ভ্রমণ এখন আমাদের নিত্যনৈমত্তিক কাজ। কর্মের তাগিদ কিংবা পিকনিক যেকোনো প্রয়োজনেই প্রায়শই আমাদের দূরবর্তী ভ্রমণে যেতে হয়। ভ্রমণ বলতেই যানবাহন, রাস্তাঘাট, কঠিন পথ, ক্লান্তি, একটানা বয়ে চলার একঘেঁয়েমিসহ আরও অনেক কাঠখড় পোড়ানো এক নাম। তাছাড়া ভ্রমণে ঝুঁকির মাত্রা তো অন্য যেকোনো কাজের চেয়ে অত্যধিক। তাই ভ্রমণে আমাদের নিরাপত্তাজনিত অনেকগুলো বিষয় খুব করে মাথায় রাখতে হয়। আজকের আলোচনায় আমরা মূলত গাড়ি নিয়ে দূরবর্তী ভ্রমণের প্রয়োজনীয় ১০ টি টিপস আলোচনা করবো। যা আপনার দূরবর্তী ভ্রমণকে করবে অনেক বেশি নিরাপদ ইনশাআল্লাহ।
যেখানেই ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করবেন তার আগে যথেষ্ট সময় নিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে বেশকিছু প্ল্যানিং করে নিবেন। ফলে আপনার ভ্রমণের রোড ম্যাপ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সকল কিছুতেই একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হবে। ফলে ভ্রমণের প্রথমে, মাঝে এমনকি শেষে কোথাও কোন প্রকার ঝামেলা পোহাতে হবে না। নিশ্চিন্তে শেষ করতে পারবেন একটি সুন্দর ভ্রমণ। চলুন জেনে নেই দূর্ববর্তী ভ্রমণের ক্ষেত্রে যে সকল প্রস্তুতি আপনার জন্য বাধ্যতামূলক, সেসবের সংক্ষিপ্ত আলোচনা-
১। গন্তব্য নির্ধারণ
যদি এমন হয় আপনি কোথাও ঘুরতে যাবেন তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে আপনার এখন কেমন জায়গায় ভ্রমণ করা উচিত। সেটা অনেকটাই নির্ভর করবে আপনার মনের উপর। আপনার মন এবস্থায় কী চায়। পাহাড় নাকি সমুদ্র নাকি শহরের জঞ্জাল ফেলে কোন একটি নিরব পাখি ডাকা প্রাকৃতিক রিসোর্ট। আপনার মনকে প্রশ্ন করুন যদি পাহাড় কিংবা সমুদ্র হয় তবে এমন জায়গা নির্বাচন করুন যেখানে রয়েছে দুটোরই সংমিশ্রণ।
২। রোড ম্যাপিং
আপনি কোথায় যাবেন সেটা ইতোমধ্যেই ঠিক করে ফেলেছেন। এবার আপনাকে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কখন রওয়ানা করবেন কোন পথে যাবেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রোড ম্যাপিংটা খুব ভেবেচিন্তে করতে হবে। কারণ, রোড ম্যাপিং এর উপরই আসলে নির্ভর করে পুরো ভ্রমণের প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি একেবারে সকল কিছুই। ধরুণ, আপনি ঢাকা থেকে রওয়ানা করে কক্সবাজার যাবেন, তো এক্ষেত্রে যদি আপনার বাসা মিরপুর হয় তবে আপনি মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যেতে যেতেই পুরো পথের ক্লান্তি এটুকু পথেই পেয়ে যাবেন। তাই আপনাকে হয়তো খুব ভোরে রওয়ানা করতে হবে না হয় রাত ১০ টার পর। আবার রাত ১০ টার পর রওয়ানা করলে, ভবেরচর, সোনারগাঁও এবং সীতাকুন্ডের মতো এলাকায় ডাকাতের কবলে পড়ার ভয়। তাই আপনাকে খুব ভেবে চিন্তে রোড ম্যাপিংটা করতে হবে।
৩। গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ
যদি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ভ্রমণ করবেন বলে স্থির করেন তবে কত কিলো পথ আসা এবং যাওয়া দুটো মিলিয়ে হবে তার আনুমানিক দূরত্ব বের করে ড্রাইভারকে সে অনুযায়ী গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন, চাকার প্রেসার ইত্যাদি চেক করে নিতে বলুন। তবে শীতকালে দূরবর্তী ভ্রমণে গাড়ির পূর্ব প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাইটের এই লিংকে বিস্তারিত জেনে নিন।
৪। খাবার
মানুষের জীবনের অত্যাবশকীয় উপাদান হচ্ছে খাবার। খাবার সর্বত্রই পাওয়া গেলেও মানসম্মত খাবার ভ্রমণের অত্যাবশকীয় উপাদান। যেহেতু ভ্রমণে অনেক বেশি ক্লান্তি কাজ করে সেহেতু মানসম্মত এবং স্বাস্থ্যসম্মত উভয় প্রকারের সংমিশ্রণে তৈরি খাবারই হতে হবে আপনার নিরাপদ ভ্রমণের অন্যতম সঙ্গী। হাইওয়ের পাশে আপনি প্রচুর রেস্টুরেন্ট পাবেন তবে চড়াদামে মানহীন খাবার কিনে খাওয়া কী কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে! যেখানে একটু চেষ্টা করলেই আপনি হোমমেড খাবার সঙ্গে রেখে করতে পারেন নিশ্চিত ভ্রমণ।
৫। প্রয়োজনীয় ওষুধ
জার্নিতে মানুষকে একটি অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাই সুস্থ মানুষও একটানা জার্নি করলে অসুস্থ হয়ে যাওয়াটা অতি সাধারণ ব্যাপার। যদি আপনার সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও থাকেন তখন তো ওষুধের ব্যাপারটা আরও জটিল আরও জরুরি। ভ্রমণে বের হওয়ার কমপক্ষে একদিন আগেই সবার স্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সংগ্রহ করে রাখুন। সাথে লেবু, আদা, রংচা যেন মিস না হয়। বিশেষ করে বমি, বদ হজম, এসিডিটি এবং এলার্জির ঔষধ থাকাটা তো বাধ্যতামূলক। তাছাড়া সাথে যদি পরিবারের নারী সদস্যরা থাকেন তবে তাদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন তো আরও জরুরি। তাছাড়া নারীদের বিষয়টা মাথা রেখে তাদের সাথে পরামর্শ করে ঔষধ সংগ্রহ করাটা অত্যাবশকীয় কাজগুলোর মধ্যে একটি।
৬। প্রয়োজনীয় কাপড়
কতদিনের জন্য ভ্রমণে বেরুচ্ছেন। কতটা স্পট ভ্রমণ করবেন। সে এলাকাগুলোর ঋতু বৈচিত্র্য কী রকম। এই সবগুলো টার্মের উপরই আসলে প্রয়োজনীয় কাপড় সাথে রাখার বিষয়টি জরুরি। দূরবর্তী ভ্রমণে আমরা সচরাচর যে ভুলটি করি তা হচ্ছে প্রয়োজনীয় কাপড় বহন করার ভয়ে গুছিয়ে সাথে নেই না। যার ফলে ভ্রমণ স্পটে আফসোস করতে হয়। নতুবা চড়া মূল্যে কাপড় কিনতে হয়। আরেকটি বিষয় চিন্তা করুন, যদি আপনার ভ্রমণ স্পট হয় অনেকগুলো তবে আপনি বেশি কাপড় সাথে নিলে আলাদা আলাদা স্পটে আলাদা আলাদা পোশাকে ছবি তুলতে পারবেন। ফলে আপনার ভ্রমণ এবং ভ্রমণের স্মৃতি হবে অনেক বেশি দূর্দান্ত। তাই প্রিয় পোশাকগুলোও হোক আপনার ভ্রমণের সঙ্গী।
৭। পর্যাপ্ত পরিমাণ খরচ
ভ্রমণে টাকা সবচেয়ে জরুরি বিষয়। আপনি বিশ্বের যে প্রান্তেই ভ্রমণ করেন না কেন সেখানের স্থানীয় মুদ্রা সাথে থাকাটা অনেক বেশি জরুরি। তাছাড়া পর্যটন স্পটগুলোতে খাবারসহ প্রায় সবকিছুর মূল্যই থাকে অত্যধিক তাই বাজেটে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি রাখার চেষ্টা করুন এবং যথেষ্ট টাকা সাথে রাখুন। তবে টাকার নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করে রাখবেন আগে থেকেই।
৮। ফার্স্ট এইড বক্স
সাথে ফার্স্ট এইড বক্স রাখাটা অনেক জরুরি। ভ্রমণ যেখানেই হোক পাহাড় কিংবা সমুদ্র। সব জায়গাতেই পোঁকা মাকড়ের ভয় থাকাটা সাধারণ ব্যাপার। তাই ফার্স্ট এইড বক্স সঙ্গে থাকাটা বাধ্যতামূলক।
৯। ইলেকট্রনিক ডিভাইস
মোবাইল তো সাথে থাকবেই তবে ভ্রমণে আরও কিছু ডিভাইস সাথে রাখাটা জরুরি। যেমন- পাওয়ার ব্যাংক, কেবল, চার্জার, স্মার্ট ওয়াচ, ল্যাপটপসহ একান্ত প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসসমূহ। সাথে ল্যাপটপ নিতে ভুলবেন না, হয়তো দূরবর্তী ভ্রমণে অফিসের কিংবা নিজের জরুরি কাজ পড়ে যেতে পারে তাই ল্যাপটপও সাথে রাখাটা জরুরি।
১০। হোটেল তালিকা
গন্তব্য স্থানের আশেপাশের হোটেল গুলোর নাম ঠিকানা ও ফোন নাম্বার সংগ্রহ করা। পছন্দ অনুযায়ী আগেই রুম বুক করে রাখতে পারেন।
ব্যস! হয়ে গেলো আপনার দূরবর্তী ভ্রমণের ক্ষেত্রে পূর্ব প্রস্তুতি। এখন সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। আপনার যাত্রা হবে অবশ্যই সুন্দর, মনোরম এবং উপভোগ্য।
শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।