দিনদিন যাতায়াত, গাড়ি এবং রাস্তা পারাপার আমাদের জীবনের অত্যাবশকীয় উপাদান হয়ে উঠছে। আমরা এখন চাইলেও এই তিনটি বিষয়কে বাদ দিয়ে জীবন কল্পনা করতে পারি না। ঘর থেকে বের হলেই রাস্তা, গাড়ি এবং প্রতিনিয়ত করতে হয় যাতায়াত। তাই নিজের মহামূল্যবান জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আজ আমরা আলোচনা করবো সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ০৭টি বিষয় যা সকলের জানা থাকা একান্ত জরুরি ।
সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যু ও ইনজুরির অন্যতম প্রধান কারণে রূপ নিচ্ছে দিনদিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি-২০১৮’- এর তথ্য মতে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সড়ক দুর্ঘটনায়। এছাড়াও ২০-৫০ লাখ মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় আহত বা প্রতিবন্ধী হয়। সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ৮ম প্রধান কারণ হলো সড়ক দুর্ঘটনা। ০৫-২৯ বছর এবং আরও কম বয়সি শিশুদের জন্য এটি মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী শতকরা ৯০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যার সংখ্যা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ০৩ গুণ বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের চিত্র অনেকটা একই রকম। প্রতিবেদনের তথ্য মতে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার, পাকিস্তানে প্রায় ২৭ হাজার এবং ভারতে প্রায় ৩ লাখ।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর গড়ে ০৫ থেকে ০৬ হাজার মানুষ মারা যায়। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মতে, ২০২১ সালে সারা দেশে মোট ৫ হাজার ৩৮১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। কমপক্ষে ৬ হাজার ২৬৪ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৪৬ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৬৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ২ হাজার ২১৪ জন নিহত হয়েছেন, যা সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। এছাড়া বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৫২৩ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট মৃত্যুর ২৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। চলুন জেনে নেই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে ৭টি টিপস যা করলে আপনি সৃষ্টিকর্তার কৃপায় দূর্ঘটনা থেকে অনেকটাই বেঁচে থাকতে পারবেন।
০১. দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ঘুম
প্রতিদিনই আপনাকে নির্দিষ্ট সময় পরিমাণ ঘুম নিশ্চিত করতে হবে এটা দুর্ঘটনা এড়াতে প্রথম কাজ। রাস্তায় চলাচল করতে হলে আসলে মানসিকভাবে যথেষ্ট স্ট্রং না হওয়াটা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নিজে ড্রাইভ করুন বা ড্রাইভার ড্রাইভ করুক উভয়েরই ঘুম চোখে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে। তাছাড়া গণপরিবহন বিশেষ করে লোকাল বাসে ঘুমানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ঘুম চোখে নিজে মটরসাইকেল চালানোর তো প্রশ্নই আসে না। তাই দূর্ঘটনা এড়াতে পরিমিত ঘুম হোক নিত্যদিনের অভ্যাস।
০২. সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গাড়ি রক্ষাণাবেক্ষণ
যে বাহনে চড়ে আপনি প্রতিনিয়ত নিজের গন্তব্যে ছুটে যান সেই বাহনের উপরই কিন্তু নির্ভর করে আপনার মহামূল্যবান প্রাণ। তাই ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে নিজে দায়িত্ব নিয়ে প্রতিদিন বের হওয়ার পূর্বে গাড়ির চাকার সংযোগ, চাকার প্রেসার, ইঞ্জিন ওয়েল, ব্রেক, গিয়ার ও এক্সিলেটর পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। গাড়ি চেকিং এর এই বিষয়টি অভ্যাস হিসেবে গড়ে তুলুন। মনে রাখবেন, একটু অলসতাই কেড়ে নিতে পারে অনেকগুলো জীবন। ম্লান করে দিতে পারে অনেক পরিবারের আশ্রয়স্থল। আপনার অবহেলা কারো জীবন কেড়ে নিবে, কারো হাসির স্থলে কান্না যুক্ত হবে এমনটি না চাইলে প্রতিনিয়ত গাড়ির রক্ষাণাবেক্ষণ করার বিষয়টি কর্তব্য হিসেবে গ্রহণ করুন।
০৩. গাড়ি চালানোতে দক্ষতা অর্জন
গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে দক্ষতা শুধুমাত্র গাড়ির সাথে সম্পর্কিত না। বরং অনেক অনেক মানুষের জীবন মরণের প্রশ্ন। তাই নিজে হোক বা ড্রাইভার, স্ট্যারিয়ারিং এ বসার আগে অবশ্যই যথেষ্ট দক্ষ না হয়ে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামা যাবে না কখনোই। অনেকেই বলতে শোনা যায়, রাস্তায় না চালালে হাত পাঁকা হয় না। এটা আসলে পুরোপুরি ভুল ধারণা, মাঠে চালিয়েও হাত পাঁকা করা যায়। দক্ষ না হয়ে রাস্তায় গাড়ি চালানো সবার জন্যই জীবন মরণের প্রশ্ন। তাই নিজের হাত পাঁকা করার জন্য মানুষের জীবন বিপন্ন করার কোন যৌক্তিকতা নেই।
০৪. প্রতিযোগিতা এড়িয়ে চলা
রাস্তায় প্রতিযোগিতা এখন নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। আচ্ছা, একটু চিন্তা করুন তো কিসের প্রতিযোগিতা করি আমরা মূলত? এগিয়ে যাওয়ার? আসলেই কী এগিয়ে যাচ্ছি আমরা? হয়তো অনেকেই প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যায় তবে মৃত্যুর দিকে। তাই মহামূল্যবান জীবনকে ধ্বংস করতে না চাইলে রাস্তায় সব ধরণের প্রতিযোগিতার মনোভাব পরিহার করতে হবে। সেটা হতে পারে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা রাস্তা পার হওয়া, একটু ঘুরে জেব্রাক্রসিং ব্যবহার না করে সরাসরি রাস্তা পার হওয়া আরও অনেক রকম অবৈধ প্রতিযোগিতা।
০৫. মোবাইল ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আরও একটি গুরুত্ব পূর্ণ কাজ হচ্ছে ফোন ব্যবহার না করা। বর্তমান সময়ে রাস্তায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা খুবই সাধারণ ঘটনায় পরিণত হচ্ছে। এর ফলে পথচারি থেকে শুরু করে ড্রাইভার সবাই মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছেন। তাই রাস্তায় বের হওয়ার পরপরই মোবাইল ব্যবহার করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে। সেটা একাধারে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সর্বোপরি সবার জন্য।
০৬. গাড়ির নিয়ন্ত্রিত গতিসীমা
“আমরা সকলেই জানি, যত গতি, ততো ক্ষতি” অথচ এই কথাটাই আমরা মানতে রাজি না। যখনই আমাদের হাতে গাড়ির স্ট্যারিয়ারিং উঠে তখনই কেন জানি আমরা বেপরোয়া হয়ে উঠি। অথচ একবারের জন্যও ভাবি না এই গতির প্রকৃত প্রাপ্তি কতটুকু কিংবা এই গতি কতটা ক্ষতি করতে পারে। দেখুন, জীবনেও বাড়িতে না ফেরার চেয়ে দেরিতে বাড়ি ফেরা অনেক অনেক ভালো। তাই সাধ্যের বাইরে গাড়ির গতিসীমা বজায় রাখা সকলেরই একান্ত কর্তব্য। তাই আপনি যাত্রী, ড্রাইভার কিংবা গাড়ির মালিক সে যেই হোন, কখনোই অতিরিক্ত গতিকে সমর্থন করবেন না। সর্বোবস্থায়ই, অতিরিক্তি গতি বর্জনীয়।
০৭. সিট বেল্ট বাঁধা
গাড়িতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সিট বেল্ট বাঁধা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তা এবং গাড়ি মাত্রই দূর্ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা। তাই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিজেকে যথাসম্ভব নিরাপদ রাখার জন্য সিট বেল্ট বাঁধাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গণপরিবহনে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে সিট বেল্ট থাকার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি। সিট বেল্ট বাঁধা থাকলে দূর্ঘটনায় জড়তার প্রভাব কাটিয়ে অনেকটাই মাথা, মুখ এবং পুরো দেহকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হয়। তাই আজ থেকে সিট বেল্ড বাঁধাটা হোক অলঙ্ঘনীয় অভ্যাস।
এই ছিল সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ০৭ টি বিষয়ই। যা মেনে চললে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। আমাদের এই আলোচনা থেকে আপনি উপকৃত হয়ে নিরাপদ জীবনযাপন করুন। সড়ক দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদ থাকুন প্রিয়জনের সাথে।
শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।