সাম্প্রতিক আমাদের দেশে ড্রাইভিংয়ে পয়েন্ট সিস্টেম চালু করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। যাতে প্রতিটি গাড়ির লাইসেন্সের বরাদ্দ থাকবে ১২ পয়েন্ট। পয়েন্ট মিস করায় থাকবে শাস্তির বিধান তবে এই পয়েন্টগুলো আবার ফেরত পাওয়া যাবে।আপনার অপরাধ যদি ১২ পয়েন্ট ক্রস করে তবে বাতিল বা স্থগিত হবে ড্রাইভিং লাইসেন্স।
ড্রাইভিংয়ে পয়েন্ট সিস্টেম কেন চালু হলো?
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্র্যাফিক আইনের মান্যতার ব্যাপারে দেখা যায় প্রচুর অলসতা। অনেকেই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হন ঠিকই কিন্তু ট্রাফিক সঙ্কেত মানার ব্যাপারে তা আগ্রহ প্রকাশ করে না। আবার গণপরিবহগুলোতেও ভাড়া এবং যাত্রী সংখ্যার ব্যাপারে যথেষ্ট অনিয়ম দেখা যায়। একটি বিশেষায়িত সফটওয়্যার তৈরি করছে বিআরটিএ যার মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পয়েন্ট কাটা যাবে। এই সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে আশা করা যাচ্ছে সড়কে শান্তি এবং শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
বিআরটিএ ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জায়গায় এই নিয়ম চালু করেছে। এটি যদিও পরিক্ষামূলক। তবে সংশ্লিষ্ট আইনে যেমন সহজেই হবে জরিমানা, আবার পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট ওই ব্যক্তির লাইসেন্স থেকে পয়েন্ট কাটতে পারবে সহজেই।
১৩ অপরাধে কাটা পড়বে ১২ পয়েন্ট
- ট্রাফিক সাইন ও সংকেতের বিধান লঙ্ঘন করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
- মোটরযানের বাণিজ্যিক ব্যবহার সংক্রান্ত ধারা ৩১ এর বিধান লঙ্ঘন করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
- গণপরিবহনে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন ও নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
- কন্ট্রাক্ট ক্যারিজের মিটার অবৈধভাবে পরিবর্তন বা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
- অতিরিক্ত ওজন বহন করে মোটরযান চালানোয় কাটা যাবে ২ পয়েন্ট।
- মোটরযানের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
- নির্ধারিত শব্দমাত্রার অতিরিক্ত উচ্চমাত্রার কোনোরূপ শব্দ সৃষ্টি বা হর্ন বাজানো বা কোনো যন্ত্র, যন্ত্রাংশ বা হর্ন মোটরযানে স্থাপন করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
- পরিবেশ দূষণকারী ও ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান চালানোয় কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
- মোটরযান পার্কিং ও যাত্রী বা পণ্য ওঠানামার নির্ধারিত স্থান ব্যবহার না করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
- দ্রুতগতির মোটরযান প্রবেশের ক্ষেত্রে মহাসড়ক ব্যবহার করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
- মোটরযান চলাচলের সাধারণ নির্দেশনাবলি লঙ্ঘন করলে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
- সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত বিধান লঙ্ঘনে কাটা যাবে ১ পয়েন্ট।
- ইচ্ছাকৃতভাবে পথ আটকে বা অন্য কোনোভাবে অন্য মোটরযানের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে কাটা যাবে ২ পয়েন্ট।
পয়েন্ট কাটার যেসব বিষয় লক্ষ্য রাখবেন
- নিজের ইচ্ছে মতো লাল বাতি অমান্য করে মোটরযান চালানো।
- ওভারটেকিং নিষিদ্ধ এমন কোনো স্থানে ওভারকেট করা।
- মোটরযান না থামিয়ে সরাসরি প্রধান সড়কে মোটরযান প্রবেশ।
- মহাসড়গুলোতে নির্দেশিত গতিসীমা মেনে না চলা।
- ইচ্ছাকৃতভাবে পথ আটকিয়ে বা অন্য কোনোভাবে মোটরযান চলাচলে বাধা সৃষ্টি।
- একমুখী সড়কে বিপরীত মুখ থেকে মোটরযান চালানো।
- বেপরোয়া ওজনসীমা লঙ্ঘন করলে মোটরযান চালানো।
- নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মোটরযান নিয়ে চলাচল করা।
- বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য যে কোনো বিষয় অমান্য করলে ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে পয়েন্ট কাটা যাবে।
- পথচারী পারাপারের নির্দিষ্ট স্থান বা কাছাকাছি কিংবা ইচ্ছাকৃত অভারটেকিং করা
ড্রাইভিংয় পয়েন্ট ফেরত পাবেন যেভাবে
আপনি যেসব নিয়ম অমান্য করে পয়েন্ট হারালেন সে সব কিছু সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে। পরবর্তীতে এইসব অপরাধের জন্য মোটরযান পরিদর্শকের সমমানের পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর বা সার্জেন্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পয়েন্ট কেটে মোটরযান চালক ও সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে। লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে পয়েন্ট কাটার বিষয়টি জানানোর পর নথির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মোটরযানের চালককে বিষয়টি অবগত করবে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের পয়েন্ট কর্তন হওয়ার কারণ সম্পর্কে ডিএমপি কি বলছে টা জানতে এই লিংক ভিজিট করুন।
কিভাবে পয়েন্ট সম্পর্কে জানবেন?
আপনার যদি দোষসূচক পয়েন্ট থেকে থাকে তবে তা ৩০ দিনের মধ্যে তা পুনর্বিবেচনার জন্য কর্তৃকপক্ষের কাছে ফি পরিশোধের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। আপনার বিষয়টি কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করে ৩০ দিনের মধ্যে পয়েন্ট কর্তন থেকে অব্যাহতি প্রদান করবে। তবে আপনি যদি ৬ মাসের মাঝে কোন অপরাধ না করে থাকেন তবে আপনার আবেদনের প্রেক্ষাপটে ছয় মাস পরপর কর্তন করা দোষসূচক পয়েন্ট থেকে ২ পয়েন্ট করে ফেরত দেওয়া হবে।
শেষ কথা
নতুন নিয়ম চলবে নতুন দেশ। আপনার আমার প্রতিদিনের চলার পথ যেন আরও সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকে তাই এই পয়েন্টগুলো বেশ বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে ট্র্যাফিক রুটগুলোতে। ট্র্যাফিক আইনগুলো আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের সাথে সাথে গতি এবং জীবনের ঝুঁকি কমাবে বহুগুণে। নতুন এই পয়েন্ট সিস্টেম হয়তো আমাদের ড্রাইভিং সিটে বসে নিয়ম মেনে চলতে আরও একধাপ এগিয়ে নিবে।