একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ করা তখনি উচিত হবে, যখন সে এবং তার ভ্রূণ সুস্থ অবস্থায় থাকবে। এই সময় কোথাও যেতে হলে, অনেক কিছু লক্ষ্য রাখার পাশাপাশি কিছু সতর্ক ব্যবস্থাও গ্রহণ করে চলা দরকার। অনিরাপদ যাত্রার ফলে অনেক সময় অনেক ধরণের দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। আর তাই এই সময়ে গাড়িতে চড়ার ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করে চলাটা জরুরী। আপনার পরিবারের কোন অন্তঃসত্ত্বা নারী সদস্য যদি দূরযাত্রার পথে যাত্রা করেন। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু জরুরী বিষয়ে খেয়াল করবেন। আর তাতে তার ভ্রমণ হবে নিরাপদ এবং স্বাছন্দ্যময়। গর্ভাবস্থায় নিরাপদে জার্নি করার ক্ষেত্রে ৮টি সতর্কতামূলক টিপস দেখে নিন।
ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কোথাও যেতে হলে তার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি দূরপথের জার্নির ক্ষেত্রে অনুমতি দেন, তাহলেই কেবল যাওয়া যাবে। কারণ এই অবস্থায় গর্ভবতী এবং তার অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিংবা ক্ষতির আশঙ্কা আছে, সেসব বিষয় থেকে অবশ্যই দূরে থাকার চেষ্টা করা উচিত। মূলত বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, গর্ভকালীন সময়ের প্রথম তিনমাস এবং শেষ তিনমাসের জার্নি অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ!
পেশক্রিপশন এবং ওষুধ–পত্র সাথে রাখা
এই সময়ে প্রয়োজনীয় হেলথ রিপোর্ট সবসময় সাথে রাখা উচিত। এছাড়াও ডাক্তারের পেসক্রাইব করা জরুরী ওষুধ-পত্র অবশ্যই সাথে রাখতে হবে। এছাড়াও কিছু বাড়তি মেডিসিনও সাথে রাখতে পারলে ভাল হয়। কারণ বিশেষ প্রয়োজনের মুহূর্তে তা কাজে দিবে। এক্ষেত্রে একটি ছোট ব্যাগে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো (দরকারি ওষুধ, প্রেসক্রিপশন, টেস্ট রিপোর্ট ইত্যাদি) ভরে হাতের কাছে রাখতে হবে। গর্ভবতী নারীর ভ্রমণসঙ্গীর এসব ব্যাপার ভালভাবে লক্ষ্য রাখা দরকার।
আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা
গর্ভাবস্থায় হালকা রঙের সুতির ঢোলাঢালা জামাকাপড় পরিধান করলে আরাম পাওয়া যায়। এসময় ভারী জমকালো কারুকাজ করা জামাকাপড় এড়িয়ে চলাটাই উচিত। গরমের দিনে কালো রঙের পোশাক পড়লেও বেশি গরম অনুভূত হবে, সুতরাং সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। এছাড়াও নরম সোলের ফ্ল্যাট ধরণের আরামদায়ক জুতা পড়া উচিত। আর গাড়িতে অনেকক্ষণ বসে থাকার ফলে পা অবশ লাগতে কিংবা ঝি ঝি ধরতে পারে। সেজন্য পা একটুখানি নাড়ানো-ঘুরানোর চেষ্টা করতে হবে। এবং যদি পারা যায় বসে বসেই হালকা ব্যায়াম কিংবা মেডিটেশন করা যেতে পারে।
খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সাথে রাখা
বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার কিংবা দূষিত পানি সবসময়ই সবার জন্য ক্ষতিকর। আর সেক্ষেত্রে একজন গর্ভবতী নারীর জন্য বাইরের খাবার তো আরও অনেক বেশি অনিরাপদ। জার্নির সময় সাথে হোমমেড খাবার এবং ফুটানো বিশুদ্ধ পানি রাখা দরকার। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় ডিহাইড্রেশন এড়াতে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এসময় হয়তো বার বার ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে গাড়ি থামিয়ে কোন রেস্টুরেন্ট, ফিলিং ষ্টেশন কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানের ওয়াশ রুম ব্যবহার করা যেতে পারে।
সতর্কভাবে গাড়িতে বসা
