ক্রমশই চারদিক গরম হয়ে উঠছে। সকালের তেজী সূর্য যখন মাথা বরাবর খাড়া হয়ে তাপ দেয় তখন যেন সবকিছু বিষিয়ে ওঠে। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা নিজেরা যেমন নিজেদের রক্ষা করি, তেমনি আমাদের প্রিয় গাড়িটিরও একটু স্বস্তি দরকার। এই গরমে গাড়ির যত্ন নিয়ে আজকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি জানাবো।
গরমে গাড়ির যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
অস্থির এই গরমে গাড়ি চালানোর সময় আপনার কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। গাড়ির নিয়ম চেক করার পাশাপাশি নিম্নের দেওয়া এই বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। আপনার ছোটখাটো সাবধানতা গরমে গাড়িকে রাখবে সুরক্ষিত। আসুন গরমে গাড়ির যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন তা জেনে নেই।
১। ব্রেক পরীক্ষা
গাড়ির যত যন্ত্রাংশ আছে তার মধ্যে ব্রেক অন্যতম। সামান্য ত্রুটিতে ঘটে যেতে পারে বিশাল দূর্ঘটনা। এই গরমে বৃষ্টির সময় ব্রেকে পানি ঢুকে যেতে পারে। আর সেটা খেয়াল রেখেই গাড়ি চালাতে হবে। কখন ব্রেক পরিবর্তন করবেন?
- গাড়ির ড্যাশবোর্ডে ওয়ার্নিং লাইট জ্বলে থাকবে।
- ব্রেকের প্যাডেল নরম হয়ে যাবে।
- প্যাডেলটি বেশ শক্ত এবং প্রতিরোধী হয়ে যায়।
- গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ ব্রেক চাপলে জোরে শব্দ করে। শুরুতেই মেরামত না করলে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যেতে পারে।
২। ব্যাটারী পরীক্ষা করুন
ব্যাটারী নষ্ট হওয়ার জন্যে ঠান্ডা বা শীতকে দায়ী করলেও অতিরিক্ত গরমের সময়েই আসলে এটা নষ্ট হয়। কারণ এসময়ে ব্যাটারী ওভারচার্জড হয়।ব্যাটারীর ফ্লুইড বাষ্পীভূত হয়।এর ফলে ব্যাটারীর আয়ুষ্কাল কমে যায়।ব্যাটারী নিয়মিত পরিষ্কারের মাধ্যমেই এটার আয়ুষ্কাল অনেক বেড়ে যায়। ব্যাটারীর টার্মিনাল খুলে পরিষ্কার করে সুন্দর করে রিকানেকশন করতে হয়।
৩। গাড়িতে রাখুন নাইট্রোজেন
এই গরমে গ্রীষ্মকালে উচ্চ তাপমাত্রা উচ্চ মাত্রায় বেড়ে যায়,ফলে রাস্তাও গরম হয়ে যায়। রাস্তার এই গরম সরাসরি প্রভাব ফেলে গাড়ির চাকাতে। গাড়ির চাকা যদি গরম হয়ে যায় তবে তা ড্রাইভিংয়ের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন অবস্থা থেকে সহায়তা করে গাড়ির চাকায় নাইট্রোজেন গ্যাসের ব্যবহার। এটি আপনার গাড়ির চাকার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই গরমে গাড়ির চাকাতে নাইট্রোজেন গ্যাস লাগাতে পারেন।
৪। গরমের আরাম “এয়ারকন্ডিশন”
এই গরমে গাড়িতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এয়ারকন্ডিশন। কারন তাপমাত্রা দিন দিন যেভাবে বাড়ছে তাতে গাড়িতে এসির ব্যবহারও বাড়বে। তাই পুরোপুরি কাঠফাটা গরম পড়ার আগেই এসির ত্রুটি সারিয়ে নিন। নইলে Car Servicing গুলোতে লম্বা লাইনে পড়ে যাবে। কারণ- সবাই তখন হুট করেই সেখানে ভীড় জমাবে। আমরা চাই আপনি আগেভাগে সব সার্ভিসিং করিয়ে ফেলেন। গাড়ির এসব গুরুত্বপূর্ন কাজের তদারকী এবং হিসেবনিকেশ আপনি চাইলে Prohori Vehicle Tracking System এর মাধ্যমে অটোমেটিক ভাবে তথ্য পেতে পারেন।
৫। টায়ারের যত্ন কেন! হঠাৎ বিপদ হয় না যেন
বিপদ তো যেকোন সময়ে আসতেই পারে। কিন্তু সেজন্য আপনাকে একটু সতর্ক থাকতে হবে বিপদ থেকে বাঁচার জন্যে। গরমে গাড়ির চাকার ভিতর বায়ুর প্রচন্ড প্রেসার হয়। এরফলে টায়ার একদিকে ফুলে যায়। বেশি পুরাতন টায়ার হলে ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।
টায়ার কেনার সময় টায়ারের ডট (ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশন) নাম্বার দেখে কিনতে হবে। ২০০০ সালের পর থেকে যেসব টায়ার তৈরি হয়েছে সেগুলোর গায়ে চার সংখ্যার নাম্বার থাকে। প্রথম দুই সংখ্যা দিয়ে সপ্তাহ এবং পরের দুই সংখ্যা দিয়ে সালকে নির্দেশ করে। লোকাল সার্ভিসিং এর দোকানে গিয়ে টায়ারের টেম্পার্ডমেন্ট ও হাওয়ার পরিমান জেনে নিতে হবে।
৬। অল্প সময়েই হোক, বেল্ট আর হোস চেক
গাড়ির হার্ট মানে ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখা সবচেয়ে বেশি জরুরী। কারণ ইঞ্জিন হিট হয়ে গেলেই গাড়ির অন্যান্য যন্ত্রাংশ ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। তাই হোস এবং বেল্টকে চেক করে নিতে হবে। যদি রেডিয়েটরের হোস বেল্টে সমস্যা থাকে তাহলে রেডিয়েটর দ্রুত ওভারহিট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এর প্রভাব পুরোপুরি ইঞ্জিনের ওপর পড়ে। ইঞ্জিন বিশেষজ্ঞদের সাজেশন হলো বাংলাদেশের রাস্তা অনুযায়ী ৫০০০০ কিলো চালানোর পরেই বেল্ট নষ্ট হতে থাকে। আর গরমের সময়ে যেহেতু হিট বেশি হয় তাই এই সময়ে চেক করিয়ে নিতে হবে।
৭। ওয়েল ফিল্টার, ৪০০০ কিলো হলে চেঞ্জ দরকার
তেল হলো ইঞ্জিনের চালিকা শক্তি। একটি ইঞ্জিনের সকল পার্টসকে তেল সচল এবং মসৃণ রাখে। কয়েক মিনিট গাড়ি চালিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করে তেল চেক করুণ। মূলত দুই ধরনের কালার হবে। তেলের রঙ যদি হলুদ বা বাদামী হয় তাহলে ওয়েল ফিল্টার পরিষ্কার করতে হবে। আর যদি খুব বেশি কালো হয় তাহলে যতদ্রুত সম্ভব ওয়েল ফিন্টার পরিবর্তন করতে হবে। এতে হেলাফেলা হলে কিন্তু ইঞ্জিনের বেশ বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
৮। এয়ার ফিল্টার পরিবর্তনে, সাশ্রয় আনে
এয়ার ফিল্টার পরিবর্তনে প্রায় ১০-১৫% গ্যাস সাশ্রয় হয়। একটা মজার বিষয় শেয়ার করি। নতুন এয়ার ফিল্টারের তুলনায় তুলনামূলক একটু পুরোনো এয়ার ফিল্টার বেশি ভালো কাজ করে। খারাপ রাস্তায় গাড়ি চালালে এয়ার ফিল্টার বেশি দ্রুত নষ্ট হয়। তাই মাঝে মধ্যে এয়ার ফিল্টার বের করে পরিষ্কার করতে হবে। এই গরমে চারদিকে ধুলাবালি বেশিই হবে । তাই গরমে গাড়িকে ভালো রাখতে এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার করতে হবে।
শেষকথা
এই গরমে গাড়ি চালানোর সময় যেসব ত্রুটি পাওয়া যাবে সেটা হেলাফেলা না করে দ্রুতই সারিয়ে নিতে হবে। আপনার সামান্য অবহেলা আপনার পরিবারে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই আর শখের গাড়ি নিয়ে আর কোন হেলাফেলা হয়। আপনার যাত্রা সহজ এবং নিরাপদ হোক।