বর্তমান যুগটা হয়ে গিয়েছে প্রতিযোগিতার যুগ। নিত্য চলছে এই প্রতিযোগিতা। আর এই ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা মানুষকে করে দিচ্ছে আত্মকেন্দ্রিক। জীবনে চলে আসছে একঘেয়েমি। প্রতিদিনের এই একঘেয়েমি জীবন কার ভাল লাগে? সপ্তাহে একদিন ছুটি পেয়ে হয়ত শুয়ে,বসেই কাটিয়ে দেন অনেকে। সাপ্তাহিক ছুটিতে পরিবার নিয়ে করুন একদিনের ভ্রমন । ঢাকার ভিতরে বা আশেপাশে কোথাও যেতে পারেন একদিনের ভ্রমণে । এতে আপনার ক্লান্তিময় জীবনে একটুঁ হলেও আসবে প্রাণের ছোঁয়া, মনটা হবে ফুরফুরে, আবার নতুন উৎসাহ ফিরে পাবেন কাজে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক,গাজীপুর।
একবার ভাবুন তো, আপনি গাড়িতে বসে আছেন। আপনার সামনে ঘুরে বেরাচ্ছে বাঘ আর সিংহ। কল্পনা করতেই একটা দারুন থ্রিল কাজ করে তাইনা? যদি আপনি অ্যাডভেঞ্চারাস কিছু করতে আগ্রহী হন, তাহলে অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে। বন্য পশু, প্রাণী, পাখি প্রজাপতি, মাছ, দেশী, বিদেশী ও বিলুপ্ত প্রায় সকল প্রাণী দেখতে পাবেন এই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে।
৩,৮১০ একর জমির মধ্যে তৈরি করা হয়েছে এই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি। জায়গাটি ছোটো ছোটো টিলা ও শালবন সমৃদ্ধ ।পুরো সাফারি পার্কটি বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, কোর সাফারি পার্ক, সাফারি কিংডম, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক নামক ৫টি অংশে বিভক্ত। এই জায়গার মূল আকর্ষণ হচ্ছে কোর সাফারি। গাড়ি ছাড়া এই জায়গায় প্রবেশ নিষিদ্ধ। দর্শনার্থীদের জন্য দুটি জীপ ও মিনিবাস বরাদ্ধ আছে। তবে নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে নিজের গাড়ি নিয়েও প্রবেশ করা যায়। বাঘ, সিংহ, জিরাফ, চিত্রা হরিণ অনেক বন্য প্রাণী এখানে ঘুরতে দেখা যাবে খোলা জায়গায়। সাফারী কিংডমের শুরুতেই ৩৪ প্রজাতির পাখি নিয়ে মাকাও ল্যান্ড। এরপর ২০ প্রজাতির মাছ নিয়ে মেরিন অ্যাকুরিয়াম। যেখানে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে টাইগার ফিস, কুমির, অস্কার, এবং ২০ সেকেন্ড পর পর রঙ বদলানো চিকলেট মাছ।
দিনে দিনে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসার জন্য একটি আদর্শ জায়গা এটি। তবে এখানে শীতকালে যাওয়াটাই বেশী উপযোগী ।
এছাড়া রয়েছে ৩টি পাখিশালা, প্রজাপতি সাফারি, অর্কিড হাউস, জিরাফ ফিডিং স্পট, ফেন্সি কার্প গার্ডেন, বোটিং, লেক জোন, আইল্যান্ড, প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র।
প্রবেশের সময়ঃ সকাল ৯-বিকেল ৫ টা (মঙ্গলবার বন্ধ)।
পার্কিং চার্জঃ ৬০ টাকা।
প্রবেশ মূল্যঃ প্রাপ্তবয়স্ক ৫০ টাকা,ছোটোদের ২০ টাকা,পর্যটক ৫ ডলার।
যাবার সময় গাজীপুর চৌরাস্তা পার হয়ে বাঘের বাজারে সাইন বোর্ড দেখতে পাবেন।
যেতে আসতে এক থেকে দের ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
শালবন বিহার,কুমিল্লা।
বৌদ্ধ যুগের নিদর্শন এবং পাশেই শালবন অবস্থিত বলে এর নামকরণ করা হয় শালবন বিহার। শালবনে খুব একটা বেশী শালগাছ না থাকলেও গাছের শাখা প্রশাখা দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে একটি ছাতের মত তৈরি,এর নিচে কিছুক্ষন বসলে অসাধারণ এক অনুভুতির সৃষ্টি হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই অবস্থিত এই শালবন বিহার। বাংলাদেশের অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক চিহ্ন বহন করে এই স্থানটি। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক, প্রায় ৪০০ টি স্বর্ণ-রুপার মুদ্রা, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি ইত্যাদি প্রাচীন জিনিসপত্র পাওয়া গেছে।
এছাড়াও কুমিল্লায় দর্শনীয় কিছু জায়গা রয়েছে। সময় নিয়ে গেলে সেস্থান গুলোও ঘুরে আসতে পারেন। যেমন-ময়নামতির জাদুঘর, ইটাখোলা মুড়া, লালমাই পাহাড়, ধর্মসাগর ইত্যাদি।
যেতে সময় লাগবে দু থেকে আড়াই ঘন্টা। সকাল সকাল রওনা হয়ে আবার রাতেই ফিরে আসা যাবে।
ম্যাজিক পারাডাইস, কুমিল্লা
বিখ্যাত ওয়াল্ট ডিজনির আদলে তৈরি করা হয়েছে এই ড্রিম হলিডে পার্কটি। প্রথম দেখাতে মনে হবে বাংলাদেশের বাইরে কোথাও চলে এসেছেন। ছুটির দিনে বাচ্চাদের নিয়ে একদিনের ভ্রমন করার আদর্শ জায়গা হতে পারে এটি।
৬০ একর জমির মধ্যে ওয়াটার বাম্পার কার, রাইডার ট্রেন, বাইসাইকেল,রকিং হর্স, স্পীডবোর্ড, সোয়ানবোট ,নাগেট ক্যাসেল, এয়ার বাইসাইকেল কৃত্রিম পর্বত, সমুদ্রের কৃত্রিম ঢেউ ইত্যাদি রয়েছে।
প্রবেশের সময়ঃ সকাল ১০-সন্ধ্যা ৭ টা ।
প্রবেশ মূল্যঃ প্রাপ্তবয়স্ক ৩০০, ছোটোদের ২০০ (প্যাকেজ নিলে কাপল ২৫০০,ফ্যামিলি ৪৫০০)।
যাবার সময় গুলিস্থান হয়ে যাওয়া যেতে পারে।
যেতে আসতে দের থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
রাসেল পার্ক, নারায়নগঞ্জ
১৯৯০ সালে ৩৫ বিঘা জমির উপর ব্যক্তিগত ভাবে পার্কটি বানানো হলেও পরে এটি সরকারি ভাবে সাজানো হয়। কৃত্রিম লেক, সুসজ্জিত নৌকা, পুকুর, দোলনা, স্লিপার, খেলার মাঠ, মিনি পার্ক, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি বানানো হয়।
প্রবেশ মূল্যঃ২০ টাকা।
যেতে আসতে এক থেকে দের ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
জিন্দা পার্ক, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ জেলার দাউদপুর ইউনিয়নে ১৫০ একর জায়গা নিয়ে এই জিন্দা পার্ক টি গড়ে উঠেছে। দশ হাজারের বেশি গাছ, ৫টি জলধার ও অসংখ্য পাখি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ক্যান্টিন , লাইব্রেরি, চিড়িয়াখানা এছাড়া রয়েছে ৮ টি সুসজ্জিত নৌবহর।
প্রবেশের সময়ঃ সকাল ৯ টা।
প্রবেশমূল্যঃ প্রাপ্তবয়স্ক ১০০ টাকা, ছোটোদের ৫০ টাকা।
পার্কিং চার্জঃ ৫০ টাকা।
যাওয়ার সময় পূর্বাচল হয়ে যাওয়াটা বেশি সহজ।
যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
সোনারগাঁয়ে একদিনের ভ্রমণ
ঈশাখাঁ ও তার বংশধরদের আমলে সোনারগাঁ ছিল পূর্ববঙ্গের রাজধানী। সোনারগাঁয়ে সময় নিয়ে গেলে আরো দেখতে পাবেন কারুশিল্প জাদুঘর, জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর, পানাম সিটি ও বাংলার তাজমহল। পানাম নগর ও জাদুঘরটি মিলিয়ে প্রায় ১৬ হেক্টর জায়গা নিয়ে এই কারু ও লোকশিল্পের অবস্থান। জাদুঘর, লোকজ মঞ্চ, সেমিনার রুম ও কারুশিল্প গ্রাম রয়েছে এরমধ্যে। গ্যালারিতে দেখা মিলবে বিভিন্ন খোদাই শিল্প,কারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিম জীবনভিত্তিক নিদর্শন, লোকজ বাদ্যযন্ত্র, পোড়ামাটির ফলক, লোহা তামা ও পেতলের তৈজসপত্র, লোকজ অলংকার ইত্যাদি।
প্রবেশের সময়ঃ সকাল ১০ -সন্ধ্যা ৭ টা। (বুধবার ও বৃহস্পতিবার বন্ধ)।
প্রবেশমূল্যঃ ১৫ টাকা।
যাবার সময় গাড়িতে নারায়ণগঞ্জ হয়ে গেলেই ভাল।
গোলাপ গ্রাম, সাভার
ঢাকার কাছে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামটি বর্তমানে গোলাপ গ্রাম নামে পরিচিত। এই গ্রামকে গোলাপের রাজ্য বলা হয়ে থাকে। পুরো গ্রামটাই যেন গোলাপের বাগান। যেদিকে চোখ যায় শুধু গোলাপ আর গোলাপ। লাল, হলুদ, সাদা কত রঙের যে গোলাপ আছে সেখানে তার কোন ইয়াত্তা নেই। শীতের সময় যদি খুব ভোরে সেখানে যাওয়া যায় তাহলে সকালের কুয়াশা ভেজা গোলাপ আর এর সৌরভ আপনার দিনকে করবে প্রশান্তিময়। দিনে যেয়ে দিনে ফিরে আসার উপযোগী একটি স্থান হচ্ছে এই গোলাপ গ্রাম।
মিরপুর বেরিবাধ হয়ে যাওয়া যেতে পারে গোলাপ গ্রামে।
কোথাও ঘুরতে যেয়ে নিশ্চয় আপনি আপনার পরিবারের মানুষের সাথে সময় কাটানোটাই বেশী উপভোগ করতে চান।এখন যদি বেড়াতে যেয়ে সবসময়ই গাড়ির নিরাপত্তার টেনশন মাথায় নিয়ে থাকেন, তাহলে তো বেজেই গেল ছুটির বারোটা। বেড়াতে যাবার আগে যেমন আপনি নিজের পরিবারের মানুষের নিরাপত্তার কথা ভাবেন,ঠিক তেমনি নিজের গাড়িটির নিরাপত্তার কথাও আপনার মাথায় রাখতে হয়।আপনার গাড়িটির সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গাড়িতে ব্যবহার করুন বাংলাদেশে প্রথম দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘প্রহরী ভেহিকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস’।এর মাধ্যমে আপনি একসাথে পাচ্ছেন ২০টিরও বেশী সুবিধা একসাথে।