প্রহরী

পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

গাড়িতে ব্রেক করার সময় স্টিয়ারিং হুইল কেন কাঁপে ?

কখনো কি এমন হয়েছে যে আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন খুব সহজ ভাবেই  কিন্তু যখনই ব্রেক করতে যাচ্ছেন  তখনি স্টিয়ারিং হুইলটি অদ্ভুতভাবে কাঁপছে। আর আপনি হয়তো ভাবেন যে কোন ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে গাড়িটি চালাচ্ছেন বলে এমনটা হচ্ছে। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি সমস্যা তো আপনার গাড়িতেও থাকতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন গাড়িতে ব্রেকের সাথে সাথেই এমন অদ্ভুত কম্পন শুরু হয়। এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই অনেক ভাবে দেন । মোটরের বাসটেড মাউনট, ব্যান্ট রিম, খারাপ সিভি জয়েন্ট, ঢিলা লগ স্ক্র ইত্যাদি কারণ দেখান অনেকেই। কিন্তু এর মধ্যে কোন কারণই ব্রেকের সময় হওয়া কম্পনের জন্য দায়ী নয়।

স্টিয়ারিং হুইল ।

এই কম্পন হতে পারে শুধু মাত্র রটোরের সমস্যার কারনে। আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা রটোর কি ? রটোর হচ্ছে একটি চাকতি যা গাড়ি থামানোর সময় ব্রেক প্যাডগুলোকে আটকায় । অন্য কথায় গাড়ি থামানোর জন্য এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ পার্টস । কেন রটোর ব্রেক করার সময় কম্পনের সৃষ্টি করে আর রটোর কীভাবে কাজ করে আমরা সংক্ষেপে জানব।  প্রথমেই জানব রটোর কি ?

রটোর 

রটোর ধাতুর তৈরি আর দৈর্ঘ্য নির্ভর করে সাধারণত গাড়ির মডেলের উপর । যখন আপনি ব্রেক করেন তখন রটোর  তীব্র তাপ প্রশমিত করে ও নিচের দিকে ছড়িয়ে দেয়, যাতে মসৃণ ভাবে গাড়িটি ব্রেক করে। তবে সময়ের সাথে সাথে রটোর গুলো নিচের দিকে ঝুঁকে যায় আর তখনই রটোরের ধাতুগুলো পাতলা হয়ে যায় অথবা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে যায়। গাড়ি উচ্চ গতিতে চলার সময় যখন ব্রেক প্যাড  রটোরটিকে আকড়ে ধরে তখন ত্রুটিস্বরূপ ব্রেক প্যডেলে কম্পনের সৃষ্টি হয় এবং পড়ে যা স্টিয়ারিং হুইলে স্থানান্তরিত হয়।

একটি রটোর ।

ব্রেক করার সময় স্টিয়ারিং হুইলে কম্পনের বিষয়টি জানার আগে নির্ধারণ করতে হবে কম্পনের আসল কারণ। আগেই বলা হয়েছে যে , এই ধরনের কম্পন বেশিরভাগই রটোরের কারনে হয়ে থাকে। অন্য কম্পন গুলো শুধু ব্রেকের সময় না অন্য সময়ও হয়ে থাকে। সেটা মাথায় রেখেই আমরা জানব রটোরের সমস্যাগুলো ও কীভাবে তার সমাধান করা যায়।

শক্ত রটোর 

যদি রটোরটি খুব শক্ত হয় তাহলে ব্রেকের সময় স্টিয়ারিং এর কম্পন হতে পারে। এমতাবস্থায় আপনি একজন মেকানিকের সাহায্যে নিতে পারেন যে জানে কীভাবে সঠিক প্যাটার্নে রটোর খুব বেশী শক্ত না করে জুড়তে হয়। এটি খুবই সাধারণ একটি বিষয় যা প্রত্যেক মেকানিকেরই জানার কথা। মাঝে মাঝে তাদের কাছে এমন কিছু টর্ক স্টিক দেখতে পাওয়া যায় যা দিয়ে তারা সিলের জোড়া দেওয়ার ব্যাপারটি পরিমাপ করতে পারে। তবে জেনে রাখা ভাল যে প্রত্যেকটি গাড়ির নিজস্ব  বিশেষ টর্ক থাকে যা সাধারণত রটোর নিজেই  নিজেরটা প্রিন্ট করে।

