প্রিয় গাড়িটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারলে যেমন আপনার ভালোলাগা কাজ করবে, তেমনি গাড়ির আয়ুষ্কালও বেড়ে যাবে। তবে সবসময় গাড়ি পরিষ্কার করার জন্য দামি পরিষ্কারক দ্রব্য ব্যবহার না করে, বরং ঘরে প্রস্তুতকৃত ক্লিনার দিয়েও তা করা যায়। তো আপনি কি জানেন ঘরে থাকা অনেক কিছু দিয়েই গাড়ি পরিষ্কার করা যায়? ঘরের নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন দ্রব্য দিয়েই অপরিষ্কার কারটি ঝকঝকে-তকতকে করে ফেলতে পারবেন! আর তাতে আপনার সময় এবং খরচ দুটোই কমে যাবে! দারুণ না ব্যাপারটা? আসুন কিছু সহজলভ্য ঘরোয়া জিনিসের ব্যবহার জেনে নিন, যা আপনার গাড়িটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সাহায্য করবে।
বেকিং সোডার ব্যবহার
গাড়ি পরিষ্কারের ক্ষেত্রে বেকিং সোডার বহুবিধ ব্যবহার আছে। বেকিং সোডা দিয়ে গাড়িতে পড়া দাগগুলো দূর করতে পারেন। এক কাপ বেকিং সোডার সাথে এক গ্যালন সাবানের পানি মিক্স করে এই কাজটি করতে পারেন। গাড়ির সিট বেল্টগুলো বিবর্ণ হয়ে গেছে? সেক্ষেত্রে পরিষ্কার করার জন্য বেকিং সোডা এবং পানি দিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর পেস্টটি ভালভাবে প্রয়োগ করুন এবং ধুয়ে ফেলুন। শুকিয়ে যাবার পর আগের এবং পরের পার্থক্যটুকু নিজেই বুঝতে পারবেন। এছাড়াও গাড়ির ব্যাটারির মরিচা দূরীকরণে সোডা এবং গরম পানির মিশ্রণ অনেক বেশি কার্যকর।
শ্যাম্পু এবং টুথপেস্টের ব্যবহার
শ্যাম্পু যেমন চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়, তেমনি গাড়ি ধোয়ার কাজেও তা সমান পারদর্শী। শ্যাম্পু দিয়ে গাড়ি ধুতে পারবেন, তবে সেক্ষেত্রে বেবি শ্যাম্পু হলে বেশি ভাল হয়। কারণ এতে কারের পেইন্টের কোন ধরণের ক্ষতি সাধিত হবে না। এক্ষেত্রে দুই টেবিল চামচ শ্যাম্পুর সাথে, দুই গ্যালন পানি মিক্স করুন। তারপর একটি নরম কাপড়/তোয়ালের সাহায্যে গাড়ি পরিষ্কারের কাজটি করে ফেলুন। এছাড়াও অস্পষ্ট হেডলাইটগুলো উজ্জ্বল করতে টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। এতে অস্বচ্ছতা কেটে গিয়ে উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। শুধুমাত্র প্লাস্টিকের আবরণে পেস্ট প্রয়োগ করে, বুরুশ দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন।
ভিনেগার এবং তিসির তেলের ব্যবহার
ভিনেগার দিয়ে গাড়ির উইন্ডশীল্ড পরিষ্কার থেকে শুরু করে ভেতরের দুর্গন্ধ পর্যন্ত দূর করা যায়। গাড়ি পরিষ্কার করার জন্য ৩% পানি এবং ১% ভিনেগার ব্যবহার করুন। গাড়ির ইন্টেরিয়র পরিষ্কার করতে ভিনেগার এবং তিসির তেলের সাহায্য নিতে পারেন। ভিনেগার এবং তিসির তেলের মিশ্রণ এক্ষেত্রে ভাল কাজে দিবে। এছাড়াও কোল্ড ড্রিংকস এবং পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে গাড়ির ব্যাটারির টার্মিনালে পড়া মরিচা প্রতিরোধ করতে পারবেন।
জলপাই তেল ইউজ করা
আপনার গাড়ির ড্যাশ বোর্ড ধুলা পড়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে? চিন্তার কোন কারণ নেই! খানিকটা জলপাই তেল দিয়ে তা ঝকঝকে করে তুলতে পারবেন। ড্যাশ বোর্ডে অল্প পরিমাণে জলপাই তেল প্রয়োগ করুন। তারপর একটি নরম কাপড় দিয়ে আস্তে আস্তে ঘষে ময়লাগুলো তুলে ফেলুন। পরবর্তীতে দেখবেন যে, এটা নতুনের মতোই চকচকে হয়ে গেছে! আপনি কি জানেন? অনেক ক্ষেত্রে গাড়িতে পড়া দাগ দূর করতে পেঁয়াজ অনেক বেশি কার্যকর। মূলত এটা সবচেয়ে বেশি কাজ করে সিগারেটের দাগ দূর করতে। একটা পেঁয়াজ কেটে তা পোড়া দাগে চেপে ধরুন, ফলাফল নিজ চোখেই দেখতে পাবেন!
এয়ার ফ্রেশনার তৈরি করুন
সবসময় গাড়িতে একটা জীবাণু নাশক স্প্রে রাখতে চেষ্টা করুন। এতে গাড়ির ভেতরের বাতাস ভালো থাকবে। তবে খেয়াল রাখবেন, এটার ব্যবহার যেন খুব বেশি পরিমাণে হয়ে না যায়। তবে যখন গাড়িতে স্প্রে করবেন, তখন অবশ্যই দরজা-জানালা খুলে রাখবেন। বিশেষ করে জীবাণু নাশক স্প্রে ব্যবহার করার সময় অধিক সতর্ক থাকা দরকার। আপনি ইচ্ছা করলে গাড়ির জন্য নিজেই একটি এয়ার ফ্রেশনার বানাতে পারেন। এক্ষেত্রে ১/৪ কাপ বেকিং সোডা নিয়ে একটি জারে রাখুন। এরপর জারের মুখে খুব ছোট ছোট কয়েকটি ছিদ্র করুন। আর তাহলেই খুব সহজেই তৈরি হয়ে গেলো, আপনার হোমমেড এয়ার ফ্রেশনার। এখন এটা ব্যবহারের জন্য গাড়িতে রেখে দিতে পারেন।
পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে কাপড় কিংবা কাগজের ব্যবহার
গাড়ি পরিষ্কারের কাজে পুরনো কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রথমে ভ্যাকুয়াম ব্যবহার করে, যত দূর সম্ভব সব ময়লা পরিষ্কার করে ফেলুন। তারপর একটি স্প্রে বোতলের অর্ধেক ভিনেগার এবং অর্ধেক পানি ভর্তি করে নিয়ে স্প্রে করুন। এরপর একটা কাপড় দিয়ে তা ভালোভাবে মুছে ফেলুন। এছাড়াও কারের উইন্ডো পরিষ্কার করতে খবরের কাগজ বেশ ভালো কাজ করে। পুরনো নিউজপেপার দিয়ে গাড়ির জানালার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলতে পারেন।
আপনার শখের গাড়িটি ভাল রাখার জন্য নানাভাবে যত্ন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘরোয়া দ্রব্যাদি ব্যবহার করলে, দেখবেন কারটি অনেক বেশি কার্যক্ষম থাকবে। তবে গাড়ির সঠিক যত্নের পাশাপাশি সেটার সুরক্ষার কথাটাও চিন্তা করা উচিত। সেক্ষেত্রে গাড়ির সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য ভিটিএস প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারেন। আপনার গাড়ির শতভাগ সেফটির নিশ্চয়তা দিতে, প্রহরী আছে সবসময় আপনার পাশেই।