মানুষ সাধারণ কিছু গাড়ির পার্টস মেরামত বা বদলানোর জন্য শুধু শুধু মেকানিকের কাছে যেয়ে গাঁটের এতগুলো টাকা নষ্ট করে। এভাবে টাকা জলে না ফেলে, গাড়ির কয়েকটি পার্টস নিজেই কিছু বুদ্ধি খাটিয়ে ঘরে বসে পাল্টে ফেলতে পারেন । গাড়ি যদি বেশী দামী হয় তাহলে হয়তো পার্টসগুলো পরিবর্তনের খরচও বেশী হয়। মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাজ করে আপনি এই খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারেন । আপনার যদি যন্ত্রপাতি সম্পর্কে ন্যূনতম প্রাথমিক ধারণা থাকে, তাহলেই আপনি খুব সহজেই গাড়ির পার্টস মেরামত করতে পারবেন। আর যখন আপনি এগুলো নিজেই করবেন তখন কিছু পরিবেশ-বান্ধব উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। আপনি আপনার গাড়ির পার্টস মেরামত খরচটি কমিয়ে গাড়ির ফুয়েল ট্যাংকটি ভর্তি করুন আর গাড়ি নিয়ে আরাম করে ঘুরুন। আসুন দেখে নেই কীভাবে ঘরে বসেই করে নিতে পারেন আপনার গাড়ির পার্টস মেরামত ।
১। ফুয়েল ফিল্টার পরিবর্তন
কিছুদিন পরপর ফুয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করা উচিৎ। মাঝেমাঝে যদি আপনি ফুয়েল ফিল্টারটি পাল্টে ফেলেন তাহলে আনার গাড়ির মাইলেজ বেড়ে ১০,০০০ মাইল পর্যন্ত হতে পারে। একটি ময়লা ফুয়েল ফিল্টার আপনার গাড়ির কর্মদক্ষতা অনেক কমিয়ে দেয়। তাই ফুয়েল ফিল্টারটির রক্ষনাবেক্ষনের জন্য হলেও কিছুদিন পরপর পাল্টানো উচিৎ। ফুয়েল ফিল্টার পাল্টানোর ধাপগুলো খুবই সহজ। প্রথমে ব্যাটারি খুলে ফুয়েল লাইন চাপমুক্ত করে নিন । এরপর ফিল্টার থেকে ফুয়েলের লাইনটি খুলে ফেলুন । এরপর ওয়াসার প্রতিস্থাপন করে নিন , নতুন ফিল্টার সংযুক্ত করুন। আরেকবার সবকিছু চেক করে নেবেন। সবশেষে গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট করে দেখে নেবেন কোন লিকেজ হয় কিনা। আশেপাশে খোঁজ নিয়ে দেখুন পুরনো ফিল্টারটি নতুন করে ব্যবহারযোগ্য করে তোলার কোন ব্যবস্থা আছে কিনা। কারণ পুরানো ফিল্টারগুলো ফেলার কারনে পরিবেশ দূষণ হতে পারে। সেসব দিকে লক্ষ্য রেখেই পুরানো ফিলটারগুলো ফেলবেন।
২। ব্রেক প্যাডের পরিবর্তন
নিয়মিত ব্রেক প্যাডের পরিবর্তন করা একটি গাড়ির জন্য অনেক বেশী জরুরী। ব্রেক প্যাড বেশী জীর্ণ হয়ে গেলে সেগুলো পাল্টাতে খরচ অনেক বেড়ে যায়। আর সাথে অন্যান্য পার্টসেরও অনেক ক্ষতি করে ফেলে। ব্রেক প্যাড শুধু আপনার জীবন না আশেপাশের মানুষজনের জীবনের সাথেও সম্পর্ক রাখে। ব্রেক প্যাড পাল্টাতে আপনার লাগবে একটি কার জ্যাক, একটি লাগ নাট রেঞ্চ, সকেট সেট, সি ক্ল্যাম্প। আর এগুলো আপনি যেকনো হার্ডওয়্যারের দোকানে পেয়ে যাবেন। পাল্টানো শেষে আপনার পুরানো ব্রেক প্যাডটি এমন জায়গায় ফেলুন যেখান থেকে পরিবেশের বা কোন মানুষের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকেনা।
৩। স্পার্ক প্লাগের প্রতিস্থাপন
আপনার গাড়িকে সচল ও সজীব রাখার আরেকটি পার্টস হল স্পার্ক প্লাগ। নিয়মিত স্পার্ক প্লাগের যত্ন নেওয়া ও প্রতিস্থাপন করা অতীব জরুরী বিষয়। যত সময় যায় তত ইলেকট্রোডের উপর ধাতুর প্রলেপটি কার্বনে পরিণত হয়। এর ফলে প্লাগটি ফুয়েল/বাতাসের মিশে স্পার্ক করতে সমস্যা হয় এবং পুরো গাড়ির দক্ষতা নষ্ট হয়ে যায়। বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতে কিছু বিশেষ প্লাগ, দাম অনুযায়ী যেরকম বলা হয় যে, শক্তি বৃদ্ধি বা জ্বালানি খরচ কমায়; আসলে এমন কিছুই করে না।
কিছু প্লাগ জ্বালানী খরচ কমায় যেমন ই-থ্রি বা হালো প্লাগ। খরচ তখনি কমে যখন, প্লাগটি গাড়ির সাথে দেওয়া অরিজিনাল প্লাগ হয়। স্পার্ক প্লাগের প্রতিস্থাপন করা খুবই সহজ কাজ। প্রথমে পুরানো স্পার্ক প্লাগ থেকে জ্বালানীর তারগুলো খুলে ফেলুন। এরপর একটি সকেট রেঞ্চ দিয়ে প্লাগগুলো খুলে ফেলুন। নতুন প্লাগ সংযুক্ত করে নিন শেষে জ্বালানী তারের কভারগুলোতে ডাইলেট্রিক গ্রীস দিয়ে প্রলেপ দিয়ে নিন । এতে তারগুলো প্রলেপের ভেতর সুরক্ষিত থাকবে ও আশেপাশে ছড়িয়ে পড়বে না। হয়ে গেল স্পার্ক প্লাগের প্রতিস্থাপন।
৪। উইন্ডশীল্ড মেরামত
উইন্ডশিল্ড সবসময় যে গ্যারেজে মেরামত করা যাবে এমন ভাবা ঠিক না। উইন্ডশিল্ড আপনি নিজেই বাসায় খুবই সহজে ও দক্ষতার সাথে মেরামত করতে পারেন। উইন্ডশিল্ড মেরামত করতে আপনাকে প্রথমে যা করতে হবে তা হল; কোন দোকান বা গ্যারেজ থেকে উইন্ড শিল্ড কীট কিনে নিয়ে আসতে হবে। গ্লাস ক্লিনার দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গার ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত প্রথমে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এরপর একটি ব্লেড দিয়ে ছেচে জায়গাটুকু মসৃণ করে নিন। চিপের ভেতরকার কাঁচের টুকরাগুলো সরিয়ে নিন। বেশির ভাগ কীটবক্সের মধ্যে উইন্ড শিল্ডে আঠালো পদার্থ ইঞ্জেক্ট করার জন্য একটি যন্ত্র থাকে। সবশেষে উইন্ডশীল্ডের বাকি কাজ করে নিন। মনে রাখতে হবে যে, কাজটি দ্রুত ও সঠিকভাবে শেষ করতে চাইলে কখনোই সূর্যের তাপের মধ্যে করা উচিৎ না। কারণ সূর্যের আলোতে আঠালো পদার্থটি শক্ত হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
৫। পাওয়ার স্টিয়ারিং ফ্ল্যাশ
পাওয়ার স্টিয়ারিং ফ্ল্যাশ দেখতে অনেকটা শিশুদের ওষুধ খাওয়ার ড্রপের মত । পুরনো তেলগুলো স্টিয়ারিঙের ভেতর থেকে বের করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয় । সাথে নতুন তেল দেওয়ার জন্যও ব্যবহার করা হয় । আর এই ড্রপের মত দেখতে যন্ত্র ব্যবহার করে আপনি ৯০ শতাংশ পুরানো/ময়লা তেল অপসারণ করে ফেলতে পারেন। ইঞ্জিন কম্পার্টমেন্টর পাশের টিনের জায়গা থেকে যুতটুকু সম্ভব তেল বের করে নিতে হবে। তেলগুলো বের করে অবশ্যই একটি প্লাস্টিকের কন্টেইনারে রাখবেন যাতে পরে সুবিধা মত ফেলে দিতে পারেন। এরপর নতুন তেল ভরে নেবেন। গাড়িটি স্টার্ট দিয়ে স্টিয়ারিং হুইলটি পরীক্ষা করার জন্য আগ-পিছ করে দেখে নেবেন। আবার ইগনিশন সুইচটি চেপে স্টার্ট বন্ধ করে দিন । সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি আবার করুন। তিন চার বার একই ভাবে বন্ধ আর চালু করে নেবেন যতক্ষন না ফ্লুয়িড পুরোপুরি পরিষ্কার না হয়ে যায়।
৬। ট্রান্সমিশনের ফ্লুয়িড প্রতিস্থাপন
মেকানিকের দোকানে ট্রান্সমিশনের ফ্লুয়িড প্রতিস্থাপনকে ট্রান্সমিশন ফ্লাশ বলে। এই পদ্ধতিতে অটোম্যাটিক ট্রান্সমিশনের ভেতরে পরিষ্কার তেল ঢুকিয়ে দেয়া হয়। মূলত পুরানো ও ময়লা তেলগুলো সিস্টেমের ভেতর থেকে ঠেলে বের করে দেয়াই এই পদ্ধতির প্রধান কাজ। কিছু মেকানিকের মতে আবার এই পদ্ধতিটি সঠিক না । তারা মনে করে এতে ট্রান্সমিশনের সমস্যা হতে পারে। আগের ট্রান্সমিশনের ফ্লুয়িড প্রতিস্থাপনের পদ্ধতিটি ছিল বেশী কার্যকর ও সহজ এবং অনেক বেশী ব্যয়বহুল। আপনার গাড়িটিকে উপরের দিকে তুলতে একই জ্যাক ও কয়েকটি জ্যাক স্ট্যান্ড লাগবে। যেগুলোর মাধ্যমে গাড়িটিকে উপরে তুলুন ও গাড়ির নিচের দিক থেকে প্যান বোল্টটি সরিয়ে নিন। একটি বড় প্লাস্টিকের ঢাকনা যুক্ত কন্টেইনার ব্যবহার করুন আর ময়লাতেল গুলো সেখানে ফেলুন। যাতে পরে তেলগুলো পরিষ্কারের জন্য কোন জায়গায় সহজেই নেওয়া যায়। ট্রান্সমিশন প্যানের ভেতরের অংশগুলো পরিষ্কার সময় ফ্লুয়িড ফিল্টারটি প্রতিস্থাপন করতে ভুলবেন না। প্যান আবার স্থাপনের সময় বোল্টগুলো খুব বেশী শক্ত করে আটকাবেন না কারণ এতে লিকেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এই ছিল আমাদের আজকের টিপস অ্যান্ড ট্রিকস । গাড়ি সম্পর্কিত আরো নতুন ও চমকপ্রদ তথ্য পেতে চোখ রাখুন প্রহরীর ওয়েবসাইটে অথবা প্রহরীর ফেসবুক পেইজে।