মোবাইল ফোন মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। বর্তমানে সারাদিন কাজের জন্য এবং মানুষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার স্বার্থে মোবাইল ফোন একটি অপরিহার্য বস্তু । ফোন ব্যবহার বেশী হওয়ায় এর ব্যাটারির ক্ষয়ও হয় অনেক বেশী। তাই ফোন চার্জ থাকাটাও একটি প্রয়োজনীয় ব্যাপার। মানুষ এই সমস্যা মোকবেলার জন্য প্রায়শই নিজের গাড়িতে ফোন চার্জিং এর কাজটি করে থাকেন। কিন্তু গাড়ির মধ্যে মোবাইল ফোন চার্জ দিয়ে সাময়িক সমস্যার সমাধান হলেও, দীর্ঘমেয়াদী কথা চিন্তা করলে এটি ক্ষতিকারক।
গাড়ির চার্জার ফোনের ব্যাটারিকে নষ্ট করে।
সঙ্গত কারনে গাড়ির চার্জারগুলো মোবাইল ফোনের জন্য ক্ষতিকর। কারন গাড়িতে ব্যবহৃত ব্যাটারি মোবাইল চার্জ দেয়ার জন্য সঠিক নয়। যে অ্যাডাপটার দিয়ে চার্জ দেওয়া হয়, সেটাতে যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে আপনার ফোনের ব্যাটারি অতরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে। অথবা ফোনের কোন কোন ফাংশন স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বেশী পুরান গাড়িতে মোবাইল চার্জ দিলে মোবাইলের ব্যাটারি ক্ষতির আশংকা বৃদ্ধি পায়। আবার ক্ষতি বেশী হয় যদি আপনার ফোনের অ্যাডাপটারটি ভাল না হয় অথবা ফোনটি ভাল মানের না হয়।
চলতে চলতে ফোন চার্জিং; উচিৎ নাকি অনুচিৎ?
গাড়িতে আছেন মানে হচ্ছে, আপনি আপনার ঘরের আরাম ছেড়ে পথে নেমেছেন । আবার যাদের ঘরের থেকে বেশী বাইরে ঘোরাফেরা বা কাজকর্ম থাকে তাদের হয়ত সব সময় ফোনের চার্জার নিয়ে ঘোরা সম্ভব হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, চার্জার সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে ভুলেও যায় মানুষ। কাজেই আপনি যখন ঘর থেকে বের হবেন তার আগে অবশ্যই ফোনটি ভালোভাবে চার্জ করে নেবেন আর একান্তই যদি প্রয়োজন হয় চার্জের তাহলে কোন পেট্রোল পাম্প বা দোকানে যেয়ে ফোনে চার্জ দিয়ে নেবেন। গাড়ির ভিতর চার্জ দেওয়াটা অবশ্যই ক্ষতিকর।
গাড়ির পার্টসের ক্ষতি হয়।
গাড়ির চার্জার শুধু ফোনেরই না গাড়ির ব্যাটারিরও ক্ষতি করে। গাড়ির চার্জার সঙ্গত কারণেই ফোনে কম এনার্জি সরবরাহ করে থাকে। সে কারনে অনেক সময় লেগে যায় ফোনে চার্জ হতে। এই ধীরে ধীরে চার্জ হবার কারনে সময়ও বেশী লেগে যায়। ফলে গাড়ির ব্যাটারি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।যখন গাড়ি চালানো হয় তখন গাড়ির ব্যাটারি চার্জ হয়। যদি আপনার গাড়িটি বেশী পুরান হয় আর সবসময় ফোনে চার্জ দিতে থাকেন তাহলে গাড়ির ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হবে। নতুন গাড়ি হলে অবশ্য বেশী ক্ষতি হবেনা।
গাড়িতে বসে চার্জ দেওয়াটা কতটুকু নিরাপদ ?
