কথায় বলে শখের দাম লাখ টাকা। শখের গাড়ি যত দামী হোক না কেন, সেটা বিদেশ থেকে ক্রয় করে দেশে আনার জন্য সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করতে প্রস্তুত মানুষ। বিদেশ থেকে গাড়ি আনার সময় কত শত বাঁধা থাকে সেগুলো পার করে ঠিক নিজের শখের গাড়িটি আনিয়ে নেওয়ার মত কাজ করে থাকে অনেকে। কিন্তু বিদেশ থেকে গাড়ি আনার সময় নিয়ম হচ্ছে সরকারকে কিছু নির্দিষ্ট হারে গাড়ির ট্যাক্স প্রদান করতে হয় । আপনি নিজে বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানি করতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনার কিছু কাগজপত্র রেডি করতে হবে আর আপনি যদি কোন ইম্পোর্টার দিয়ে আনান তাহলে কাগজ পত্র নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না কারণ তাদের কাছে কাগজ পত্র রেডি করাই থাকে। আপনাকে শুধু সেসব কাগজপত্র ফিল আপ ও সাইন করতে হবে। গাড়ির ট্যাক্স গাড়ির কেনা দামের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। এখন কেনা দাম কীভাবে জানবেন? জাপানে প্রত্যেকটি গাড়ির সাথে একটি ব্লু বুক সংযুক্ত করে দেয় যেখানে লেখা থাকে গাড়িটির কত দামে কেনা হয়েছিল । এতে কম জটিলতার সৃষ্টি হয় । কোন গাড়িতে কত হারে গাড়ির ট্যাক্স ধরা হয় আজকে আমরা সেগুলো জানব।
পুরোপুরি বিদেশে তৈরি
complete build unit সংক্ষেপে (CBU)। এই গাড়িগুলো পুরোপুরি তৈরি করেই আমদানি করা হয় । আর দেশে আনার পর কোন পার্টস অ্যাড করা হয়না । এই গাড়িগুলোর ট্যাক্স হচ্ছে-
০ থেকে ১৬০০ পর্যন্ত সিসি ১২৭ %
১৬০০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত সিসি ২২১%
২০০০ থেকে ৩০০০ পর্যন্ত সিসি ৩৬৫%
৩০০০ থেকে ৪০০০ পর্যন্ত সিস ৮২৬%
পার্টস বিদেশে তৈরি
Completely knocked down (ckd) এই গাড়িগুলোর পার্টস আলাদা আলাদা করে বাংলাদেশে এনে তারপর জোড়া দেওয়া হয়। বাংলাদেশের প্রোটন গাড়িগুলো এই ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়।
০ থেকে ১৬০০ সিসি পর্যন্ত ৮৯%
১৬০০ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ১২৭%
২০০০ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত ২১২%
৩০০০ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত ৫১৯%
৪০০০ থেকে আরো বেশী সিসি পর্যন্ত ৭৪২ %
হাইব্রিড কারে গাড়ির ট্যাক্স
হাইব্রিড গাড়িগুলোও ckd এই গ্রুপে পড়ে । জাপান থেকে আনা সব গাড়ির মতই এই গাড়িগুলোর ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয় পার্থক্য শুধু গাড়িগুলো হাইব্রিড।
০ থেকে ১৮০০ সিসি পর্যন্ত ৮৯%
১৮০০ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ১২৭%
২০০০ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত ১৫০%
৩০০০ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত ২১২ %
৪০০০ থেকে বেশী সিসি ৫১৯ %
এগুলো তো হলো ckd, cbu এর ট্যাক্সের হার । এছাড়া রয়েছে নির্দিষ্ট গাড়ির উপর করা ট্যাক্সের পরিমান নির্ধারণ-
কার/জীপ
১০০০ বা এর উপর পর্যন্ত সিসি ৯১%
১০০০১ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত সিসি ১৩০%
১৫০১ থেকে ২০০০ পর্যন্ত সিসি ২১৫%
২০০১ থেকে ২৭৫০ পর্যন্ত সিসি ৩৭০%
২৭৫০ থেকে ৪০০০ পর্যন্ত সিসি ৬০২ %
৪০০০ এর উপর সিসি ৮৩১%
মাইক্রোবাস
১৮০০ সিসির উপর ১৩০%
১৮০১ থেকে ২০০০ পর্যন্ত সিসি ১৫৩%
হাইব্রিড কার
২৫০০ এর উপর পর্যন্ত ১৫৩% সিসি
এই তো হলো পুরো গাড়ির কাস্টম ট্যাক্সের স্ট্রাকচার । জাপান বা অন্য দেশ থেকে যদি রিকন্ডিশন গাড়ি আনা হয় সেক্ষেত্রে আবার ট্যাক্সের হার কিছুটা হের ফের হতে পারে। গাড়ির ব্যবহারের সময়ের উপর তখন ট্যাক্স নির্ভর করে। রিকন্ডিশন গাড়িগুলো সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত আনা যায়। এখন আপনি যদি ২০১৯ সালের গাড়ি আনেন তখন এক রকম ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে আবার ২০১৫ সালের গাড়ি আনলে সেগুলো আরেক রকম ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে। পুরানো গাড়ির ট্যাক্স নির্ধারণ তুলনামুলক কিছুটা কম হয়। কত বছর পুরানো হলে কতটুকু ছাড় পাবেন দেখে নিন-
১ বছরের পুরানো হলে ১৫ % ছাড়
২ বছরের পুরানো হলে ২৫% ছাড়
৩ বছরের পুরানো হলে ৩৫% ছাড়
৪ বছরের পুরানো হলে ৪০% ছাড়
৫ বছরের পুরানো হলে ৪৫ % ছাড়
গাড়ির কাস্টমস ট্যাক্স নির্ভর করে গাড়ি কত টাকা দিয়ে কেনা হয় তার উপর । মনে করুন , জাপানে কোন গাড়ি ২০১৬ সালে তৈরি আর আপনি গাড়িটি কিনলেন ২০১৯ সালে। অর্থাৎ ৩ বছর পুরানো গাড়িটি। কেনা দাম ছিল ৫০০০ ডলার । এখন আপনি যদি কোন গাড়ি ২০১৯ সালে কিনেন তাহলে আপনি ৩ বছর পুরানো গাড়ি হিসেবে ছাড় পাবেন ৩৫% আর যেহেতু পুরোপুরি জাপানে ম্যানুফ্যাকচার তাই cbu হিসেবে ট্যাক্স হয় ১২৭%। যেহেতু ৩ বছর পুরানো তাই গাড়ির মূল্য ৫০০০ থেকে কমে হবে ৩২৫০ ডলার। আর এই ৩২৫৯ ডলারের উপর ১২৭% অ্যাড হবে। আর যদি গাড়িটি ৫ বছর পুরানো হতো তাহলে গাড়ির মূল্য কমে হতো ২৭৫০ ডলার। আর এই ২৭৫০ ডলারের উপর ১২৭% অ্যাড হতো।
একটু জটিল হলেও, মাথা ঠাণ্ডা করে করলে যে কেউ এই হিসাবটি খুব সহজেই করতে পারবেন। অনেক গবেষণা করে এই তথ্যগুলো বের করা। সরকারের প্রণীত আইন ও সার্বজনীনতার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয় কাস্টমস ট্যাক্স । আমরা শুধু তথ্য সংগ্রহ করে লিখেছি যাতে সাধারণ মানুষ জানতে পারে। আশা করি আমাদের এই তথ্য বহুল ব্লগটি আপনাদের কাজে আসবে।