প্রহরী

01.বৈদ্যুতিক-গাড়ি-কিwhat-is-electric-vehicle(thumbnail).jpg
পড়তে লাগবে: 7 মিনিট

বৈদ্যুতিক গাড়ি কি? জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিদ্যুৎচালিত গাড়ি কতটুকু কার্যকর?

বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। একসময় বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্রয়মূল্য ছিল পাহাড়সম! তবে সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে, যার ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির মূল্য চলে এসেছে ক্রেতার সাধ্যের ভেতর। “Green Initiative” – এ অংশগ্রহণ করতে এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির আরো অনেক সুবিধাদির কথা মাথা রেখে ক্রেতারা বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি ঝুকছেন। তবে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়ার আগেই আমাদের উচিত বৈদ্যুতিক গাড়ির খুটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা। তাই, আজকের লেখায় আমরা জানবো, বৈদ্যুতিক গাড়ি কি এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিদ্যুৎচালিত গাড়ি আসলে কতটুকু কার্যকর, বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রকারভেদ এবং এর বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি (Electric vehicle) কি?

বৈদ্যুতিক গাড়ি (EV) হচ্ছে এমন সকল যানবাহন যেগুলো ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিন (Internal-Combustion Engine) -এর সাহায্য বিভিন্ন প্রকার গ্যাস ও তেল দাহ করার মাধ্যমে চালিত হয় না, বরং বৈদ্যুতিক মোটরের ব্যবহারের মাধ্যমে চালিত হয়ে থাকে। বৈদ্যুতিক গাড়িতেগুলোতে ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিনের পরিবর্তে একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি স্থাপিত হয়ে থাকে, যার মাধ্যমে পুরো গাড়িটি সম্পূর্ণ অথবা আংশিক শক্তির সরবরাহ পেয়ে থাকে। এই ধরণের গাড়িগুলোতে কোনো ধরণের জ্বালানী শক্তি ব্যবহৃত হয় না, তাই এগুলোর কার্বন নির্গমন একেবারে নেই বললেই চলে। যেহেতু জ্বালানী শক্তিচালিত যানবাহনের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বেড়েই চলেছে, তাই অনেকেই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে বৈদ্যুতিক গাড়িকে একটি কার্যকরী সমাধান হিসেবে মনে করছেন।

বৈদ্যুতিক গাড়ি কত প্রকার?

বৈদ্যুতিক গাড়ি (EV) সাধারণত অনেক বড় একটি টার্ম। এই ক্যাটাগরির সকল গাড়িই কিন্তু একরকম নয়। অর্থাৎ, “বৈদ্যুতিক গাড়ি” ক্যাটাগরির সকল যানবাহনই কিন্তু শতভাগ বিদ্যুৎ নির্ভর নয়। এদের মাঝে কিছু পরিমাণ যানবাহন পুরোপুরিভাবে বিদ্যুৎ-এর উপর নির্ভরশীল আবার কিছু যানবাহন আংশিক বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চালিত হয়। যতোটুকু বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা ব্যাটারি থেকে কিভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে সে বিষয়েও রয়েছে পার্থক্য। এখন আমরা বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রকারভেদ সম্পর্কে জানবো।

ব্যাটারি চালিত বৈদ্যুতিক গাড়ি বা BEV

সাধারণত “বৈদ্যুতিক গাড়ি” শব্দটি শুনলে আমাদের মস্তিষ্কে যেমন ধারণা জন্মে, এটি ঠিক তাই। এই ধরণের গাড়িগুলো সম্পূর্ণভাবে বৈদ্যুতিক শক্তির উপর নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ শক্তি ব্যতীত অন্য কোনো ধরণের জ্বালানী শক্তি এখানে ব্যবহৃত হয় না। তাই গাড়িতে ব্যাটারি ব্যতীত কোনো ইন্টারনাল কম্বশচন ইঞ্জিন থাকে না। পরিচালনা থেকে শুরু করে সাধারণ অভ্যন্তরীন কাজ পর্যন্ত সকল ধরণের কাজে ব্যাটারি থেকে শক্তি সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

হাইব্রিড বৈদ্যুতিক গাড়ি বা HEV

এই গাড়িগুলোতে ইন্টারনাল কম্বাশচন ইঞ্জিন এবং বৈদ্যুতিক ব্যাটারি দুটোই উপস্থিত থাকে। অর্থাৎ, জ্বালানী শক্তি এবং বিদ্যুৎ শক্তি দুটোই ব্যবহার করে এই গাড়িগুলো চালিত হয়। হাইব্রিড গাড়িগুলোতে এমন একটি বিশেষ ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যার মাধ্যমে গাড়ি ব্রেক করার সময় উৎপাদিত শক্তি বৈদ্যুতিক শক্তিতে রুপান্তর করে ব্যাটারিতে জমানো হয়। জ্বালানী শক্তির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক শক্তি’ও যেহেতু এখানে ব্যবহৃত হচ্ছে, তাই জ্বালানীর উপর নির্ভরশীলতা, খরচ ও কার্বন নিঃসরণ অনেকাংশেই কমে যায়।

প্লাগ-ইন হাইব্রিড বৈদ্যুতিক গাড়ি বা PHEV

এটি অনেকটা উপরে বর্ণিত হাইব্রিড বৈদ্যুতিক গাড়ির মতোই। তবে পার্থক্য হচ্ছে এই গাড়িগুলোতে বিশেষ ব্রেকিং সিস্টেম থাকতেও পারে আবার না’ও থাকতে পারে। তাই ব্যাটারি রিচার্জের জন্য এগুলোকে কোনো পাওয়ার স্টেশনের সাথে প্লাগ-ইন করতে হয়।

04.প্লাগ-ইন-হাইব্রিড-বৈদ্যুতিক-গাড়ি-বা-PHEV-electric-car

মাইল্ড-হাইব্রিড বৈদ্যুতিক গাড়ি বা MHEV

এই ধরণের গাড়িগুলোতে ব্যাটারি শক্তি গাড়ি পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত হয় না, বরং ব্যাটারির মূল উদ্দেশ্য থাকে ইন্টারনাল কম্বাশচন ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি। যেহেতু ব্যাটারির উপস্থিতি আছে, তবে গাড়ি বিদ্যুৎ শক্তি দিয়ে চলছে না তাই একে “মাইল্ড-হাইব্রিড বৈদ্যুতিক গাড়ি” নাম দেয়া হয়েছে। গাড়ি পরিচালনার কাজে বৈদ্যুতিক শক্তি কোনো কাজে আসে না এখানে, বরং ছোট্ট সাইজের একটি ব্যাটারি এবং বিশেষ ব্রেকিং সিস্টেমের মাধ্যমে সাধারণ ইঞ্জিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলা হয় কয়েকগুণ।

02.মাইল্ড-হাইব্রিড-বৈদ্যুতিক-গাড়ি-বা-MHEV-electric-car

ফুয়েল-সেল বৈদ্যুতিক গাড়ি বা FCEV

এই ধরণের গাড়িগুলোতে হাইড্রোজেন সেল-এর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন করে তা ব্যাটারিতে জমা করা হয় এবং তারপর গাড়ি চালানোর কাজে ব্যাটারি থেকে বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ করা হয়। হাইড্রোজেন ফুয়েল স্টেশন যেহেতু এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি করা হয়নি, তাই এই ক্যাটাগরির গাড়ি খুব কম পরিমাণেই তৈরি করা হয়েছে।

03.ফুয়েল-সেল-বৈদ্যুতিক-গাড়ি-বা-FCEV-electric-car

বৈদ্যুতিক গাড়ির সুবিধা এবং অসুবিধা

বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রয় করলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ণে আপনার অবদান যেমন কমে যাবে, ঠিক অন্যদিকে আপনাকে গতানুগতিক গাড়ি বাদ দিয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রয় করার জন্য কিছু বেশি পরিমাণ টাকা খরচ করতে হবে। তাই, অন্য যেকোনো বিষয়ের মতো বৈদ্যুতিক গাড়ির’ও কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রয় করার পূর্বে এগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া প্রয়োজন।

বৈদ্যুতিক গাড়ির সুবিধাসমূহ

বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রয় করার সবচেয়ে বড় সুবিধাটি হচ্ছে যে আপনাকে জ্বালানী খরচ নিয়ে খুবই কম ভাবতে হবে। তবে এটি ছাড়াও বৈদ্যুতিক গাড়ির আরো অনেক সুবিধা রয়েছে।

গ্যাস নিয়ে ভাবতে হবে না।

বৈদ্যুতিক গাড়ি যেহেতু সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ শক্তি দ্বারা চালিত হয় তাই আপনাকে আর গাড়িতে গ্যাস পূরণ করা নিয়ে ভাবতে হবে না। আবার বৈশ্বিকভাবে জ্বালানী শক্তির মূল্য যেহেতু ক্রমাগত বেড়েই চলেছে, তাই গ্যাসের পেছনে খরচ কমে যাওয়ায় আপনার মাসিক বাজেট সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। গ্যাসচালিত গাড়ির তুলনায় ৩ ভাগের ১ ভাগ অর্থ খরচ করে আপনি আপনার ব্যাটারি চালিত বৈদ্যুতিক গাড়িটি রিচার্জ করে ফেলতে পারবেন।

সুবিধাজনক।

বৈদ্যুতিক গাড়ি রিচার্জ করতে চাইলে আপনাকে গাড়ি নিয়ে পাওয়ার স্টেশনে যেতে হবে না। সাধারণ বাসায় থাকা সকেট ব্যবহার করেই আপনি গাড়িটি রিচার্জ করে নিতে পারবেন।

সাশ্রয়ী।

আগেই বলেছি যে গ্যাসচালিত গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির জ্বালানী খরচ অনেক কম হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি যেহেতু সব দেশেই এখন বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রয় করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে, তাই বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রয় করলে আপনি কোম্পানী এবং সরকার উভয়ের নিকট থেকেই প্রণোদনা প্যাকেজ পেতে পারেন।

কার্বন নিঃসরণ নেই।

বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোতে যেহেতু তেল বা গ্যাস ব্যবহার করা হয় না, তাই এগুলোর কার্বন ফুটপ্রিন্ট একেবারে নেই বললেই চলে। বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রয় করার মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ রোধে আপনি ভূমিকা পালন করতে পারবেন।

জনপ্রিয়তা।

সময়ের সাথে সাথে বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, মার্কেট যতো বড় হবে, মার্কেটে আরো বেশি কোম্পানীর প্রবেশ ঘটবে এবং প্রতিযোগীতা বাড়বে। এতে করে ক্রেতাদের হাতে অনেক বেশি পরিমাণে অপশন থাকবে এবং গাড়ির মূল্য’ও কমে যাবে।

নিরাপত্তা।

বৈদ্যুতিক গাড়ির সেন্টার অব গ্র্যাভিটি সাধারণ গাড়ির তুলনায় কম হওয়ায় এটি অনেক সহজে হ্যান্ডেল করা যায়। আবার এটিতে যেহেতু কোনো ইন্টারনাল কম্বাশচন ইঞ্জিন নেই, তাই কোনো দূর্ঘটনার ফলে গাড়ি ব্লাস্ট হওয়ার সম্ভাবনাও তুলনামূলক কম।

মেইনটেনেন্স খরচ কম।

সাধারণ ইঞ্জিনচালিত গাড়িগুলোর ইঞ্জিন এবং তেল সরবরাহের পথ পরিষ্কার রাখা নিয়ে গ্রাহকদের অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বৈদ্যুতিক গাড়িতে এমন কোনো ঝামেলা না থাকায় মেইনটেনেন্স খরচ অনেক কমে যায়।

শব্দদূষণ হ্রাস পায়।

শহুরে জীবনের একটি বড় অসুবিধা হচ্ছে শব্দদূষণ। বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকাংশেই সমাধান করা সম্ভব। বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোতে কোনো ধরণের ইঞ্জিন না থাকায় এগুলো রাস্তায় চলাচলের সময় একেবারেই শব্দ তৈরি হয় না বললেই চলে।

বৈদ্যুতিক গাড়ির অসুবিধাসমূহ

বৈদ্যুতিক গাড়ির বেশ কিছু সুবিধা থাকলেও, এখন পর্যন্ত বেশ কিছু অসুবিধা’ও রয়েছে। সেগুলোকে একেবারে উপেক্ষা করে বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রয় করার সিদ্ধান্ত মোটেও ভালো হবে না।

পাওয়ার স্টেশনের স্বল্পতা।

বৈদ্যুতিক গাড়ি এখনো যেহেতু ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে রয়েছে তাই সব জায়গায় পাওয়ার স্টেশন এখনো গড়ে উঠেনি। সাধারণত অনেক উন্নত শহরগুলোতে পাওয়ার স্টেশন দেখা যায়। তবে আপনি যদি লং ড্রাইভের উদ্দেশ্যে শহুরে পরিবেশ পার হয়ে দূ্রে কোথাও চলে আসেন তবে সেখানে পাওয়ার স্টেশন পাবেন না তার সম্ভাবনাই বেশি।

প্রাথমিক ব্যয় অনেক বেশি।

বৈদ্যুতিক গাড়িতে জ্বালানী ব্যয় হিসেবে খরচ অনেক কম লাগলেও, গাড়িটি কিনতেই অনেক বেশি পরিমাণ টাকা খরচ করতে হবে। বৈদ্যুতিক গাড়ি যেহেতু এখনো ম্যাস-লেভেলে তৈরি করা হচ্ছে না, তাই উৎপাদন খরচ ও বিক্রয়মূল্য এখনো অনেক বেশি। যা বেশিরভাগ ক্রেতার জন্যই একটি বড় সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

বিদ্যুৎ খরচ।

সবধরণের বৈদ্যুতিক গাড়িতে কিন্তু সমপরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় না। কোনোটিতে বিদ্যুৎ অনেক কম পরিমাণে প্রয়োজন হয় আবার কোনোটিতে অনেক বেশি। তাই বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রয় করার পূর্বেই ভালোভাবে রিসার্চ করে নেয়া প্রয়োজন। নইলে বিদ্যুৎ খরচ অনেক বেড়ে যেতে পারে।

রেঞ্জ এবং গতি উভয়ই কম।

বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো এখনো সাধারণ ইঞ্জিনচালিত গাড়ির থেকে রেঞ্জ এবং গতি উভয় ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে। তবে ব্যাটারির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি হলে এই সমস্যাটি সময়ের সাথে সাথে সমাধান হয়ে যাবে।

রিচার্জ করতে অনেক বেশি সময় লাগে।

সাধারণ ইঞ্জিনচালিত গাড়ি অনেক কম সময়ে রিফিল করে নেয়া সম্ভব। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ি রিচার্জ করতে এখনো কমপক্ষে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা সময় লেগে যায়।

সাধারণত ২ সিটের হয়ে থাকে।

বাজারে থাকা বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক গাড়ি ২ সিটের হয়ে থাকে। তাই ফ্যামিলি নিয়ে চলাচলের জন্য এগুলো পুরোপুরি অনুপযুক্ত।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈদ্যুতিক গাড়ি কতটুকু কার্যকর?

বৈশ্বিক বাজারে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির পরিমাণ প্রতিবছর বেড়ে চলেছে। এতো বেশি পরিমাণ বিক্রয় হচ্ছে কারণ, মানুষ বিশ্বাস করছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিদ্যুৎচালিত গাড়ি অনেকাংশেই কার্যকর। এছাড়া’ও মানুষকে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ইনিশিয়েটিভ গ্রহণ করা হচ্ছে কোম্পানী এবং বিভিন্ন দেশের সরকারদের দ্বারা। তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিদ্যুৎচালিত গাড়ি কি আসলেই কার্যকর?

উত্তরটি হচ্ছে, “হ্যা” তবে একটু কমপ্লিকেটেড। বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোতে যেহেতু কোনো ধরণের জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহৃত হয় না, তাই এগুলোর কার্বন ফুটপ্রিন্ট একেবারে নেই বলা যায়। বৈশ্বিক উষ্ণায়ণের অনেক বড় একটি কারণ এই বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার করার মাধ্যমেই সমাধান করে ফেলা সম্ভব। ক্যামব্রিজের রিসার্চাররা জানিয়েছেন যে, বিশ্বের ৯৫% ক্ষেত্রেই বৈদ্যুতিক গাড়ি সাধারণ গ্যাসোলিনচালিত যানবাহনের তুলনায় ভালো এবং পরিবেশের জন্য ইতিবাচক। তাই ধরেই নেয়া যায় যে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে বিশ্বের কার্বন নিঃসরণ অনেকাংশেই কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

তবে সেটি হতে এখনো অনেক সময় লাগবে। বৈদ্যুতিক গাড়ি পরিচালনার মাধ্যমে কার্বন সিঃসরণ অনেক কম হলেও, এই গাড়িগুলো চলে মূলত ব্যাটারির সাহায্যে। আর এই ব্যাটারিগুলো উৎপাদন করতে গিয়েই প্রতিনিয়ত প্রচুর পরিমাণ কার্বন বায়ুমন্ডলে নিঃসৃত হচ্ছে। ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি এনার্জি ইনিশিয়েটিভ-এর একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, সাধারণ ইঞ্জিন চালিত গাড়ি উৎপাদন করতে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসৃত হয় তার থেকেও বেশি পরিমাণ কার্বন নিঃসৃত হচ্ছে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যাটারি উৎপাদনে। তবে দীর্ঘমেয়াদে যেহেতু বৈদ্যুতিক গাড়ি অন্যান্য গ্যাসোলিনচালিত গাড়ির তুলনায় অনেক কম কার্বন নিঃসরণ করে, তাই এই সমস্যাটি তেমন হুমকিস্বরুপ হিসেবে দেখা দেয়ার সম্ভাবনা কম।

বৈদ্যুতিক গাড়ি পরিচালনায় যেহেতু প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়, তাই সেই বিদ্যুৎ কিভাবে উৎপাদিত হচ্ছে এটিও এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। উন্নত বিশ্বে, যেখানে বেশিরভাগ বিদ্যুৎ নিউক্লিয়ার এনার্জি এবং নবায়নযোগ্য উৎসগুলো থেকে উৎপাদিত হয় সেখানে বৈদ্যুতিক গাড়ির কার্যকারিতা অনেক বেশি। কারণ, বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও, বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাদের কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি পাবে না। অপরদিকে অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল রাষ্টগুলোতে কার্বন নিঃসরণ রোধে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।

কারণ, এসব দেশে বেশিরভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানীর মাধ্যমে যা আগে থেকেই প্রচুর পরিমাণে কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। এমতাবস্থায় এসব দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে আরো বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারনে কার্বন নিঃসরণ’ও আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির পূর্ণ সুফল ভোগ করতে চাইলে আগেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিউক্লিয়ার এনার্জি এবং নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার বৃদ্ধি কর‍তে হবে। একমাত্র তবেই বৈশ্মিক উষ্ণায়ণ রোধে বৈদ্যুতিক গাড়ি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, বৈদ্যুতিক গাড়ি দীর্ঘমেয়াদে অবশ্যই বিশ্বের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। তবে তার জন্য প্রয়োজন বেশ কিছু সময় এবং পর্যাপ্ত ইনফ্রাস্ট্রাকচার। বৈশ্বিকভাবে যদি জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব হয় এবং নয়াবনযোগ্য শক্তির পূর্ণ ব্যবহার করা হয় একমাত্র তবেই বৈশ্মিক উষ্ণায়ণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বৈদ্যুতিক গাড়ি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারবে।

শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top