গাড়ি সচল ও কর্মক্ষম রাখতে বেশ কয়েক ধরণের ফ্লুইড গাড়িতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই গাড়ির ফ্লুইড নিয়মিত চেক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ইঞ্জিনের যাবতীয় সমস্যা ও ক্ষয়ক্ষতি রোধ করতে নিয়মিত ফ্লুইড চেক করা প্রয়োজন। নিয়মিত ফ্লুইড চেক করার জন্য কোন গ্যারেজে না যেয়ে নিজেই চেক করে নিন। খুব বেশি ঝামেলা মনে হলে, তবেই মেকানিকের কাছে গাড়ি নিয়ে যাবেন। শুধু শুধু মেকানিকের কাছে যেয়ে নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করবেন না। অনেকেই বুঝতে পারেন না যে , কোন কোন ফ্লুইড চেক করবেন আবার অনেকে বুঝে উঠতে পারেন না কিভাবেই বা কম সময়ে ফ্লুইড চেক করা যায় । আসুন তাহলে জেনে নিন আপনার গাড়ির কোন কোন ফ্লুইড কীভাবে নিয়মিত চেক করে নেবেন।
গাড়ির ফ্লুইড কোনগুলো আর কীভাবে চেক করবেন?
তেল
আপনার গাড়ির ইঞ্জিন এবং পার্টস সচল রাখতে তেল অবশ্যই একটি প্রয়োজনীয় উপাদান, সেটা তো সবাই আগে থেকেই জানেন। গাড়ির ফ্লুইড এর মধ্যে তেল অন্যতম। তেল চেক করতে আগে আপনার গাড়ি অন করে, অফ করে নিন। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন যাতে গাড়ি একটু ঠান্ডা হয়। গাড়িতে থাকা ডিপস্টিক বা মাপকাঠি দিয়ে খুব সহজেই তেলের ট্যাংকির ভেতর তেলের পরিমাণ জেনে নিতে পারবেন। পরিমাপ কাঠি আপনাকে জানিয়ে দেবে কতটুকু তেল অবশিষ্ট আছে এবং কতটুকু তেলের প্রয়োজন হতে পারে। ড্যাশবোর্ডেও অয়েল এলার্ট দেখে নিতে পারবেন।
রেডিয়েটর ফ্লুইড
ইঞ্জিনের হঠাৎ গরম হয়ে যাওয়া রোধে রেডিয়েন্ট ফ্লুইড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি যদি অল্প প্রেশারে গাড়ি চালান তাহলে ট্র্যাফিক সিগন্যালে থামা অবস্থায় গাড়ি অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। গাড়ি চালানোর সময় রেডিয়েন্ট ফ্লুইড চেক করে নেবেন । লক্ষ্য রাখবেন গাড়ি যেন তখন ঠান্ডা থাকে । রেডিয়েটরের ভেতরের উপকরণগুলো একটি নির্দিষ্ট চাপের মধ্যে থাকে তাই ইঞ্জিন গরম থাকা অবস্থায় অথবা চলন্ত অবস্থায় কখনোই এর ক্যাপ খুলবেন না। ইন্জিন কম্পার্টমেন্টের সামনে অথবা মধ্যবর্তী জায়গায় রেডিয়েটর ক্যাপ থাকে। সাবধানে কোন পুরানো কাপড় দিয়ে ক্যাপটি খুলে নিন। আর রেডিয়েটরের ভেতর দেখে নিন কতটুকু কুল্যান্ট দেখা যায়। দরকার হলে দেখার জন্য ছোট টর্চ ব্যবহার করবেন। যদি কাছাকাছি কুল্যান্ট দেখতে না পারেন তাহলে বুঝবেন কুল্যান্ট প্রয়োজন।
ট্র্যান্সমিশন ফ্লুইড
ট্র্যান্সমিশন সচল রাখতে ট্র্যান্সমিশন ফ্লুইড ব্যবহার করতে হয়। যা অনেক সময় অনেক বড় ধরনের সমস্যা এমনকি দুর্ঘটনা থেকে গাড়িকে বাঁচায়। ইঞ্জিনের ভেতর বিভিন্ন ডিপস্টিকের মধ্যে, একটা থাকে ট্র্যান্সমিশন ফ্লুইড এর ভেতর। অনেকটা তেলের ডিপস্টিকের মতো। আপনার শুধু স্টিকটা বের করে নিতে হবে, কোন পুরানো কাপড় দিয়ে স্টিকটি মুছে নিতে হবে এবং ট্যাংকে আবার রেখে দিতে হবে। এরপর ডিপস্টিক ট্যাংক থেকে বের করে দেখে নিন কতটুকু ট্রান্সমিশন কুল্যান্ট স্টিকের গায়ে লেগে থাকে। আর যদি কুল্যান্টের অবস্থা কেমন সেটা জানতে চান তাহলে আঙ্গুল দিয়ে একটু ঘষে দেখুন কুল্যান্টের রংয়ের কোন পরিবর্তন হয় নাকি সাধারণ থাকে। যদি রং সাধারণ থাকে তাহলে কুল্যান্টের মান ঠিক আছে। আবার যদি কুল্যান্টে পোড়া গন্ধ থাকে তাহলে দ্রুত ট্রান্সমিশন ফ্লুইড বদলে নিন।
পাওয়ার স্টিয়ারিং ফ্লুইড
