কোলাহলপূর্ণ শহরে সবথেকে বেশী কষ্ট করতে হয় গাড়ি চালকদের। শহরে উত্তেজনা, আলো, শব্দ ,দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবনক্ষমতা ইত্যাদি চালকদের স্নায়ুর উপর খুব বেশী চাপ সৃষ্টি করে। গাড়ি চালানো ও এর জন্য সবসময় চালকের দরকার বিশেষ কিছু মানসিক প্রস্তুতি আর মনযোগী হবার পরিবেশ। কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ বা মনযোগে সমস্যা হয় এমন অবস্থায় গাড়ি চালানো ঘটাতে পারে সমূহ বিপদ । বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটতে সামান্য অমনোযোগ হতে পারে কাল। আজকে আমরা জানব গাড়ি চালানোর সময় কি কি বিষয় আমাদের মনোযোগ বিঘ্ন করতে পারে-
ফোনে কথা বলা
প্রায় বেশীরভাগ গাড়ি চালানো ও নিরাপত্তা বিষয়ক ব্লগে আপনারা পড়ে জেনে থাকবেন গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলাটা কতটুকু ভুল। রাস্তায় বড় দুর্ঘটনা ঘটার পেছনে এই ফোনে কথা বলাকেই দায়ী করা হয়। আপনার ফোনে কথা বলার একান্তই প্রয়োজন পড়লে আপনি গাড়ি কোথাও পার্ক করে তারপর জরুরী কথা শেষ করে নিতে পারেন। এমতাবস্থায় অনেকে ঝুঁকি হ্রাসের জন্য হ্যান্ডসফ্রি / ব্লুটুথ ব্যবহার করেন । কিন্তু একটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে যতই আপনি হ্যান্ডসফ্রি বা ব্লুটুথ ব্যবহার করে থাকেন ফোনে কথা বললেই আপনার মনোযোগ বিঘ্নিত হবে আর দুর্ঘটনা নিশ্চিত।
বৈষয়িক চিন্তাভাবনা
কিছু মানুষ আছেন যারা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে অনেক দূর ভাবতে পছন্দ করেন। এটা একসময় তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। আর যদি এসব ব্যাপার বড় সড়কেও ঘটে তাহলে চোখের পলকেই ঘটে যাবে ভয়াবহ বিপদ। তাই আমাদের এরকম দিনের বেলায় স্বপ্ন দেখা বন্ধ করতে হবে, বিশেষ করে গাড়ি চালনোর সময়। এরকম বৈষয়িক চিন্তাভাবনা আমাদের গাড়ি চালানোর সময় মনোযোগ দেওয়া থেকে আমাদের আটকায়।
মেসেজ করা, ফেসবুকে পোস্ট করা
ফেসবুক এখন আমাদের নিত্য সঙ্গী । ঘুম থেকে উঠে আগেই দেখতে হবে ফেসবুক, ঘুমাতে যাওয়ার আগে, খাওয়ার সময়, পড়ালেখার সময়ও । তবে সবথেকে বেশী ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে গাড়ি চালানোর সময় ফেসবুকিং যে মারাত্মক ভূল আমরা প্রায় সবাই করে থাকি। ৭৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক চালক বলেন, তারা গাড়ি চালানোর সময় ক্ষুদে বার্তা পাঠান এবং তাদের কোন দূর্ঘটনা ঘটে না। যেখানে অল্প বয়সী চালকের ক্ষেত্রে খুব সহজেই দূর্ঘটনা ঘটে।তো দেখা গেল , আমরা খুব সহজেই প্রযুক্তির উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজে দোষমুক্ত থাকতে চাই। আসলে ব্যাপারটা এমন নয়।
রাস্তা ঘাট পর্যবেক্ষণ
শহর কিংবা গ্রামে গাড়ি চালানো এক না তবু আমরা আশেপাশে শুধু আকর্ষণীয় আর চটকদার বিজ্ঞাপন, বিলবোর্ড দেখতে পাই। এসব বিজ্ঞাপন থেকে চোখ ফেরানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আপনার সমস্ত মনোযোগ কেড়ে নেবে এসব বিজ্ঞাপন। আপনি চাইলেও আপনার মনোসংযোগ ধরে রেখে গাড়ি চালাতে পারবেন না।
মোবাইল/ট্যাবে গেম খেলা
বর্তমানে এই প্রযুক্তির স্বর্ন যুগে এমন কিছু গ্যাজেট আবিষ্কার হয়েছে যার মাধ্যমে আপনি গাড়ি চালাতে চালাতে খেলতে পারবেন গেমস। কিন্তু তাই বলে কি সত্যিই খেলবেন !!!
ডিভিডি প্লেয়ার, আইপড , আইফোন ইত্যাদি সব হচ্ছে গাড়ি চালানোর সময় প্রাণঘাতী গ্যাজেট প্রমাণিত হতে পারে। সেটা অন্য বিষয় যদি কেউ ঘুম তাড়াতে গান শোনে বা একঘেয়েমি কাটাতে কিছু করে। কিন্তু একজন চালককে অবশ্যই তার সীমারেখা অতিক্রম করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় গাড়ি চালানো
৪১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক চালক জানান, মাঝে মাঝে তারা গাড়ি চালানোর সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। আর বেশীরভাগ সময় দেখা যায় চালক যতোই সচেতন হোন না কেন মধ্যে রাতে তার চোখ বুজে আসবেই, এটাই স্বাভাবিক। আর এরকম তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় গাড়ি চালানোর সময় আমেরিকায় বছরে প্রায় ১০০,০০০ দূর্ঘটনা ঘটে, ৪০,০০০ মারাত্মক ভাবে আহত হন এবং ১৫৫০ মানুষ মৃত্যু বরণ করেন। এক্ষেত্রে আমাদের উপদেশ হলো, ঘুম তাড়াতে এক কাপ চা/ কফি খেয়ে নিন । কিংবা কোথাও গাড়ি পার্ক করে আধা ঘন্টার একটি পাওয়ার স্ন্যাপ নিয়ে নিন।
বাচ্চার দিকে ঘন ঘন তাকানো
সন্তানের প্রতি বাবা মা সবসময় অনেক বেশী যত্নশীল হয়। কিন্তু গাড়ি চালানোর সময় খুব বেশী সন্তানের দিকে তাকালে আপনার গাড়ি চালানো ও এর ফলে মনোযোগ ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আর ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। তাই গাড়ি চালানোর সময় বাচ্চার দিকে বেশী না তাকিয়ে বাচ্চাকে নিরাপদে সীট বেল্ট বেঁধে বসিয়ে দেবেন । এতে আপনার মনোযোগ বিঘ্ন হবার ঘটনা ঘটবে না।
পোষা প্রাণীর প্রতি মায়া
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সেরা জীব হিসেবে অন্য প্রাণীর প্রতি মায়া থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত কোন কিছুর পরিনতি সবসময় ভালো ফল বয়ে আনে না। গাড়ি চালানোর সময় অনেকেই পোষা প্রাণী নিয়ে খুব বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন, যেটা কখনো কখনো খারাপ প্রমাণ হতে পারে।
রুপসজ্জা করা/ অফিসের জন্য তৈরি হওয়া
মি,বিনের একটি অ্যাক্ট এখনো মনে পড়লে খুব হাসি পায় । অফিসে যাওয়ার সময় দেরী হওয়ায় গাড়িতে দাঁত মেজে তৈরি হন তিনি।
গাড়ি চালানো এখন আমাদের কাছে এমনি ধরনের হাস্য রম্য হয়ে গিয়েছে। আমরা অনেকে গাড়িতে উঠে এমন রূপসজ্জা করি বা অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হই, যা মারাত্বক ভূল। আপনার যদি প্রায় সময় এমন তাড়াহুড়ো হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার সময় নির্বাচন, নির্ধারণে সমস্যা হচ্ছে। আর এরকম ভয়ংকর কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
খাওয়া দাওয়া অথবা কোন কিছু পান করা
আপনাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা গাড়ি চালানোর সময় একহাতে স্টিয়ারিং ধরেন আর আরেক হাতে কোন খাবার খান। অথবা চিন্তা করেন এক কাপ চা খেলে কিছুই হবে না। তাদের এসব মারাত্মক ভূলের মাসুল দিতে হয় আজীবন। কোন কিছু খাওয়ার প্রয়োজন মনে করলে গাড়ি থামিয়ে খেয়ে নিলেই তো ঝামেলা ফুরোল।
গাড়ি চালানো নিয়ে এমন আর মজার তথ্য পেতে চোখ রাখুন প্রহরীর ওয়েবসাইট পেজে বাংলা ব্লগে। নিজে পড়ুন বন্ধুদের পড়তে দিন। গাড়িতে প্রহরী ট্র্যাকিং সার্ভিস সংযোগ করুন আর নিশ্চিন্তে থাকুন সারা বছর। ২০ টি ফিচার সহ প্রহরী আপনার গাড়িকে দেবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা।