মানুষ তার সারা জীবনের কষ্টে অর্জিত অর্থ দিয়ে কেনে শখের গাড়ি কিন্তু সেই শখের গাড়িটি যদি চুরি হয় তখন ব্যাপারটা খুব কষ্টের। ইদানিং খবরের কাগজ খুললেই প্রায়ই গাড়ি চুরির অদ্ভুত সব ঘটনা চোখে পড়ে। হ্যাঁ এটাও ঠিক যে, কিছু অসাধু মানুষ প্রযুক্তির সাহায্যে পরিকল্পনা করে গাড়ি চুরি করে। কিন্তু এইসব গাড়ি চুরির ঘটনা তুলে ধরার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে চুরি সম্পর্কে সাধারন মানুষকে আগে থেকে জানানো,যাতে গাড়ি চুরির ব্যাপারে কিছুটা হলেও সাবধানতা অবলম্বন করতে পারে। গাড়ি চুরি রোধে পুলিশ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিযান চালায়। অনেক সময় হারানো গাড়ি খুজে পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগ সময়েই হারানো গাড়ি উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। গাড়ি চুরির বিভিন্ন গ্যাং থাকে। বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে ভাবে গাড়ি চুরি ঘটনা অহরহ দেখা যায়। আজকে গাড়ি চুরি করার অদ্ভুত ৬ টি ঘটনা নিয়ে লিখব-
টেস্ট ড্রাইভ করতে যেয়ে গাড়ি নিয়ে পালালো চোর
বিক্রেতার চোখের সামনে দিয়ে পালিয়ে গেল গাড়ি কিনতে আসা ছদ্মবেশী চোর। সাম্প্রতিক এই ঘটনাটি ঘটেছে জার্মানির ডুসেলডর্ফ শহরে। প্রায় ১৯ কোটি টাকা দামের গাড়ি টেস্ট ড্রাইভের কথা বলে চোখের নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেল গাড়ি চোর।
১৯৮৫ সালের সেই ফেরারি গাড়িটি ছিল অ্যান্টিক রেসিং কার। যার দাম ২ মিলিয়ন ইয়োরো অর্থাৎ প্রায় ১৯ কোটি টাকা। বিজ্ঞাপন দেখে কিনতে আসা এক ক্রেতা পরীক্ষামূলক গাড়িটি চালাতে চায় পরে বিক্রেতার সামনে দিয়েই গাড়িটি চালিয়ে পালিয়ে যায় চোর তখন শুধু হতভম্বভাবে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার ছিলনা বিক্রেতার।
চার শিশুর দুর্ধর্ষ গাড়ি চুরির ঘটনা
শিশুরা কল্পনাবিলাসী হয়,শিশুরা হয় চঞ্চল । কৈশোরে করে থাকে অনেক দুরন্তপনা। কিন্তু বাবা মাকে না জানিয়ে বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যাওয়াটা দুরন্তপনার সাথে সাথে দুঃসাহসও বটে। এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের চারটি শিশু। চার জনের মধ্যে একজন ছিল মেয়ে আর বাকিরা ছিল ছেলে। মেয়েটির বয়স ছিল ১০ বছর আর একজনের ছিল ১৩ আর বাকি দুইজনের ছিল ১৪ বছর। তারা মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। ১৪০ কি.মি যাওয়ার পর তাদের পেট্রোল শেষ হয়ে যায় একটি সার্ভিস সেন্টার থেকে তারা পেট্রোলও চুরি করে। মজার ব্যাপার হল, পুলিশ তাদের তখনই আটকায়। পুলিশ তাদের গাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে বললে তারা অসম্মতি জানায়। তখন পুলিশ গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে তাদের বের করে।
ডে কেয়ার থেকে গাড়ি চুরি
এলিজাবেথ আমেরিকার উতাহের একজন একা চাকুরীজীবী মা। কাজে যাওয়ার আগে তিনি তার দুই সন্তানকে ডে কেয়ারে রেখে যান। আবার কাজ শেষে তিনি তার দুই সন্তানকে নেওয়ার জন্য ডে কেয়ারে যান। একজনকে গাড়িতে বসিয়ে আরেজনকে তোলার সময় তিনি দেখতে পান তার গাড়িটি কেউ একজন চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি সাথে সাথে পুলিশকে জানান। পুলিশ তার ফোনে কল দিলে তার বাচ্চাটি ফোন ধরে, আর জানায় যে গাড়ি চোর তাকে রেখে দোকানে গিয়েছে। তখন পুলিশ তাকে হর্ন বাজাতে বলে। বাচ্চাটি হর্ন বাজায় এবং পাশের ব্লকে থাকা অন্য পুলিশ অফিসাররা হর্ন শুনে তাকে উদ্ধার করে।
আর্মি অফিসারের গাড়ি চুরি
