অনেক শখ করে নতুন গাড়ি কিনেছেন। খুব যত্ন সহকারে গাড়ির পরিচর্যা করেন। গাড়িতে একটুখানি আঁচড়ও লাগতে দেন না। কিন্তু অসতর্কতার কারণে সেই প্রিয় গাড়িটাই যদি হুট করে চুরি হয়ে যায়! তাহলে তখনকার আফসোস আর কষ্টময় পরিস্থিতির অবস্থা শুধুমাত্র ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউই অনুভব করতে পারবে না! অনেকসময় দেখা যায় সংঘবদ্ধ গাড়ি চোরের দল কিংবা অনেক অসাধু চালক, গার্ডের যোগসাজশে গাড়ি চুরি হয়ে যেতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখলে গাড়ি চুরি প্রতিরোধ করা যেতে পারে। আসুন গাড়ি চুরি প্রতিরোধে সাতটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ দেখে নিই, যা আপনার গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
বিশ্বস্ত ড্রাইভার নিয়োগ করুন
সতর্কতার সাথে গাড়ির চালক নিয়োগ দেয়া দরকার। তবে সব গাড়ির চালকই অসৎ কিংবা অবিশ্বাসী নয়। তবুও গাড়ির দায়িত্ব যার হাতে দিবেন তাকে অন্তত কিছুটা পরখ করে নেয়া উচিত। ড্রাইভারের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে রাখুন। তার স্থায়ী- অস্থায়ী ঠিকানা এবং এলাকায় তার পরিচিতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জেনে নিন। তার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, সত্যায়িত চারিত্রিক সনদপত্র, পাসপোর্ট সাইজ ছবি ইত্যাদি সংগ্রহে রাখুন। এছাড়াও গাড়ি চালকের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি খেয়াল রাখুন এবং তার প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখুন। তাকে নিজের পরিবারের একজন ভেবে সেভাবে আচার-ব্যবহার করুন। আপনার এবং তার মাঝে কোন ভুল বোঝাবুঝি বা তিক্ত সম্পর্কের সূচনা যেন না ঘটে সেদিকে সচেষ্ট থাকুন।
গ্যারেজের নিরাপত্তা জোরদার করুন
আপনার গাড়ি রাখার স্থান বা গ্যারেজের নিরাপত্তা নিয়ে খেয়াল রাখুন। এক্ষেত্রে দরকার হলে সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা, সিকিউরিটি এলার্ম লক ইত্যাদি লাগান। খোঁজ খবর নিয়ে বিশস্ত সিকিউরিটি গার্ড রাখুন। গার্ডের স্থানীয় ঠিকানা এবং এলাকায় তার পরিচিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকুন। তার বা তার পরিবারের কারও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি নিয়ে রাখুন। তাকে সার্বক্ষণিক সতর্ক দৃষ্টি রেখে পাহারা দিতে বলুন। এছাড়াও ঠিকমত গেট লক করতে এবং চারপাশের সবকিছু লক্ষ্য রাখতে বলুন।
নিরাপদ স্থানে গাড়ি পার্ক করুন
নিয়ম-কানুন মেনে নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্ক করা উচিত। এছাড়াও সার্বক্ষণিক সিকিউরিটি গার্ড আছে এমন কোন স্থাপনা, যেমন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, কর্পোরেট অফিস, এটিএম বুথ ইত্যাদির সামনে গাড়ি রাখতে পারেন। এছাড়াও অনেক শপিংমলে কিংবা মার্কেটের গ্যারেজে গাড়ি পার্ক করার সুব্যবস্থা আছে, সেসব জায়গায় গাড়ি পার্ক করুন। আর চোরদের হাত থেকে বাঁচতে ড্রাইভারকে ভালভাবে গাড়ি নজরে রাখতে বলুন। তবে কখনোই নির্জন স্থানে গাড়ি পার্ক করবেন না, এতে আপনার গাড়ি এবং ড্রাইভার উভয়ই বিপদের সম্মুখীন হতে পারে।
গাড়িতে ভেইকেল ট্র্যাকার ইউজ করুন
আধুনিক প্রযুক্তির অপার আশীর্বাদ হল জিপিএস ট্র্যাকিং। গাড়ি সুরক্ষিত ও নিরাপদে রাখতে এর জুড়ি নেই। বাংলাদেশে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানই এই সার্ভিস দিয়ে থাকে। আপনার গাড়ির নিরাপত্তা আর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভিটিএস প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারেন। তাহলে আপনাকে আর গাড়ি নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করতে হবে না। ভিটিএস প্রযুক্তির ফিচারগুলোতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকে, যা আপনার গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এছাড়াও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে চুরি যাওয়া অনেক গাড়ি সহজেই উদ্ধার করা সম্ভব।
গাড়িতে মূল্যবান কোন বস্তু রেখে যাবেন না
কখনোই তাড়াহুড়া করে গাড়ির ভিতর মূল্যবান কোন কিছু রেখে যাবেন না। অনেকসময় গাড়ির ভিতর থাকা যেকোন মূল্যবান সামগ্রীও গাড়ি চুরির বা ক্ষতির কারণ হতে পারে। ধরুন-পার্ক করা গাড়ির সিটে ল্যাপটপ রেখে গেছেন। আর কোন চোরের চোখে তা পড়লে সে সেটা নিতে চেষ্টা করবে। তখন সে হয়তো গাড়ির দরজা খুলতে কিংবা জানালার গ্লাস ভাংতে চেষ্টা করবে। অথবা দেখা যাবে অতি লোভের বশবর্তী হয়ে পুরো গাড়িটা নিয়েই চম্পট দেবে। সুতরাং ছোটখাটো ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করুন। আপনার একটু সতর্ক পদক্ষেপ আপনাকে বড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে দিবে।
গাড়ির ডোর লক করতে ভুলবেন না
আপনার গাড়ি চুরি হওয়া থেকে রক্ষা করতে সবসময়ই সতর্কতা অবলম্বন করুন। গাড়ি পার্ক করার পর ডোর ভালভাবে লক করতে কখনোই ভুলবেন না। এছাড়াও গাড়ির স্টিয়ারিংয়ের সাথে ভুলেও কখনোই চাবির রিং ঝুলিয়ে রাখবেন না। এবং গাড়ির সামনের সিটে কোন ব্যাগ জাতীয় জিনিস রাখবেন না। এতে সহজেই তা ধূর্ত চোরের নজরে পড়তে পারে। আপনার সাবধানী পদক্ষেপ আপনার গাড়িকে চুরির হাত থেকে রক্ষা করবে।
গাড়ি পার্ক করে ভালভাবে আশে–পাশে নজর বুলান
আপনার গাড়ি পার্ক করে ভালভাবে চারপাশে দৃষ্টি বুলান। এতে যদি কোন চোর আপনার গাড়ি নজরে রাখে, তবে সে ভাববে আপনি সতর্ক আছেন এবং আপনার গাড়ি চুরি করতে যাওয়া রিস্ক। এটা চোরকে এক ধরণের মানসিক চাপের মাঝে রাখবে। এবং সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবে কারণ তার ধারণা হবে, গাড়ির মালিক হয়তো যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও কখনোই অন্ধকারময় জনহীন স্থানে গাড়ি পার্ক করবেন না। এসব জায়গায় গাড়ি চুরির সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এছাড়াও অপ্রত্যাশিতভাবে যেকোন সময় বিভিন্ন টাইপের বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। আর সেক্ষেত্রে গাড়ি চুরি, হাইজ্যাক কিংবা যেকোন বিপদের সম্মুখীন হলে সাথে সাথেই ৯৯৯ নাম্বারে কল করুন। এতে বিপদকালীন সময়ে দ্রুত জরুরী সেবা এবং সাহায্য পাবেন।
এরপরও অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে গাড়ি চুরি হয়ে গেলে তখন সরাসরি আইনের দ্বারস্থ হোন। অতিদ্রুত স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করুন। থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করতে হবে। মহানগর এলাকার মধ্যে গাড়ি চুরি হলে ট্রাফিক পুলিশের কাছেও লিখিত আবেদন করতে পারবেন। অনেকক্ষেত্রে গাড়ি চুরির ঘটনায় এজাহার দায়েরের মাধ্যমে সরাসরি মামলা করতে হতে পারে। এছাড়াও গাড়ি চুরির বিষয়টি উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করে রাখতে পারেন। এজাহারে ও জিডিতে গাড়ির নম্বর, ঘটনার স্থান–কাল-পাত্র এবং কীভাবে চুরি হলো তা বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে। আপনি যদি কাউকে সন্দেহ করে থাকেন, তবে তার নাম-ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য উল্লেখপূর্ব এজাহার দাখিল করুন।
আপনার গাড়ির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করে চলুন। অধিক সতর্ক ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গাড়িকে চুরির হাত থেকে রক্ষা করবে। আপনার গাড়ি সুরক্ষিত থাকুক এবং নিরাপদ হোক আপনার পথচলা।