পাঞ্জাবী একটি গানের প্রথম লাইন সকাল থেকেই মাথায় ঘুরছে- ‘ল্যাম্বরগিনি চালাই জানে ও’। গানটি শুনতে ভালো আবার দেখতেও ভালো কারণ গানের মধ্যে ল্যাম্বরগিনি গাড়িটি কয়েকবার দেখানো হয়। যারা গাড়িপ্রেমী আছেন তাদের তো অবশ্যই ল্যাম্বরগিনি ও ফেরারির সম্পর্কে একটু আধটু ধারণা আছে। এঞ্জো ফেরারি ,একবার ফেরারি গাড়ির ডিজাইনার গাড়ির কিছু সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য ফেরোশিও ল্যাম্বরগিনির কাছে যান এবং ফেরোশিওকে মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলেন। তখন থেকেই এই দুটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের সবথেকে ভাল স্পোর্টস কার বানানোর প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে আসছে । ল্যাম্বরগিনি ও ফেরারির এই গাড়িগুলোকে ‘স্লো কার’ বলাটা আসলে গাড়িগুলোর রীতিমত অপমান করা হয়। সে যাইহোক মূল কথায় আসা যাক , আমরা মনে করি যে দামী গাড়ি মানেই হচ্ছে দেখতে হবে জাঁকজমকপূর্ণ এবং চলবে দ্রুত গতিতে। কিন্তু অনেক সময় আমাদের ভুল প্রমানিত করে, এমন কিছু লাক্সারি গাড়ি, যেগুলো অনেক ধীরগতিতে চলে। মাঝে মাঝে মানুষ এই ধীরগতিতে বিরক্তও বোধ করে। ফেরারি এবং ল্যাম্বরগিনি যেগুলো বিশ্বে এত সমাদৃত এত আলোচিত। কিন্তু এই গাড়ির কিছু মডেল তৈরির সময়ে অটোমেকাররা মনে হয় গতির ব্যাপারটা বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলেন। আসুন দেখে নেই এমন কিছু দামী গাড়ি ল্যাম্বরগিনি ও ফেরারির সম্পর্কে; যেগুলো অবিশ্বাস্য ধীরগতিতে চলে !
ল্যাম্বরগিনি মিউরা
প্রতি ঘন্টায় ৬০ মাইল গতি উঠতে মিউরার সময় লাগত ৬.৭ সেকেন্ড। আর যেখানে সাধারণ ল্যাম্বরগিনির প্রতি ঘন্টায় ৬০ মাইল গতি উঠতে সময় লাগে মাত্র ২.৯ সেকেন্ড।
হ্যাঁ, ল্যাম্বরগিনি মিউরা গাড়িটিকে স্লো বলতে হয়তো অনেকের খারাপ লাগবে । কিন্তু খারাপ লাগলেও সত্যি কথা হচ্ছে যে, ল্যাম্বরগিনি মিউরা একটি ধীরগতির গাড়ি। গাড়িটি মনে হয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি সবথেকে সুন্দর এবং সর্বপ্রথম স্পোর্টস কার। গাড়িটি চমৎকারভাবে তৈরি করা হয়েছিল এবং চালকদের দেওয়া র্যাঙ্কিংয়ে সবথেকে বেশী নম্বর পাওয়া গাড়ি। গাড়ির প্রথম ইঞ্জিন ছিল ৩৪৫ হর্সপাওয়ার সম্পন্ন আর এরপর তৈরি অন্য মডেলগুলো ছিল আরো বেশী আপগ্রেটেড। গাড়িটি আরো বেশী জনপ্রিয় হয়েছিল ‘দি ইটালিয়ান জব’ মুভিটিতে দেখানোর জন্য।
ফেরারি ১৬৬ ইন্টার কুপ ১৯৫০
প্রতি ঘণ্টায় ৬০ মাইল গতি তুলতে ইন্টার কুপের সময় লাগত ১০.৪ সেকেন্ড যেখানে সাধারণ ফেরারির ঘণ্টা প্রতি সময় লাগে মাত্র ২.৪ সেকেন্ড।
কাজেই বুঝতেই পারছেন ইন্টার কুপ গাড়িটি কত ধীরগতির। ১৯৫০ সালে বানানো গাড়িটিকে যদি আমরা ২০২০ সালে বসে বিচার করতে যাই তাহলে আসলে ব্যাপারটি কতটুকু সঠিক হবে সেটাও চিন্তার বিষয় ! সে যাই হোক, গাড়িটি ছিল ফেরারি কোম্পানির তৈরি রাস্তায় চলা প্রথম গাড়ি। গাড়ির ছিল চমৎকার ডিজাইন এবং ভি-১২ ইঞ্জিনের সংমিশ্রণে তৈরি। শুধুমাত্র ২০ টি গাড়ি বাজারে ছাড়া হয়েছিল । গাড়িটি দেখতে সুন্দর হলেও গাড়ির মিনিট প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতি ছিল ৯৩ মাইল । সবকিছু মিলিয়ে মানুষের মনে দাগ কাটতে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় গাড়িটি।
ল্যাম্বরগিনি ৩৫০ জিটিও ১৯৬৫
প্রতি ঘন্টায় ৬০ মাইল গতি উঠতে জিটিওতে সময় লাগত ৬.৮ সেকেন্ড। আর যেখানে সাধারণ ল্যাম্বরগিনির প্রতি ঘন্টায় ৬০ মাইল গতি উঠতে সময় লাগে মাত্র ২.৯ সেকেন্ড। গাড়িটির সবকিছু মিলিয়ে দেখতে ছিল অসাধারণ। একটি অকশনে গাড়ির মূল্য উঠেছিল ছয় ডিজিটে । শুধুমাত্র দেখতে সুন্দর হওয়ার কারনে গাড়িগুলো এত দামী ছিল, অবিশ্বাস্য !
ফেরারি ৪০০ আই
প্রতি ঘণ্টায় আই মডেলের গাড়িগুলোর ৬০ তুলতে সময় লাগত ৭.৭ সেকেন্ড। যেখানে সাধারণ ফেরারির সময় লাগে মাত্র ২.৪ সেকেন্ড। গাড়ির সর্বোচ্চ গতি মিনিট প্রতি ঘণ্টা ছিল মাত্র ১৪৯। এবং সাধারণ ফেরারির সর্বোচ্চ গতি মিনিট প্রতি ৩৪৯ । গুগোলে সার্চ দিলে দেখতে পাবেন এই গাড়ির দাম ছিল স্মার্ট কারের কাছাকাছি। গাড়ির নকশা অতটা সুন্দর ছিল না। মোট কথা গাড়ির পারফর্মেন্স অতটা ভালো ছিলনা যতটা বড় গাড়িটি দেখতে ছিল !
ল্যাম্বরগিনি এসপাডা
প্রতি ঘন্টায় ৬০ মাইল গতি উঠতে এসপাডার সময় লাগত ৬.৫ সেকেন্ড। আর যেখানে সাধারণ ল্যাম্বরগিনির প্রতি ঘন্টায় ৬০ মাইল গতি উঠতে সময় লাগে মাত্র ২.৯ সেকেন্ড। গাড়ি তৈরির সময়ে গাড়ির মডেল নিয়ে কিছু ঝামেলা থাকা সত্ত্বেও ১৯৭০ সালে এসপাডা ছিল একটি অন্যতম ভাল মানের গাড়ি ।এবং এসপাডা মানুষের কাছে জনপ্রিয়ও হয়েছিল অনেক বেশী । মূলত গাড়িটি টু-ডোর স্পোর্টস কার হিসেবেই জনপ্রিয় ছিল। গাড়ির বডি ছিল অনেকটা সেডান গাড়িগুলোর মত।দুঃখজনক ব্যাপার হলো, গাড়ির ইঞ্জিন ৩-৯ লিটার এবং ভি-১২, ৩২০ হর্সপাওয়ার হওয়া সত্ত্বেও গাড়িটিকে আমরা স্লো কার হিসেবেই ধরছি।
ফেরারি ৩৪৮
১৯৯১ সালের গাড়ি ফেরারি ৩৪৮। গাড়ির চালকেরা গাড়িটিকে জিএমসি সাইক্লোনের সাথে তুলনা করেছেন। প্রতি ঘণ্টায় ৬০ মাইল গতি তুলতে ফেরারি ৩৪৮ গাড়িটির সময় লাগত প্রায় ৬ সেকেন্ড। আর যেখানে মাত্র ২.৪ সেকেন্ডেই সাধারণ ফেরারি একই গতি উঠতে । যদি গাড়িটিকে কোন চালক ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে হয়তো আরো একটু ভালো পারফর্মেন্স পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সব মিলিয়ে গাড়ির কার্যক্ষমতা একটি পিক আপ ট্রাকের থেকেও খারাপ।
ল্যাম্বরগিনি কাউচান্ট
৮০’র দশকের হলেও গাড়িটি তৈরি হয় প্রায় ১৯৭৩ সালে। গাড়িটি ‘সো ব্যাড ইটস গ্রেট’ হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। এবং গাড়িটি ইউনিক কার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। গাড়ির ইঞ্জিন ছিল ৪.০ লিটার , ৩৭৫ হর্সপাওয়ার এবং ভি-১২। আর ইঞ্জিনের এই ব্যাপারগুলো গাড়ির গতির সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল । প্রতি ঘণ্টায় ৬০ মাইল উঠতে একটি সাধারণ ল্যাম্বরগিনি গাড়িতে ২.৯ সেকেন্ডে সময় লাগত আর সেখানে প্রায় ৭ সেকেন্ড সময় লাগে কাউচান্টের একই গতি তুলতে ।
ফেরারি দিনো জিটি ৪
১৯৭৩ সালে প্যারিসের একটি গাড়ি সম্পর্কিত শোতে দেখানো হয়েছিল গাড়িটি। ক্লাসিক গাড়ি হওয়া সত্ত্বেও দিনো গাড়ির ইঞ্জিন ছিলো ভি ৮ । শুধুমাত্র স্লো কার হওয়াতে ৭০’র দশকে গাড়িগুলো তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। প্রতি ঘণ্টায় ৬০ মাইল উঠতে সাধারণ ফেরারির সময় লাগে ২.৪ সেখানে দিনোর সময় লাগত প্রায় ৮ সেকেন্ড। কাজেই বোঝা যাচ্ছে গাড়িটি কতটুকু ধীরগতির।
গতি আর সৌন্দর্যের যুগলবন্দী একটি গাড়িকে অসাধারণ গাড়ি হিসেবে গড়ে তোলে। আর যদি এর ভেতর গাড়ির সবথেকে বড় গুণ গতি না থাকে তাহলে গাড়িটি স্বভাবত ব্যর্থ প্রমানিত হয়। ল্যাম্বরগিনি ও ফেরারির গাড়িগুলো যথেষ্ট দামী এবং ব্র্যান্ডের গাড়ি। তো এই দুটো গাড়িকে স্লো বলা ধৃষ্টতা । তবু যখন গতির দিক বিবেচনা করা হয় তখন অবশ্যই এই দুই সফল গাড়ির তালিকায় ল্যাম্বরগিনি ও ফেরারির এই ব্যর্থ মডেলগুলোর নাম আসবেই।