যদি প্রশ্ন করা হয় যে, একজন ভালো ড্রাইভারের সংজ্ঞা কী? তাহলে বেশিরভাগ মানুষ বলবেন যে, “একজন ভালো ড্রাইভার অবশ্যই রোডে কার্টেসি মেইনটেইন করে ড্রাইভ করেন এবং এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকেন যা অন্যদের বিরক্তির কারণ হতে পারে”। উত্তরটি অনেক সুন্দর, তবে আপনি কি একজন ভালো ড্রাইভার? পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে যে, বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের একজন ভালো এবং সেরা ড্রাইভার হিসেবে মনে করেন। অথচ তারা এটাও মনে করেন যে রোডের বেশিরভাগ ড্রাইভার বিলো-এভারেজ লেভেলের। তাহলে সত্যকার ভালো ড্রাইভার কারা?
আজকের লেখায় আমরা এমন কিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করবো, কার ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো অন্যদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। আপনি যদি এগুলো না করেন, তাহলে অভিনন্দন, আপনি একজন ভালো ড্রাইভার। আর যদি করে থাকেন, তাহলে চেষ্টা করবেন আগামীবার থেকে এগুলো পরিহার করার।
১। ফোনে কথা বলা
মদ্যপ অবস্থায় ড্রাইভ করলে যেমন দুর্ঘটনার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে, এই একই ব্যাপার কিন্তু ঘটে যখন আপনি ড্রাইভ করার সময় ফোনে কথা বলেন। এই কাজ একই সাথে আপনার এবং আপনার আশেপাশের ড্রাইভারদের জীবনকে ঝুঁকির মাঝে ফেলে। একই সাথে গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলা ব্যক্তি অন্য যেকোনো ড্রাইভারের জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারেন।
কারণ, ফোনে কথা বলার সময় আপনার মনোযোগ রোডে থাকে না। ফলে আপনি ঘনঘন লেন চেঞ্জ করেন অথবা তুলনামূলক ধীরগতিতে ড্রাইভ করেন অথবা অন্য ড্রাইভাররা আপনাকে কি সিগন্যাল দিচ্ছেন তার দিকে খেয়াল করেন না। তাই, সবচেয়ে ভদ্র এবং নিরাপদ অভ্যাস হচ্ছে, গাড়ি সাইডে দাড় করিয়ে ফোন রিসিভ করা।
২। গাড়ির লাইটের যথাযথ ব্যবহার না করা
প্রতিটি গাড়ির সামনে এবং পেছনে ব্রেক লাইট, ফগ লাইট, টার্ন লাইটসহ আরো বেশ কিছু প্রকার লাইট থাকে। ড্রাইভ করার সময় আমরা কি করতে চাইছি তা ইন্ডিকেট করতে এই লাইটগুলো সাহায্য করে। একই সাথে নিজের ইনটেনশান এই লাইটগুলো দ্বারা প্রকাশ করা একটি বেসিক কার্টেসি। আপনি যদি না জানেন যে আপনার সামনের ড্রাইভার কি করতে চাইছেন তাহলে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাবেন।
একই সাথে অযথা কোনো লাইট জ্বালিয়ে রাখাও অন্যদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। আপনি যদি সোজা ড্রাইভ করার সময় রাইট বা লেফট-টার্ন লাইট অন করে রাখেন তাহলে আপনার পেছনের ড্রাইভার আপনাকে ওভারটেক করতে পারবেন না। যা একই সাথে বিরক্তিকর এবং কনফ্লিক্টের জন্ম দিতে পারে।
৩। যথাযথভাবে পার্কিং না করা
প্রতিটি পার্কিং স্পটে লিমিটেড স্পেস থাকে। সবাই চায় নিজের গাড়িকে একটি ভালো পার্কিং স্পেসে পার্ক করতে। এমতাবস্থায় আপনি যদি নিজের গাড়িকে সঠিকভাবে পার্ক না করেন, তাহলে সম্ভাবনা আছে যে আপনি একাই দুইটি গাড়ির জায়গা নিয়ে নিবেন। যার ফলে আরেকজন ড্রাইভারকে তার গাড়ি পার্ক করতে সমস্যা ফেস করতে হবে। তাই সবসময় সঠিকভাবে পার্ক করার চেষ্টা করুন।
৪। ওভারটেক করে সামনে এসে স্লো হয়ে যাওয়া
এটা অত্যন্ত বিরক্তিকর একটি ব্যাপার। আপনার হয়তো তাড়া আছে, তাই পেছন থেকে বারবার হর্ন দিচ্ছেন বা ফ্ল্যাশলাইট অন/অফ করছেন যাতে করে সামনের ড্রাইভার আপনাকে সাইড দেন। তিনি নিজে চেপে গিয়ে আপনাকে সাইড দিয়ে দিলেন। অথচ আপনি ওভারটেক করে সামনে এসে স্লো হয়ে গেল, এখন আর আপনার কোনো তাড়া নেই। ড্রাইভ করার সময় এটা খুবই অভদ্র একটি আচরণ। আপনি স্লো হয়ে গেলে আপনার পেছনের ড্রাইভার হয়তো এবার আপনাকে ওভারটেক করতে চাইবেন – ফলে শুরু হয়ে যেতে পারে কনফ্লিক্ট।
৫। অহরহ লেন চেঞ্জ করা
কোনো একটি লেন সিলেক্ট করা এবং সেই লেনেই ড্রাইভ করা অত্যন্ত ভদ্র একটি আচরণ। অপ্রয়োজনে লেন চেঞ্জ না করাই ভালো। কারণ, আপনার সামনে এবং পেছনে আরো গাড়ি রয়েছে। যারা আপনার ঘনঘন লেন চেঞ্জ করা এবং ইনকন্সিস্টেন্ট ড্রাইভিং দ্বারা বিরক্ত হতে পারেন।
৬। গাড়ির জানালা থেকে ময়লা/থুথু ফেলা
প্রথমত, রাস্তায় থুথু/ময়লা ফেলা নিজে থেকেই অত্যন্ত অভদ্র একটি কাজ। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে উক্ত ব্যক্তি কোনো সুনাগরিক নন। তার উপর গাড়ির জানালা থেকে এই কাজ করা যেন বিরক্তির পারদ আরো কিছু ডিগ্রী চড়িয়ে দেয়। একবার ভাবুন, আপনার ফেলা ময়লা/থুথু অন্য কোনো গাড়ির উপর বা ব্যক্তির গায়েঁ পরতে পারে। এমতাবস্থায় তার মনের হাল কি হবে?
৭। অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিস বা কোনো রোগী আছে এমন গাড়িকে সাইড না দেয়া
ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকতে কারোই ভালো লাগে না। তবে ব্যস্ত সড়কে রোগী নিয়ে ট্রাফিক জ্যামে আটকে যাওয়ার মতো বিড়ম্বনা বোধহয় আর নেই। এমতাবস্থায় অন্য গাড়িগুলোর উচিত নিজেরা চেপে গিয়ে রোগী নিয়ে যাওয়া গাড়িকে সাইড দেয়া। আমরা যদি নিজেরা একটু চেপে যাই, আমাদের বড়জোর কিছুটা সময় অতিরিক্ত ব্যয় হবে। তবে এতে করে কারো জীবন রক্ষা পেতে পারে। একই ব্যাপার অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির ক্ষেত্রেও সত্য।
৮। টেইলগেটিং
টেইলগেটিং অর্থ হচ্ছে সামনের গাড়ির থেকে অনেক কম দুরত্ব মেইনটেইন করে ড্রাইভ করা। এটা আপনার জন্য যেমন ঝুকিঁ তৈরি করে, একই সাথে আপনার সামনের ড্রাইভারকেও দ্বিধায় ফেলে দেয়। টেইলগেটিং-এর কারণে রোডে অহরহ ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
৯। ফুল পাওয়ারে হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখা
রাতে ড্রাইভ করার সময় আমাদের হেডলাইট জ্বালাতে হয়। তবে আমাদের হেডলাইট কিন্তু সামনে থেকে আসা গাড়ির জন্য সমস্যা তৈরি করে। কারণ, অপজিট গাড়ির লাইট যখন উইন্ডশিল্ডে পরে, তখন সব ঘোলা হয়ে যায় এবং সামনের কিছুই চোখে দেখা যায় না। তাই চেষ্টা করতে হবে লো পাওয়ারে হেডলাইট জ্বালাতে।
১০। ভুল স্বীকার না করা
সর্বশেষ যেই বিষয়টি উল্লেখ করা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে ভুল স্বীকার না করা। ড্রাইভ করার সময় আমাদের অনেক কিছুর দিকে নজর রাখতে হয় এবং অনেক দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সবসময় যে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবো তা কিন্তু নয়। যে কারো দ্বারাই ভুল হতে পারে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভদ্র আচরণ হচ্ছে ভুল স্বীকার করা এবং দুঃখ প্রকাশ করা। এতে করে আমরা সম্ভাব্য কনফ্লিক্ট এড়িয়ে নিজের এবং অন্যের সময় সেইভ করতে পারি।
পরিসংহার
যথাযথ নিয়ম না মানা এবং রোডে অভদ্র আচরণ আমাদের এবং অন্য ড্রাইভারদের জীবন ঝুকিঁর মাঝে ফেলে দিতে পারে। তাই আমাদেরকে অবশ্যই যথাযথ কার্টেসি মেইনটেইন করে ড্রাইভ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একমাত্র এভাবেই আমরা রোড এক্সিডেন্টের পরিমাণ অনেক কমিতে আনতে পারি।