জানেন? স্পোর্টস কারে দরজা ও আসন যে দুইটি করে থাকে! চার আসনের স্পোর্টস কারও অবশ্য আছে। তবে দুই দরজার ডিজাইনের গাড়িগুলোকে বলা হয় ক্যুপ (Coupe)। স্পোর্টস কারের কথা উঠলেই আর কি কি চোখে ভেসে উঠে বলুন তো? গাড়ির শরীরের সাথে একদম লাগানো চাকা, আকর্ষণীয় রঙ, দুই আসনের বিলাসবহুল ডিজাইনের নিচু গাড়ি! তাই না? আর দশটা সাধারণ গাড়ির ভিড়ে একজন গাড়িপ্রেমীকে আলাদাভাবে আকৃষ্ট করতে যা যা দরকার, তার সবই যেন থাকে একটা স্পোর্টস কারে। ১৯১৪ সালে তৈরি হওয়া বিশ্বের প্রথম স্পোর্টস কার – এর ডিজাইন ও গতি অবশ্য এখনকার তুলনায় এতোটাও বিলাসবহুল ছিলো না। থাক পুরনো কথা। বর্তমানে চোখ ফেরালে দেখা যায়, স্পোর্টস কারের জগতে যেন বিপ্লব ঘটে গেছে। বিগত কিছু বছরের বিপ্লবের ফলাফলেই এযুগের বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অত্যাধুনিক মডেল ও ফিচারের সব স্পোর্টস কার।
বিশ্বের সেরা ১০টি স্পোর্টস কার
মাজদা থেকে অডি, কিংবা বিএমডব্লিউ। নানান আকর্ষণীয় ফিচার সমৃদ্ধ স্পোর্টস কার আছে নামী সব ব্র্যান্ডের, এমনকি ভিন্ন ভিন্ন বাজেটের। ২০২২ সালে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করা এমনই ১০টি সেরা স্পোর্টস কার ও তাদের ভেতরের তথ্যই জানাবো আজকে আপনাদের।
১. Mazda MX-5 Miata
অন্যান্য স্পোর্টস কার থেকে তুলনামূলক মাঝারি দাম ও কম মেইন্টেনেন্স খরচ। সুবিধাজনক বিভিন্ন কারনেই ১৯৮৯ সালে প্রস্তুতকৃত এই গাড়িটির চাহিদা এখনো স্পোর্টস কারের বাজারে ব্যপক। আন্তর্জাতিক বাজারে গাড়িটির বর্তমান বিক্রয়মূল্য ২৭৬০০ ডলার। ২০০০ সিসি এবং ১৫০০ সিসি, দুইভাবেই মূলত পাওয়া যায় গাড়িটি। জাপানিজ কোম্পানি মাজদার এই স্পোর্টস কারটিতে রেয়ার হুইল ড্রাইভ। মানে হলো, এই গাড়ির ইঞ্জিন পেছনের চাকাকে পাওয়ার দেয়। এই মডেলের ২০২২ সালের সংস্করনের গাড়িটি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৪৩ কিলোমিটার গতি তুলতে সক্ষম। অনেকেই হয়তো জানেন না, কনভার্টিবেল বা ছাদ খোলা স্পোর্টস কারটির ডিজাইন কিন্তু ১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকের পুরনো ব্রিটিশ স্পোর্টস কার থেকে অনুপ্রাণিত। পুরনো ডিজাইনের আভিজাত্যের সাথে অত্যাধুনিক টেকনোলোজি- সেরার তালিকায় থাকার জন্য আর কি চাই!
২. Porsche 911
স্পোর্টস কারের জগতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও দ্রুতগতির স্পোর্টস কারের কথা উঠলে, নিঃসন্দেহে তালিকার শুরুর দিকেই থাকবে পোর্শের ৯১১ মডেল। ১৯৬৪ সালে পোর্শ ব্র্যান্ড তার সর্বাধিক বিক্রিত ৯১১ মডেলের স্পোর্টস কারটি বাজারে ছাড়ে। এবং প্রচুর চাহিদার কারনে এখনো এর উৎপাদন হয়েই চলেছে। ৯১১ মডেলের দুই দরজার এই স্পোর্টস কারটিই মূলত পোর্শ ব্র্যান্ডকে ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে বিখ্যাত করে তোলে। ৫৮ বছর ধরে বাজার ধরে রাখা স্পোর্টস কারটির মূল ডিজাইন ও ফিচারে কয়েক প্রজন্মে বেশ কিছু পরিবর্তন আসলেও, মূল কাঠামোতে এখনো আগের মতোই ৬ সিলিন্ডার এবং রেয়ার ইঞ্জিনের ডিজাইনটিই ধরে রাখা হয়েছে। তবে ইঞ্জিনের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে সময়ের সাথে তাল মিলিয়েই। ১৩০ হর্সপাওয়ারে প্রথম বাজারে ছাড়া পোর্শে ৯১১ স্পোর্টস কারটির ২০২২ সালের সংস্করণের হর্সপাওয়ার ৪৭৩। আর এতে গতি তোলা যায় ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২৯৩ কিলোমিটার!
