প্রহরী

দোলনচাঁপা বাস সার্ভিস নারী নিরাপত্তার আরেক নাম
পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

নারী নিরাপত্তার আরেক নাম দোলনচাঁপা বাস সার্ভিস

গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা শব্দটি যেন এক দীর্ঘশ্বাস। ঢাকায় মানুষের সংখ্যার চেয়ে গণপরিবহনের সংখ্যা যথেষ্ট কম, ফলে প্রতিনিয়ত বাসে যথেষ্ট ভীড় হয়। এমনও হয়, গাড়িতে তিল পরিমাণ জায়গায় নেই তবুও দরজায় ঝুলে আছে মানুষ। তার উপরও কেউ একজন চাচ্ছেন একটা পা দরজায় রেখেও যদি ঝুলে যাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতি নারীর জন্য পৃথক বাসের ব্যবস্থা করা যায়। আর সেটাই করে দেখিয়েছে দোলনচাঁপা বাস সার্ভিস।

কেন দোলনচাঁপা বাস সার্ভিস

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ব্র্যাকের ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিক বা অন্য কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন।৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারাই যৌন হয়রানির শিকার হন বেশিরভাগ নারী, যার হার ৬৬ শতাংশ। নারীদের যৌন হয়রানির মূল কারণ হচ্ছে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকা, বাসে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত আলোর অভাব ইত্যাদি।

এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে ৮১ শতাংশ নারী বলেছেন, তারা চুপ থাকেন এবং ৭৯ শতাংশ বলেছেন আক্রান্ত হওয়ার স্থান থেকে সরে যান। বাসে পুরুষ যাত্রীদের মাধ্যমে ৪২ শতাংশ ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৩ শতাংশ নারী যাত্রী।

গবেষণায় উঠে আসা চিত্রের চেয়েও বাস্তবের চিত্র আরও ভয়াবহ। গণপরিবহেনে নারী যাত্রীর ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা তো অহরহ। দূরপাল্লার যানবাহনে নারী আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বিগত বছর গুলোতে দূরপাল্লার বাসগুলোতে ঘুমন্ত নারী যাত্রীকে কৌশলে ধর্ষণ। এছাড়াও ইচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগও রয়েছে গাড়ি স্টাফদের বিরুদ্ধে।

যানবাহনে নারীর হয়রানির কারণসমূহ

যাতায়াতে নারীরা যেহেতু অনেক মানুষের ভীড় ঠেলে বাস ব্যবহার করতে হয় তাই, এক্ষেত্রে যৌন হয়রানির সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। যা সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য অনেক বড়ো একটি লজ্জার কারণ। এর প্রতিকার খুবই জরুরি। কারণ এসকল নারীরা আমাদেরই পরিবারের সদস্য। আমাদেরই মা, বোন কিংবা প্রিয়সী।

নারীর হয়রানিরোধে চলুন জেনে নেই বেশকিছু কারণঃ

  • সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পারিবারিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়।
  • নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাবের অভাব
  • নারীকে পণ্য ও ভোগের বস্তু হিসেবে বিবেচনা করা
  • নারীকে পণ্য ও ভোগের বস্তু হিসেবে বিবেচনা করা
  • পর্নোগ্রাফির অবাধ প্রবাহ
  • ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার
  • সহনশীল ও ভালো আচরণের অভাব
  • মাদকাসক্তি এবং সুশিক্ষার অভাব ইত্যাদি

যাতায়াতে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত কৌশল

গত জুনে প্রকাশিত বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক জরিপ অনুযায়ী দেশে মোট জনগোষ্ঠীর ৩৬ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত করে। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই গণপরিবহন ব্যবহার করে। ওই জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শতকরা ৯৪ শতাংশ নারী যাত্রী গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হন। নারীর যাতায়াতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী। নারী তার পথচলায় নিরাপদ না হলে এই সমাজ ব্যবস্থায়ই এক সময় হুমকির মুখে পড়বে। তাই যাতায়াতে নারীর নিরাপত্তা খুবই জরুরি।

চলুন জেনে নেই যাতায়াতে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে বেশকিছু কার্যকরী পদক্ষেপ

