আপনি পৃথিবীর যেই প্রান্তেই অবস্থান করুন না কেনো, গাড়িতে কাটানো সময়ের বেশিরভাগ সময়ই কাটে আবাসিক এলাকার মধ্য দিয়ে ড্রাইভ করে। আপনার ড্রাইভিং স্কিল এবং অভ্যাস যেমনটাই হোক না কেনো, আবাসিক এলাকা দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় দরকার হয় বাড়তি সতর্কতা।
বিষয়টি এমন যে, আপনার ড্রাইভিং স্কিল যতো ভালোই হোক, আবাসিক এলাকায় গাড়ি চালাতে গেলে কখনোই ওভার-কনফিডেন্ট হওয়া যাবে না। কারণ, এই এলাকাগুলোর রাস্তায় এতো বেশি বিক্ষিপ্ত পদার্থ থাকে যা, একটু মনোযোগ হারালে ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা। তাই, আবাসিক এলাকায় গাড়ি চালানোর সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সেই বিষয়গুলো আজ আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
ওভারস্পিডিং করা যাবে না
আবাসিক এলাকাগুলোতে ওভারস্পিডিং সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা। কেউ কেউ দেখা যায় সাধারণ গতির থেকেও ৫ বা ১০ কিলোমিটার বেশি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন আর ভাবছেন কোনো সমস্যা হবে না কিংবা কেউ কিছু বলবেন না। বেশিরভাগ সময়ই মানুষ এটা করে পার পেয়ে যান। তবে ব্যাপারটা কিন্তু খুব বেশিই রিস্কি।
আগেই বলেছি যে আবাসিক এলাকায় ছেলেমেয়েরা ছোটাছুটি করে, কেউ কেউ আনমনে রাস্তা পার হয় – তাই কখন আপনার গাড়ির সামনে কেউ চলে আসে তা কিন্তু বোঝা বড় দায়। আর এমতাবস্থায় আপনি যদি স্পিড লিমিটের উপরে গাড়ি চালান তাহলে কিন্তু সঠিক সময় ব্রেক টেনেও লাভ হবে না। গাড়ির চাকা থেমে গেলেও স্কিপ করে অনেকটা দূর এগিয়ে যাবে। ফলে ধাক্কা লাগা অনিবার্য।
আবাসিক এলাকাকে শর্টকাট হিসেবে ব্যবহার করবেন না
অনেকেই শর্টকাট নেয়ার উদ্দেশ্যে হাইওয়ে ছেড়ে আবাসিক এলাকা দিয়ে ঢুকে পরেন। আবার হাইওয়েতে অত্যাধিক জ্যাম হলে অনেকে এই কাজটা করেন। একজন দায়িত্বশীল এবং সৎ ড্রাইভার হিসেবে আপনাকে অবশ্যই এটা মাথায় রাখতে হবে যে আবাসিক এলাকা গাড়ি চালানোর অথবা শর্টকাট নেয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় না। সেখানে মানুষজন বসবাস করেন, হাটাচলা করেন।
একবার ভাবুন, আপনি শর্টকাট নিলেন, আপনার দেখাদেখি আরো ২০ জন ড্রাইভার যদি শর্টকাট নেয়ার উদ্দেশ্যে সেখান দিয়ে ঢুকে পরেন তাহলে মানুষের চলাচলে কি বিঘ্ন ঘটবে না? তাই ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন ছাড়া আবাসিক এলাকাকে শর্টকাট হিসেবে ব্যবহার করা পরিহার করুন।
চারিদিকে নজর রাখুন
যদিও এই বিষয়টি যেকোনো স্থানে গাড়ি ড্রাইভ করার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তবে আবাসিক এলাকায় ড্রাইভ করার ক্ষেত্রে এটির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ, আবাসিক এলাকায় আপনার চারপাশে অন্যান্য গাড়ির বদলে আরো অনেক বেশি স্পর্শকাতর উপাদান উপস্থিত থাকে। কেউ হয়তো পোষা বিড়াল নিয়ে জগিং-এ বের হয়েছেন, শিশুরা দৌড়াদৌড়ি করছে, অন্যরা বাইক নিয়ে বের হয়েছে অথবা কেউ বাসা থেকে বের হয়ে আনমনে পথের পাশের দোকানে যাচ্ছেন।
অর্থাৎ, এখানে আপনার যদি কারো সাথে ধাক্কা লাগে, তাহলে কোনো গাড়ির উপর দিয়ে দুর্ঘটনা যাবে না, যাবে সরাসরি মানুষের উপর দিয়ে। তাই যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এখানে আপনাকে পরিবেশের উপর ৩৬০ ডিগ্রিতে স্ক্যানিং চালিয়ে যেতে হবে।
রাতে হেডলাইট ব্যবহার করুন
হাইওয়েতে পুরো রাস্তা চমৎকার ল্যাম্পপোস্ট দিয়ে আলোকিত থাকে। তবে আবসিক এলাকাতে এমনটা নাও হতে পারে। এখানে অনেক স্থানেই ল্যাম্পপোস্ট অনুপস্থিত দেখা যায়। তাই রাতে আবাসিক এলাকা দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় হেডলাইট জ্বালিয়ে চালানোই শ্রেয়।
গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখুন
২০১৭ সালে হাইকোর্ট আবাসিক এলাকায় রাত ১০ টার পর ২০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার অধিক গতিতে গাড়ি চালানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এটি এখনো প্রযোজ্য রয়েছে। তাই রাত ১০ টার পর কোনোভাবেই এই লিমিট ক্রস করা যাবে না, নইলে হতে হবে জরিমানার সম্মুখীন।
ট্রাফিক সাইনের দিকে খেয়াল করুন
হাইওয়ে থেকে আবাসিক এলাকায় ঢুকে পরার পরেই আমরা ট্রাফিক সাইনের দিকে তাকাতে ভুলে যাই। আর মনে থাকলেও সেটাকে তেমনভাবে গুরুত্ব দেই না। স্কুল-কলেজ বা হাসপাতালের সামনে হর্ন দিতে নিষেধ করে সাইন লাগানো থাকে, তাও আমরা সেটা অবজ্ঞা করে হর্ন দিয়েই যাই। এটি কিন্তু বেশ অশোভনীয় কাজ।
কেউ কেউ আবাসিক এলাকায় থাকা স্পিড-ব্রেকারের সাইনকেও পাত্তা দিতে চান না, তাই ঘটে যায় দূর্ঘটনা। পরেরবার আবাসিক এলাকায় গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন।
সঠিক পাশ দিয়েই গাড়ি চালান
হাইওয়ের মতো আবাসিক এলাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডিভাইডার বা সাদা দাগ দেয়া থাকে না, তাই বেশিরভাগ মানুষই রাস্তার মাঝখান দিয়ে অথবা রঙ সাইডে ড্রাইভ করেন। আপনি যেখানেই গাড়ি চালান না কেনো, হোক সেটা হাইওয়ে অথবা রেসিডেনশিয়াল এরিয়া, সঠিক সাইড দিয়েই চালাতে হবে। ডিভাইডার অথবা কোনো দাগের উপস্থিত না থাকলেই ভুল সাইড দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে।
টার্ন নেয়ার সময় সতর্ক থাকুন
ইন্টারসেকশনে টার্ন নেয়ার সময় গাছ, বিল্ডিং অথবা অন্য কোনো কারণে বেশিরভাগ সময়ই অন্যদিকের কোনো কিছু দেখা যায় না। তাই আবাসিক এলাকায় টার্ন নিতে গেলে স্পিড অনেক কমিয়ে আনতে হবে এবং সতর্কতার সাথে টার্ন নিতে হবে।
ম্যানহোলের দিকে নজর রাখুন
বাংলাদেশে আবাসিক এলাকায় ভাঙাচোরা রাস্তার মতো খোলা ম্যানহোল খুবই কমন একটি বিষয়। সতর্ক না থাকলে যেকোনো সময় চাকা সেখানে ঢুকে যেতে পারে। যা আপনাকে দূর্ঘটনার সম্মুখীন করতে পারে। তাই এই বিষয়ে বারতি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে এমন সবকিছু সরিয়ে ফেলুন
দূর্ঘটনা এড়াতে সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে ডিস্ট্র্যাকশনস সরিয়ে ফেলা। বিশেষ করে আবাসিক এলাকায় গাড়ি চালানোর সময়, যেখানে আপনার সাধারণ সময়ের চাইতেও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, সেখানে এটার গুরুত্ব আরো বেশি। গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলা, উচ্চশব্দে গান বাজানো এগুলো সবই ডিস্ট্র্যাকশনের উদাহরণ। তাই আবাসিক এলাকায় গাড়ি চালানোর সময় এগুলো করা যাবে না।
অপ্রয়োজনে হর্ন দেয়া যাবে না
বাংলাদেশে শব্দদূষণের পেছনে মেজর একটি কারণ হাইড্রোলিক হর্ন। ২০১৭ সালে হাইকোর্ট সকল প্রকার হাইড্রোলিক হর্ন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করেন। আপনি যদি হাইড্রোলিক হর্ন দিয়ে আবাসিক এলাকায় অতিরিক্ত শব্দদূষণ করেন তাহলে তা অবশ্যই মানুষের জন্য ভোগান্তির কারণ হবে। একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে এই বিষয়টি খেয়াল করতে হবে।
পরিসংহার
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে চললে শুধু আপনার এবং আপনার পরিবারের নিরাপত্তাই নিশ্চিত হবে না, তার পাশাপাশি আপনার পাড়া-প্রতিবেশিদেরও জীবন হবে আরামদায়ক। যেকোনো আবাসিক এলাকা দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় বিষয়গুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন এবং কাউকে এগুলো অমান্য করতে দেখলে অবশ্যই সতর্ক করবেন।
শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।