মানবদেহের মতো গাড়ির স্বাস্থ্যের’ও নিয়মিত চেক-আপ প্রয়োজন। কি, অবাক হলেন! অবাক হওয়ার কিছু নেই, নিয়মিত গাড়ি ব্যবহার করলে বিভিন্ন ধরণের যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয়। যার কারনে ঘটতে পারে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা! তাই শখের গাড়িটি দীর্ঘস্থায়ী করতে নিয়মিত চেক করে যান্ত্রিক ত্রুটি গুলো সমাধান করা প্রয়োজন। আজকের লেখায় আমরা গাড়ির যত্নে ১0টি টিপস নিয়ে আলোচনা করবো যার মাধ্যমে আপনি নিজেই ছোটখাটো একটি চেক-আপ সম্পন্ন করতে পারবেন। তো চলুন জেনে নেই গাড়ি সুস্থ রাখতে করনীয় সম্পর্কে।
১। গাড়ির তেল
নিয়মিত গাড়ির ব্যবহার করা হলে নিয়মিত গাড়িতে তেল রিফিল করতে হয়। তবে এই তেল যে কিছুদিন পর পর পরিবর্তন করা প্রয়োজন সেই সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। যেহেতু গাড়ির সমস্ত কার্যাবলি তেলের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হয় তাই এদিকে খেয়াল রাখাটা বেশি জরুরি। বেশি কিছু না, গাড়ির ডিপস্টিক খুললেই আপনি তেলের লেভেল এবং রঙ দেখতে পারবেন না। যদি তেলের রঙ গোল্ডেন কালার হয় তাহলে ঠিকাছে। আর যদি দেখেন তেলের রঙ কালো দেখাচ্ছে তাহলে গ্যারেজে নিয়ে গিয়ে তেল পরিবর্তন করে আনুন। এই কাজটি কিছুদিন পর পর করে ফেলা উচিত।
২। টায়ার প্রেশার
একটি প্রেশার গজ টুলের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই চাকার প্রেশার চেক করে নিতে পারবেন। যদি প্রেশার খুব কম থাকে তাহলে তেল বেশি খরচ হয় এবং গাড়ি চলে কম। আবার যদি প্রেশার অনেক বেশি হয়ে যায়, তাহলে রাস্তায় ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সঠিক প্রেশার লেভেল মেইনটেইন করা অত্যন্ত জরুরি। টায়ারের প্রেশার সঠিক পর্যায়ে আছে কি না তার উপরেই আপনার ফুয়েল এফিশিয়েন্সি নির্ভর করে। আপনার গাড়ির টায়ারের যদি যথাযথ প্রেশারের পরিমাণ জানতে ম্যানুফ্যাকচারারের সাথে যোগাযোগ করুন। তবে মনে রাখবেন, বাইরের তাপমাত্রার সাথে সাথে টায়ারের প্রেশারও ওঠানামা করে।
৩। ব্রেইক
গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার আগে প্রতিবার ব্রেইক চেক করে নেয়ার অভ্যাস তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। আর যদি আপনার স্বভাব এমন থাকে যে ব্রেইক থেকে শব্দ না আসা পর্যন্ত আপনার ব্রেইক প্যাড চেঞ্জ করেন না, তাহলে এটাও পরিবর্তন করা জরুরি। ব্রেইক প্যাড পুরোপুরি ক্ষয় হয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগেই প্যাড পরিবর্তন করে ফেলতে হবে এবং নিয়মিত ব্রেইক চেক করে বের হওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এই ছোট্ট একটি অভ্যাস আপনাকে অবশ্যম্ভাবী দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
৪। পাওয়ার স্টিয়ারিং-এর তেল
পাওয়ার স্টিয়েরিং-এ যথেষ্ট পরিমাণে তেল না থাকলে গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হয়ে পরে। আর পুরোপুরি পাওয়ার স্টিয়েরিং ফেইলার-এর কারণে দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই গাড়ির তেলের মতো পাওয়ার স্টিয়েরিং-এর তেল’ও নিয়মিতভাবে চেক করা প্রয়োজন। সাধারণ তেলের মতো এটিও আপনি নিজেই চেক করতে পারবেন।
৫। হুইল অ্যালাইনমেন্ট
গাড়ি চালানোর সময় কি গাড়ি ডানে বা বামে কিছু পরিমাণে হেলে পরছে? যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে আপনার গাড়ির হুইল অ্যালাইনমেন্ট ঠিক না থাকার সম্ভাবনা’ই বেশি। যদি হুইল অ্যালাইনমেন্ট ঠিক না থাকে তাহলে আপনি ঠিক যতোটা চান, গাড়ি ঠিক ততোটা টার্ন নিবে না। যার কারণে বিপত্তি বেধে যেতে পারে। তাই গাড়ি হেলে পরতে দেখলে প্রথমেই হুইল অ্যালাইনমেন্ট চেক করিয়ে আনুন।
৬। এয়ার ফিল্টার
এয়ার ফিল্টার ঠিকমতো কাজ না করলে তা ফুয়েল কনজাম্পশনে প্রভাব ফেলে। তাই নিয়মিতভাবে এয়ার ফিল্টার চেক করা প্রয়োজন। আর এটি পরিবর্তন করতেও বেশি টাকা খরচ করতে হয় না। আর তেল চেঞ্জ করার সময় গ্যারেজের শ্রমিকরা এমনিতেই আপনার গাড়ির এয়ার ফিল্টার চেক করে দিবে।
৭। গাড়ির লাইট
গাড়ির প্রতিটি লাইট সঠিকভাবে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি। তাই রেগুলারলি গাড়ির প্রতিটি লাইট চেক করতে হবে, যেমন – টার্ন সিগন্যাল, ব্রেইক লাইট, রিভার্স লাইট এবং হেডলাইট। কোনোটি যদি ঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে আপনার পাশের ড্রাইভার আপনার গতিবিধি বুঝতে পারবেন না। ফলে ঘটে যেতে পারে দূর্ঘটনা। তাই নিয়মিত এগুলো চেক করে নেয়া জরুরি।
৮। টায়ারের অবস্থা
চাকার প্রেশার চেক করার পাশাপাশি চাকার সার্বিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর রাখা জরুরি। আমরা জানি, নতুন চাকায় খুব ভালোভাবে ব্রেইক ধরে এবং রাস্তায় চলে বেশ ভালো। চাকা যতো পুরনো হয় ততো এফিশিয়েন্সি কমতে থাকে। তাই চাকার সার্বিক অবস্থার দিকেও নজর রাখতে হবে। চাকার কোথাও ছেড়া আছে কি না, কোথাও ফুলে আছে কি না ইত্যাদি দিকে নজর রাখলে দূর্ঘটনার সম্ভাবনা কমে যায়। চাকা পুরোপুরিভাবে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে ওঠার আগেই তাই চাকা পরিবর্তন করে ফেলতে হবে।
৯। রেডিয়েটর কুল্যান্ট
রেডিয়েটর কুল্যান্টের কাজ হচ্ছে আপনার ইঞ্জিন থেকে ইঞ্জিনের তাপ বের করে এনে ইঞ্জিনকে দ্রুত ঠান্ডা হতে সাহায্য করা। তাই যেকোনো লং-ট্রিপের আগে রেডিয়েটরে যথেষ্ট পরিমাণে কুল্যান্ট আছে কি না তা চেক করে নিবেন। ইঞ্জিনের ওভারহিটিং আটকাতে এই কাজের বিকল্প নেই। তবে অবশ্যই ইঞ্জিন গরম থাকা অবস্থায় কুল্যান্ট চেক করতে যাবেন না যেন। একবার ঠান্ডা হয়ে এলে তারপর চেক করুন।
১০। স্পার্ক প্লাগ
গাড়ির স্পার্ক প্লাগ যদি ঠিক না থাকে তাহলে ইঞ্জিনের পাওয়ার এফিশিয়েন্সি কমে যায়। এটি মূলত গ্যাসকে জ্বালিয়ে গাড়িতে শক্তি উৎপাদন করতে সাহায্য করে। তাই যখনই দেখবেন আপনার ইঞ্জিনের পাওয়ার কমে গিয়েছে, প্রথমেই এটি চেক করাবেন। এই কাজটি করাতে আপনার একজন প্রফেশনালের স্মরণাপন্ন হতে হবে।
পরিসংহার
আপনি যদি আপনার গাড়ির পর্যাপ্ত যত্ন নেন, তাহলে সেটি আপনাকে রাস্তায় সেইফ রাখবে। অপরদিকে অবহেলা করলে তার কাজ (আপনাকে সেইফ রাখা) সে করতে পারবে না। অল্প কিছু টাকা বাচাতে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদে লোকসানের শিকার যাতে না হতে হয় তাই নিয়মিত উপরিউক্ত বিষয়গুলোর খেয়াল রাখুন। পূর্বে আমরা গাড়ির ইঞ্জিন সুস্থ রাখার উপায় নিয়ে কিছু গাইডলাইন প্রকাশ করেছি এই লিংক ভিজিট করে দেখতে পারেন। আশাকরি এই টিপস গুলো গাড়িকে যত্নে রাখতে কাজে আসবে।
শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।