শক্ত রটোর ।

সমস্যা সঠিকভাবে জানতে মেকানিকের উচিৎ রটোরগুলো  খুলে একটি মাইক্রোমিটার দিয়ে পরিমাপ করা । খারাপ দাগ বা যে যে  জায়গাগুলো নষ্ট সেগুলো মেশিন দিয়ে  মোটামোটি ঠিক করা যায়। এই পদ্ধতিকে বলে ‘রটোর টারনিং’ । এই পদ্ধতিতে পাতলা ধাতু দিয়ে রটোরটিকে ঘষা  হয় যতক্ষন না এর  উপরের জায়গাটা মসৃণ হয়। যদিও এই পদ্ধতিটিকে  খুব একটা ভাল পদ্ধতি না।

অবশ্য ধাতু কম ব্যবহার করলে রটোর পুনরায় নষ্ট হয় না। বেশীরভাগ সময় আপনার রটোর গুলোকে পুন্রুদ্ধার করা সম্ভব হয়না এগুলোকে পাল্টাতে হয়।

আপনার গাড়িটি যদি রটোর সম্পর্কিত সমস্যায় ভোগে তখন আপনি হয়তো বোঝেন না যে রটোরটি পাল্টানো কতটা জরুরী।

আপনি হয়তো এই ব্রেকের সময়কার কম্পন কয়েকদিন এড়াতে পারেন, হয়তো বা করেক মাস কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করা যায় ততই ভালো। মেকানিক দেখানো বা পার্টস  পালটানো যত দ্রুত সম্ভব করে ফেলা ভাল তা নাহলে কখন বড়সড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যাবে আপনি হয়তো টেরও পাবেন না।

নরম আর লুজ রটোর 

অনেক সময় শুধু শক্ত স্ক্র না ঢিলা স্ক্র থাকলেও এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে ,আর আপনি খুব সহজেই তা ঠিক করতে পারবেন। আমরা আগেই বলেছি যে ব্রেকের সাথে কম্পন তখনই অনুভুত হয় যখন রটোরটি নষ্ট বা সমসসাযুক্ত হয়। আর এসব সমস্যা এড়ানো মানে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনা। দীর্ঘ সময় যদি এসব সমস্যা হতেই থাকে তাহলে ক্যালিপার সহ বোল্ট, ব্রেক প্যাড সহ ব্রেকের অন্যান্য সিস্টেমের ক্ষতিরও সম্ভাবনা থাকে। যা ঠিক করতে অনেক বেশী খরচ পড়ে যেতে পারে।

আরেকটি কারণ ব্রেকের সময়ের কম্পনের রটোরের স্থায়িত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়া। আর এসব সমস্যা নিয়ে গাড়ি চালানো বিপদজনক।

এক্সেল থেকে খুলে ফেলা রটোর ।

‘সিমি’ 

কিছু মানুষ ব্রেকের সময় স্টিয়ারিঙের কম্পন তেমন গুরুত্ব দেন না কিন্তু এই কম্পনকে ‘সিমি’ বলা হয়। আর এই ‘সিমি’ গাড়ির অ্যান্টি লক  ব্রেকিং সিস্টেমেও ক্ষতি করে এবং প্যানিক স্টপ করার সময় গাড়ির বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ব্রেকের সাথে স্টিয়ারিং হুইলের কানেকশনের কারণে সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে কখনোই ব্রেকের রটোরগুলো যেন অতিরিক্ত শক্ত বা লুজ না থাকে। সবসময় গাড়ির পার্টস গুলো ভাল সার্ভিস সেন্টার থেকে চেক করিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজনে পার্টস পাল্টাতে হবে। এবং  গাড়ির নিরাপত্তায় গাড়িতে প্রহরী ডিভাইসটি ইন্সটল করুন আর যত্নে  রাখুন  আপনার শখের গাড়িটি ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top