এ কথা আগেও বলা হয়েছে, গাড়িতে মোবাইল চার্জ দেওয়াটা যেমন ফোনের জন্য ক্ষতিকর তেমনি গাড়ির জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ। দুই ক্ষেত্রেই আপনার নিরাপত্তা ব্যহত হতে পারে। গাড়িতে মোবাইল চার্জ দিয়ে যদি গাড়ির ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে পথের মাঝে গাড়ি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা বা দুর্ভোগ।
গাড়িতে মোবাইল ফোন চার্জের নিরাপদ উপায়।
গাড়িতে মোবাইল চার্জ দেয়ার জন্য চার্জারের সাথে অ্যাডাপটার ব্যবহার করলে, ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনা সম্ভব। যেকোনো অ্যাডাপটার যে সব সময় ঠিকভাবে কাজ করবে এমন কিন্তু না। এমনকি গাড়ির ব্যাটারির চার্জ উঠা নামা করতে পারে, বা ভুল অ্যাডাপটার ব্যবহারের জন্য মোবাইলের ক্ষতিও হতে পারে। গাড়িতে মোবাইল চার্জ দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, ব্যবহৃত অ্যাডাপটারটি যেন সঠিক হয়। এটা সম্ভব আপনি যদি একটা পোর্টেবল চার্জার সাথে রাখেন। পোর্টেবল চার্জারের অ্যাডাপটার পিউর সিন ওয়েভের একটি ইনভার্টার ব্যবহার করা হয়। আর খেয়াল রাখবেন কোন মডিফায়েড সিন ওয়েভের ইনভার্টার যুক্ত কোন চার্জার দিয়ে যেন মোবাইল চার্জ দেয়া না হয়।
পার্থক্য ; ‘মডিফায়েড সিন ওয়েভ’ এবং ‘পিওর সিন ওয়েভ’ ।
যখন আপনি ইলেকট্রনিক ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন, তখন দেখবেন দুই ধরনের ইনভার্টার রয়েছে। যদিও দুইটি ইনভার্টারের কাজ একই । কিন্তু এগুলো কাজ করে ভিন্ন ভাবে।
মডিফায়েড সিন ওয়েভ প্রাথমিক ভাবে বৈদ্যুতিক প্রবাহকে রপান্তর করে। বর্তমানে আমরা অনেক ধরনের নতুন সার্কিট ব্যবহার করি যা যন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। মডিফায়েড সিন ওয়েভ অতটা মসৃণভাবে কাজ করেনা তাই সবাই পিওর সিন ওয়েভ প্রযুক্তিটিই বেছে নেয়। যদিও পিওর সিন ওয়েভ প্রযুক্তিটি বেশী দামী হয় তবু একটি গাড়ি অথবা ফোনের রক্ষার্থে এর ব্যবহারই উপযুক্ত ।
একটি পাওয়ার ইনভার্টার কি কাজ করে?
পাওয়ার ইনভার্টার সম্পর্কে হয়ত অনেকের খুব কম ধারণা থাকে। পাওয়ার ইনভার্টার হল DC অর্থাৎ ডিরেক্ট কারেন্ট কে পোর্টের মাধ্যমে AC অথবা অল্টারনেটিভ কারেন্টে রূপান্তর করার মাধ্যম ।
সহজ কথায়, পাওয়ার ইনভার্টার হল মূলত আপনার বিদ্যুতের উৎস ও যন্ত্রাংশের মধ্যবর্তী একটি গার্ড। আপনার মোবাইলের ব্যাটারির ধারন ক্ষমতার চাইতে, চার্জের উৎসর ভোল্টেজ বেশি হতে পারে। ইনভারটার এই ভোল্টেজের পার্থক্যকে সমান করে দেয় যাতে মোবাইলে সঠিক পরিমান বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে। এই জন্যই সবসময় ভাল মানের পাওয়ার ইনভার্টার ব্যবহার করা উচিৎ।
সাধারণত গাড়ি চালানোর সময় ফোনের ব্যবহার।
একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, গাড়ি চালানোর সময় কখনই ফোন ব্যবহার করা উচিৎ না । ‘ন্যাশনাল সেফটি কাউন্সিলের’ গবেষণা অনুসারে, ফোনে মেসেজ লেখার কারণে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ১০% বেড়ে যায় । হেডফোন বা লাউড স্পিকারে কথা বলা নিরাপদ মনে হলেও, গাড়ি চালানোর সময় সেটাও করা ঠিক না।
হয়ত আমরা ভাবি যে, একটা ফোন কল বা একটা মেসেজ কততুকুই বা ক্ষতি করবে। কিন্তু যখন এটা আপনার জীবনের ব্যাপার। আর মানুষের জীবন সবসময় সবকিছুর থেকে ঊর্ধ্বে তখন এসব ছোটোখাটো বিষয়ও খুব বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
শেষ কথা
ফোন চার্জ করার অনেক উপায় থাকে । হয়ত গাড়িতে চার্জ না দিয়েও অনেক ভাল ভাবে ফোনে চার্জ দেওয়া সম্ভব। কাজেই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আপনার ফোনের চার্জারটি যেন সঠিক হয় এবং সঠিক ভাবে ব্যবহার করা হয়।