প্রহরী

অভিক-আনোয়ার
পড়তে লাগবে: 3 মিনিট

আপনি জানেন কি, বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন মোটর রেসার আছে?

ছোটখাটো নিচু গাড়ি, চারপাশে পেট্রলের ট্যাঙ্ক নিয়ে বসা একজন মাত্র ড্রাইভার। স্টিয়ারিং হুইলে শুধুমাত্র বোতাম টিপে গিয়ার বদলে, ঘন্টায় ৩০০ কিলোমিটারের গতি তুলে, ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার সবার আগে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা। বলছিলাম মোটর রেসিং বা ফর্মুলা ওয়ান রেসিংয়ের কথা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছে এই রেসিংয়ের জন্য আলাদা জায়গা, রাস্তা বা ট্র্যাক। বাংলাদেশে বেশ অপ্রচলিত এই খেলা। তবে ভক্তের সংখ্যা কিন্তু একেবারে কমও না আমাদের দেশে। এই মোটর রেস বা ফর্মুলা ওয়ান রেস যেন নতুন করে পরিচিতি পাচ্ছে বাংলাদেশে। যারা কখনো আগ্রহ দেখাননি এর প্রতি, তারাও যেন বসছেন নড়ে চড়ে। কী করা, নাম যে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের! আর এই পরিচিতির নায়কের নাম ‘অভীক আনোয়ার’। আজকে জানবো আন্তর্জাতিক অঙ্গনের একটি নতুন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করা এই ব্যাক্তিটির কথাই।

কে এই অভিক আনোয়ার?

অভিক আনোয়ার, পুরো নাম এইচ এম তৌহিদ আনোয়ার অভিক। কোন আন্তর্জাতিক মোটর রেসে প্রথম বাঙ্গালি হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। বাবার গাড়ির শোরুম থাকার সুবাদে গাড়ির প্রতি নেশাটা পেয়ে বসে বেশ ছোটকালেই। টিভিতেও বিভোর হয়ে দেখতেন ফর্মুলা ওয়ান রেসিং প্রতিযোগিতা। প্রিয় রেসার ছিলেন ফর্মুলা ওয়ানের দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ‘মিকা হ্যাকিন্যান’। দ্রুতগতির জীবন যেন তখন থেকেই হাতছানি দিয়ে ডাকছিলো ছোট্ট অভীককে। কিছুটা বড় হয়ে একসময় বাবা-মায়ের চোখ ফাকি দিয়ে শিখে ফেলেন গাড়ি চালানোটাও।

তবে মন পড়ে রইলো রেসিংয়েই। ও-লেভেল শেষে টরন্টো ইউনিভারসিটিতে পড়তে পাড়ি জমাতে হলো কানাডায়। ছোট কাল থেকে যে রেসিংয়ের আকাঙ্খা মনে চেপে রেখেছিলেন, সেটা পূরণের সুযোগ যেন হাত ছুঁইছুঁই। কিন্তু রেসিং করতে যে লাগবে সেই উপযুক্ত নিজের রেসিং কার। নিজের পয়সায় একটি ভালো রেসিং কার কেনার লক্ষ্য নিয়ে শুরু করলেন পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি। কাজ করেছেন পিজ্জা ডেলিভারি থেকে লাইব্রেরী পর্যন্তও। এভাবে বছরখানেকের মধ্যে জুটিয়েও ফেললেন টয়োটা ইএক্সআইভি মডেলের গাড়ি কেনার মতো অর্থ। গাড়ি কিনেই টরন্টো মোটর স্পোর্টস পার্কে শুরু করেন রেসিংয়ের অনুশীলন। সেই অনুশীলনও ছিলো যথেষ্ট ব্যায়বহুল। ব্যায়বহুল ছিলো রেসিংয়ের লাইসেন্স জোগার করাও। তবে নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে অতিক্রম করেছেন শেষ পর্যন্ত তিনি সব বাঁধাই।

শুরুটা নিজের দেশ থেকেই

২০১৪ সালে দেশে ফেরেন অভীক আনোয়ার। সেবছরই অংশ নেন ঢাকায় অনুষ্ঠিত মোটর স্পোর্টস প্রতিযোগিতা র‍্যালি ক্রসে। ২০১৬ পর্যন্ত সেই প্রতিযোগিতায় হ্যাট্রিক চ্যাম্পিয়ন হন অভীক আনোয়ার! প্রথমবারে নিজের দেশের মাটিতে বাজিমাত করে পাওয়া আত্মবিশ্বাসেই যেন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে উৎসাহ পান তিনি।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাত্রা

দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো ২০১৭ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত মোটরকার রেসিং ইভেন্ট অ্যামিও কাপে অংশগ্রহন করেন অভীক আনোয়ার। অভীক বাদে সেখানে বাকি সব প্রতিযোগীরই ছিলো কোচিং স্টাফ। অভীকের স্থান ছিলো সেই প্রতিযোগিতায় চতুর্থ। সেখান থেকে অংশ নেন মাদ্রাজ মোটর রেস ট্র্যাকে। অবস্থান সেখানেই চতুর্থ। টানা চারটি বছর আঁটকে ছিলেন এই চারের গ্যাঁড়াকলে। অবস্থানের উন্নতি করতে লাগলেন উঠেপড়ে। ভারতের রেসিং টিম ‘মোমেন্টাম মোটর স্পোর্টস’ এর সাথেও যুক্ত হন নিজের দুর্বলতা খুজে বের করতে।

২০১৯ সালের জুনে আবার ভারতে আসর বসে অ্যামিও কাপের। প্রথম হয়ে সেবার অভীক আনোয়ার দেখিয়ে দেন নিজের সক্ষমতা। আন্তর্জাতিক কোন রেসিং প্রতিযোগিতায় সেটাই ছিল কোন বাংলাদেশির প্রথম শিরোপা। সেই বছরই আগস্টে অংশ নিলেন মালয়শিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে। সেখানে তৃতীয় স্থান অর্জন করে জেতেন ব্রোঞ্জ।

বিশ্বে করোনার আক্রমনে ২০২০ সালের পুরোটাই রেসবিহীন কাটে অভীকের। ২০২১ সালের শেষের দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এনজিকে প্রো-কার চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম রাউন্ডের জিটি-৮৬ ক্যাটাগরিতে অংশ নিয়ে এবং জিতে প্রতিযোগিতার সূচনা করেন অভীক আনোয়ার। নিজের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মোটর স্পোর্টস দলের হয়ে অংশ নেন তিনি।

পাঁচ রাউন্ডে ১০টি করে রেস হয় সেই প্রতিযোগিতায়। এর আগেও বেশ কয়েকবার এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও, খেলতে পেরেছেন সর্বোচ্চ তিন রাউন্ড। তবে এবার আর ফিরতে হয়নি খালি হাতে। ২০২২ সালের মার্চে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল রেসিং চ্যাম্পিয়নশিপে শেষ পর্যন্ত নিজেকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হন বাংলাদেশের অভীক আনোয়ার। নিজের সেরাটা দিয়ে শিরোপাও জিতে নেন। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত জমকালো এক অনুষ্ঠানের মধ্যে সেরার শিরোপা তুলে দেয়া হয় অভীক আনোয়ারের হাতে।

অভীক আনোয়ার আছেন এখন বাংলাদেশের মাটিতেই। সামলাচ্ছেন পারিবারিক গাড়ির ব্যবসা। অভীক আনোয়ারের ভাষ্যমতে, এই গাড়ির ব্যবসার জোড়েই চালিয়ে যেতে পারছেন এমন ব্যবহুল রেসিং। ব্যাবসার পাশাপাশি নিজেকে তৈরি করছেন শীঘ্রই শুরু হতে যাওয়া আরো কতগুলি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য। ইচ্ছা আছে বাংলাদেশে তার মতোই রেসিংয়ে আগ্রহীদের শেখানোর। ইতোমধ্যে তার অধীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেও দুইজন। হয়তো সামনে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়াতে নিজের সবটা ঢেলে দিবে আরো অভীক আনোয়ারেরা।

শখের গাড়ির সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকার সার্ভিস (VTS) ডিভাইস যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রহরী – ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং আপডেট দেখা, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন প্রহরী প্যাকেজ সমূহ।

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top