  • গণপরিবহনে যৌন হয়রানির প্রতিকারে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
  • নারীর হয়রানির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও প্রতিরোধ জোরদার করা।
  • যৌন হয়রানিকারীকে সামাজিকভাবে বয়কট এবং দ্রুতসময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান।
  • মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট এবং উন্মুক্ত সংস্কৃতির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিশ্চিত করা।
  • নারীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব বিকাশের পরিবেশ তৈরি করা।
  • বিনোদনমূলক এবং সাংস্কৃতিক অনুশীলন বৃদ্ধি।
  • পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ।
  • আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির সক্রিয় ভূমিকা পালন করা।
  • যৌন হয়রানির মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করা।
  • গণপরিহনে নারীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে মনিটরিং কমিটি গঠন করা।
  • নারীদের নিজেদের নিরাপত্তার সক্ষমতার প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
  • গণপরিবহনের মালিকদের সচেতন হওয়া এবং তাদের মালিকানাধীন কোনো গণপরিবহনকর্মী যাতে গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানিসহ অন্য কোনোভাবে হয়রানি না করে সে সম্পর্কে অবহিত করা ও প্রশিক্ষণ প্রদান ক…
  • গণপরিবহনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও যথাযথ মনিটরিং বাধ্যতামূলক করা।
  • চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের আলাদা আলাদা নেম প্লেটসহ পোশাক বাধ্যতামূলক করা।
  • চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের নিয়োগপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে ডাটাবেজ তৈরি করা।
  • গাড়ির ভিতরে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের হটলাইন নম্বর, ফোন নম্বর ও গাড়ির নম্বর স্থায়ীভাবে লাগানোর ব্যবস্থা করা।
  • গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো।
  • বাস, মিনিবাসে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন দরজার পাশে রাখা।
  • গণপরিবহনে অস্বচ্ছ ও বিজ্ঞাপনে মোড়ানো কাচের ব্যবহার বন্ধ করা।
  • গণপরিবহনে যৌন হয়রানির মামলা, গ্রেফতার ও বিচার দ্রুত শেষ করা ইত্যাদি।

নারী বান্ধব দোলনচাঁপা বাস সার্ভিস

গত ২০১৮ সালের ০২ জুন বেসরকারি উদ্যোগে রাজধানীর মিরপুর ১২ থেকে  মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়া, বিজয়স্মরণী, ফার্মগেট, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, গুলিস্তান হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত চালু করা হয় মহিলা বাস সার্ভিস দোলনঁচাপা। রাজধানীর মিরপুর-১২ থেকে মতিঝিল রুটে চলার কথা ছিল ১০ টি মহিলা বাস। পরে আরও ৫০ টি বাস নামানো নামানোর লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিল র‌্যাংগস গ্রুপ। উদ্বোধনের দিন সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের র‌্যাংস গ্রুপ ও ভারতীয় ভলভো আইশার ভেহিকল লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে দোলনচাঁপা বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

র‌্যাংগস গ্রুপের কর্ণধার রউফ চৌধুরীর মেয়ে সোহানা চৌধুরী এই সার্ভিসের মূল উদ্যোক্তা। সরকারের নির্ধারিত ভাড়ায় চলাচল করছে দোঁলনচাপা বাস। ভারতীয় আইচার কোম্পানির তৈরী এই বাসে রয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা। ‘ভেহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম’ দিয়ে বাসের অবস্থান শনাক্ত করা যায়। বাসের ভেতরে যাত্রা আরমদায়ক করতে প্রশস্ত সিট এবং জানালাগুলো বড় আকারে দেয়া হয়েছে। মাত্র ৩৬ টি আসন রয়েছে এই বাসে। রাজধানীতে এরকম বাসে সাধারণত ৪০ থেকে ৪২ আসন যুক্ত করা হয়। এতে যাত্রী সাধারণের বসতে অসুবিধা মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু দোঁলনচাপা বাসে পা মেলে বসে থাকার মতো সুপরিসর বড় জায়গা রাখা হয়েছে। বাসের মাঝখানে ও সিঁড়ির সামনে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। এছাড়া গাড়িতে রাখা হয়েছে ফাস্ট এইড বক্স। আর প্রতিবন্ধীদের উঠার সুবিধার্থে সিঁড়ির সঙ্গে যাম্প লাগানো রয়েছে ।

দোলনচাঁপা বাস সার্ভিসের বর্তমান অবস্থা

দোলনচাঁপা বাস সার্ভিস ২০১৮ সালের জুনে নারী নিরাপত্তার মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে রাস্তায় নামলেও তা ছিল ঢাকার মতো শহরের জন্য আশীর্বাদ।কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, একমাস ভালো সেবা দেয়ার পর তা আর রাস্তায় নিয়ম মাফিক সার্ভিস দিতে সক্ষম হয়নি। পরবর্তীতে নতুন বাসও যুক্ত করা হয়নি। ফলে এমন জনবহুল একটি রুটে সীমিত সংখ্যক বাস দিয়ে সেবা দিলেও তা কোনক্রমেই যথেষ্ট নয়। যদিও উদ্বোধনের সময় বেসরকারি ওই পরিবহন সংস্থাটি জানিয়েছিল, দুই মাসের মধ্যে ঢাকা শহরে আরও ১০টি এই ধরনের বাস নামানো হবে।

দু’টি রুটে সবমিলিয়ে ৩০টি বাস নামানোর অনুমতি পাওয়া গেলেও সর্বশেষ আর নতুন বাস নামানোর সংবাদ পাওয়া যায়নি। তাই বর্তমানে হাতে গোনা যে কয়েকটি বাস রয়েছে তার জন্যও অপেক্ষা করতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। তাও বাস পাওয়া গেলেও সিট খালি থাকে না অধিকাংশ সময়ই। তাই এই দোলনচাঁপা বাস মহান উদ্যোগ এবং নারীর জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসলেও এই মহৎ উদ্যোগকে আরও বেশি ফলপ্রসু করতে প্রয়োজন আরও অনেক বেশি উদ্যোগ, আরও অনেক বেশি নারীবান্ধব গণপরিবহন যুক্ত করতে পারলেই যানবাহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top