১.
করোনা! আসলে আমাদের আর জানার বাকী নেই করোনা ভাইরাস কী? বলা যায় পুরো পৃথিবীকে থমকে দিয়েছে এই ভাইরাস। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রুপ ধারন করে মানব প্রজাতিকে ফেলছে শঙ্কায়! আসলে এর থেকে পরিত্রান পাওয়ার কোনো উপায় বের হয়নি। বলা যায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় উপায় এর থেকে বাঁচার। আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গনসচেতনতা। বলা যায় এ সময় গনসচেতনতা যত বাড়ানো যাবে, এই সংক্রমনের ঝুকি ঠিক ততোটাই কমানো যাবে। মানুষকে সচেতন করতে কোনো কিছুরই যেন কমতি হচ্ছেনা, কিন্তু তবুও আধুনিক যুগের এই মানুষকে সচেতন করার কোথাও যেন একটা ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। করোনা গাড়ি নিয়ে সেই ঘাটতি মেটাতে চান একজন ভারতীয় নাগরিক।
গনসচেতনতার অংশ হিসেবে সব দেশের প্রশাসন, মিডিয়া ভিন্ন ভিন্ন উপায় অবলম্বন করছেন। কোথাও বা শাস্তির আওতায় এনে বাড়ানো হচ্ছে সচেতনতা। তবে পৃথিবীর কিছু মেধাবী মানুষ তাদের মেধাকে একটু ভিন্ন ভাবে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর এই সংকট কালে তাদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে যাচ্ছেন। একই জিনিসের অথচ প্রয়োগের ভিন্ন মাত্রায় খুব সাধারণ কিছুও অসাধারন হয়ে উঠতে পারে। আসলে সবাই সৃষ্টি করতে পারেনা, সবার জন্ম সৃষ্টির জন্য হয় না। সময়োপযোগী কিছু সৃষ্টি মানুষের কাজে লাগাতে পারাটাই স্বার্থকতা। তেমনই এক অদ্ভুত জিনিষ করোনা গাড়ি !
২.
পৃথিবীর এই সংকটে এমনই এক সৃষ্টি দক্ষিন ভারতের সুধাকর যাদবের। গাড়ি! হ্যাঁ একটি ভিন্ন আঙ্গিকের গাড়ি দিয়েই তার গনসচেতনতার কার্যক্রম অনেকটাই প্রশংসার দাবিদার। যখন সব পন্থাই ব্যর্থতায় অনেকটা, তখন হায়দ্রাবাদে একটু মাত্রা যোগ করেছেন গাড়ির যাদুকর সুধাকর যাদব।
সভ্যতাকে রক্ষায়, সভ্যতার আবিষ্কারকে ব্যবহার করে নতুন আঙ্গিকের গাড়ি! একদিকে মানুষকে করছেন সচেতন, অন্যদিকে নিজের ঝুলিতে আরো একটি নতুন অভিজ্ঞতা, যা কাজে লেগেছে মানুষের প্রয়োজনে।
ভারতীয় গাড়ী ডিজাইনার সুধাকর যাদব করোনা আকৃতির করোনা গাড়ি তৈরি করে সচেতনতার অংশ হিসেবে মানুষের পাশে থেকেছেন।
ভারতের হায়দ্রাবাদে তিনি এ গাড়ির উন্মোচন করেন,যা দেখতে করোনা ভাইরাসের মাইক্রোস্কোপিক চিত্রের মত। করোনা ভাইরাসের এই আকৃতি দিয়ে তিনি মানুষকে বুঝিয়েছেন ঘরের বাইরে বের হলেই করোনা ভাইরাস ঘিরে ধরবে,অর্থাৎ বাড়ির বাইরের জায়গা কারোর জন্যই নিরাপদ নয়। করোনা ভাইরাসের আকৃতি যুক্ত এই গাড়ি সচেতনতা বাড়াতে এবং মানুষকে বাড়ির ভেতরে থাকতে উৎসাহিত করে।
এই বছরের মার্চের শেষের দিকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদির আদেশে পুরো ভারত লকডাউনে।তবুও মানুষকে ঘরবন্দি করতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছিলো। আর তাই সুধাকর যাদব তার নিজের অবস্থান থেকে গাড়িকে করোনা ভাইরাসের আকৃতি দিয়ে মানুষকে এর ভয়াবহতা বোঝাতে চেয়েছেন।
