প্রহরী

গাড়ি চুরি
পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

গাড়ি চুরি ঠেকাতে যা করবেন

একজন গাড়ির মালিকের জন্য তার শখের গাড়ি চুরি হয়ে যাওয়ার মতো দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক গাড়ি চোরেরা আজকাল হট ওয়্যারিং থেকে শুরু করে নানা ইলেকট্রনিক ডিভাইস পর্যন্ত ব্যবহার করে চুরি করে নিচ্ছে গাড়ি।

বাংলাদেশ তো বটেই, পুরো বিশ্বজুড়েই এই গাড়ি চুরির সমস্যা একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। তবে এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির আশংকায় যে একদম কিছুই করার নেই গাড়ির মালিকের ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। সময়োপযোগী কিছু কিছু বিনিয়োগ করার মাধ্যমে খুব সহজেই নিজের প্রিয় গাড়িটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। এই বিনিয়োগ কোন ব্যাংক বা মানুষের উপর করতে হবে না। করবেন কিছু ডিভাইসের উপর। হ্যা, আপনি চাইলে আপনার গাড়ির নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করবে আধুনিক ডিভাইসই।

আজকের ব্লগটিতে জানবো গাড়ি চুরি ঠেকাতে উদ্ভাবিত এমনই কয়েকটি ডিভাইস নিয়ে। যা আপনার গাড়ি চুরি ঠেকাতে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি আপনাকে রাখবে গাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তামুক্ত।

১. স্টিয়ারিং হুইল লক

চোরের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাজারে থাকা কার্যকরী ডিভাইস গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্টিয়ারিং হুইল লক। এটি অন্য ডিভাইসগুলো থেকে অপেক্ষাকৃত সহজ হলেও এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট দক্ষ। প্রথমত, স্টিয়ারিং হুইল লক একটি গাড়ির স্টিয়ারিংকে লক করে দেয়। অর্থাৎ, গাড়ির চাবি ছাড়া সেই স্টিয়ারিং নাড়ানো কার্যত অসম্ভব হয়ে যায়। ফলে গাড়িতে ঢুকে গেলেও স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে সেই গাড়িকে তার অবস্থান থেকে নাড়ানো চোরের জন্য আর সম্ভব হয় না।

এছাড়াও, স্টিয়ারিং হুইল লক খুবই উজ্জ্বল রং ও ডিজাইনের হয়। যা দূর থেকেও দৃশ্যমান। যার কারনে সম্ভাব্য চোর দূর থেকেও এই স্টিয়ারিং হুইল লকসহ গাড়ি দেখলে সেই গাড়ি চুরি করতে স্বাভাবিকভাবেই নিরুৎসাহিত হবে। কারন, এই গাড়ির পেছনে সময় নষ্ট করার চাইতে চোর মহাশয়ের একটি কম নিরাপত্তার গাড়ি চুরি করতেই বেশি আগ্রহী হওয়ার কথা।

২. গাড়ি চুরি ঠেকাতে জিপিএস ট্র‍্যাকিং সিস্টেম

গাড়ির নিরাপত্তার জগতে বিপ্লব ঘটানো একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হচ্ছে জিপিএস ট্র‍্যাকিং সিস্টেম। গাড়িতে জিপিএস ট্র‍্যাকিং সিস্টেম ইন্সটলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনার গাড়ির রিয়েল টাইম অবস্থান। যার ফলে গাড়িটির‍ যে কোন সময়ের যে কোন অবস্থানের তথ্যই সেই মূহুর্তে জানা সম্ভব। দূর্ভাগ্যবশত গাড়ি চুরি হয়ে গেলেও জিপিএস ট্র‍্যাকিংয়ের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করা যাবে।

জিপিএস ট্র‍্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে আপনার গাড়ির জন্য আপনি চাইলেই একটি ভার্চুয়াল সীমানা নির্ধারণ করে দিতে পারেন। গাড়ি আপনার নির্ধারণ করে দেয়া সীমানা পেরিয়ে গেলেই আপনার কাছে চলে আসবে মেসেজ বা নোটিফিকেশন। আর এই তথ্য কাজে লাগিয়ে আপনি গাড়িতে না থাকলেও সেই গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে পারবেন। এবং গাড়িটি উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ইঞ্জিন চালু করতে পারবে না সেই চোর। একে বলা হয় রিমোট ইমোবিলাইজেশন। গাড়ি চুরির ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি বিশেষভাবে কার্যকরী।

৩. কার এলার্ম

গাড়ি চুরি ঠেকাতে ব্যবহার হওয়া ডিভাইসগুলোর মধ্যে কার এলার্ম বলা যায় বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ব্যবহার হওয়া পদ্ধতি। যখনই কেউ আপনার গাড়িতে আপনার অনুমতি ছাড়া ঢুকতে বা গাড়ির সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু করতে চেষ্টা করবে, তখনই তীব্র এলার্মের শব্দ বেজে উঠবে গাড়িতে। কার এলার্মের মূল কাজ হলো অনাকাঙ্ক্ষিত প্রবেশ বা চুরি ঠেকাতে শব্দের মাধ্যমে সতর্ক করা। এর আকস্মিক বিকট শব্দে গাড়ির মালিক, নিরাপত্তা কর্মী বা পথচারী পর্যান্ত সতর্ক হয়ে যেতে পারে। চমকে দিতে পারে চোরকেও। যার ফলে সম্ভাব্য চুরির ঝুঁকি কমে। গাড়ির মালিকের অনুমতি ছাড়া যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রবেশ বা আক্রমণের প্রতি কার এলার্ম সংবেদনশীল। এর বিশেষভাবে ডিজাইন করা সেন্সর গাড়ির যে কোন অংশের যে কোন অস্বাভাবিক কম্পন শনাক্ত করতে পারে। যার প্রতিক্রিয়ায় কার এলার্ম ট্রিগার হয়ে এলার্ম বাজাতে থাকে।

৪. ইলেকট্রনিক ইমোবিলাইজার

গাড়ি চুরি ঠেকাতে ইন্সটল যোগ্য আরেকটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হচ্ছে ইলেকট্রনিক ইমোবিলাইজার। যার গাড়ির ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক যন্ত্রাংশকে বন্ধ করে দিতে পারে। যার কারনে গাড়ির মালিকের অনুমতি ছাড়া সেই গাড়িটি স্টার্ট করা চোরের জন্য হয়ে যায় অসম্ভব। এই ইমোবিলাইজার মূলত একটি ইউনিক কোড নিয়ে কাজ করে। যে কোড যুক্ত থাকে গাড়ির সিস্টেমের সাথেও। গাড়ি ব্যবহার বা চালানোর উদ্দেশ্যে কেউ যখন গাড়িতে কোড প্রবেশ করায়, তখন গাড়ির সিস্টেমে।প্রোগ্রাম করা কোডের সাথে ব্যবহারকারীর দেয়া কোড মিলিয়ে যাচাই করে। কোডটি মিলে গেলে সিস্টেম গাড়ির ইঞ্জিনকে স্বাভাবিকভাবেই চালু করাত অনুমতি দেয়। আর কোড ভূল হলে, গাড়ির ইমোবিলাইজার সিস্টেম ইঞ্জিনকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। যা গাড়ির আসল চাবি বা ট্রান্সপন্ডার ছাড়া পুনরায় চালু করা এক কথায় অসম্ভব। সুতরাং, এই গাড়ি সরিয়ে নিয়ে যেতে চোর ব্যার্থ হবেই।

৫. টায়ার লক

টায়ার লক, হুইল লক বা বুট লক নামেও পরিচিত এই প্রযুক্তির সাহায্যে অত্যন্ত কার্যকরী ভাবে গাড়ি চুরি ঠেকানো সম্ভব। টায়ার নির্ভর এই চুরি বিরোধী ডিভাইসটি গাড়ির চাকাকে জায়গায় লক করে অচল করে দেয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ব্যাক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও কোন গাড়িকে আটকাতে এই টায়ার লকের প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

টায়ার লক সাধারণত স্টিলের তৈরী হয়। যার প্রধান কাজ গাড়ির চাকাকে স্থির করে আটকে দেয়া। এটি মূলত চাকার নাটগুলোকে ঢেকে রাখে। টায়ার লক গাড়ির চাকার উপর লাগানোর জন্য এমনভাবে ফিট করে ডিজাইন করা যে, এটি লক করার পরে চোর বা অসাধু উদ্দেশ্য বিশিষ্ট কারো জন্য সেই লক খুলে গাড়ি চালানো অসাধ্য। এমনকি টায়ার লক বিশিষ্ট গাড়ির টায়ার খুলে চুরি করাও অসম্ভব।

৬. ব্রেক লক

চুরি ঠেকাতে গাড়িকে জায়গায় আটকে ফেলার জন্য আরেকটি আধুনিক ডিভাইস হলো ব্রেক লক। যা প্যাডেল লক বা ক্লাচ লক নামেও পরিচিত। টায়ার লকের মতোই এটিও গাড়িকে স্থির করে আটকে দিয়ে চোরকে গাড়ি সরিয়ে নিয়ে যেতে বাধা দেয়। আমরা জানি যে একটি গাড়ি চালাতে ব্রেকের ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। এই ব্রেকই যদি অকেজো হয়ে যায়, তাহলে গাড়ি চালিয়ে নেয়া অসম্ভব। স্বাভাবিকভাবে তখন চোরের পক্ষেও ব্রেক লক করা একটি গাড়ি জায়গা থেকে সরিয়ে নেয়া অসম্ভব।

গাড়ির ব্রেক বা ক্লাচ প্যাডেলে খুব সহজেই এটি ইন্সটল করা যায়। ম্যানুয়াল ও অটোমেটিক দুই ধরনের গাড়িতেই এর ব্যবহার খুব সহজ। এই ডিভাইসের কিছু মডেল ব্যাক্তিগত গাড়ি ছাড়াও ট্রাকের মতো বড় বাহনেও ব্যবহার করা যায়।

গাড়ি চুরি ঠেকানোর ডিভাইস নির্বাচনে কী কী বিষয় খেয়াল রাখবেন?

গাড়ির নিরাপত্তা বাড়াতে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ডিভাইস নির্বাচন করা জরুরী। জেনে নেই তার জন্য কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

  • বাজারে নানান বাজেটের মধ্যে চুরি বিরোধী আধুনিক ডিভাইস পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে কোনটা আপনার বাজেটের আওতার ভেতর আছে সেটা বুঝে ভালো মানের ডিভাইস নির্বাচন করতে হবে।
  • আপনার গাড়ি যেখানে থাকবে ও যেসব জায়গায় গাড়িটি বেশি যাতায়াত করবে, সেই সব জায়গার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন তা বিবেচনা করতে হবে। ওই সব স্থান গাড়ি চুরির জন্য উচ্চ ঝুকিপূর্ণ মনে হলে অধিক শক্তিশালী ডিভাইস নির্বাচন করতে হবে
  • ডিভাইস কেনার আগে তার ফিচার, ভালোদিক, মন্দ দিক, অন্য ডিভাইসের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে তুলনা করে তারপর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
  • নির্দিষ্ট ধরনের বিভিন্ন গাড়ির মডেলের জন্য বিশেষ কিছু ডিভাইস ভালো কাজ করে। তাই গাড়ির জন্য কোন ডিভাইস নির্বাচন করার আগে ভালোভাবে গাড়ির ধরন ও ডিভাইসের ধরন নিয়ে রিসার্চ করা জরুরি।

আরও পড়ুন গাড়ি চুরি প্রতিরোধে ৭টি করণীয় পদক্ষেপ, কোন মডেলের গাড়ি চুরি হয় সবচাইতে বেশি চুরি হয় এবং এবং গাড়ি চুরির অদ্ভুত ৬ টি ঘটনা

শেষ কথা

আগের যুগ হোক কিংবা আজকের আধুনিক যুগ, কিছু অসাধু  মানুষের কারনে গাড়ি চুরির সমস্যা অতীতে যেমন ছিলো, বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও হয়তো থাকবে। তাই নিজের শখের মূল্যবান গাড়িটি চোরের হাত থেকে রক্ষা করা প্রাথমিকভাবে গাড়ির মালিকেরই দায়িত্ব। সুতরাং, সতর্ক থাকুন, বুঝে শুনে সঠিক গাড়ি চুরি বিরোধী ডিভাইসে বিনিয়োগ করুন এবং নিজের গাড়িটিকে নিরাপদে রাখুন। 

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top