প্রহরী

পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

সেলফ ড্রাইভিং কারের যে খুঁটিনাটি তথ্যগুলো না জানলেই নয়!

প্রযুক্তির এই উন্নয়নের যুগে সেলফ ড্রাইভিং কার হচ্ছে নতুন এক বিস্ময়ের নাম। একটি গাড়ি যা ড্রাইভার ছাড়াই চলে! আপনি গাড়িতে উঠে সেলফ ড্রাইভ মোড অন করবেন আর দিবেন এক শান্তির ঘুম ব্যস ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই  চলে যাবেন  অফিসে।  এমনটা হলে কতইনা ভাল হত, তাইনা? গাড়ি প্রস্তুতুকারক কোম্পানিগুলো জনসাধারণের জন্য সেলফ ড্রাইভিং কার বানাতে দিনরাত এক করছে। মানব জাতির উন্নয়নকে আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার জন্য সেলফ ড্রাইভিং কার হচ্ছে অন্যতম আরেকটি ধাপ।

ভবিষ্যৎ যখন বর্তমান 

বর্তমানে অনেকগুলো গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান সেলফ ড্রাইভিং কার তৈরি করেছে । গুগোল, বিএমডব্লিউ, অডি, নিসান, ভল্ভো, টয়োটা, হোন্ডা এবং টেসলার মতো জায়ান্ট অটোমোবাইল কোম্পানিগুলো সেলফ ড্রাইভিং কার তৈরির জন্য কাজ করছে। গুগোলের তৈরি গাড়িটি আমরা রাস্তায় চলতেও দেখেছি। তবে সীমিতভাবে। তারা গাড়িগুলো নিয়ে কাজ করছে এবং তারা গাড়িগুলোকে আরো একটু বিশ্বাসযোগ্য করতে এবং নির্ভরশীলতা বাড়ানোর জন্য জন্য তারা এখনো কাজ করে যাচ্ছে।     

কীভাবে চলে সেলফ ড্রাইভিং কার

সেলফ ড্রাইভিং কার মূলত ক্যামেরার সাহায্যেই বেশী চলে। এছাড়া লিডার , রাডার এবং সেন্সরের মাধ্যমে  রাস্তায়, আশেপাশে  অন্যান্য যানবাহন  আছে কিনা তা দেখে । লিডার একটি সিস্টেম যার মাধ্যমে লেজার লাইট ব্যবহার করা যায়। এসব সিস্টেম একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে গাড়ির অপারেটরকে পাঠানো হয়।

সেলফ ড্রাইভিং কার নির্ধারণ করে সামনে থেকে আসা মানুষ।

এগুলো সবকিছুই একটি কম্পিউটারের সাথে সারাক্ষণ সংযুক্ত থাকে। কম্পিউটারের মাধ্যমে রাস্তার ট্রাফিক ও রাস্তায় অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে ও গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিছু সেলফ ড্রাইভিং কার অন্য গাড়ির সাথেও যুক্ত থাকে  । যার মাধ্যমে দুটি গাড়ি চলার সময় তথ্য আদানপ্রদান করতে পারে ও যেকোনো দুর্ঘটনা রোধ করতে পারে।

ম্যানুয়াল মোড 

বেশীরভাগ সেলফ ড্রাইভিং কার তৈরির কোম্পানিগুলো গাড়িতে ম্যানুয়াল মোডও সংযুক্ত করে থাকে। যাতে করে গাড়িগুলো মানুষ অন্য সাধারণ গাড়ির মতো ড্রাইভ করতে পারে।  আবার চাইলে পেছনের সীটে যাত্রী বসে থাকতে পারে। এই গাড়ি যারা উৎপাদন করে তাদের জন্য ম্যানুয়াল মোড সংযুক্ত করাটাই বিশ্বাসযোগ্য পন্থা ।  আইনানুসারে রাস্তায় এই গাড়ি নামানোর এটাই হয়তো একমাত্র উপায়। অর্থাৎ সেলফ ড্রাইভিং কারের উপর মানুষের আস্থা অর্জন করার এটি একমাত্র উপায় হয়তো।

ট্রাফিক সিগন্যালে থামা সেলফ ড্রাইভিং কার।

দুর্ঘটনার  দায়ভার

সেলফ ড্রাইভিং কারে সবথেকে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হল রাস্তায় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার কার হবে। এখন যদি গাড়িটি ম্যানুয়াল মোডে চলে তাহলে হয়তো যে প্যাসেঞ্জার সীটে থাকবে দারভার তারই হবে। আর গাড়িটি যদি সেলফ ড্রাইভিং মোডে চলে আর কোন দুর্ঘটনা/সমস্যার  সৃষ্টি হয় তাহলে তার দায়ভার গাড়ি তৈরির কোম্পানিকে নিতে হবে।

দুর্ঘটনায় দায়ভার কার !

প্রযুক্তির পুনর্ব্যবহার

চারদিকে সেলফ ড্রাইভিং কার নিয়ে এতো কথা আর অটোমোবাইল কোম্পানিগুলোর তোড়জোড় দেখে মনে হচ্ছে, এই গাড়ির রাস্তায় নামতে হয়তো আর খুব বেশি দেরি নেই। কিন্তু এটা জেনে রাখা ভাল যে, সেলফ ড্রাইভিং গাড়িতে যে অটোনোমাস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এই প্রযুক্তি আমরা ইতোমধ্যে অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে শুরু করেছি। সেলফ ড্রাইভিং কারে ব্যবহৃত পার্কিং প্রক্রিয়া , অ্যাডাপটিভ  ক্রুজ কনট্রোল এবং অন্যান্য একই ধরনের প্রযুক্তি নতুন যানবাহনগুলোতে ব্যবহার করা হয়।  গাড়ি চালু হবার সময় প্রত্যেকটি প্রক্রিয়া গাড়ির কিছু দায়ভার বহন করে যার ফলে ড্রাইভাররা এই সেলফ ড্রাইভিং কারের উপর কিছুটা হলেও ভরসা করতে শুরু করেছে।

পরিবেশ

সেলফ ড্রাইভিং কারের সুবিধা হচ্ছে  প্রত্যেক বছর এই গাড়ির  মাইলেজের একটি রিপোর্ট  তৈরি করা হয়। আর প্রত্যেক বছর মাইলেজের সংখ্যা বাড়ায় অর্থাৎ যদি পেট্রোল দিয়ে চলে তাহলে পেট্রোল খরচ কমিয়ে আনতে পারে আর যদি ইলেক্ট্রিক্যালি চলে তাহলে ইলেকট্রিক সংক্রান্ত খরচ কমিয়ে আনতে পারে। পেট্রোলের খরচ কমানো মানে হচ্ছে পরিবেশের একটি বড় ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করা।

সুবিধা/অসুবিধা

প্রত্যেক ভাল দিকের হয়তো একটি খারাপ দিক আছে । আমরা ভাল দিকটি নিয়ে এত বেশী আনন্দিত হয়ে যাই যে ভুলেই যাই খারাপ দিকগুলোর কথা। সে যাইহোক,  সেলফ ড্রাইভিং কারেরও অনেক ভাল দিকের মধ্যে কিছু খারাপ দিকও আছে। সেলফ ড্রাইভিং কার হয়তো মানুষের একটু আরামের কথা চিন্তা করে বানানো হচ্ছে । বয়স্ক অথবা চলতে অক্ষম মানুষজনের জন্য সেলফ ড্রাইভিং কার হয়তো অনেক প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করবে কিন্তু অন্যদিক বিবেচনা করে দেখলে দেখা যাবে কত মানুষের জীবিকা নির্বাহ বন্ধ হয়ে যাবে যারা গাড়ি চালিয়ে তাদের জীবিকা চালায়। বেড়ে যাবে বেকার লোকের সংখ্যা।

বই পড়তে পড়তে গাড়ি চালানো।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে সেলফ ড্রাইভিং কার পুরোপুরি যখন আমাদের জীবনে আসবে তখন আমাদের জীবনে ঘটবে আমূল পরিবর্তন। আর্থিক, সামাজিক, শৈল্পিক ইত্যাদির বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে ।  আমাদের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ রূপে পাল্টে যাবে । কিন্তু সে পর্যন্ত পৌঁছতে হয়তো প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে। তবে আমরা যদি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জয়ী হতে পারি তাহলে আমাদের জীবন হবে সহজ, নিরাপদ এবং আধুনিক

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top