প্রহরী

পড়তে লাগবে: 4 মিনিট

কুয়াশার মাঝেও যেভাবে নিরাপদে গাড়ি চালাবেন! (শেষ-পর্ব)

শীতকালের ভোরবেলা হিম হিম শীতল হাওয়া আর কুয়াশার ধূম্রজালে ঘেরা থাকে চারপাশ। ঘন কুয়াশার আধিপত্যে  চারদিকের কিছুই দৃশ্যমান হয় না। তারপর এক সময় আস্তে আস্তে মেঘের চাঁদোয়া ভেদ করে কুসুম কোমল সূর্যটা উঁকি দেয়। কিন্তু তখনো বিন্দু বিন্দু স্নিগ্ধ শিশির ঘাসের ডগায় টুপটাপ ঝরে পড়তে থাকে। হয়তো অনেকের কাছে এই শীতল নির্জন পরিবেশ অনেক বেশি মোহনীয় রূপে ধরা দেয়। তবে যারা নিয়মিত গাড়ি ড্রাইভ করেন, তাদের কাছে এই সময়টা অনেক বেশি বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দেখা দেয়। অনেক সময় এই ধোয়াচ্ছন্ন পরিস্থিতির মাঝে নিরাপদে গাড়ি চালানোটাই অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। মূলত ঘন কুয়াশার কারণে দেখতে সমস্যা হওয়ার ফলে, অনেক জায়গায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা পর্যন্ত ঘটে যায়! আর তাইতো নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার দরুন, কোন কোন এলাকায় যান চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হয়। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করে চললে, কুয়াশার মাঝেও নিরাপদ ভাবে গাড়ি চালানো যায়! তো চলুন…কুয়াশার মাঝে নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের নিশ্চয়তা নিয়ে লেখা ধারাবাহিক আয়োজনের শেষ পর্বটি দেখে নেওয়া যাক।

গাড়ির  মিরর পরিষ্কার রাখুন

শীতকালে কুয়াশার মধ্যে ড্রাইভিং করতে গেলে অনেক ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। প্রাথমিক ভাবে সবাই যে সমস্যাটির সম্মুখীন হয় তা হলো প্রায়ই সময় দেখা যায় কুয়াশায় গাড়ির কাচ ভিজে ঘোলা হয়ে যায়। আর ঘোলা কাচের কারণে দেখতে অনেক সমস্যা হয়। তাই, সবসময় চেষ্টা করুন গাড়ির কাচ পরিষ্কার রাখতে। সেক্ষেত্রে ওয়াইপার এবং ডিফ্রস্টারের সাহায্য নিয়ে চলতে পারেন। এছাড়াও ড্রাইভিংয়ের আগে হেডলাইটগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়াটা দরকার। আবার হেডলাইটে যদি কোন প্রকারের ত্রুটি থাকে তবে তাও দ্রুত ঠিক করে নিন। মূলত সবার নিরাপত্তার দিকটা ভেবেই এসব দিকে সদা খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আপনার হাতের উপরই যখন অনেকগুলো জীবনের নিরাপত্তার ভার বর্তায়, সুতরাং সেক্ষেত্রে চেষ্টা করুন সবদিক বিবেচনা করে সাবধানে চলতে!

রাস্তার মাঝ বরাবর ড্রাইভ করবেন না

অনেকসময় ঘন কুয়াশা আপনার জন্য ভয়ানক বিপদ ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে কুয়াশা ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রে খুবই বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে। মূলত যখন চারপাশের পরিবেশ অস্বচ্ছ এবং ঘোলাটে হয়ে যায়। এই সময় যদি ড্রাইভিং করা সম্ভব হয়, তবে আশেপাশে এবং রাস্তার প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলতে চেষ্টা করুন। তবে ঘন কুয়াশার মাঝে দৃষ্টিসীমা খারাপ  হয়ে  গেলে,  কখনোই  গাড়ি  রাস্তার  মাঝখানে  নিবেন না। এর ফলে ভীষণ বিপদে পড়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে বরং গাড়ি এক পাশের লেনে রাখতে ট্রাই করুন। এই সময় নির্দিষ্ট লেনের বাইরে যেতে গেলেও সমস্যায় পড়তে পারেন। কারণ স্বল্প দৃষ্টিসীমার মাঝে নিরাপদ ভাবে ড্রাইভিং করাটা একটু কঠিন। অনেক ড্রাইভারই বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারেন, ফলে গাড়িতে গাড়িতে ধাক্কা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনাটাও বেড়ে যায়। সেজন্য এইসময় ড্রাইভিং করার ক্ষেত্রে খুবই এলার্ট থাকা প্রয়োজন।

ওভার টেক করবেন না

কুয়াশার মাঝে গাড়ি চালানোর সময় বার বার লেন পরিবর্তন করা, কিংবা অন্য গাড়িকে সাইড না দেওয়া, অথবা ওভার টেক করে চলার প্রবণতা থাকলে, ভীষণ বিপদে পড়ে যাবেন! কারণ অকারণে বার বার লেন পরিবর্তন কিংবা ওভার টেক করাটা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তাই পারলে এই সময় ওভার টেক করা থেকে বিরত থাকুন। এছাড়াও গাড়ির গতির সঠিক নিয়ন্ত্রণ রেখে চলুন। এমনকি কোন গাড়িকে পাশ কাটানোর কিংবা পেছনের গাড়িকে সাইড দেওয়ার সময়ও হুট করে গতি বাড়িয়ে দিবেন না। কারণ ঘন কুয়াশার মধ্যে হুট করে গতি বাড়ানোটা অনেক বেশি বিপদজনক। এতে যেকোন টাইপের বিপদের মুখোমুখি হতে পারেন। আবার কুয়াশা কম আছে ভেবেও গতি বাড়াবেন না, কারণ হঠাৎ করেই কুয়াশা বেড়ে যেতে পারে। আর অবশ্যই গাড়ির নির্দিষ্ট স্পিড লিমিট সেট করে নিবেন। তবে কখনো যদি ভুলে তা লঙ্ঘন করে ফেলেন, তবে প্রহরীর স্পিড ভায়োলেশন এলার্ট ফিচারের মাধ্যমে খুব সহজেই সেটা জেনে নিতে পারবেন!

গতিসীমা ৪০৫০ কিলোমিটারের মধ্যে রাখুন

বিগত ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ভূমি মন্ত্রীর ছেলেসহ সাতজন নিহত হয়! মূলত ঘন কুয়াশার কারণে গাড়িতে গাড়িতে ধাক্কা লাগার ফলেই এই ভয়ংকর দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল! পরবর্তীতে কুয়াশার মাঝে ঘটা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে ‘জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলে’র ২৪তম সভায় গতিসীমা সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে যে, কুয়াশায় ভিতর গাড়ি চালানোর সময় গতিসীমা ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটারের মধ্যে রাখতে হবে এবং অবশ্যই ফগলাইট জ্বালাতে হবে। এছাড়াও শীতকালীন যানবাহনের গতি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে। এমনকি প্রয়োজন হলে ঘন কুয়াশার সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার কথাও জানানো হয়।

হাইওয়ে ড্রাইভিং এড়িয়ে চলুন

ধোয়াচ্ছন্ন পরিবেশে গাড়ি চালানো এমনিতেই কঠিন, তারপরে আবার যদি তা হাইওয়েতে করতে হয়। কারণ হাইওয়ের ড্রাইভিংয়ে বেশির ভাগ চালকই খুব দ্রুত গতিতে ড্রাইভ করেন। সেক্ষেত্রে হয়তো অনেক ড্রাইভার দ্রুত চলতে পারেন, তবে কেউ কেউ আবার ধীর হয়েও পড়তে পারেন। সেক্ষেত্রে বিপদ হচ্ছে যদি সামনে কুয়াশার কারণে ট্র্যাফিক জ্যাম কিংবা কোন বিপদজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে। আর ধোঁয়াশার কারণে আপনার যদি সেটা দেখতে সমস্যা বা দেরী হয়, তবে গাড়ি থামানোর জন্য আগে থেকে একদমই সময় পাবেন না। যার ফলে এক্সিডেন্ট ঘটার সম্ভাবনাটাও অনেক বেড়ে যাবে! তাই এই বিষয়টা ভেবে যদি পারেন, ঘন কুয়াশার সময়ে হাইওয়ে ড্রাইভিং এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন।

বিরূপ আবহাওয়ায় বুঝেশুনে চলুন

বিরূপ আবহাওয়ার কারণে পরিবেশ-পরিস্থিতির নানা রকম পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে। বিশেষ করে শীতের দিনে অনেক সময় মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ এবং গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হয়। তখন সেই পরিস্থিতিতে গাড়ির ভিতরের এবং বাইরের তাপমাত্রার মধ্যে অনেকটা পার্থক্য দেখা দেয়। এর ফলে গাড়ির গ্লাসে কুয়াশা/পানি জমে তা অনেক বেশি ঘোলা হয়ে যায়। ফলে তখন চারপাশ এবং সামনে দেখতে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়। তখন এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে কুয়াশা পরিষ্কার করার যন্ত্র (Demister) চালু করে দিতে পারেন।

গাড়ি থামিয়ে রাখুন

অতিরিক্ত ঘন কুয়াশার মাঝে গাড়ি চালানো অনেক বেশি রিস্কের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। তখন যেকোন মুহূর্তে বিপদে পড়তে পারেন। সুতরাং নিরাপত্তার কথা ভেবে তখন ড্রাইভিং করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। যদি কুয়াশার মাঝে  রাস্তায় একদমই কিছু দেখা না যায়, তবে সেক্ষেত্রে বরং গাড়ি থামিয়ে ফেলাটাই ভাল। তখন কোন নিরাপদ স্থানে গাড়ি পার্ক করে ধোঁয়াশাময় পরিবেশ ঠিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। তবে গাড়ি পার্ক করে গাড়ির জরুরি সংকেত বাতি জ্বালিয়ে দিতে ভুলবেন না কিন্তু। হেডলাইট বন্ধ করে চটজলদি হ্যাজার্ড লাইট জ্বালিয়ে ফেলুন। এতে করে অন্য গাড়ির ড্রাইভাররা আপনার অবস্থান সহজেই বুঝতে পারবে।

ঝড়-বৃষ্টি কিংবা কুয়াশার মাঝে গাড়ি চালানোর সময় সদা সজাগ থাকুন। ধোঁয়াশাময় পরিবেশে নিরাপদে ড্রাইভিং করার জন্য মাথা ঠাণ্ডা রেখে, ধৈর্যের সাথে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করুন। কখনো কোন কারণে অধৈর্য হয়ে, তাড়াহুড়া করে ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন না। সবসময় মনে রাখবেন একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে, হয়তো অনেকগুলো জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে! সবসময় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিজের এবং অন্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হোন!

প্রথম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

    গাড়ির সুরক্ষায় প্রহরী সম্পর্কে জানতে

    Share your vote!


    এই লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
    • Fascinated
    • Happy
    • Sad
    • Angry
    • Bored
    • Afraid

    মন্তব্যসমূহ

    Scroll to Top