ইন্ডিয়ার দিল্লিতে এক আর্মি অফিসারের গাড়ি চুরির ঘটনাটি নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছিল। আর্মি অফিসার প্রতিদিন সকালে হাটতে বেরুতেন। তার শখের গাড়িটি তার বাড়ির সামনেই পার্ক করা থাকতো। তার রুটিন কখনো পাল্টাতো না । সেদিন রোজকার মত হেটে এসে দেখেন তার গাড়িটি আর তার বাড়ির সামনে নেই। তিনি লোকাল থানায় জিডি করলেন। নিত্য এই থানা থেকে সেই থানায় চলল দৌড়াদৌড়ি। দশ মাসেও যখন পুলিশ কিছু করতে পারল না তখন তিনি নিজের গাড়ি খোঁজার দায়িত্ব নিজেই নিলেন। অনেক চেষ্টার পর তিনি তার গাড়িটি খুঁজে পান তার শখের গাড়িটি। তার গাড়িটিকে ৭০,০০০ হাজার রুপিতে ওএলএক্স ডট কমে বিক্রি করা হয়েছিল।
সফটওয়্যারের মাধ্যমে গাড়ি চুরি
মালয়শিয়াতে বেশিরভাগ গাড়িগুলো হচ্ছে চাবি ছাড়া আনলক করার সিস্টেমে তৈরি । একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে গাড়ি লক আর আনলক করা হয়। যখন কেউ গাড়ি কেনে তখন ইলেকট্রিক দোকান থেকে একটি ডিভাইস কিনে নেয়। আর সেই ডিভাইসের মাধ্যমে গাড়ি চাবি ছাড়াই লক আনলক করে থাকে।
এক তরুন জানায় যে, সে পেতালিং জায়া তে তার গাড়ি পার্ক করে গিয়েছিল শপিং মলে। কিছুক্ষন পরে এসে দেখতে পায় তার গাড়িটি চুরি হয়ে গিয়েছে। কিছু লোকাল চোর সফটওয়্যার হ্যাকের মাধ্যমে গাড়ি চুরি করে থাকে। এদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তিন ভাবে এই সফটওয়্যারটি হ্যাক করা সম্ভব।
- যদি সফটওয়্যারটি কম্পিউটারে সাধারন ফ্রিকুইয়েন্সি মনিটরিং কানেক্টেড থাকে যা ইন্টারনেট থেকে ফ্রী ডাউনলোড করা যায়।
- সফটওয়্যারটি যদি রিমোট কি আর গাড়ির সিস্টেমের মধ্যকার ফ্রিকুয়েন্সি রিড করতে পারে।
- যদি সফটওয়্যারটি ফ্রিকুয়েন্সি ক্যাপচার করতে পারে । একই সাথে গাড়ি থেকে রিমোট কি তে যে কোড গুলো পাঠানো হয় তা এনক্রীপ্ট করে নেয়।
পরিবারের সদস্যসহ গাড়ি চুরি
বাংলাদেশেও এখন অহরহ ঘটছে গাড়ি চুরির ঘটনা। প্রাইভেট কার ছাড়াও এখন সিএনজি , পিক আপ ভ্যান, মাইক্রোবাসও চুরির ঘটনা বেড়েই চলছে। নিত্য নতুন আবিষ্কার হচ্ছে গাড়ি চুরির অভিনব পন্থা। ঢাকার বেড়িবাঁধ, উত্তরা, আগারগাঁও এসব এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে গাড়ি চুরির ঘটনা।
রাত তখন বারোটা । মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন জনৈক এক ভদ্রলোক। স্ত্রীর শরীর খারাপ হওয়ায় ধানমন্ডির কলাবাগানের লাজ ফার্মায় ওষুধ কেনার জন্য গাড়ি থামিয়ে ফার্মেসির ভেতর যান ভদ্রলোক। সাথে সাথেই দুই তিন জন লোক এসে তার স্ত্রী আর মেয়ে সহ গাড়ি নিয়ে পালায়। পরে স্ত্রী আর মেয়েকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়।
এই গাড়ি চুরি যদিও পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব না কিন্তু তবুও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে গাড়ি চুরি ঠেকানো যেতে পারে।
- কখনো গাড়িটি অপরিচিত বা অন্ধকার জায়গায় পার্ক করবেন না।
- গাড়ির আশেপাশে সন্দেহ জনক কাউকে দেখলে অবশ্যই তাকে ভালভাবে লক্ষ্য করুণ।
- সব সময় গাড়ির জানালা দরজা বন্ধ করে গাড়ি পার্ক করুণ।
- কখনোই গাড়িতে চাবি রেখে চলে যাবেন না।
- গাড়িতে ব্যাবহার করতে পারেন “থিফ অ্যান্টি লক ডিভাইস”।
- গাড়িতে জি পি এস সিস্টেমটি ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনি যেখানেই থাকেন গাড়ির অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বাংলাদেশে এখন গাড়ি চুরি ঠেকাতে বিভিন্ন উন্নত মানের ডিভাইস পাওয়া যায়। আপনি চাইলে আপনার গাড়ির সুরক্ষায় এর যেকোনো একটি ডিভাইস গাড়িতে ব্যাবহার করতে পারেন। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি “প্রহরী” একটি উৎকৃষ্ট মানের ভেহিকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস। এই ডিভাইসের মাধ্যমে আপনি আপনার গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং করতে পারবেন(যা আপনার মোবাইলেই কানেক্টেড থাকবে) ,মাইলেজ রিপোর্ট, ডেসটিনেশন অ্যালার্ট, ফুয়েলের ব্যাবহার, এসির ব্যাবহার, স্পীড ভায়োলেশন অ্যালার্ট, ইঞ্জিন অন/অফ ইত্যাদি সকল সুবিধা একসাথে পাবেন।