পৃথিবীতে গাড়ি আবিষ্কারের পর জীবনে এসেছে গতি। আর গতি যেখানে সেখানেই প্রতিযোগিতা। তাই গাড়ি কেবল চলাচলের জন্য না, বর্তমানে গাড়ি রেসিং একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং দামী প্রতিযোগিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত সব রেসিং ইভেন্টের ভিড়ে পৃথিবীর সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ ৫ টি মোটর রেসিং ইভেন্টের লিস্ট করা হয়তো একটু কষ্টসাধ্য। তবুও সবচাইতে প্রচলিত এবং জাঁকজমকপূর্ণ জনপ্রিয় ৫টি রেসিং ইভেন্টের টুকিটাকি নিয়ে আজকের ব্লগ।
মন্টিকারলো র্যালি
এই মোটর রেসিং ইভেন্টটি সর্বপ্রথম ১৯১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই মোটর রেসিং প্রতিযোগিতাটি রেসিং জগতের খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং প্রভাবশালী মোটর ইভেন্ট। প্রতিটি ডব্লিউসিআর র্যালি আপনাকে দারুণ সব মুহূর্তের উপহার দিবে, কিন্তু বার্ষিক মৌসুম শুরু করা ক্ষেত্রে এই রেসিং ইভেন্টটি এখনো জনপ্রিয়। এটা বলতে গেলে অনেকখানিই আস্ফাল্ট র্যালি। কিন্তু এই রেসিং ইভেন্টের একটি অন্যতম দিক হচ্ছে প্রচণ্ড শীতে গাড়ি চালানোর চ্যালেঞ্জ। পথ দেখে অনেকেই রেস জিততে পারে, কিন্তু পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে র্যালি রেসিং শেষ করা বিশাল চ্যালেঞ্জের ব্যাপার।
আইল অফ ম্যান টিটি
এই রেসিং ইভেন্টের শুরু ১৯০৭ সালে। আপনি যদি মোটরসাইকেল রেসিং এর সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে চান এবং রেসিং ট্র্যাকের বাঁকে বাঁকে মৃত্যুফাঁদকে ভয় না পান তাহলে এই রেসিং ইভেন্টটি আপনার জন্য। সানফেল মাউন্টেন রেসিং ট্র্যাকটি শত শত বাক এবং টুইস্টের সমন্বয়ে গড়া পৃথিবীর অন্যতম রেসিং ট্র্যাক। যেই ট্র্যাকে রেসারদের গড় গতি থাকে গড়ে ১০০ কিলোমিটার। ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেসিং ট্র্যাকটি ভীষণ বিপজ্জনক। এমনকি এটিকে পৃথিবীর সবচাইতে মারাত্মক রেসিং ট্র্যাক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শুরু পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০০ টি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে এই রেসিং এ।
টুয়েন্টি ফোর আওয়ার অফ নুরবারগিং
পাহাড়ের কোল ঘেঁসে একটি আঁকাবাঁকা মোটর রেসিং সার্কিটের কথা চিন্তা করুন তো? মনে হচ্ছে কী মারাত্মক রেসিং! তাইনা? হ্যাঁ, জার্মানির পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে সাড়ে ১৫ মাইলের এই বিশাল রেসিং সার্কিট অবস্থিত। বিখ্যাত এই গাড়ি রেসিং প্রতিযোগিতায় প্রায় ২০০ গাড়ি অংশ নিয়ে থাকে। পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক এবং এই রেসিং ট্র্যাকে এখন পর্যন্ত ১২ জনের প্রাণহানির রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে এর ‘দ্যা গ্রিন হেল’ নামকরণও অনেকটা সার্থক বলা যায়। চব্বিশ ঘণ্টার এই মোটর রেসিং ইভেন্টটিকে জিটি ক্যাটাগরির রেসিং এ সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ ধরা হয়ে থাকে।
ইন্ডিয়ানাপলিস
বলতে গেলে বলতে হয়, ইন্ডিয়ানাপলিস হচ্ছে সকল মোটর রেসের দাদা। যদিও আমেরিকানদের মধ্যে ওপেন হুইল রেসিং এর জনপ্রিয়তা গত দুই দশক ধরে কমে আসছে, কিন্তু যখনি ইন্ডিয়ানাপলিসের কথা আসে, এর আশেপাশেও কেউ নেই। এটি এখনো পৃথিবীর সবচাইতে জাঁকজমকপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ রেসিং ইভেন্ট। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাড়ি রেসাররা এই ট্রফির উপর নিজের চেহারার প্রতিফলন দেখার জন্য হলেও, চমকপ্রদ ইতিহাস সমৃদ্ধ এবং রুদ্ধশ্বাস জাগানো এই ইভেন্টে অংশ নিতে আসেন। ৩৩ টি গাড়ি, আড়াই মাইলের এই সার্কিটে প্রায় ২৩০ মাইল প্রতি ঘন্টায় বেগে সোজা ৫০০ কিলোমিটার রেস দিতে হয়। এই দীর্ঘ রেসিং সম্পূর্ণ করতে প্রচণ্ড স্নায়ুবিক শক্তির দরকার হয়। একদিকে যেমন জনপ্রিয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ, অন্যদিকে কিছুটা ঝুঁকিও রয়েছে। যার জন্য মাইক কনওয়ের মতো রেসার এই রেসিং এ অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
বাথার্স্ট ১০০০
পৃথিবীর অন্যতম আরেকটি দুর্ধর্ষ মোটর রেসিং। এটি মূলত ভিএইট সুপারকার রেসিং। এই রেসের রেসিং ট্র্যাকও পর্বতের মাঝে! হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, ছোটবড় পর্বতবেষ্টিত এই রেসিং ট্র্যাকের প্রথম বাঁকের নাম- দ্যা হেল কর্নার- শুনলেই বুঝতে পারার কথা কতটা রোমহর্ষক এই রেসিং কম্পিটিশন! ১৯৬০ সালে প্রথমবার প্রায় প্রত্যেক অস্ট্রেলিয়ান রেসারের স্বপ্ন থাকে এই রেসটি জেতার। শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ান রেসারই নয়,পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের রেসাররাও এই ইভেন্টে অংশ নেয়ার জন্য আসেন। এই রেসিং কম্পিটিশন এতটাই উত্তেজনা ছড়ায় যে ,গত তিন বছর ধরে লাস্ট ল্যাপের জন্য দুইজন রেসার রেস লাগাবেই। শেষ ল্যাপে ডুয়াল রেসের ঘটনা রেসিং জগতে খুবই উত্তেজনাকর।