গাড়ি ঠিকভাবে চলতে অবশ্যই গাড়ির ইঞ্জিন ভালোভাবে কর্মক্ষম রাখতে হবে। আর ইঞ্জিন ঠিক রাখতে অবশ্যই গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল পরিষ্কার রাখতে হবে। গাড়ির ইঞ্জিন অয়েলে যদি ময়লা বা ছোট কনা জমে থাকে তাহলে কখনোই আপনার ইঞ্জিন খুব বেশিদিন ভালো সার্ভিস দিতে পারবেনা। ইঞ্জিন অয়েলের ভেতর জমে থাকা ময়লা আপনার ইঞ্জিনের মারাত্মক ক্ষতিও করে ফেলতে পারে। গাড়ি পরিষ্কারের মত আবার আপনি হাত দিয়ে আপনি ইঞ্জিন অয়েলের ময়লাগুলোও পরিষ্কারও করতে পারবেন না। তবে বেশী ভাববেন না ! আপনার এই সমস্যার সমাধান করবে- ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ। ফ্ল্যাশ করা বলতে আমরা কোন কিছু পানির মাধ্যমে ধুয়ে ফেলাকে বুঝি। আর গাড়ির ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করা হচ্ছে কোন তরল রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে ইঞ্জিনের ভেতর থেকে কাঁদা, ময়লা এবং অন্যান্য চটচটে পদার্থ পরিষ্কার করাকে বোঝায়।
কীভাবে গাড়িতে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ করবেন-
আপনাকে প্রথমে গাড়ির ইঞ্জিনটি ১০-১৫ মিনিটের জন্য বন্ধ করে নিতে হবে । তারপর আপনার গাড়ির ইঞ্জিনের অয়েল ঢালার জায়গায় ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ ঢেলে দিতে হবে। ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ ইঞ্জিন অয়েলের সাথে যখন পুরোপুরি মিশে যাবে । তখন ইঞ্জিনের অন করার মাধ্যমে ময়লাগুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে। সব শেষে সবগুলো তেল ফেলে দিতে হবে আর অয়েল ফিল্টার পাল্টে নিতে হবে।
গাড়ির ইঞ্জিনিয়াররা অবশ্য বলেন, যদি সময় মত গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল পাল্টে নেয়া যায় তাহলে অবশ্য ইঞ্জিন ফ্লাশ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। সে যাইহোক, আমরা আজকে জানব ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ কীভাবে ব্যবহার করা যায় ও এর ৫টি উপকারী দিক। আসুন দেখে নেই-
নতুন তেল পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ আপনার গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল নতুন রাখতে সাহায্য করে। ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ একসাথে দুই ধরনের কাজ করে। একটি কাজ হলো, পুরানো তেল বের করে দেয় আর আরেকটি কাজ হলো নতুন তেল নিয়ে ইঞ্জিনের কাজগুলো ঠিকভাবে সচল রাখে । ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ ব্যবহার না করলে যেটা হয়,পুরানো তেলের ময়লাগুলো রয়েই যায়। পুরানো তেলের ময়লা আর নতুন তেল মিশে যায়। ফলে পুরানো তেল নতুন তেলের সাথে মিশে নতুন তেলকেও ময়লা করে দেয়। আর যদি নিয়মিত ইঞ্জিন অয়েল পাল্টে ব্যবহার করা যায় তাহলে হয়তো ইঞ্জিন ফ্লাশের খুব একটা দরকার পড়ে না।
ফিল্টার যেগুলো পরিষ্কার করতে পারেনা ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ সেগুলো পরিষ্কার করে
গাড়ির অয়েল ফিল্টার একটি ইঞ্জিনের তেল থেকে প্রায় ২৫ মাইক্রন ছোট কনা/ময়লা অপসারন করে থাকে। কিন্তু গাড়ির ইঞ্জিন অয়েলে এরথেকেও ছোট কনা থাকে। ইঞ্জিন ফ্লাশ তেলে জমে থাকা সেসব ছোট ময়লা, কাঁদা বা ছোট কনা ইত্যাদি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তখন ইঞ্জিনের পার্টসগুলো সঠিকভাবে চলে। কিছু কনা থাকে একদমই অপরিচিত যা অনেক ভালো ফিল্টারের মাধ্যমেও অপসারন করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় ছোট ছোট কনা অনেক দিন ভেতরে থেকে কাঁদার মত বস্তু সৃষ্টি করতে পারে। আর এই ময়লাগুলো বড় হয়ে গেলে শুধু নতুন তেল সেগুলোকে পরিষ্কার করতে পারেনা। কিন্তু ইঞ্জিন ফ্লাশে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ খুব সহজেই তেল থেকে ময়লাগুলো বের করে নিয়ে আসতে পারে। আর নতুন তেলের কাজগুলো সহজ করে।
ইঞ্জিনের পার্টসগুলো পরিষ্কার করে
ইঞ্জিন অয়েলের ভেতরে যদি খুব বেশী চটচটে পদার্থ জমে যায় তাহলে ইঞ্জিনের ভেতরের অংশগুলো একটি আরেকটির সাথে লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ ইঞ্জিনের চটচটে পদার্থগুলো দূর করে ভেতরের পার্টসগুলো সুন্দরভাবে চলতে সাহায্য করে। ইঞ্জিন ফ্লাশের ফলে আর একটি উপকার হয় তা হলো ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা কয়েকগুন বেড়ে যায়। সাথে সাথে জ্বালানির দক্ষতা এত বেশী বেড়ে যায়, ঠিক যেন নতুন গাড়ি শো রুম থেকে আনার পর থাকে ওরকম। অনেক পুরানো গাড়িতে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ ভাল্ভ, পিস্টোন রিং এবং অন্যান্য পার্টসগুলো খুব অল্প পরিমানেই পরিষ্কার করতে পারে। মাঝে মাঝে এই চটচটে পদার্থগুলো এত বেশী আঠালো হয়ে যায় যে দেখলে মনে হয় কোন রাবার সীল লাগানো। আর চটচটে পরিষ্কার করার পর জায়গাগুলোতে ফাটল দেখা যায় । পরবর্তীতে যেগুলো সারানো মুশকিল হয়ে পড়ে।
ইঞ্জিনের ভেতরে জমে থাকা অবাঞ্চিত ময়লা দূর করে
মাঝে মাঝে আমাদের গাড়ি চালানোর পদ্ধতিও ইঞ্জিন অয়েলকে সম্পূর্ণ ও সঠিকভাবে কাজ করতে বাঁধা দেয়। যেমন অনেকে গাড়ি চালনোর সময় ঘনঘন ব্রেক করেন বা খুব বেশী দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে পছন্দ করেন। কয়েক মাইল গাড়ি চালানোর পর কিংবা চলতে থাকার সময়ে খুব বেশী ব্রেক করলে ইঞ্জিন অয়েল জমে ছোট কনা রূপে আটকে থাকতে পারে। যে কনাগুলো কিছু সময় পরে বড় হয়ে তেলের চলাচলের জায়গাতে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে । ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ তেল চলাচলের এই জায়গাগুলো পরিষ্কার করে । রাস্তাগুলোর বাধা অপসারন করার ফলে তেল খুব সহজেই প্রবাহিত হতে পারে আর ইঞ্জিনের ভেতরের ওয়্যারগুলো ঠিক রাখে এবং ফাটল রোধ করে।
আপনার গাড়িতে কখন ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ কখন দরকার হতে পারে-
বেশীরভাগ গাড়ি যেগুলো সুন্দরভাবে সবসময় চালানো ও নিয়মিত পরিচর্চা করা হয় সেসব গাড়িতে ইঞ্জিন ফ্লাশের কোন প্রয়োজন হয়না। সেক্ষেত্রে বিশেষ কিছু অবস্থায় একটি গাড়িতে ইঞ্জিন ফ্লাশের প্রয়োজন হতে পারে-
- মেন্টেনেন্স রেকর্ড ছাড়া কোন গাড়ি – আপনি যদি কোন পুরানো গাড়ি দাম দিয়ে কিনে থাকেন আর কেনার পর দেখেন যে গাড়ির আগের কোন মেন্টেনেন্স রেকর্ড নেই তাহলে অবশ্যই গাড়িতে ইঞ্জিন ফ্লাশের প্রয়োজন হতে পারে। তবে যদি ইঞ্জিন ফ্লাশের সাথে কিছু নতুন তেল ভেতরে ঢালা হয় তাহলে আপনার চিন্তা একেবারেই দূর হয়ে যাবে । তখন ইঞ্জিন নিয়ে আর কোন দুশ্চিন্তা করতে হবেনা।
- সদ্য করা ভেতরের ইঞ্জিনের কাজ – ইঞ্জিনের যেকোন ধরনের কাজের কাগজ প্রমাণস্বরূপ থাকা উচিৎ। কারণ আপনার গাড়িতে যদি সদ্য কোন ইঞ্জিনের কাজ করানো হয় তাহলে অবশ্যই ভেতরে রয়ে যাওয়া অংশগুলোকে সরানোর জন্য হলেও ইঞ্জিন ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে হবে। এরপর আপনি আপনার গাড়িতে নতুন তেল ঢেলে নিতে পারেন।
- অনেকদিন পর পর যদি ইঞ্জিন অয়েল পাল্টানো হয় – আবারো বলে নেই আপনি যদি পুরানো গাড়ি কিনে থাকেন আর আপনি যদি জেনে থাকেন যে, গাড়ির মালিক খুব কমই ইঞ্জিন অয়েল পাল্টেছেন। তাহলে জেনে রাখবেন ভেতরের জমা ময়লাগুলো আরো বাড়বে যদি না ইঞ্জিন অয়েল সম্পূর্ণরূপে না পাল্টানো হয়। তো সেক্ষেত্রে ইঞ্জিন ফ্ল্যাশই একমাত্র পারে আপনার গাড়ির আয়ুরেখা কয়েক গুণ বাড়াতে।
একদম শেষে বলবো যে, ইঞ্জিন ফ্লাশের মাধ্যমে আপনি গাড়ির অনেক সমস্যা দূর করতে পারেন। গাড়ির গতি বাড়ানো থেকে শুরু করে গাড়ির ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি সবই বাড়াতে পারেন ইঞ্জিন ফ্লাশের মাধ্যমে। তবে গাড়ির কর্মদক্ষতার সাথে সাথে গাড়ির নিরাপত্তার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। গাড়িতে ব্যবহার করুন বাংলাদেশে প্রথম তৈরি প্রহরী ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং ডিভাইস। আপনার গাড়ির লাইভ ট্র্যাকিং সহ গাড়ির নিরাপত্তার জন্য প্রহরী দিচ্ছে ২০টি ফিচার।