প্রহরী

পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

ফোর্ড মডেল টি : গাড়ির জগত বদলে দেয়া এক গাড়ি!

সৃষ্টির সূচনা থেকেই আমরা মানুষ কত কিছু আবিষ্কারের নেশায় যে ছুঁটেছি তার কোনো হিসেব নেই।আমাদের জীবন ধারাকে একেকটি আবিষ্কার একেক ভাবে পাল্টে দিয়েছে। নতুন কোনো কিছু আসলে আমাদের নিত্য নতুন ভাবে শুরু হতো দিন যাপন। সময়ের সাথে রুপ বদলে পৃথিবীর রুপ বদলে দিয়েছে অনেক কিছু,যার উপর আমাদের আজকের সভ্যতা দাড়িয়ে। গাড়ির দুনিয়ায় যদি আমরা বলি তাহলে বলতে হয় ফোর্ড মডেল টি এর কথা যা আসলে পরিবর্তন করেছিলো পৃথিবীর রুপ আর ইতিহাস। আসলে এটি প্রথম গাড়ি না হতে পারে তবে এর তাৎপর্য আসলে কোনো ভাবে অস্বীকার করা যাবে না।
বাস্তবিক ভাবেই অটোমেটিভ এর ইতিহাসে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলো Ford Model T এবং সেই সাথে একটি ভালো অবস্থান ও করে নিয়েছিলো। এটি তৈরি হয়েছিলো ১৯০৮ সালে ফোর্ড মটর কোম্পানির দ্বারা আর এই আবিষ্কার অটোমেটিভ পরিবহনের পুরো দিকটিই পরিবর্তন করে দিয়েছিলো।
আসলে নতুন যা তৈরি হয় তা সাধারনত মানুষের সাধ্যের মধ্য থাকে না, তা হয়ে থাকে সমাজের ধনীক শ্রেনীর মানুষের জন্য কিন্তু এক্ষেত্রে Ford Model T কে বলা যায় এক বিপরীত মুখী, কেননা Ford Model T ছিলে প্রথম সাধ্যের মধ্য কেনার মতো বাহন যা অধিক পরিমানে উৎপাদিত হয়েছিলো। সেই সাথে এটি খুব অল্প টাকায় বিক্রি হতো এবং এটি অটোমেটিভ বৈপ্লবিক এর ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
গাড়ি কেনার সাধ্য কিন্তু সাধারনত সবার থাকেনা, স্বপ্ন আর সাধ থাকে অনেকেরই, তবে Model T সেই সুযোগটি করে দিয়েছে অনেক মানুষের জন্য। যারা কখনো গাড়ি কেনার কথা কল্পনাতেও আনেন নি তাদের জন্য ও এটি বেশ সুযোগ করে দিয়েছিলো, গাড়ির মালিক বনে যাওয়ার খুব সহজ হয়ে উঠেছিলো। এটির ট্রান্সমিশন ম্যাথড শুধু যে এলিট শ্রেণীর জন্যই ছিলো না ,বরং সর্ব সাধারণের জন্য সব জায়গায় ড্রাইভিং এর উপযোগী ছিলো এটি। ইতিহাস আসলে এমনটাই বলে যে Ford Model T এর বেশি উৎপাদন আমেরিকার জনসাধারণকে সংযুক্ত করেছিলো গাড়ির দিকে, সহজ সাধ্য আর সহজ লভ্য হওয়ায় এই গাড়ি পৃথিবীর ইতিহাসকে একটু ভিন্ন দিকে মোড় ঘুরিয়েছিলো। বলা যায় বিশ্বাস যোগ্যতার দিক থেকেও যেন কম ছিলো না Ford Model T, মানুষের আস্থার একটি জায়গা ছিলো এটিতে।
এটির একটি Nicknames ও ছিলো, আর সেই নাম হলো “Tin Lizzie “, তবে এই নামটিই একমাত্র ছিলো না, এই নাম ছাড়াও আরো বহুল নামে রেফার্ড ছিলো। Ford Model T এ ছাড়া ও আরো কয়েকটি রেফারেন্স এ ডাকা হতো, আর তা হলো Leaping lena, Jitney and Flivver, আপনি আসলে কোন নামটিকে ভালো মনে করেন সেটা কোনো বিষয় নয়,Ford Model T জনপ্রিয়তা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার দিক থেকে প্রথম অবস্থান।
পৃথিবী বদলে দেয়া গাড়িটি দেখতে আসলে কেমন এবং কী দিয়ে তৈরি এ নিয়ে প্রশ্ন জাগতে পারে। খুব বেশি দামী কোনো উপাদান নাকি সস্তা কোনকিছু দিয়ে এর বডি তৈরি, উত্তরে বলতে হয় খুব দামী কিংবা সস্তা কোনকিছু নয়, বরং সময় অনুপাতে ঠিক যেন মানাসই! এটি একটি অসাধারণ ডিজাইনে সজ্জিত, বাহিরের দিকটিও খুব গোছালো যা পছন্দ হয় সবারই, তবে এটি অবশ্যই সত্য যে আজকের দিনে আমরা যা প্রত্যাশা করি গাড়ির বডির দিক থেকে সে অনুযায়ী এটি অনেক দূরে ছিলো ডিজাইনের দিক থেকে,এটাও মাথায় রাখতে হবে আমরা যখনকার সময়ের কথা বলছি সেটা ১৯০৮ সালের সেই সময় অনুযায়ী এই গাড়িটি ছিলো বেশ ভালো ডিজাইনের। প্রাথমিক ভাবে গাড়িটি কাঠের তৈরি ছিলো এবং সেই সাথে এটির চিকন সিটের কাভার ছিলো।
আগেই বলেছি গাড়ি কেনার সাধ্য সবার থাকে না, তবে Model T এই ক্ষেত্রে প্রথম বারের মতো ব্যতিক্রমীতা নিয়ে আসে। বলা যায় Model T হচ্ছে ফোর্ড এর গেইম চ্যাঞ্জার। হঠাৎ এর আবির্ভাব, ভাবনা পরিবর্তন করে দেয় অনেকের,উৎপাদন এবং বিপননে এর ক্ষেত্রে ঘটতে থাকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, খুব শীঘ্রই Model T সফলতার কাতারে নাম লেখায়। আসলে একটি গাড়ির ব্যান্ডিং এর উপরে এর কর্পোরেশনের বাণিজ্য নির্ভর করে, আর সেই পথ ধরেই কোম্পানিতে কাজ করা সবাই এটির প্রতিনিধিত্ব করছিলো ঠিক ভাবে, এরই ফলশ্রুতিতে প্রত্যক কর্মী তাদের সাধ্য অনুযায়ী Model T কেনার ক্ষেত্রে আদেশ পেয়েছিলেন।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়েই সব কিছু আসে এবং তৈরি হয়। যে জিনিস যখনকার সময়ে প্রস্তুত হয় ঠিক সে সময়ের একটা ছাঁপ থেকেই যায়। মানুষের প্রয়োজন আর চাহিদা মিটে থাকে সময় অনুপাতে।এই গাড়িটির ক্ষেত্রেও তেমনই, ১৯০৮ সালের জীবন ছিলো অনেক বৈচিত্র্যপূর্ন, সেই সাথে মানুষের কায়িকশ্রম বাড়তে থাকে আর এই শ্রমের মাত্রা বাড়তে থাকায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়তের মাত্রা ও বাড়ে। সেই সাথে তখনকার মানুষ উপলব্ধি করতে থাকে সেই সময়কার brend new Model এর উপর। দিন দিন এই গাড়ির প্রসার হতে থাকে,কর্মক্ষেত্রে বিশেষ করে Snowmobile, Sawmill এবং আরো অনেক কিছুতে। এমনকি এক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে, বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে কি ভাবে এটিকে আরো ব্যবহার উপযোগী করা যায়। ট্রান্সপোর্টেশন এর চেয়ে সেবা পাওয়ার জন্যই Model T বেশি নির্ভরযোগ্য ছিলো।
পৃথিবী পরিবর্তন করে দেয়া এই গাড়িটির একটি কথা শুনলে একটু অবাকই হবেন, আর তা হচ্ছে এটির পরিমাপক কোনো যন্ত্র নেই। আজকের যুগে কি ভাবা যায় যে পরিমাপক যন্ত্র ছাড়া গাড়ি! তবে Model T এমনই! এটির চিত্তাকর্ষক ছবি দেখলেও এই পরিমাপক যন্ত্রটি না থাকাটা চোখে পড়বে খুব ভালো ভাবে। আজকের যুগের গাড়ির মতো পরিমাপক কিছুই ছিলো না, তবে Speedo meter, Odometer ছাড়া গাড়ি কল্পনা করা বেশ দূরহ! গাড়ির রং এর ক্ষেত্রে ও বিক্রির প্রভাব পড়ে। Ford Model T তে প্রথম দিকে বৈচিত্রময়ী কালার ছিলো। ক্রেতারা তাদের নতুন গাড়ির জন্য গ্রে,ক্লাক,রেড অথবা গ্রিন কালার পছন্দ করে বাহিরের দিক থেকে। কালার কম্বিনেশনের দিক থেকেও এটি বেশ যুৎসই ছিলো।
যদি বলা হয় আসলে Model T এর নামকরনের পেছনের কারণ বা রহস্য কি, তাহলে বলতে হয় Model T এটির সমৃদ্ধি, বৈপ্লবিক এবং সফলতার দিকটিই নির্দেশ করে। বলা যায় ফোর্ড সিরিজের সর্বোত্তম সাফল্য এই Model T. হেনরি ফোর্গাডড়ি তৈরির শুরু থেকেই একটি সিকোয়েন্স মেনে আসছিলো নামের দিক থেকে। তার প্রথম গাড়ি ছিলো Model A, তারপর আসতে থাকে Model B, একেকটি মডেল তার পূর্বের মডেল থেকে উন্নত। Model T হচ্ছে এই নেমিংপ্রসেস এর সর্বশেষ ধাপ, আলটিমেটলি সর্বোচ্চ সাফল্যের চূড়া।
Model T এর আকাশচুম্বী সাফল্য এবং জনপ্রিয়তা দেখে আপনি ধারনা করতে পারেন যে এটি অনেক বেশী বিজ্ঞাপনী বাজার করেছিলো,কিন্তু সম্পূর্ণ তার উল্টো। হেনরি ফোর্ড কোনো ধরনের বিজ্ঞাপনী ক্যাম্পেইন ছাড়াই চাহিদা সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। সাধ্য এবং সামর্থ্য এই দুয়ের সমন্বয়েই জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে Model T.

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top