আজকের এই দ্রুতগতির পৃথিবীতে, একটি ভালো মানের জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম গাড়ি সুরক্ষার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ব্যবসা বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য, একটি নির্ভরযোগ্য GPS ট্র্যাকিং সিস্টেম এখন একটি অপরিহার্য টুল হয়ে উঠেছে। এটি গাড়ির মালিকদের এবং ম্যানেজারদের কাজের দক্ষতা বাড়াতে এবং গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ ভালোভাবে সহায়তা করে আসছে।
GPS ট্র্যাকিং সিস্টেমগুলো ট্রান্সপোর্ট মনিটরিং এবং ম্যানেজমেন্টে এক বিশাল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এই ট্র্যাকারগুলোর ফিচারসমূহকে ডিজাইন করা হয়েছে রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং আপডেট, রুট অপটিমাইজেশন এবং ডেটা অ্যানালিটিক্স তথ্য প্রদান করার জন্য।
আজকের এই ব্লগটিতে, আমরা বাংলাদেশে GPS ট্র্যাকিং সিস্টেম এর কিছু সুবিধা জানাবো,পাশাপাশি জিপিএস ট্র্যাকিং নিয়ে সাধারণ ভুল ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করব। এছাড়াও কীভাবে এই জিপিএস প্রযুক্তি আপনার ব্যবসাকে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সফল হতে সাহায্য করতে পারে, তা তুলে ধরব।
১.” নিজের মানুষদের বিশ্বাস করি, তাই GPS ট্র্যাকিং সেবার দরকার নেই”
কিছু ফ্লিট মালিক এবং ম্যানেজার GPS ট্র্যাকিংকে তাদের গাড়ির প্রতিটি পদক্ষেপকে পর্যবেক্ষণ করার উপায় হিসেবে দেখে। কিন্তু এটি ট্র্যাকিং এর আসল বিষয় থেকে অনেক দূরে! এই প্রযুক্তিটি একটি শক্তিশালী টুল যা খরচ কমাতে এবং গাড়ির কর্মক্ষমতাবাড়াতে সহায়তা করে। আপনার গাড়ি যখন আরও দক্ষভাবে কাজ করা শুরু করবে, তখন আপনি আরও বেশি কাজ শেষ করতে পারবেন। ফলে ব্যবসায়িক লাভ বৃদ্ধি পায় এবং মুনাফা অর্জন সহজ হবে।
২.”GPS ট্র্যাকিং অনেক ব্যয়বহুল”
কিছু কিছু ব্যবসায়ি ভাইরা চিন্তা করেন যে GPS ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করলে হয়তো অনেক টাকা খরচ হবে। নিরাপত্তাজনিত কারণে জিপিএস সেটআপ এর পেছনে হওয়া প্রাথমিক খরচকে অন্যসব খরচের সাথে সমন্বয় করা যেতে পারে । সময়ের সাথে সাথে, এই সমন্বয় করা অর্থসমূহকে কোম্পানিকে আরও ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। নিশ্চিয়তার জন্য, কোম্পানিগুলো এই খরচগুলোকে বিশ্লেষণ করতে পারবে। ফলে ভবিষ্যতের জন্য দেখা যেতে পারে ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ব্যবহারে আসলেই কতটুকু খরচ বাঁচানো যাচ্ছে।
৩.”সব জিপিএস ফ্লিট ট্র্যাকিং সফটওয়্যার একই”
আপনি যখন জিপিএস ফ্লিট ট্র্যাকিং সফটওয়্যারকে যাচাই করছেন, তখন শুধুমাত্র লাইভ ট্র্যাকিং, স্পিড চেক করা, অপ্রয়োজনীয় ডেটা বিশ্লেষণ করা, কিংবা জিওফেন্স এলার্টের মতো মৌলিক বিষয়গুলো দেখছেন। কিন্তু খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন অন্যসব সমস্ত প্ল্যাটফর্ম এইসব মৌলিক ফিচারসগুলো একই পদ্ধতিতে প্রদান করে। তবে একটি মানসম্পন্ন জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের জন্য সহজ আকারে তথ্য প্রদান করে। এছাড়াও বড় পরিসরের ডেটা বিশ্লেষণ সুযোগ প্রদান করে থাকে।
কিছু উন্নত বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- ম্যানটেইনেন্স শিডিউলিং, ফুয়েল কার্ড রিপোর্টিং, মোবাইল অ্যাপস, জার্মিন ইন্টারগেশন সুবিধা। এসব ফিচারস বা সুবিধাসমূহ কিছু বাড়তি ভেল্যু এড করে যা আপনার ফ্লিট ম্যানেজমেন্টে একটি বড় ধরনের পার্থক্য তৈরী করে।
ট্র্যাকারের পেছনে করা আপনার বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় অংশ আসে জিপিএস সফ্টওয়্যার থেকে। এছাড়াও হিস্ট্রোরিক্যাল ডাটা, কাস্টমাইজড ড্যাশবোর্ড, ইউজার ফ্রেন্ডলি কাস্টমার সাপোর্ট ইত্যাদিও ভূমিকা পালন করে। আপনি এবং আপনার টিম সকলেই স্বীকার করে নিবে, জিপিএস ট্র্যাকিং কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ফ্লিট ম্যানেজমেন্টের নীচের গ্রোথ লাইনটিকে বাড়ানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এভাবেই আপনার প্রতিষ্ঠান একটি শক্তিশালী এবং লাভজনক ভবিষ্যতের জন্য জিপিএস ট্র্যাকার ব্যবহার করে থাকে।
৪.“ জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস ইনস্টল করা এবং ব্যবহার করা জটিল।”
প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে এখন যানবাহনে জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস ইনস্টল করা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস পাওয়া যাচ্ছে, এসব যানবাহনের বিভিন্ন প্রয়োজন অনুযায়ী বানানো হয়েছে। অনেক জিপিএস ট্র্যাকার প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইনস্টলেশন সুবিধা দেয়, তবে আপনার যদি পরিচিত মেকানিক্স থাকে, তবে সহজেই সেটআপ করে নিতে পারবেন।
একটি ভালো মানের জিপিএস ট্র্যাকার প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যেমন Prohori, নির্বাচন করলে এই কাজটি অনেক সহজ হয়ে যাবে। প্রহরী আপনার ট্র্যাকার ব্যবহারের সুবিধা মাথায় রাখে। একটি ভালো জিপিইএস সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আপনাকে ট্র্যাকার সেটআপে সহায়তা করবে, প্রশিক্ষণ প্রদান করবে এবং সিস্টেম ডেটার তথ্যসমূহ বুঝতে সহায়তা করবে। এই ধরনের প্রতিষ্ঠান আপনার অপারেশনকে আরও ইজি করে।
৫.”লোকেশন ট্র্যাকিং করতে Wifi বা Mobile Internet প্রয়োজন।”
আপনার ফোন ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে, ম্যাপ স্ট্রিম, লাইভ ট্র্যাফিক আপডেট বা রাস্তা বন্ধ বা খোলা বিষয়গুলোর তথ্য সহজেই পেতে পারে। জিপিএস ট্র্যাকার আপনার সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করতে মোবাইল সেল টাওয়ার এবং Wi-Fi নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। তবে, জিপিএস ট্র্যাকার ইন্টারনেটের উপর নির্ভর করে চলে না। ইন্টারনেট সার্ভিস বা Wi-Fi ছাড়াও, আপনার ফোনের জিপিএস স্যাটেলাইটের সাথে সংযুক্ত হয়ে আপনার অবস্থান ট্র্যাক করতে পারে।
৬.”সব GPS ট্র্যাকিং সিস্টেম একই রকম”
সব ধরনের জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম একই রকম এটি একটি ভুল ধারণা। যদিও ট্র্যাকার কোম্পানিগুলো একই ধরনের জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তবে বিভিন্নসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা ভিন্ন হতে থাকে। তবে এমন একটি ট্র্যাকারের প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা উচিত, যারা পণ্য বিক্রির পরেও আপনাকে সাপোর্ট দেবে এবং আপনার ব্যবসার প্রয়োজন ও কাজ বুঝে আপনাকে সঠিক পরামর্শ প্রদান করবে। এমন একটি ট্র্যাকিং সিস্টেম নির্বাচন করুন যা আপনার অপারেশনের সাথে মানানসই হয় এবং কাস্টমাইজড, ডিটেলস রিপোর্টিং এবং সফটওয়্যার আপগ্রেডের মতো সুবিধা প্রদান করে। তাদের বেছে নিন, যা আপনার ব্যবসার সাথে মানিয়ে চলতে পারে এবং তা ভবিষ্যতে উন্নতি ও বৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। আমরা, প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার আপনাকে, বাংলাদেশে সেরা মানের সেবা প্রদানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
৭.”GPS ট্র্যাকার বিশ্বব্যাপী কাজ করে”
GPS ট্র্যাকার এটিতে ব্যবহৃত সিম কার্ডের উপর নির্ভর করে যেকোনো জায়গায় কাজ করতে পারে। আপনার ট্র্যাকারটির সিম যদি আন্তর্জাতিক মানের না হয়, তবে এটি শুধু আপনার দেশে কাজ করবে। বিদেশে ব্যবহার করলে রোমিং চার্জ বা অতিরিক্ত সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হবে। তাই অপ্রত্যাশিত খরচ এড়াতে, ট্র্যাকারটির কি আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করার সক্ষমতা আছে কি না এই তথ্য আগে থেকেই যাচাই করে নিন।
৮. যদি আমি আমার GPS ট্র্যাকার ব্যবহার না করি, তবে আমি এটি যে কাউকে বিক্রি করতে পারি।”
আপনার হয়তো মনেই হতে পারে GPS ট্র্যাকার অনলাইনে বিক্রি করা যাবে। কিন্তু এই বিষয়টি সঠিক নয়, কারণ ট্র্যাকারে অনেক সংবেদনশীল ইনফরমেশন যেমন- ব্যাংক একাউন্ট তথ্য, ইমেইল এড্রেস, ফোন নম্বর এবং গাড়ির নিবন্ধন ইত্যাদি জমা থাকে। যদিও টেকনিক্যালি এটি বিক্রি করা সম্ভব, তবে এটির বিক্রয় প্রক্রিয়া জটিল। আপনাকে ট্র্যাকারটিরের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য আপডেট করে মালিকানা হস্তান্তর করতে হবে। একজন অপরিচিত ব্যক্তির হাতে এসব তথ্য পড়লে ঝুঁকি হতে, তাই আপনার ব্যবহৃত ট্র্যাকারটি অনলাইনে বিক্রি না করাই ভালো।
৯. ” গাড়িতে ইনস্টল করা GPS ট্র্যাকারটি হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারে!”
আমরা অনেকেই সিনেমায় দেখেছি, যেখানে হ্যাকাররা রিমোটলি একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে। এটি মূলত গাড়ির ড্যাশবোর্ড কম্পিউটারকে ম্যানিপুলেট করার মাধ্যমে করা হয়। এই ধরনের সিস্টেমগুলো ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং গাড়ির গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করার এক্সসেস পেয়ে থাকে। তবে, সাধারণ জিপিএস ট্র্যাকারগুলো শুধুমাত্র গাড়ির পাওয়ার সোর্সের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং এটি গাড়ির অনবোর্ড কম্পিউটারের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখে না।
প্রহরী ডিভাইসটি গাড়ির পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সাথে সংযুক্ত এবং এর মধ্যে একটি বিল্ট-ইন ব্যাটারি ব্যাকআপ রয়েছে, যা এটি সবসময় সতর্ক রাখে। প্রহরী জিপিএস ট্র্যাকার মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে রিমোট অ্যাক্সেসের সুযোগ দেয়, ফলে আপনার গাড়ির নিরাপত্তা সবসময় নিশ্চিত থাকে। সুতরাং, একটি জিপিএস ট্র্যাকার দিয়ে হ্যাকার আপনার গাড়ি হ্যাক করতে পারবে না।
১০. “গাড়িতে জিপিএস ট্র্যাকিং সেট করলে ড্রাইভাররা চাকরি ছেড়ে দিবে”
অনেক ড্রাইভার মনে করে জিপিএস ট্র্যাকিং শুধুমাত্র মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট বা ভুল ট্র্যাকিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়, কিন্তু বাস্তবে তা একেবারেই সঠিক নয়। GPS ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করার সময়, ড্রাইভারদের এর উপকারিতা কিংবা সুবিধা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে উচিত। এটি কিভাবে গাড়ির রাউটিং স্পিড অপটিমাইজ করে, মেইনটেনেন্স ট্র্যাক করতে সাহায্য করে এবং বিপদে ট্র্যাকার কিভাবে সহায়তা নিশ্চিত নিশ্চিত করে, তা তাদের বুঝানো উচিত উচিত।
একটি উদাহরণ হিসেবে, আমাদের এক ক্লায়েন্টের সাথে এমন একটি ঘটনা হয়েছিল, যেখানে জিপিএস ট্র্যাকার ড্রাইভারের চাকরি বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ড্রাইভারকে একটি তুষারঝড়ে গাড়ির ক্ষতি করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু জিপিএস ডেটার মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছিলাম যে তিনি অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালালনি, ফলে তিনি অবিচারের হাত থেকে রক্ষা পান। ড্রাইভারদের বুঝিয়ে দিন জিপিএস ট্র্যাকিং তাদের উপর নজরদারি করার জন্য নয়, বরং তাদের সহায়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে।
শেষকথা
GPS ট্র্যাকিং সেবা ব্যবহার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠাঙ্গুলো রুট অপটিমাইজ করা, জ্বালানি খরচ কমানো এবং গাড়ির নিরাপত্তা বাড়াতে পারে। প্রহরীরi মতো আধুনিক জিপিএস ট্র্যাকিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো স্ট্রং রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং সুবিধা প্রদান করে যা গাড়ি পরিচালনা ও সুরক্ষিত করতে সহায়তা করে। এই অত্যাধনিক ট্র্যাকিং সিস্টেমগুলো ফ্লিট ম্যানেজার ও ব্যবহারকারীদের গাড়ির অবস্থান ট্র্যাক করতে, ড্রাইভিং আচরণ মনিটর করতে এবং অস্বাভাবিক কার্যকলাপের জন্য তাত্ক্ষণিক সতর্কতা প্রদান করতে সক্ষম।
Prohori এর উন্নত বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেসের সাথে, বাংলাদেশজুড়ে কোম্পানিগুলি তাদের ফ্লিট পরিচালনার ধরণ পরিবর্তন করছে, নিশ্চিত করে অধিক কার্যকারিতা এবং মানসিক শান্তি।