৩. Alpine A110
দ্রুতগতির মসৃণ অভিজ্ঞতা দিতে আরেকটি সেরা স্পোর্টস কার হচ্ছে এই আলপাইন এ১১০ মডেলের গাড়িটি। ২৮৮ হর্সপাওয়ারের, হালকা ওজনের এই স্পোর্টস কারটিতে রয়েছে টার্বো চার্জড ইঞ্জিন, সাথে নমনীয় সাসপেনশন ও ব্যালেন্স ব্রেক ফিট। ১৯৬২ সালে প্রথম বাজারে আসা গাড়িটির সেই ক্যুপ ডিজাইন সহ অনেকটা ডিজাইনই ধরে রাখা হয়েছে ২০১৭ সালের শেষ সংস্করণ পর্যন্ত। ফরাসি প্রস্তুকারকের তৈরি স্পোর্টস কারটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার পাড়ি দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এই স্পোর্টস কারটির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ ভেদে ১০০৩৭২ ডলার থেকে ১১৪৩৭২ ডলার পর্যন্ত।
৪. Porsche 718 Boxster/Cayman
পোর্শে কোম্পানির ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তৈরিকৃত এক এবং দুই আসনের স্পোর্টস রেসিং কারের সিরিজের একটি হচ্ছে এই পোর্শে ৭১৮ মডেলটি। মিড ইঞ্জিনের সেরা স্পোর্টস কারগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। শুরুর দিকে এর খোলা চাকার ডিজাইন মূলত ফর্মুলা রেসিংয়ের জন্য করা হয়েছিল। সেটারই উন্নত রূপ হচ্ছে এযুগের অত্যাধুনিক ক্যুপ ডিজাইনের পোর্শে ৭১৮ বক্সটার বা কেম্যান। মসৃণ গতির জন্য এতে আছে ১৯৮৮ সিসির টার্বো চার্জড ফ্ল্যাট ফোর ইঞ্জিন। আরো আছে ৫৪ লিটার জ্বালানী ধারণ ক্ষমতার ট্যাঙ্ক। ৩৬৫ হর্সপাওয়ারের স্পোর্টস কারটির সর্বোচ্চ গতি তোলার ক্ষমতা ঘন্টায় ২৭৫ কিলোমিটার।
৫. BMW M4
বিএমডব্লিউ এর স্পোর্টস কার সিরিজের অন্যতম হাই পারফর্মেন্স স্পোর্টস কার হচ্ছে বিএমডব্লিউ এম৪। বিলাসবহুল ক্যুপ স্পোর্টস কারটি বাজারে এসেছে মাত্র ২০১৪ সালেই। ৩ লিটারের ৬ সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিনের এই গতিদানবটির হর্সপাওয়ার ৪৭৩। মসৃণ ড্রাইভিং অভিজ্ঞতার জন্য এতে আছে রেয়ার হুইল ড্রাইভ ও ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন। ২০২২ সালে বাজারে আসা সর্বশেষ সংস্করণের বিএমডব্লিউ এম৪ সর্বোচ্চ গতি তুলতে পারে ঘণ্টায় ৩০৭ কিলোমিটার। ২০২৩ সালেই আসছে এর আরেকটি সংস্করণ। আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম এখন ৭২৯৯৫ ডলার। মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রতিযোগিতার জন্য রয়েছে এই স্পোর্টস কারটিরই ‘কম্পিটিশন ভার্শন’। যার হর্সপাওয়ার আবার বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০৩ এবং দেয়া হয়েছে অটোম্যাটিক গিয়ারবক্স। এটির দাম ৭৫৬৯৫ ডলার।V
৬. Ferrari 488
৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ২ লাখ থেকে ৩ লাখ ডলারের স্পোর্টস কারগুলোর বাজারে একছত্র রাজত্ব ধরে রেখেছে ফেরারি। হালকা কমলা রঙের আভিজাত্যপূর্ণ স্পোর্টস কারটি ‘ফেরারি রেড’ নামেই বেশি পরিচিত। যা প্রথম জনসম্মুখে আসে ২০১৫ সালে। ফেরারির ৪৮৮ মডেলের এই সুপারকারটির ৩৯০০ সিসির টার্বোচার্জড ইঞ্জিনে আছে স্বচ্ছ ঢাকনায় ঢাকা ৮ টি সিলিন্ডার। ৬৬১ হর্সপাওয়ারের স্পোর্টস কারটি ঘন্টায় পাড়ি দিতে পারে ৩৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ফেরারির বেশিরভাগ স্পোর্টস কারগুলির বিশেষত্ব হচ্ছে, উচ্চগতির সাথে তীব্র গর্জন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আগের মডেলগুলো থেকে ৪৮৮কে আরো উন্নত করার প্রচেষ্টায় এর গর্জন কমেছে কিছুটা। তবে চলন্ত অবস্থায় পাওয়া যাবে তীব্র শিষের মতো শব্দ। আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম এখন ৩৬৯৩০০ ডলার। ফেরারির রাজকীয় এই স্পোর্টস কারটির দাম একটু বেশি হওয়াটাই যেন স্বাভাবিক।
৭. McLaren 720S
মাত্র ২০১৭ সালের মার্চেই জেনেভা মোটর শোতে ব্রিটিশ অটোমোবাইল প্রস্তুতকারক ম্যাকলারেন কোম্পানি তাদের দ্বিতীয় জেনারেশনের ৭২০ এস মডেলের স্পোর্টস কারটি প্রথম জনসমক্ষে নিয়ে আসে। এই মডেলটি নিয়ে কোম্পানির টার্গেট ছিলো মূলত ফেরারির ৪৮৮ মডেলকে টেক্কা দেয়া। টুইন টার্বো চার্জড ৮ সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিনের স্পোর্টস কারটি ৩৯৯৪ সিসির। রেয়ার হুইল ড্রাইভের দুর্দান্ত গতির গাড়িটির হর্সপাওয়ার ৭১০। যেখানে ২.৯ সেকেন্ডেই ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটারের গতি তোলা যায়! আর সর্বোচ্চ গতি তোলা যায় ঘণ্টায় ৩৪১ কিলোমিটার। এছাড়াও এতে আছে বিলাসবহুল ‘বাটারফ্লাই দরজা’। আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম ২৯৯০০ ডলার।
৮. Lamborghini Huracan
ইতালির গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বরগিনি ২০১৪ সালের জেনেভা মোটর শোতে ‘ল্যাম্বরগিনি হারিকেন’ নামের স্পোর্টস কারটি প্রথম প্রদর্শন করে। বিলাসবহুল ডিজাইনের এই সুপারকারটির ১০ সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিনের শক্তি ৬১০ হর্সপাওয়ার। স্পেনের ঐতিহাসিক বুল ফাইটিংয়ের একটি বিখ্যাত ষাঁড়ের নাম থেকে এই স্পোর্টস কারটির নামকরন করা হয়েছে। ২০৯৪০৯ ডলার থেকে শুরু এই স্পোর্টস কারটি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৪১ কিলোমিটার যেতে সক্ষম। দুই দরজার ক্যুপ ডিজাইনের এই স্পোর্টস কারটির ভেতরে জায়গা অন্যান্য স্পোর্টস কার থেকে তুলনামূলক একটু কম বলেই দাবী গাড়ি বোদ্ধাদের।
৯. Ford Mustang GT Fastback
১৯৬৪ সালে প্রথমবারের মতো পর্দা সরানো হয় নামকরা স্পোর্টস কার ফোর্ড মাস্টাং-এর উপর থেকে। এবং প্রথম দিনেই গারিটির অর্ডার আসে ২২০০০ টি! ২০২১ সালে বাজারে আসা ফোর্ড মাস্টাং এর এই মডেলটিও ধরে রাখতে পেরেছে তার পূর্বসূরিদের আভিজাত্য। ক্যুপ ডিজাইনের দুই দরজা হলেও, ভেতরে বসার আসন কিন্তু এতে চারটা। ৪৯৫১ সিসির স্পোর্টস কারটির ইঞ্জিন ৫ লিটারের ৮ সিলিন্ডার বিশিষ্ট। রেয়ার হুইল ড্রাইভ ও ৪৫০ হর্সপাওয়ার শক্তি নিয়ে এটি ঘন্টায় পাড়ি দিতে পারে ২৪৯ কিলোমিটার। এমনকি মাত্র ৫.২ সেকেন্ডেই তুলে ফেলতে পারে ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার যাওয়ার গতি। আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম ৩৭২৯০ ডলার থেকে শুরু।
১০. Audi TT
১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে এখন অব্দি বাজার ধরে রাখা আরেকটি সেরা স্পোর্টস কার হচ্ছে এই অডি টিটি। এখন বাজারে চলছে মডেলটির তৃতীয় জেনারেশন। বিখ্যাত বাইক রেসিং প্রতিযোগিতা ‘আইল অব ম্যান টিটি’ থেকে স্পোর্টস কারটির নামকরণ হয়েছে বলে মনে করা হয়। এই গতিদানবটির সর্বশেষ সংস্করণ আসে ২০১৪ সালে। গাড়িটির হুডের নিচে আছে ২ লিটারের ৪ সিলিন্ডার বিশিষ্ট টার্বোচার্জড ইঞ্জিন। যা এই স্পোর্টস কারটিকে শক্তি দেয় ৩০২ হর্সপাওয়ার। অল হুইল ড্রাইভ, দুই দরজা ও চার আসনের গাড়িটি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২৪৯ কিলোমিটার। আন্তর্জাতিক বাজারে বিলাসবহুল এই স্পোর্টস কারটির দাম ৪৯৮০০ ডলার থেকে শুরু।
শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।