাড়ির বিষয়াদি নিয়ে যারা অভিজ্ঞ, তারা প্রতি ১২ মাস কিংবা ১০ হাজার কিলোমিটার চলার পর একটি গাড়ি সার্ভিসিং করার ওপর জোড় দেন। তবে গাড়ি ড্রাভিংয়ের ধরন ও ব্যবহারের আধিক্যের উপর নির্ভর করে এটি আগে পরে হতে পারে।

ইদানিং গাড়ি প্রস্তুতকারক বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ও গাড়ি বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন প্রতি ৫ হাজার কিলোমিটার পরপর গাড়ি সার্ভিসিং করানোরও। অর্থাৎ, আপনি যদি একদম সদ্য নতুন গাড়ি কিনে থাকেন এবং দীর্ঘদিন গাড়িটিকে নতুনের মতো ও ঝামেলাহীন রাখতে চান, তবে সার্ভিসিং করাতে পারেন এভাবে।

  • প্রথম সার্ভিসিং ৫ হাজার কিলোমিটার চালানোর পর
    এই সময় মূলত গাড়িটি প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। দেখা হয় কোন যন্ত্রাংশ পরিবর্তন বা মেরামত লাগবে কিনা। গাড়ির প্রথম সার্ভিসিংয়েই প্রথমবারের মতো ইঞ্জিনের লুবওয়েল পরিবর্তনের সাথে ইঞ্জিন ও রেডিয়েটর পরিষ্কার এবং পানি পরিবর্তনের কাজও করা হয়। যেহেতু প্রথম ৫ হাজার কিলোমিটার পরেই এই সার্ভিসিংটি করা হয়, সেক্ষেত্রে গাড়ির কুল্যান্ট লেভেল, উইন্ডশিল্ড ওয়াশার ফ্লুইড এবং এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার রাখাসহ ছোটখাটো যেকোন সমস্যা ধরতে এটি খুব ভালো সময়
  • দ্বিতীয় সার্ভিসিং ১০ হাজার কিলোমিটার চালানোর পর
    ৫ হাজার কিলোমিটার পরে করা প্রথম সার্ভিসিংটি মূলত সতর্কতামূলক। ইঞ্জিন মোট ১০ হাজার কিলোমিটার চলার পরের এই সারভিসিংটিই আদতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই পর্যায়ে এসে আপনার গাড়ি যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছে, পার করেছে রাস্তার বহু চড়াই উতরাই।যেকারনে এবারের প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় আরো সময় নিয়ে, গভীরভাবে এবং করতে হতে পারে কিছু পরিবর্তনও। লুবওয়েল ফিল্টার, ফুয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করাটা স্বাভাবিক এসময়। যদি ধুলোবালিযুক্ত রাস্তায় খুব বেশি যাতায়াত থাকে আপনার গাড়ির, তাহলে শুধু এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার করলেই হয়তো হবে না।পরিবর্তন করা লাগতে পারে এয়ার ফিল্টারটি। গাড়ির ভেতর দূষণমুক্ত পরিচ্ছন্ন বাতাসে নিশ্বাস নিতে চাইলে, প্রতি ১০ হাজার কিলোমিটার গাড়ি চালানোর পর পরিবর্তন করতে হতে পারে এয়ার কন্ডিশনার সিস্টেমের পোলেন ফিল্টারটিও। আর ইঞ্জিনসহ পুরো গাড়ির মসৃণতা ধরে রাখতে গাড়ির ভেতর-বাইরের সমস্ত জয়েন্ট ও কব্জাগুলোয় লুব্রিকেন্ট তো দেয়া হবেই।
  • তৃতীয় সার্ভিসিং ১৫ হাজার কিলোমিটার চালানোর পর
    আগের সার্ভিসিংয়ের আরো ৫ হাজার কিলোমিটার পড়ে, অর্থাৎ পুরো ১৫ হাজার কিলোমিটার গাড়ি চালানোর পর যে সার্ভিসিংটি করানো হবে সেটিতে আরো কিছু সমস্যা হয়তো সামনে আসবে। হয়তো লাগবে কিছু মেরামত কিংবা যন্ত্রাংশের পরিবর্তনও। ১৫ হাজার কিলোমিটার চলার পর একটি গাড়ির ব্রেক প্যাডগুলি পরীক্ষা করে দেখার সঠিক সময় বলা যায়।যদিও একটি ভালো গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানির গাড়ির ব্রেক প্যাড ১৫ হাজার কিলোমিটার চলার পরেও অনেকটা দীর্ঘসময় ভালো থাকার কথা। তবুও ড্রাইভিং এর ধরণের উপর নির্ভর করে এর স্থায়িত্ব কমবেশি হতে পারে।পেট্রোল চালিত গাড়িতে ১৫ হাজার কিলোমিটার চলার পর ব্রেকের সাথে স্পার্ক প্লাগগুলিও পরীক্ষা করে দেখা হয়। ভালো সার্ভিসিং সেন্টারগুলোতে সাধারণত গাড়ির ম্যানুয়াল চেক করে দেখা হয়, সেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাস্তা চলার পর গাড়িতে কোন বিশেষ পরিবর্তন বা সার্ভিসিংয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কিনা। এছাড়াও গাড়ির বিভিন্ন অংশের ফ্লুয়িড, লুব্রিক্যান্ট, লুবওয়েল ইত্যাদি পরীক্ষা করা তো গাড়ি সার্ভিসিংয়ের নিয়মিত অংশ।

এইভাবে ৫ হাজার কিলোমিটার পর পর গাড়ি সার্ভিসিং করানোর প্রক্রিয়াটিকে পিরিওডিক বা পর্যায়ক্রমিক সার্ভিসিং বলা যায়। এভাবে নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে পর্যায়ক্রমিক সার্ভিসিং করিয়ে নিশ্চিত করতে পারেন আপনার শখের গাড়িটির দীর্ঘায়ু। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারেন মসৃণ ইঞ্জিন নিয়ে কোন বিপত্তি ছাড়াই। গাড়ির যত্নে আরও ৭টি বিষয় জানতে চাইলে আমাদের এই ব্লগ পোস্টটি পড়তে পারেন। এছাড়া সার্ভিসিং খরচ বাঁচানোর টিপস সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়তে পারেন।

শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top