একটা সময় ছিল যখন গাড়ি কেনা ছিল স্বপ্নের মত। গাড়ি কেনার সময় মানুষ অনেক চিন্তা ভাবনাও করত। কিন্তু বর্তমানে গাড়ি কেনা অনেক সহজ হয়েছে। আগে গাড়ি কেনার জন্য কার লোন ব্যবস্থা খুব একটা সহজ ছিল না। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে গাড়ির জন্য লোন পাওয়া ততই সহজ হয়ে উঠছে। ফলে যাদের সামর্থ্যর মধ্যে লোন পরিশোধের সুযোগ রয়েছে, তারাই কার লোনের দিকে ঝুঁকছে।
গাড়ি ব্যাবসায়িরাও যেমন গাড়ি কেনাকে করেছেন সহজলভ্য, তেমনি বিভিন্ন ব্যাংক ও কিছু শর্ত সাপেক্ষে খুব সহজেই গাড়ির লোন দিচ্ছে। গাড়ি কেনা নিয়ে মানুষ এখন আগের মতো খুব দুশ্চিন্তা করতে হয় না। এছাড়াও অনলাইনেও কিস্তিতে ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে নতুন পুরাতন গাড়ি। ব্যাংক ও নন ব্যাংক আগে ২০ লাখ পর্যন্ত লোন দিত কিন্তু বর্তমানে এর পরিমান বাড়িয়ে ৪০ লাখ পর্যন্ত করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যাক্তিগত ও নিজস্ব লোনের ক্ষেত্রে একটি অনুপাত নির্ধারণ করা হয়েছে । অনুপাতটি হল ৫ঃ৫০।
কার লোন পাবার জন্য যোগ্যতা
তাই গাড়ি কেনার আগে আসুন আমরা জেনে নেই, গাড়ির লোন নিতে হলে গাড়ি ক্রেতার কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে।
বয়স
গাড়ির লোনের আবেদন করার ক্ষেত্রে বয়স একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।এক্ষেত্রে আপনার জন্ম নিবন্ধন অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বয়স ১৮ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত হতে হবে।
চাকুরীজীবীর ক্ষেত্রে
আপনি চাকুরীজীবী হলে আপনার চাকরিটি অবশ্যই স্থায়ী হতে হবে।এবং চাকরির বয়স দুই বছর বা তার বেশী হতে হবে। যদি ট্রেইনিং বা প্রবিশনাল পিরিয়ড চলে তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
ব্যাবসায়ী হলে
আপনি ব্যবসায়ী হলে আপনার ব্যাবসায়ের বয়স ,অভিজ্ঞতা, মাসিক/ বার্ষিক টার্ন ওভার, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি। সাধারণত ছোটো বা মাঝারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ৫ বছর এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৩ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়।
পেশাজীবী
আপনি যদি স্ব নিয়োজিত পেশাজীবী, যেমন ডাক্তার বা আইনজীবী হোন তাহলে আপনার প্র্যাকটিসের বয়স অবশ্যই দুই বছর বা তার বেশী হতে হবে।
মাসিক আয়
গাড়ির লোনের ক্ষেত্রে মাসিক আয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।মাসিক আয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে,
চাকুরীজীবী– ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা হতে হবে।
ব্যবসায়ী- ৫০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা হতে হবে।
বাড়ি, জমি বা ফ্ল্যাট বন্ধক রাখলে– আপনার মাসিক আয় হতে হবে ৫০ হাজার টাকা।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
গাড়ির লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার কিছু কাগজপত্র অবশ্যই থাকতে হবে।যেমন-
১। জাতীয় পরিচয়পত্র।
২। ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
৩। স্যালারি স্টেটমেন্ট।
৪। আইডি কার্ড।
৫। ভিজিটিং কার্ড।
৬। মেমোরান্ডাম।
৭। ট্রেড লাইসেন্স(ব্যবসায়ী হলে)।
৮। বসবাসের ঠিকানা।
৯। আগের মাসের বিদ্যুৎ বিলের কপি।
১০। বাড়ি/ ফ্ল্যাট/ জমির দলিল।
CIB রিপোর্ট
লোন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (ব্যাংক বা ফিন্যানশিয়াল কোম্পানি) বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে আপনার খোঁজ খবর নেবেন যে আপনার আগের কোথাও লোন নেওয়া বা অপরিশোধিত লোন আছে কি না। এতে সময় লাগবে ৩/৫ দিন। যদি আপনার কোন লোন আগে নেওয়া না থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানটি Credit Information Bureau থেকে রিপোর্ট পাবে। তারপর প্রতিষ্ঠান আপনাকে জানাবে যে, আপনি লোন পাবার জন্য বিবেচিত হয়েছেন কিনা। গাড়ির একটি কোটেশন বিক্রেতা আপনাকে দেবে যা গাড়ির মূল্যের সমান এবং তা আপনাকে সেই লোন দানকারী প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে।
পে অর্ডার
সার্ভিস চার্জ ,প্রসেসিং ফি, ভ্যাট জমা দেওয়ার পর লোন দানকারী প্রতিষ্ঠান বিক্রেতার অনুকুলে একটি পে অর্ডার দিবে। গাড়িটি যখন আপনার নামে রেজিস্টার্ড হয়ে যাবে তখন আপনি পে অর্ডারটি ভাংতে পারবেন এর আগে নয়।
অন্যান্য
- আপনার আয় যত বেশী আপনার কার লোন পাওয়ার যোগ্যতা তত বেশী।
- আপনার আয় নিয়মিত হলে আপনার লোন পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশী।
- গাড়িটি নতুন হলে লোন পেতে সুবিধা হয় কিন্তু গাড়িটি পুরোন হলে লোন পেতে একটু বেগ পেতে হয়।
- লোন পরিশোধের সময় কম নেওয়াই ভালো তাহলে EMI এর পরিমান কম হবে। আর তানাহলে শুধু শুধু গাঁটের টাকা বেশী খরচ করে EMI বেশী দেওয়াটা বোকামি নয় কী ?
আরো কিছু লক্ষণীয় বিষয়
- ইন্ডিয়ান গাড়ির ক্ষেত্রে কেউই লোন দিতে আগ্রহী হয় না।
- নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে ৬ বছর পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়।
- জাপানি গাড়ির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ বছর পুরাতন হলে লোন পেতে সুবিধা হয়। আবার ৫ বছর পুরান হলে ৪ বছর পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়।
- ব্যাংকে ১৫% এবং নন ব্যাংকে ১১.৫-১৩ % পর্যন্ত লোন দিয়ে থাকে।
এসব বিষয় গুলো ভালোভাবে জেনে নিয়ে তারপর গাড়ি কেনার জন্য লোনের আবেদন করা উচিৎ। এসব বিষয়ে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারনা থাকলে লোনের পুরো প্রক্রিয়াটি অপেক্ষাকৃত সহজ হবে। একজন কার লোন গ্রহীতা হিসেবে আপনার অবশ্যই মনে রাখা উচিৎ যে, গাড়ির লোন পাবার পর এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার। নতুবা এত টাকা লোন নিয়ে গাড়ি কিনবেন, সে গাড়ি যদি চুরি হয়ে যায় বা ক্ষতি হয়ে যায় তাহলে আপনার লোন নেয়াটাই আপনার ঝামেলার কারণ হয়ে উঠবে।