লাল সবুজের রং করা করোনা ভাইরাস আকৃতির এই গাড়িটির রয়েছে ১০০ সিসি ইঞ্জিন, ছয়টি চাকা,এবং প্রতি ঘন্টায় ৪০ কিলোমিটার ভ্রমনের ক্ষমতা। একক সিটের এই গাড়িটি জায়গায় স্পিন ও করতে পারে। গাড়িটির বডি ফাইবারের। গাড়িটিকে করোনা ভাইরাসের আকৃতি দিতে তার সময় লেগেছে ১০ দিন।
করোনা সচেতনতা সৃষ্টির জন্য হায়দ্রাবাদ পুলিশকে সহায়তার অংশ হিসেবে তার এই গাড়িটির আকৃতির পরিকল্পনা। সামাজিক বার্তা প্রদানে এই গাড়িটিই যে সুধাকরের নতুন তা নয়,এর আগেও তিনি ভিন্ন ধর্মী সৃষ্টির জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। সুধাকর বিশ্বের বৃহত্তম ত্রয়ী নকশা ডিজাইনের জন্য গিনেস বুক ওয়াল্ডে তার নাম লিখান। সুধাকর বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করে গাড়ির আকৃতি তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহন করি”। এরই অংশ হিসেবে তিনি ধূমপান বন্ধের সামাজিক সচেতনতার অংশ হিসেবে সিগারেট বাইক তৈরি করেছেন। AIDS এর সচেতনতার অংশ হিসেবে ও তিনি বাইক করেছেন। তিনি রাস্তায় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে হেমলেট গাড়িও তৈরি করেছেন।
করোনা গাড়ি ছাড়াও সুধাকর গাড়িকে বার্গার, ব্যাগ,ক্যামেরা এবং একটি ফুটবলের আকৃতি প্রদান করেছেন।
৩.
মানুষের মস্তিষ্ক আসলে সব সময় চেতনভাবে কাজ করেনা, আমরা অনেক সময় অনেক কিছু বুঝেও তা মানতে নারাজ! ঠিক এমনই একটি বিষয় এই করোনা ভাইরাস! আমরা নিজেরা ও এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানি, তবে নিজেদের অজান্তে আর প্রয়োজনেই রাস্তার বাহিরে বের হয়ে যাই কোনো রকম চিন্তা ছাড়াই! মানুষের মস্তিষ্ক অবচেতন ভাবেও অনেক কার্যকরী কাজ করে থাকে এবং তা অনেক বেশি প্রভাব ফেলে আমাদের জীবনে। একবার যদি অবচেতন মনে কোনো কিছু সম্পর্কে ধারনা হয়ে যায়, তাহলে এই ধারনাটাই আমাদের চালিত করে এবং খুব ভালো ভাবেই প্রভাব ফেলে সেটা হোক ভালো কিংবা মন্দ!
প্রতীকি কোনো কিছু আমাদের মননে বেশ আঘাত করে। আমাদের অবচেতন মনে দীর্ঘস্থায়ী হয় অনেক বেশি প্রতীকি কোনো কিছু! বলা যায় এইদিকটিই কাজে লাগানো হয়েছে সুধাকরের করোনা ভাইরাসের আকৃতির এই গাড়িতে। রাস্তায় যখন কেউ এটি দেখবে তখন তার মননের অবচেতন দিকটাতে আঘাত পাবে, এবং অবচেতন মনে করোনার ভয়াবহতা ঢুকবে, তখন নিজের অজান্তেই বাইরে বের হতে চাইবেনা সে,একদম খু্ব প্রয়োজনীয় ছাড়া। সুধাকরের গাড়ি এমন ভাবে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে জনমনে। করোনা পরবর্তী পৃথিবী হয়তো তাকে মনে রাখবে ভিন্ন ধর্মী এই গাড়ির জন্য! ইতিহাস তাকে স্মরণ করবে,আজ থেকে ১০০ বছর পর যখন আবার কোনো মহামারী আসবে তখনই উঠে আসবে সুধাকরের এই গাড়ির কথা, তার ব্যতিক্রমী চিন্তার কথা।