গর্ভাবস্থায় ব্যক্তিগত কারটিতে সতর্কতার সহিত উঠে বসা উচিত। গর্ভবতী নারীর যেভাবে আরামদায়ক মনে হবে, তাকে সেভাবেই বসতে দিতে হবে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তার দিকটা চিন্তা করে অবশ্যই সীট বেল্ট বাঁধতে হবে। বেল্টটি পেটের একটু নিচের দিকে এবং বুকের মাঝদিকে বরাবর রাখলে সুবিধা হবে। এছাড়াও ঘুমানোর সময় কাঁধ এবং কাঁধের বেল্ট পড়াটা দরকার। আরামদায়ক ভাবে গাড়ির সিটে বসতে সাথে পাতলা বালিশ কিংবা কুশনের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় পিঠের নিচে কুশন দিয়ে বসলে পিঠে ব্যথা অনুভূত হবে না।
ওভার স্পীডে যেন গাড়ি না চলে
ভ্রমণের সময় ড্রাইভারকে অবশ্যই বলে রাখবেন যে, সে যেন কখনোই বেশি স্পীডে গাড়ি না চালায়। অতিরিক্ত স্পীডে গাড়ি চালালে অন্তঃসত্ত্বা এবং তার অনাগত বাচ্চা ভয়ংকর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন! এমনকি গর্ভপাত পর্যন্তও হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে! সেক্ষেত্রে ঝুঁকি না নিতে আপনার গাড়ির স্পীড নির্দিষ্ট মাত্রায় বেঁধে দিতে পারেন। এবং প্রহরীর স্পিড ভায়োলেশন এলার্ট ফিচারটি যদি ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনার বেঁধে দেওয়া গাড়ির গতি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি হলেই মুহূর্তের মধ্যেই আপনার স্মার্টফোনে নোটিফিকেশন পাবেন। সেক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ চালককে গাড়ির গতি কমিয়ে দিতে বলতে পারবেন।
সব ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নেয়া
সবসময় গর্ভবতী নারীর সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করে, সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভাল। তার সাথে এমন দক্ষ যত্নবান কাউকে রাখা দরকার, যার সঙ্গে সে সাবলীল ভাবে সবকিছু শেয়ার করতে পারেন। আর যে পথে যাবেন সেই সড়কের বর্তমান অবস্থা, ভাঙ্গা-চোরা আছে কি না, সেসব বিষয় আগে থেকেই জেনে নিতে পারলে ভাল হয়। এছাড়াও পারলে যাত্রা শুরুর আগেই যে এলাকার উদ্দেশ্য যাত্রা করা হয়েছে, সেখানকার যাত্রাপথে কোথায় কি আছে এবং বিপদে পড়লে কোন হাসপাতালে যাওয়া যেতে পারে। কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কোন বিপদে পড়লে সাহায্যের জন্য কোথায় যোগাযোগ করতে হবে ইত্যাদি ব্যাপারে অবগত হওয়া প্রয়োজন।
শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া
গর্ভাবস্থায় যেকোন সময় শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। এক্ষেত্রে হঠাৎ করে পথিমধ্যেও খারাপ লাগা কিংবা অস্বস্তি শুরু হয়ে যেতে পারে। তখন যদি বমি আসে কিংবা মাথা ঘুরে তাহলে গাড়ি থামিয়ে একটু জিরিয়ে নিতে পারলে ভাল হয়। কোন নিরাপদ স্থানে গাড়ি থামিয়ে চোখ-মুখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে কিংবা ফ্রেশ বাতাসে একটু হাঁটাহাঁটি করে নিলে, হয়তো অবস্থার উন্নতি হতে পারে। এছাড়াও তৎক্ষণাৎ তার ডাক্তারকে ফোন করে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। আর যদি শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হয়, তবে স্থানীয় কোন ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর যত্নের ক্ষেত্রে পরিবারের সবার অনেক বেশি সচেতন হওয়াটা জরুরী! তাদের সবসময় গর্ভবতী এবং তার অনাগত সন্তানের নিরাপত্তার দিকটা ভালভাবে খেয়াল রাখা দরকার। একজন সন্তানসম্ভবা নারীর ভ্রমণের ক্ষেত্রে তার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সঠিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর তার ফলে কোনরূপ স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে। নির্ভার নিরাপত্তার বলয়ে আবদ্ধ থাকুক প্রতিটি অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং তার অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ।