বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে, জীবনে প্রথমবারের মতো কিছু করাকে একটি সাফল্য এবং অর্জন বলেই বিবেচিত হয়ে থাকে। যেমন বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন মেহরাব হোসেন অপি! এটা নিঃসন্দেহে অপির জীবনে এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি বিশাল সাফল্য এবং অর্জন হিসেবেই বিবেচিত হয়। আগামীতেও মানুষ বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান বলতে মেহরাব হোসেন অপিকেই মনে রাখবে। তবে এমনও তো ঘটতে পারে যে, একজন ব্যাক্তির জীবনের প্রথম কোন ঘটনা তার সারা জীবনের অর্জনকে আড়াল করে দিতে পারে।
মেরি ওয়ার্ড তেমনই একজন। তিনি ব্যক্তিজীবনে একজন অসাধারণ নারী ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তিনি হচ্ছেনগাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যাওয়া মানব ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি।
তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞানী!
মেরি ওয়ার্ড মেরি কিং এর খুবই সম্মানিত পরিবারের একজন সন্তান ছিলেন। তার চাচাত ভাই উইলিয়াম পারসোনের আবিষ্কৃত টেলিস্কোপ ১০৯৭ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সবচাইতে বড় টেলিস্কোপ ছিল। মেরি জন্মগতভাবেই একজন শিল্পী। তিনি পোকামাকড়ের ছবি আঁকতে ভালবাসতেন। এত নিখুঁতভাবে তিনি ছবি আঁকতেন যে,তার ছবি আঁকার ক্ষেত্রে কখনো কখনো মাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করতেন।
তার বাবার একজন বন্ধু ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি মেরি ওয়ার্ডের প্রতিভা দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, মেরির বাবাকে বলেছিলেন মেরির জন্য অতিসত্বর একটা মাইক্রোস্কোপ কিনে দিতে। এরপর থেকে তিনি তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে টেলিস্কোপ এর মাধ্যমে অসীম আকাশ পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেছিলেন। আকাশ বিজ্ঞানী বা জ্যোতির্বিদ্যার হাতে খড়ি হয়েছিল এভাবেই।
মেরি নিজেও বুঝতে পেরেছিলেন মাইক্রোস্কপি তার খুবই পছন্দ। বিজ্ঞানের প্রতি তার আগ্রহ আরো বাড়তে থাকে। কিন্তু তিনি প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলেন তৎকালীন পুরুষ শাসিত সমাজের স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষার এবং মেধার সঠিক মূল্যায়ন হবে না। তাই তিনি সরাসরি বিজ্ঞানীদের সাথে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করতে শুরু করলেন। রয়াল এস্ট্রোনোমিকাল একাডেমির নিউজলেটারের মেইলিং লিস্টের একমাত্র নারী ছিলেন তিনি।
অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সঠিক ব্যবহারের উপর ছবিসহ একটি বইয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তিনি নিজেই ছবি এঁকে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। যার প্রথম ২৫০ কপিও তিনি নিজেই বিক্রি করেছিলেন। নিজের প্রকাশ করা সবকটি কপি শেষ হয়ে যাওয়ার পর লন্ডনের একটি পাবলিশিং হাউজ এই বইটি পূনরায় প্রকাশ করে এবং যা ১৮৮০ সাল পর্যন্ত পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল।
তিনি ছিলেন একজন আত্মপ্রত্যয়ী নারী। পুরুষ শাসিত সমাজ এবং বিদ্যালয়কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তিনি যা কিছু অর্জন করেছিলেন সব নিজের চেষ্টায় করেছিলেন বা সরাসরি বিজ্ঞানীদের সাথে যোগাযোগ করে করেছিলেন। তিনি তার বইও প্রথমবার নিজে প্রকাশ করেছিলেন যথেষ্ট প্রমাণাদি না থাকার কারণে। এমনকি তৎকালীন সময়ের দুটো বড় আন্দোলনের সাথেও তিনি যুক্ত ছিলেন।
গাড়ি এক্সিডেন্টে যেভাবে মৃত্যু ঘটেছিল:
বিজ্ঞানমনস্ক পরিবার থেকে থেকে উঠে আসার কারণে টিংকার পেশায় জড়িত তার অন্য চাচাতো ভাইদের দ্বারা ১৮৬৯ সালে প্রাথমিক স্টিমচালিত গাড়ি আবিষ্কার তার জন্য খুব একটা অবাক করার মত বিষয় ছিল না। মেরি ওয়ার্ড এমন একজন নারী ছিলেন, যে তার চারপাশের সবকিছু নিয়ে খুব আগ্রহ বোধ করতেন। তার তার চাচাতো ভাইদের তৈরি করা স্টিম গাড়িতে চড়ে, লুকিয়ে লুকিয়ে আনন্দ ভ্রমণে বের হতেও তার কোন দ্বিধা বোধ হয়নি। আর এই আনন্দ ভ্রমণই তার জীবনে গাড়ি এক্সিডেন্টে মৃত্যু ডেকে এনেছিল।
তৎকালীন সময়ে তৈরি করা স্টিম চালিত গাড়িগুলো ছিল খুবই স্থুল এবং অপরিশোধিত। সেই গাড়িগুলো চালানো এবং নিয়ন্ত্রণ করাও ছিল বেশ জটিল একটা কাজ। আর তার চাচাতো ভাইদের হোম মেড স্টিম চালিত গাড়িটি আরো বেশি ভারী ছিল। তারা একদিন গাড়ি নিয়ে আনন্দ ভ্রমণে বের হয়েছিল। মেরিও ছিল তাদের সাথে। এক পর্যায়ে গাড়িটি হঠাত করেই দ্রুত বাঁক নেয় এবং ভারসাম্য হারিয়ে মেরি গাড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। শুধু পড়ে গেলে হয়ত তাকে বাঁচানো যেত। তার ভাগ্য এতটাই খারাপ যে তিনি পড়েছিলেন গাড়ির লোহার তৈরি ভারী চাকার নিচে। আর এই চাকার নিচে পড়ে ঘাড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন উনিশ শতকের একজন প্রতিভাবান নারী বিজ্ঞানী মেরি ওয়ার্ড। আর এরই মাধ্যমে তিনি ইতিহাসের পাতায় গাড়ি এক্সিডেন্টে নিহত প্রথম ব্যাক্তি হিসেবে নাম লিখান।
মেরি ওয়ার্ড তার বিজ্ঞান মনস্ক চিন্তা এবং তার লিখিত বইয়ের মাধ্যমে হয়ত ইতিহাসের পাতায় গর্বের সাথে স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারতেন, কিন্তু একটি দুর্ঘটনার কারণে সব হিসেব নিকেশ উল্টে গেল। তিনি এখন স্মরণীয় হয়ে আছেন গাড়ি এক্সিডেন্টে নিহত ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হয়ে।
এক্সিডেন্ট এড়ানোর ছোট উপায়!
ইতিহাসের পাতা যত সামনে এগিয়েছে ততই উন্নত হয়েছে প্রযুক্তি এবং গাড়ির গঠন। আগের চাইতেও অনেক বেশি নিরাপদ গাড়ি তো তৈরি হচ্ছেই সাথে সাথে এখন গাড়ির নিরাপত্তায় এবং সুরক্ষায় ব্যবহার করা হচ্ছে ভেইকেল ট্র্যাকার! ভেইকেল ট্র্যাকার গাড়িতে ব্যবহার করলে একজন গাড়ির মালিক পৃথিবীর যেকোন যায়গা থেকে তার গাড়ির সার্বিক নজরদারি করতে পারবেন। লাইভ ট্র্যাক, মাইলেজ, স্পিড এমনকি ফুয়েল মনিটরিংও করতে পারবেন। গাড়ি চুরির হাত থেকে তো রক্ষা পাবেই, রক্ষা পাবে অনাকাঙ্ক্ষিত এক্সিডেন্ট থেকেও!