বর্তমান সময়ে পুরো পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত বিলিয়ন গ্যালনেরও বেশি জ্বালানী তেলের প্রয়োজন হয় গাড়ি চালাতে। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় এই জ্বালানী তেলের মজুদ পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে ফলে কার্যত ব্যাহত হবে যান চলাচল। আর বর্তমানে যাতায়াত থেকে শুরু করে পণ্য পরিবহন এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে জ্বালানী তেল ব্যতিত স্বাভাবিক কার্যক্রম কল্পনা করা যায়। তাই নীতিনির্ধারকরা আগামীতে এমন কিছু নবায়নযোগ্য শক্তির সন্ধান করছেন, যা থেকে শক্তি উৎপন্ন করে যত প্রয়োজন ব্যবহার করা যাবে এবং এই শক্তি শেষ হবে না সহজে। সেই সুবাদে বিদ্যুত নিয়ে আশা জাগানিয়া রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। তাই ধারণা করা যায় আগামী বিশ্ব হবে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিশ্ব। তাই চলুন জেনে নেই বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তা দিন দিন কেন বাড়ছে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি কী?
যে গাড়ি বৈদ্যুতিক শক্তির সাহায্যে চালনা করা হয় তাকেই বৈদ্যুতিক গাড়ি বলে। অর্থ্যাৎ, যে গাড়িতে জ্বালানী শক্তির দ্বারা ইঞ্চিন ব্যবহার না করে এক বা একাধিক চার্জ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি যুক্ত করার মাধ্যমে সেই বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা মটরের সাহায্যে গতি শক্তি উৎপন্ন করে গাড়ি চালনা করা হয় তাকেই বৈদ্যুতিক গাড়ি বলা হয়।
বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ
বর্তমানে ডিজেল, পেট্রোল কিংবা অকটেনের মতো প্রায় সকল জ্বালানী দ্বারা চালিত ইঞ্জিন থেকে প্রতিনিয়ত পরিবেশ মারাত্নক ভাবে দূষিত হচ্ছে। ফলে পরিবেশ সচেতনার লক্ষ্য হিসেবে আগামীতে জ্বালানী তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা দিনদিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত এই কারনে বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় যানবাহনে জ্বালানীর পরিবর্তে বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা এখন প্রায় সকল দেশেরই মূল লক্ষ্য। তাই আগামীর বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার ধরতে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাগুয়ার পরিকল্পনা করছে ২০২৫ সাল থেকে তারা শুধু বিদ্যুৎ-চালিত গাড়িই বিক্রি করবে। ভলভো বলছে, ২০৩০ সাল থেকে শুধু ইলেকট্রিক গাড়িই বিক্রি করবে এই জায়ান্ট গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং ব্রিটিশ স্পোর্টসকার নির্মাতা কোম্পানি লোটাস বলছে, তারাও ২০২৮ সাল থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন এবং বিপনন শুরু করবে। এছাড়া জেনারেল মোটর্স বলছে, তারা ২০৩৫ সাল নাগাদ শুধুই ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদন করবে। আরেক জায়ান্ট গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি ফোর্ড বলছে, তারা ইউরোপে যত গাড়ি বিক্রি করে, ২০৩০ সালের মধ্যে তার সবই হবে বিদ্যুৎ-চালিত। ফোক্সওয়াগন বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের বিক্রীত গাড়ির ৭০ শতাংশই হবে ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক।
তো বুঝতেই পারছেন, আগামী বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ির কেমন চাহিদা হতে যাচ্ছে। যেহেতু, সৌর শক্তি ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য শক্তি হিসেবে বৈদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব এবং এর দ্বারা পরিবেশ দূষণও হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই সীমিত তাই বলাই যায়, আগামীর বিশ্ব হতে চলেছে, বৈদ্যুতিক গাড়িরই বিশ্ব।
বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ
পুরো পৃথিবীতেই বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন, বিপণন এবং ব্যবহারের হিড়িক উঠেছে। এই বৈদ্যুতিক গাড়ির বিপ্লবের অংশহিসেবে বাংলাদেশও শুরু করেছে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন। বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চট্রগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে স্থাপন করতে যাচ্ছে ১০০ একর জায়গায় সুবিশাল বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কারখানা। আসছে বছরই আশা করা যাচ্ছে দেশের রাস্তায় এই অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর উৎপাদিত গাড়ির দেখা মিলবে যা হবে সম্পন্ন বৈদ্যুতিক গাড়ি।
২০১৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই কারখানার আবকাঠোমোগত উন্নয়নের কাজ। চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালিকে অংশীদার করে আগামী বছরের শুরুতেই দেশের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ি আনতে চায় বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ। স্কুল–কলেজের শিক্ষক, স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কথা মাথায় রেখেই প্রথমে চার চাকার গাড়ি উৎপাদন করা হবে। মূলত মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তকে টার্গেট করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। গাড়ির দাম থাকবে ৭ থেকে ১৪ লাখ টাকার মধ্যে। কিস্তিতে থাকবে টাকা পরিশোধের সুযোগ। মহাসড়কে ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়ার জন্য দেশে বিদ্যমান সিএনজি ও পেট্রলপাম্পের পাশে বসানো হবে চার্জিং ইউনিট। বাসায়ও ব্যাটারি চার্জ দেওয়া যাবে।
তাই বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগে প্রবেশ করতে আর দেরী নেই আমাদের প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশের।
বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তার কারণ
বর্তমানে রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ বুঝতে পেরেছে জ্বালানী তেলের প্রয়োজনীয়তা এবং আগামীতে ভয়াবহ কোন যুদ্ধের কারণে যদি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় জ্বালানী তৈল উত্তোলন তবে পুরো পৃথিবীই তাই থমকে যাবে। তাই সংশ্লিষ্টরা জ্বালানী তেলের বিকল্প হিসেবে বৈদ্যুৎ শক্তির কথা ভাবছে। কেননা, সৌর শক্তি ব্যবহার করে খুব সহজেই নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা সম্ভব যা সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব এবং বহুলাংশে নিরাপদ। তাছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়ি অনেক বেশি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ দূষণ, বায়ু দূষণ এবং শব্দ দূষণ থেকে সম্পন্ন মুক্ত বিধায় প্রায় সকল মানুষের কাছেই বৈদ্যুতিক গাড়ির গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীর ব্যবহৃত প্রায় ৭০% যানবাহনই হবে বৈদ্যুতিক।
একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে কেমন খরচ হতে পারে
একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে কেমন খরচ হতে পারে সেটা জানার আগে আপনাকে জানতে হবে বৈদ্যুতিক গাড়ির বৈদ্যুতিক চার্জ কখন বেশি ব্যবহৃত হবে এবং কিভাবে চার্জের অপচয় রোধ করা সম্ভব। যেমন- আপনি যদি এসি ব্যবহার করেন, তখন আপনার গাড়ির চার্জ বেশি খরচ হবে, আবার রাস্তা কতটা মসৃণ তার উপরও নির্ভর করবে চার্জের জীবনকাল। সে যাই হোক চলুন জেনে নেই একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে কেমন খরচ হতে পারে তার বিস্তারিত-
প্রতি কিলোওয়াটের জন্য সঠিক খরচ বের করতে হলে আপনার সর্বশেষ বিলের বিদ্যুতের সামগ্রিক খরচকে ব্যবহৃত কিলোওয়াট-ঘণ্টা দিয়ে ভাগ করতে হবে। আমেরিকার এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুসারে প্রতি কিলোওয়াট-ঘন্টার জন্য বিদ্যুৎ খরচ হয় প্রায় ১৩.৭৫ টাকার। বিদ্যুতের সাধারণ মূল্য অনুযায়ী চলুন টেসলার ‘ওয়াই’ মডেলের একটি বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জের খরচ হিসাব করে দেখি আমরা। টেসলার এই গাড়িটি ১০০ মাইল চলাচলে ২৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে। অর্থাৎ, প্রতি মাইলে ০.২৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ শক্তি খরচ করছে গাড়িটি। এখান থেকে আপনি প্রতি মাসে কত কিলোওয়াট শক্তি ব্যবহার করছেন, তার একটা হিসাব বের করা সম্ভব। প্রতি মাসে ১০০০ মাইলের জন্য আপনি ২৮০ কিলোওয়াট খরচ করছেন। এবার ২৮০ কিলোওয়াট ঘণ্টাকে ১৩.৭৫ দিয়ে গুণ করুন। দেখা যাবে আপনার গাড়ির মাসিক বিদ্যুৎ খরচ মাত্র ৩,৮৫০ (তিন হাজার আটশত পঞ্চাশ) টাকা। (যেখানে প্রতি ০১ ডলার সমান ১০০ টাকা ধরে হিসেব করা হয়েছে।)
এবার চিন্তা করে দেখুন, এক মাসে যদি আপনি ৩০০-৪০০ কিলোওয়াট বিদ্যুতও খরচ করেন তারপরও আপনি হাজার পাঁচাকের আশেপাশের টাকার খরচের মাধ্যমেই আপনার বৈদ্যুতিক গাড়ির জ্বালানীর খরচ বহন করতে পারছেন। তাই আগামী বিশ্বের কর্তৃত্বে থাকবে বৈদ্যুতিক গাড়ি সেটা আর বেশি দূরের চিত্র নয়। এই ছিল বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তা বাড়ার মূল কারন।
শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।