গাড়ির পাওয়ার স্টিয়ারিং সচল রাখতে পাওয়ার স্টিয়ারিং ফ্লুইড ব্যবহার করা হয়। স্টিয়ারিংয়ের মাধ্যমে গাড়ির চাকার সঠিক নিয়ন্ত্রণ হয় । গাড়ির হুড তুলে যাত্রীর সীটের সামনে যে জায়গাটি দেখা যাবে সেখানে এই ফ্লুইডের ট্যাংকটি অবস্থিত। অথবা বেল্টের কাছে ‘স্টিয়ারিং’ লেখা ক্যাপ দেখতে পাবেন। ক্যাপটি খুললে ফ্লুইড দেখতে পাবেন । অনেক গাড়িতে এমনভাবে ক্যাপটি থাকে, আপনি উপর থেকেই ফ্লুইড চেক করে নিতে পারবেন , ক্যাপ খোলার প্রয়োজন পড়বে না। আর যখন ক্যাপটি খুলবেন তার আগে অবশ্যই চারপাশে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে নেবেন। তানাহলে ক্যাপ খোলার সাথে সাথে ময়লা ভেতরে চলে যেতে পারে। ক্যাপটি খুলে তেল চেক করার মতোন করেই ডিপস্টিক নিয়ে একইভাবে চেক করে নিতে হবে। এছাড়া এখানে কোন লিক থাকলে সেটাও দেখে নিতে পারবেন।
ব্রেক ফ্লুইড
ব্রেক ফ্লুইড অনেক বেশি চাপ সহ্য করে আপনার গাড়ির ব্রেকের ভেতর শক্তির সঞ্চার করে যাতে আপনি সময়মত গাড়ি চালাতে এবং থামাতে পারেন। ব্রেক ফ্লুইড সাধারণত ইন্জিন কম্পার্টমেন্টের পেছনের দিকে থাকে। ট্যাংক খোলার আগে চারপাশের অংশ পরিষ্কার করে নেবেন। ব্রেক ফ্লুইডের ট্যাংকের ভেতরে ময়লা গিয়ে গাড়ির ফ্লুইড ও গাড়ির বড়সড় ক্ষতি করতে পারে। এই অংশটি খুলতে আপনার প্রয়োজন একটি স্ক্র ড্রাইভারের। অংশটি খুলে ভেতরে দেখে নিন কতটুকু ফ্লুইড রয়েছে। ক্যাপ থেকে অর্ধেক ইঞ্চি পরিমাণ ফ্লুইড থাকলে ভালো। ব্রেক ফ্লুইড চেক করার সময় ব্রেক ফ্লুইডের রং দেখে নেবেন। যদি দেখেন, ফ্লুইডের রং কালো তাহলে অবশ্যই একজন মেকানিক দেখিয়ে নেবেন।
এয়ার কন্ডিশনিং কুল্যান্ট
গাড়ির ফ্লুইড লিস্টে এয়ার কন্ডিশনিং কুল্যান্টও আছে। এটি সাধারণত রেফ্রিজারেন্ট অথবা ফ্রেয়ন নামে বেশি পরিচিত। গরমের দিনে এই কুল্যান্ট একটু বেশি চেক করতে হয়। এই কুল্যান্ট চেক করা একটু ঝামেলাপূর্ণ কাজ। মেকানিকের কাছে নিয়ে গেলে অনেক টাকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। একটি এসি গেজ এবং থার্মোমিটারের সাহায্যে আপনি সহজেই কুল্যান্ট চেক করে নিতে পারবেন। এসি গেজ আর কুল্যান্ট আশেপাশের অটো পার্টসের দোকানে পেয়ে যাবেন। যদি দেখেন এসি কুল্যান্ট কমে গিয়েছে তাহলে কিছু পার্টসের সাহায্যে নিজেই খুব সহজেই রিফিল করে নিতে পারবেন।
ওয়াশার ফ্লুইড
উইন্ডশীল্ড ওয়াশার ফ্লুইড যদিও আপনার গাড়ির ইঞ্জিন সচল রাখার কোন কাজ করে না। কিন্ত গাড়ি চালানোর সময় স্পস্ট দেখার জন্য ওয়াশার ফ্লুইড অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াশার ফ্লুইড চেক করা খুবই সহজ কাজ। বেশ কিছু গাড়িতে ওয়াশার ফ্লুইড ট্যাংকে ‘উইন্ডশীল্ড’ অথবা ‘ওয়াশার’ লিখা থাকে। ট্যাংকের ক্যাপ না খুলেও আপনি এর ভেতরটা দেখে নিতে পারবেন। বা যখন ফ্লুইড খুব বেশি চাপ / ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় না থাকে তখন শুধু একবার মুড়িয়েই খুলে নিতে পারবেন ফ্লুইড ক্যাপটা। আপনার যদি বেশি ফ্লুইডের দরকার হয় তাহলে শুধু সাবান-পানি ব্যবহার না করে ওয়াশার ফ্লুইড ট্যাংকে নিয়ে নিন। আর যদি কাছাকাছি ফ্লুইড খুঁজে না পান তাহলে গ্লাস পরিস্কার করার যে লিক্যুইড ব্যবহার করা হয় সেটাও ফিল করে নিতে পারেন।
গাড়ির ফ্লুইড গুলো যদি ঠিকঠাক এবং সঠিক সময়ে চেক করে রাখেন এবং ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন, তাহলে অনেক ঝুঁকি কমে যাবে। পাশাপাশি গাড়িও ভাল থাকবে।
গাড়ির এমন সব দরকারি তথ্য এবং অসংখ্য টিপস জানতে পড়ুন প্রহরীর বাংলা গল্প। নিজে পড়ুন, বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করুন।
গাড়ির সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় প্রহরী সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। ২০ টির বেশি ফিচার। সাথে দিনরাত ২৪/৭ দিন কাস্টমার কেয়ারের সুবিধা।