প্রতিটি যানবাহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য বিষয় হল ব্রেকিং সিস্টেম।গাড়ির ব্রেক একটি গাড়িকে অনেক ধরনের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে। গাড়িকে সুন্দর ভাবে সঠিক জায়গায় পার্ক করতেও সাহায্য করে। তাই গাড়িতে সঠিক ব্রেক নির্ধারণ করাটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার। আর গাড়িতে কি ধরনের ব্রেক কি কাজ করে এবং কোন গাড়িতে কোন ব্রেক বেশী কার্যকর তা নিয়ে আজ এই লেখাটি।
নিউটনের বল প্রয়োগের সূত্র অনুযায়ী বলা হয় , “ কোন জড় বস্তুকে বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করলে বস্তু তার নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির থাকবে” । আর আইজাক নিউটনের এই সূত্র মোটরগাড়ির উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। শুধু ব্রেকের শক্তি উৎসই না ব্রেকের কাজ ও কীভাবে উচ্চ গতি সম্পন্ন যানকে সীমাবদ্ধ গতিতে বা কমিয়ে যানটিকে থামানো যায় । নিউটনের এই সুত্রের ধারনাই ব্রেকের বিবর্তন করে । যানবাহনের ব্রেকিং সিস্টেম এবং বিভিন্নতা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্রেক নির্ধারণ করারও একটি সুযোগ দিয়েছে।
যানবাহনে ব্রেকিং সিস্টেমে ব্রেকের ধরণ
প্রাচীন ঠেলাগাড়ি থেকে শুরু করে বর্তমানে সব গাড়িতে যে ব্রেকিং সিস্টেমের ব্যবহার হয় সব ব্রেকিং সিস্টেমই ক্রমে বিবর্তিত হয়ে আধুনিক ও উন্নত হয়েছে। ধরণ অনুসারে ব্রেকিং সিস্টেম কতগুলো কয়টি ভাগে ভাগ করা হয় আসুন তা দেখে নেই।
-
শক্তির উৎসের ভিত্তিতে ব্রেকের ধরন
চালক প্যাডেলের উপর বল প্রয়োগ করে গাড়ির গতি বাড়ায় বা কমায় অথবা পুরো পুরি গাড়ি থামায় সে ব্রেকিং সিস্টেমগুলো ৬ ধরনের-
১. মেকানিক্যাল ব্রেকিং সিস্টেম।
এধরনের ব্রেকিং সিস্টেমে ব্রেক চালক প্যাডেলের দিয়ে চূড়ান্ত ড্রাম অথবা ডিস্ক রটোর প্রয়োগ করে বিভিন্ন মেকানিক সংযোগ যেমন- সিলিন্ড্রিক্যাল রড, ফালক্রাম , স্প্রিংস ইত্যাদর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
সাধারণত মেকানিক্যাল ব্রেক পুরনো ধরনের মোটরগাড়িগুলোতে ব্যবহৃত হত কিন্ত কার্যকারিতা কম হওয়ায় এর ব্যবহার কমে গিয়েছে।
২। হাইড্রোলিক ব্রেকিং সিস্টেম
এই ব্রেকিং সিস্টেমে চালক প্যাডেলের মাধ্যমে বল প্রয়োগ করে, কিন্তু তার আগে ব্রেক প্যাডেলটিকে মাস্টার সিলিন্ডারের মাধ্যমে হাইড্রোলিক প্রেশারে রূপান্তর করা হয়। তারপর এই মাস্টার সিলিন্ডারের থেকে যে হাইড্রোলিক প্রেশার আসে তাকে চূড়ান্ত ব্রেক ড্রাম অথবা ব্রেক লাইন্সের মাধ্যমে ডিস্ক রটোরে রূপান্তর করা হয়।
- মেকানিক্যাল সংযোগ থাকা সত্ত্বেও হাইড্রোলিক ব্রেকে ব্রেক ফ্লুয়িড ব্যবহার করা হয়। যানবাহনটির গতি কমানো বা থামানোর জন্য ব্রেক প্যাডেলের বলকে হাইড্রোলিক ব্রেকে হস্তান্তর করা হয়।
- ব্রেকের উচ্চ কর্মক্ষমতা ও উচ্চ বল সম্পন্ন হওয়ায় হাইড্রোলিক ব্রেক বর্তমানে সব ধরনের গাড়ি ও বাইকের ব্রেকিং সিস্টেমে সংযুক্ত থাকে।
৩। এয়ার ব্রেকিং সিস্টেম
এ ধরনের ব্রেকিং সিস্টেমে কম্প্রেসর ও ভাল্ভের মাধ্যমে আশপাশ থেকে বাতাস নিয়ে ব্রেকের প্যাডেল বলকে ব্রেক প্যাডেলের মাধ্যমে চূড়ান্ত ড্রাম অথবা ডিস্ক রটোরে প্রেরণ করে।
- এয়ার ব্রেক্ মূলত ভারী যানবাহনে ব্যবহৃত হয় যেমন বাস বা ট্রাক। কারণ হাইড্রোলিক ব্রেকগুলো বেশী দূরত্বে ব্রেকের চাপ প্রয়গে ব্যর্থ হয়। তাছাড়া এয়ার ব্রেকগুলো হাইড্রোলিক ব্রেক থেকে বেশী চাপ প্রয়োগ করতে সক্ষম যা একটি ভারী যানে জারুরী বিষয়।
- এয়ার ব্রেকে সাধারণত ব্রেক ফেইলিওর হবার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। এই ব্রেকগুলো রিজার্ভ এয়ার ট্যাংকের সাথে সংযুক্ত থাকে আর যখন ব্রেক লাইনে লিকেজের কারনে যে ব্রেক ফেল হয় তখন ব্রেক ফেইল হওয়া থেকে যানবাহনকে রক্ষা করে।
- বর্তমানে হাই এন্ড গাড়িগুলো অল্প দক্ষতা ও কম কর্মদক্ষতার কারনে এয়ার ব্রেক সিস্টেমটি ব্যবহার করে।
৪। ভ্যাকুয়াম ব্রেকিং সিস্টেম
এই ব্রেকিং সিস্টেমটি প্রচলিত বা সব সময় ব্যবহৃত একটি সিস্টেম যার মাধ্যমে ব্রেক লাইনের ভেতরে যে ফাঁপা জায়গা থাকে তার মাধ্যমে ব্রেক প্যাডকে নড়ানো হয় এবং এই নড়ানোর মাধ্যমেই যানবাহনের গতি কমানো বা পুরোপুরি বন্ধ করা হয়।
- এক্সহাস্টার (বাতাস টেনে নেয়ার যন্ত্র), মেইন সিলিন্ডার, ব্রেক লাইন, ডিস্ক রটোরের ভাল্ভ অথবা ড্রাম ইত্যাদি সবগুলো উপাদান একত্রে ভ্যকুয়াম ব্রেকিং সিস্টেমটি বানানো হয়।
- ভ্যাকুয়াম ব্রেক একটি পুরানো পদ্ধতি যা আগে ট্রেনে ব্যবহার করা হতো। আর এই ভ্যাকুয়াম ব্রেকের পরিবর্তে এখন এয়ার ব্রেকিং সিস্টেমটি বেশী ব্যবহার হয়।
- যদিও ভ্যাকুয়াম ব্রেকিং সিস্টেমটি এয়ার ব্রেকিং সিস্টেম থেকে অনেক সস্তা হয় কিন্তু নিরাপত্তার দিক থেকে এয়ার ব্রেকিং সিস্টেমটি বেশী কার্যকর।
৫। ম্যাগনেটিক ব্রেকিং সিস্টেম
এ ধরনের ব্রেকিং সিস্টেমে স্থায়ী চৌম্বকের মাধ্যমে যানবাহনকে পুরোপুরি থামানো হয়।
- যখন কোন কপার টিউবের মধ্য দিয়ে চৌম্বক পরিবহণ করা হয় তখন এডি কারেন্ট উৎপন্ন হয়। এবং চৌম্বক ক্ষেত্রে এডি কারেন্ট সৃষ্টি হয় ও ম্যাগনেটিক ব্রেকিং এ এই কারেন্ট সরবরাহ করে।
- এই পদ্ধতিতি সম্পূর্ণ ঘর্ষণহীন একটি পদ্ধতি । যা ব্যবহারের ফলে ব্রেকের কম ক্ষয় অথবা কোন ক্ষয় হয়না।
- এটি এমন একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে কোন বল প্রয়োগ করতে হয় না।
- এই পদ্ধতি যানবাহনে ব্যবহার করলে দ্রুত ব্রেক করা যায় যা অন্য ব্রেকিং সিস্টেমের তুলনায় অনেক বেশী কার্যকর।
৬। ইলেকট্রিক ব্রেকিং সিস্টেম
সাধারণত ইলেকট্রিক যানবাহন গুলোতে এই ব্রেকিং সিস্টেম বেশী ব্যবহার করা হয়। যার শক্তির উৎস হচ্ছে মোটর এবং ব্রেকিং সিস্টেমেও এই মোটর থেকেই শক্তি নেওয়া হয়। এই ব্রেকিং সিস্টেম ৩ ধরনের-
-
প্লাগ ইন ব্রেক
ইলেকট্রিক মটোরে প্লাগ ইন ব্রেক সাজানো থাকে আর যখন ব্রেকিং প্যাডেলে চাপ দেওয়া হয় তখন মোটরের প্রান্তগুলো পাল্টে যায় এবং মোটরের গতিপথ পাল্টে দেয় ওআর এভাবেই প্লাগ ইন ব্রেক হয়।
-
রিজেনেরেটিভ ব্রেক
এটি এক ধরনের ইলেকট্রিক্যাল ব্রেকিং সিস্টেম যা ব্রেক করার সময় যানবাহনের মূল শক্তির উৎস মোটর একটি জেনারেটরে রুপান্তরিত হয়। যখন ব্রেক করা হয় তখন মটোরে পাওয়ার সাপ্লাইটি বন্ধ হয়ে যায় যা চাকার থেকে যে যান্ত্রিক শক্তি নিয়ে মোটরের জন্য ঘূর্ণায়মান শক্তিতে পরিণত হয়।এবং যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
-
ডাইন্যামিক ব্রেক
এই পদ্ধতিতে রিওষ্টেটের মাধ্যমে ব্রেক করা হয় । একটি রিওষ্টেট মোটরের সার্কিটের সাথে সংযুক্ত করা থাকে যা যানবাহনের গতি কমানো বা একেবারে বন্ধের জন্য কাজ করে ।
-
প্রয়োগের ধরনের ভিত্তিতে ব্রেকের ধরণ
প্রয়োগের ধরনের ভিত্তিতে ব্রেক দুই রকম –
১। পা দিয়ে করা ব্রেক বা সার্ভিস ব্রেক
চালক যখন পা দিয়ে ব্রেকের জায়গায় জোড়ে বল প্রয়োগ করে , চালকের মাধ্যমে দেওয়া এই চাপ দ্বিগুণ করে ব্রেকিং ড্রামে পাঠিয়ে দেও হয় মেকানিক্যাল সংযোগের মাধ্যমে অথবা হাইড্রোলিক প্রেশারের মাধ্যমে আর যার ফলে ব্রেক সংঘটিত হয়।
২। হ্যান্ড ব্রেক বা পার্কিং ব্রেক
এ ধরনের ব্রেকগুলো মূলত ইমারজেন্সি ব্রেক হিসেবে পরিচিত। এগুলো মূল সার্ভিস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা থাকে। একটি হাত দিয়ে চালানো যায় এমন লিভারের সাথে যুক্ত থাকে এবং যা ধাতুর তারের মাধ্যমে ব্রেক ড্রাম বা ডিস্ক রটোরের সাথে সংযুক্ত করা থাকে হ্যান্ড ব্রেকগুলো ।
আপনার গাড়ির ধরণ অনুযায়ী ব্রেকিং সিস্টেম নির্ধারণ করুন এবং নিরাপদে থাকুন এবং গাড়ির নিরাপত্তায় ব্যবহার করুন সর্বপ্রথম বাংলাদেশে তৈরি প্রহরী ভেহিকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস।