ক্ষমতা! বলা যায় ক্ষমতার কর্তৃত্বে আবদ্ধ পুরো পৃথিবী। যার হাতে যত ক্ষমতা, সে ততো কিছু নিয়ন্ত্রন করতে পারে। তবে ক্ষমতার আবার কিছু বিড়ম্বনা ও রয়েছে! ক্ষমতাসীন ব্যক্তিকে সব সময় সজাগ থাকতে হয়,তাকে কেউ ঘায়েল করছে কি না! সাধারনের থেকে অনেকটা ভিন্ন লাইফস্টাইল তাকে বেঁছে নিতে হয়! ব্যবহারে অনেক জিনিসের ক্ষেত্রেও এক্সক্লুসিভ কিছু থাকে ক্ষমতাসীন ব্যক্তির। যদি বলা হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা! পৃথিবীর অনেক কিছুই নির্ধারিত হয় তার হাতে। আর এই ব্যক্তির ব্যবহৃত গাড়িটি কেমন হবে! নিশ্চয় কতকিছু ভেবে ফেলেছেন, কৌতূহলের ও যেন শেষ নেই! আসলেই সবার কৌতূহল হবারই কথা! পৃথিবী খ্যাত এই মানুষটি কোন গাড়িতে চড়ে বেড়ান,কেমনই বা সেই গাড়িটি, কি এমন ব্যতিক্রম কিছু আছে এই গাড়িতে! আমরা ট্রাম্পের জন্য ২০১৮ সালে বিশেষ ভাবে নির্মিত ক্যাডল্যাক লিমুজিন ‘ দ্যা বিস্ট ” সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জানবো, যা অনেকটাই চমকে দিতে পারে সবাইকে! ১৫ লাখ ডলার মূল্যের এই গাড়িটি সম্পর্কে চলুন জেনে নেই!
১. এটি ক্যাডলিক গাড়ি নয় :
এটি আসলে কোনো ক্যাডলিক গাড়ি না, যা এর পূর্বে রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এর জন্য নির্ধারিত ছিলো। দ্যা বিস্ট নামক এই লিমুজিন একটি স্ট্যান্ডার্ড প্রোডাকশন গাড়ির সাথে সামান্য অংশীদারিত্ব করে। এটার চেসিস, ডিজেল ইঞ্জিন নির্ভর করে GM’S Rugged heavey যানবাহনের উপর! কিছু স্ট্যান্ডার্ড ট্রিম টুকরো,যেমন হেডল্যাম্পস, টেল ল্যাম্প এর কারণে এটিকে ক্যাড়ির মতো দেখায় তবে এটি সম্পূর্ন আলাদা!
২. বিমানের সাথে সংযুক্তি :
এটির নিজস্ব বিমান পরিচালনার ব্যবস্থা আছে। সিক্রেট সার্ভিসের একটি C-17 গ্লোবাল ট্রান্সপোর্ট বিমান এটির সাথে যুক্ত। প্রেসিডেন্ট যে কোনো সময় এটি দিয়ে ভ্রমন করতে পারেন।
৩. সুরক্ষা সামগ্রি দিয়ে সুসজ্জিত :
গাড়িতে অনেক সময় অনেক কিছুরই প্রয়োজন পড়তে পারে। অল্প কিছুর অভাবে অনেক বড় বিপর্যয় আসতে পারে। তা ও আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলে কথা! গাড়িটিতে রয়েছে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র, কেননা যে কোনো সময় হতে পারে অগ্নিকান্ড, শুধু কি অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র! প্রেসিডেন্টের প্রয়োজন মেটানোর জন্য রয়েছে রক্তের ব্যাগ ও অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা। এমনি একটা শটগান চেম্বারও রয়েছে তার গাড়িতে!!
৪. অত্যাধুনিক সেন্সর লিমুজিন :
বিশ্বনেতাদের দিকে অনেক জঙ্গী সংগঠনই হামলা চালাতে তৎপর থাকে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপরে আক্রোশের জেরে যে কোনো সময় হতে পারে তার উপর হামলা। গাড়িটিতে এজন্য রয়েছে অত্যাধুনিক সেন্সর ব্যবস্থা। যে কোনো হামলার আগে গাড়ি চালকের কাছে পৌঁছে যাবে সিগন্যাল। আর সে সিগন্যাল পেয়ে চালক নিতে পারবে ব্যবস্থা। গাড়ির পুরো শরীর স্টিল দিয়ে তৈরি হওয়ার কারনে বোমা বিস্ফরনে ও কোনো ক্ষতি হবেনা।
৫. যাত্রী ধারন ক্ষমতা :
গাড়িটির প্রথম সাড়িতে তিন যাত্রীর ব্যবস্থা রয়েছে। এর একটি ড্রাইভার, একটি প্রেসিডেন্টের সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট, এবং প্রেসিডেন্টের নিজের জন্য। পিছনে চারটি আসন, একটি প্রেসিডেন্টের গেস্টের জন্য বরাদ্দ,কিছুটা আশ্চর্য জনক যে প্রেসিডেন্টের আসনটি গাঢ় নীল কাপড়ের মধ্যে ঢেকে দেয়া হয়।
৬. স্টিল টাইটেনিয়ামের বডি :
গাড়িটি কি ধাতু দিয়ে তৈরি এ বিষয়ে ও রয়েছে অনেকের আগ্রহ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে গাড়িতে চড়েন তা কি সোনায় মোড়ানো নাকি হিরক খন্ড রয়েছে এতে, এ নিয়ে ও কাজ করে সংশয়। আসলে এমন কিছুই নয়, স্টিল, টাইটেনিয়াম,অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিক্সের সমন্বয়ে গাড়িটির বডি তৈরি। গাড়িটিকে সাঁজোয়া গাড়ি বললে ও বেশি বলা হবে না। পাঁচ ইঞ্চি মোটা ধাতুনির্মিত এই গাড়িটির শরীরও প্রচন্ড শক্ত।
৭. সুরক্ষিত গাড়ির চালক :
মার্কিন প্রেসিডেন্টের গাড়ির চালক ও হতে হবে অনেক কৌশলী। যার গাড়িতে বিশ্বনেতা তাকেও হতে হবে প্রশিক্ষিত। শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা সহ আরো অনেক দিকই সামলাতে হয় চালককে। আর এজন্যই মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের বিশেষ প্রশিক্ষিত ব্যক্তিকে বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত গাড়ির চালক হিসেবে বেছে নেয়া হয়। যে কোনো পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টকে সুরক্ষিত স্থানে পৌঁছে দেওয়াই তার প্রধান কাজ। এর জন্য ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে গাড়ি ঘোরানোর ক্ষমতাও রাখেন তিনি। গাড়িটির চালক ও প্রেসিডেন্টের মধ্য একটি কাচের দেওয়াল আছে, সুইচের সাহায্য তা ব্যবহার করা যায়।
৮. পাঁচ স্তরের জানালার কাচ :
গাড়িটির সুরক্ষার জন্য জানালার কাঁচ পলিকার্বনেট দিয়ে তৈরি যাকে ভেদ করতে পারবেনা কোনো গুলি কিংবা গ্রেনেড।ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য নির্মিত এই গাড়িটির চালকের পাশের জানালা ছাড়া আর কোনোটারই কাঁচ খোলা যাবেনা। আর চালকের আসনের পাশে থাকা জানালাটি মাত্র ৩ ইঞ্চি নিচে নামানো যাবে।
৯. স্ট্রিল রিমের টায়ার:
গাড়িটির টায়ার স্ট্রিল রিমের, সুতরাং ফাটা র কোনো সম্ভাবনা নেই। কিংবা চাকার উপর খুব সহজে কোনো প্রভাব পড়বেনা। এ ছাড়া গাড়িতে রয়েছে নাইট ভিশন ক্যামরা, শটগান,গ্রেনেড ও টিয়ার শেল গান। স্ট্রিল রিমের টায়ার থাকার কারনে তা ফেটে গেলেও গাড়ি চালাতে কোনো অসুবিধা হবে না। গাড়ির পুরো শরীর স্টিল হওয়ার কারনে বোমা এবং মাইন বিস্ফোরনে ক্ষতি হবে না।
১০. পেন্টাগনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ :
মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে প্রশাসনিক দিক থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ন তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। জরুরী পরিস্থিতিতে তাকে রিচ করতে না পারাটা হয়ে উঠতে পারে বিপদজনক। সব সময় যোগাযোগ এবং তদারকির জন্য পেন্টাগনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য তার লিমুজিন গাড়িতে রয়েছে স্যাটেলাইট ফোন। যার মাধ্যমে যে কোনো পরিস্থিতিতে যোগাযোগ সম্ভব। গাড়িতে থাকা ওয়াচ টাওয়ার অ্যান্টেনার মাধ্যমে রাস্তায় থাকা যে কোনো ডিভাইসকে জ্যাম করা যেতে পেরে। এ ছাড়াও চালকবিহীন স্বয়ংক্রিয় গাড়িকে শনাক্ত করতে সক্ষম এটি।
ক্ষমতাধর ব্যক্তি হওয়াতে ট্রাম্পকেও চলতে হয় একটু বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। চলাফেরা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই থাকে তার ভিন্নতার ছোঁয়া! নইলে যেকনো সময়ে চলে আসতে পারে বিপদ। বিপদ থেকে বাঁচতেই তার লিমুজিন গাড়িতে এতসব প্রযুক্তি। আপনি আমি ট্রাম্পের মতো এতোটা প্রটকল নিয়ে না চললেও, আমাদের জীবনেরও দাম রয়েছে। তাই আপনার গাড়ির নিরাপত্তার কথা ভেবে কোন সুরক্ষা ব্যবাস্থা কি নিয়েছেন? গাড়িকে সবসময় নজরে রাখতে ও নিরাপদে রাখতে রয়েছে প্রহরী ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেম!